SEBA ক্লাস 10 বাংলা পাঠ্য প্রশ্নের উত্তর
Bangla Medium Question Answer
SEBA Class 10 Bengali Chapter 2 “বিজয়া দশমী”
SEBA ক্লাস 10 বাংলা পাঠ্য প্রশ্নের উত্তর
Bangla Medium Question Answer
SEBA Class 10 Bengali Chapter 2 “বিজয়া দশমী” Questions and Answers | Digital Pipal Academy
SEBA Class 10 Bengali (MIL) Chapter: 2 questions Answers
“বিজয়া দশমী”
কবি মাইকেল মধূসূদন দত্ত
অনুশীলনীর প্ৰশ্নোত্তরঃ
(ক) অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর লেখ:
১। উমা কে ? তাঁর আরও কি কি নাম রয়েছে?
উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের রচিত "বিজয়া দশমী" কবিতায় উমা হলেন দেবী দুর্গা। তাঁর আরও কয়েকটি নাম হল– হিমালয়ের কন্যা পার্বতী, কাত্যায়ন ঋষির তপস্যার ফলে জন্মগ্রহণকারী এলোকেশী, গিরিনন্দিনী , অপরাজিতা, কালিকা, শিবের প্রিয়া শিবানী, জগতের পোষণকারী জগদ্ধাত্রী ইত্যাদি।
২। গিরীশের রাণী বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ গিরীশের রাণী বলতে দুর্গা দেবী-কে বোঝানো হয়েছে। এখানে "গিরীশ" শব্দটি মহাদেব বা শিবের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। শিবের স্ত্রী হিসেবে দুর্গা দেবীকে "গিরীশের রাণী" বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
৩। নবমী নিশি শেষ হলে কী হবে?
উত্তরঃ নবমী নিশি শেষে উমা অর্থাৎ দেবী দুর্গা বাপের বাড়ি থেকে বিদায় নেবে।
৪। নবমী নিশিকে কে না যেতে অনুনয় করেছেন?
উত্তরঃ নবমী নিশিকে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত না যেতে অর্থাৎ শেষ না হতে অনুনয় করেছেন।
(খ) দীর্ঘ উত্তর লেখো:
১। বিজয়া দশমী সম্পর্কে কী জান লেখো।
উত্তরঃ বিজয়া দশমী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব এবং এটি দুর্গাপূজার অন্তিম দিন হিসেবে উদযাপিত হয়। দুর্গাপূজা মূলত শক্তির দেবী দুর্গার পূজা, যা বাংলাসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য এবং বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে উদযাপিত হয়। বিজয়া দশমী দেবী দুর্গার মর্ত্যলোক থেকে কৈলাসে ফিরে যাওয়ার দিন হিসেবে বিবেচিত হয়। ছয়টি ঋতুর মধ্যে তৃতীয় ঋতু হল শরৎ ঋতু। শরতের প্রকৃতি ঘোষণা করে দেয় গিরিরাজের কন্যার আগমন বার্তা। আকাশে বাতাসে ভেবে বেড়ায় পুজোর গন্ধ। কাশফুল, শিউলি ফুল, পদ্মেরা হেসে ওঠে। আকাশে সাদা পেঁজা তুলোর মতো ভেসে বেড়ায় ।
দুর্গাপূজা হিন্দুদের একটি বিশেষ উৎসব। প্রতিবছর বিশেষ আড়ম্বর সহকারে দেবী দুর্গার আরাধনা করা হয়। দেবী দুর্গা বা পার্বতী হিমালয় এবং মেনকার কন্যা, পতিরূপে বরণ করে নিয়েছিলেন দেবাদিদেব মহাদেবকে। দুর্গাপূজা সাধারণত আশ্বিন মাসে শরৎ ঋতুতে হয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম এবং ত্রিপুরায় যে দুর্গাপূজা হয় তাকে বলা হয় আকালবোধন, শারদোৎসব, শারদীয়া পূজা, মহাপূজা বা মায়ের পূজা। দুর্গার দুটি মেয়ে এবং দুটি ছেলে ― লক্ষ্মী, সরস্বতী এবং কার্তিক ও গনেশ। লক্ষ্মী, সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির দেবী এবং সরস্বতী, শিক্ষার দেবী। মায়ের পায়ের কাছে থাকে সিংহ। দেবীর ডান পা – টি থাকে সিংহের উপর। মা দুর্গার দশহাতে দশটি অস্ত্র থাকে।
দুর্গা পূজা শুরু হয় ষষ্ঠী থেকে এবং চলে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী পর্যন্ত। অষ্টমীর দিন মানুষ মায়ের কাছে তাদের প্রার্থনা জানায়। নবমীর রাত থেকেই বেজে উঠে দেবীর বিদায়ের সুর। নবমীর রাত্রি শেষ হওয়ার অর্থই হল দেবীর পিত্রালয় ছেড়ে স্বামীর গৃহের দিকে যাত্রা শুরু। এ যেন আমাদের ঘরের কন্যার বিদায়ের ক্ষণ উপস্থিত হয়। বিজয়া দশমীর অন্যতম আকর্ষণীয় অংশ হলো সিঁদুর খেলা, বাঙালি গৃহবধূরা, মায়েরা সিঁদুর, পান, মিষ্টি দিয়ে মাকে বরণ করে বিদায় জানান। কন্যারুপী উমাকে বিদায় দেওয়ার মুহূর্তে বাঙালি বধূরা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। মায়ের মাটির মূর্তি জলে ভাসিয়ে দেওয়ার পর শুরু হয় বিজয়া দশমী পালন। সবাই সবাইকে শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। ছোটরা বড়দের প্রণাম করে আশীর্বাদ নেয়। বড়রা ধানদুর্বা দিয়ে ছুটদের আশীর্বাদ করে। সকলেই মিষ্টিমুখ করে। বয়স্করা পরস্পর পরস্পরকে ‘শুভ বিজয়া’ বলে সম্ভাষণ করে। পাড়া প্রতিবেশীরা পরস্পর পরস্পরের গৃহে গিয়ে মিলন সম্ভাষণ করে। সবার মধ্যেই তৈরি হয় প্রেম – প্রীতির পুণ্যবন্টন। পাড়ায় পাড়ায় জলসার আয়োজন করে বিজয়া দশমী পালন করে। গ্ৰাম, শহর প্ৰায় প্ৰত্যেক জায়গাতেই বাঙালি বধূরা ঘরে ঘরে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি প্রস্তুত করেন। দুর্গামায়ের আগমনকে কেন্দ্র করে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে প্রায় সকলেই আনন্দে মেতে উঠে এবং সকলের মধ্যেই একতার বাতাবরণ তৈরি হয়।
বিজয়া দশমী শব্দটি দুটি অংশে বিভক্ত— "বিজয়া" অর্থ জয় বা বিজয় এবং "দশমী" অর্থ দশম দিন। পুরাণ মতে, অসুর রাজা মহিষাসুরের অত্যাচারে দেবতারা যখন দিশেহারা হয়ে পড়েন, তখন মা দুর্গার সৃষ্টি হয় মহিষাসুরকে বধ করার জন্য। নয় দিন ধরে যুদ্ধের পর দশম দিনে দেবী মহিষাসুরকে বধ করেন। এই কারণে বিজয়া দশমীকে মন্দের ওপর শুভের জয় এবং অন্ধকারের ওপর আলোর জয়ের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। বিভিন্ন অঞ্চলে বিজয়া দশমী উপলক্ষে বিশেষ রীতিনীতি পালন করা হয়। যেমন বাংলায় কোলাকুলি ও মিষ্টি বিনিময় প্রচলিত, আবার উত্তর ভারতে রাবণ দহনের মতো উৎসব পালিত হয়, যা রামায়ণের রাম-রাবণের যুদ্ধকে স্মরণ করে।
আধুনিক যুগে বিজয়া দশমীর উদযাপনে কিছু পরিবর্তন এসেছে। প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা বিনিময় হয়। এছাড়া অনেক বড় শহরে পরিবেশ সচেতনতার কারণে প্রতিমা বিসর্জনের সময় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বিজয়া দশমী আমাদের শিক্ষা দেয়, যত অশুভ বা বাধা আসুক, শুদ্ধ মনোভাব ও সাহসের মাধ্যমে তা জয় করা সম্ভব। এটি কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং মানবতার জয়গান।
২। কবিতাটিতে দেবী দুর্গাকে কী রূপে দেখা হয়েছে?
উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর “বিজয়া দশমী” কবিতায় দেবী দুর্গাকে এক বহুমাত্রিক ও বৈশিষ্ট্যময় রূপে উপস্থাপন করেছেন। এখানে দেবী দুর্গাকে কন্যারূপে দেখা হয়েছে যেখানে সে কয়েকদিনের জন্য স্বামীগৃহ থেকে পিতালয়ে এসে থাকেন। এই কবিতায় দেবী দুর্গা কেবল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের প্রতীক নন, তিনি শক্তি, মাতৃত্ব, স্নেহ, এবং বিদায়ের বেদনাময় আবেগের সমন্বিত রূপ। দেবী দুর্গার রূপ এখানে যেন মানবীয় অনুভূতির গভীরতার সঙ্গে মিলে যায়, যা কবিতাটিকে একটি সর্বজনীন আবেদন দেয়।
প্রথমত, দেবী দুর্গা এখানে শৌর্য ও সাহসের প্রতীক। কবি তাঁকে পরাক্রমশালী শক্তি হিসেবে দেখেছেন, যিনি মহিষাসুর বধের মাধ্যমে পৃথিবী থেকে অশুভ শক্তির বিনাশ করেন। তাঁর হাতের দশটি অস্ত্র এবং তাঁর তেজোময় মুখমণ্ডল এই শক্তিরই প্রতীক। তিনি আদ্যাশক্তি, যাঁর মাধ্যমে সৃষ্টির ভারসাম্য বজায় থাকে।
দ্বিতীয়ত, দেবীকে মাতৃত্বের রূপে দেখা যায়। তিনি ভক্তদের জন্য স্নেহময়ী মা, যাঁর আশীর্বাদে তাঁরা সুখ ও শান্তি লাভ করে। কবিতার বিজয়া দশমীর আবহে মাতৃস্নেহের এই রূপটি আরও তীব্র হয়ে ওঠে, কারণ এই সময়ে ভক্তরা দেবীকে বিদায় জানায়। তাঁদের হৃদয়ে আনন্দের সঙ্গে বিষাদেরও স্থান হয়।
তৃতীয়ত, কবিতায় দেবীর বিদায়ের দৃশ্য এক করুণ এবং মানবিক অনুভূতি সৃষ্টি করে। বিজয়া দশমীর সময় দেবীর প্রস্থান ভক্তদের মধ্যে এক ধরনের শূন্যতার সৃষ্টি করে। এই বিদায়ের মাধ্যমে কবি যেন আমাদের জীবনের সাময়িকতা এবং প্রতিটি মিলনের পর বিদায়ের অনিবার্যতাকে স্মরণ করিয়ে দেন।
দুর্গাপূজা তো শুধু ধর্মীয় গণ্ডীর মধ্যে আবদ্ধ নয়। সীমিত নয় নিছক আচার অনুষ্ঠানে। নয় শুধু পূজার্চনার ব্যস্ততা। এর শুভ আগমনে সমগ্র জাতির হৃদয় শতবর্ণের কলাপ বিস্তারে ময়ূরের মতো নেচে উঠে। এ উৎসব প্রবাসীকে ঘরে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি। সেদিন জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকলের সম্মেলনে এই আনন্দযজ্ঞ সার্থক হয়। সেদিন ঈর্ষা – দ্বন্দ্ব – দম্ভ – গরিমা সব তুচ্ছ হয়ে যায়। সকলের প্রীতিই সেদিন বড়। সেদিন বাঙালির সত্য উপলব্ধির এক দুর্লভ মুহূর্ত। যথার্থই দুর্গামায়ের আগমনে “একলার গৃহ সকলের গৃহ হয়, একলার ধন সকলের ধন হয়।” বাঙালির এই উৎসব তাই এক সম্প্রদায়ের হয়েও সকলের, ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়েও সামাজিক উৎসবে মহিমাদীপ্ত। এরই মধ্যে আমাদের হৃদয় মাধুর্যের প্রকাশ― “এই দিনকে আমরা ফুলপাতার দ্বারা সাজাই, দীপমালার দ্বারা উজ্জ্বল করি, সংগীতের দ্বারা মধুর করিয়া তুলি”।
বাংলায় এই যে উৎসব এ তো কন্যাকে ঘিরে পিত্রালয়ের আনন্দ আয়োজন, উমার জন্য যে প্রতি বঙ্গজননীরই স্নেহ উৎস উৎসারিত হয়েছে। বৎসরান্তে মেয়েকে কাছে পেয়ে মায়ের স্নেহের বাঁধ ভেঙে যায়। মেতে উঠে আনন্দ উৎসবে। আসে বিদায়ের দিন। দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের অশ্রুপাত। ঘরে ঘরে মায়ের আর্ত হাহাকারে নিরানন্দের আধার। মা মেনকা যেন বাঙালি মায়েরাই প্রীতিনিধি। আবার বাৎসল্য রসের মধ্যেই দেবী আবদ্ধ রইলেন না। দশভুজা নানা প্রহরণধারিণী শত্রু মর্দিনী দেবীই নতুন ভাবচেতনায় হলেন সুবর্ণময়ী বঙ্গ প্রতিমা। বাঙালির দুর্গোৎসব তাই একদিকে বঙ্গজননীরই বন্দনা।
শেষ পর্যন্ত, “বিজয়া দশমী” কবিতায় দেবী দুর্গা শুধুমাত্র দেবী নন, তিনি শক্তি ও করুণার মিশ্রণ, যিনি মানব হৃদয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। কবিতার প্রতিটি স্তবকে দেবীর এই বৈশিষ্ট্যগুলো প্রকাশ পায়, যা পাঠকদের মনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
৩। দুর্গাপূজার তিনটি তিথি কী ? উমার জন্য মায়ের কাতরতা যেভাবে প্রকাশ পেয়েছে তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তরঃ দুর্গাপূজার তিনটি তিথি হল সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের “বিজয়া দশমী” কবিতায় উমার বিদায়ের সময় মায়ের হৃদয়বিদারক কাতরতা অত্যন্ত করুণভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি দয়াময়ী মায়ের কাছে মিনতি করেছেন যে রাত যেন তারাদের নিয়ে চলে না যায় তাহলেই নবমীর রাত শেষ হয়ে দশমী আসবে এবং কবির প্রাণ চলে যাবে । কবি সূর্যদেবকে নির্দয় বলেছেন । নবমীর রাত শেষে সূর্যের উদয় হলেই কবির নয়ন দুটি নয়নের মণি উমাকে হারিয়ে ফেলবে , কারণ দশমী মানেই উমার চলে যাওয়ার মুহূর্ত ঘোষিত হয়ে যাওয়া । দুর্গাপূজার এই কয়েকটি দিন বাদ দিলে বছরের প্রায় প্রত্যেকটি দিনই আমরা সুখ – দুঃখ মিশ্রণে দিন কাটাই । শুধু এই তিন চারটি দিন সমস্ত ব্যথা – বেদনা ভুলে জগৎ জননীকে আঁকড়ে ধরে সকলে বাঁচতে চায় । আমরা তাঁর চলে যাওয়ার ক্ষণটি যাতে খুব তাড়াতাড়ি চলে না আসে সেজন্য চেষ্টা করি । বাঙালির কাছে পার্বতী যেমন মায়ের রূপ ধরে আসেন তেমনি তাকে কন্যাসমাও মনে করা হয় ।
কবিতায় দেখা যায়, উমা তার পিতৃগৃহে কিছুদিনের জন্য এসে মায়ের স্নেহ, ভালোবাসা এবং সঙ্গ পেয়ে আবারও শ্বশুরালয়ে ফিরে যাওয়ার সময় চলে আসে। এই বিদায়ের মুহূর্তটি মা দুর্গার জন্য অসহনীয় হয়ে ওঠে। কিন্তু, সমাজের নিয়ম এবং সময়ের দাবি মেনে উমাকে ফিরে যেতে হয়। কবি নক্ষত্রমণ্ডলীর কাছে জানতে চেয়েছেন মাত্র তিনদিনের জন্য মা এসে চলে গেলে আবার দীর্ঘদিন তাঁর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এই বিরহ জ্বালা কিভাবে তিনি জুড়াবেন । উমার স্বামীর ঘরে প্রত্যাবর্তন করার অর্থ শুধু গৃহের প্রদীপ নয় , মনের প্রদীপও নিভে যাওয়া। দশভুজার আগমনে সমস্ত জগৎ আলোকিত হয় । মানুষ আনন্দ উচ্ছ্বাসে ভেসে যায়। জীবনে আসে কল্লোল উচ্ছ্বাস। নবমীর রাত শেষ হলেই সেই বাঁধভাঙা আনন্দ আমাদের জীবন থেকে বিদায় নেয় । আবার আমরা ফিরে যাই গতানুগতিক আবর্তে। তাই মধুকবি আক্ষেপ করেছেন যে নবমীর নিশি অবসানে গিরীশের রাণী পিত্রালয় ছেড়ে স্বামীর গৃহে ফিরে গেলে তাঁর গৃহের প্রদীপ নিভে যাবে এবং গৃহ দ্বিগুণ অন্ধকারে ডুবে যাবে। কবিতায় মাতৃত্বের আবেগ, স্নেহের গভীরতা, এবং বিদায়ের বেদনা অত্যন্ত জীবন্তভাবে ফুটে উঠেছে।
এই কবিতার মাধ্যমে মাইকেল মধুসূদন দত্ত আমাদের সেই চিরায়ত মাতৃত্বের আবেগের কথা মনে করিয়ে দেন, যেখানে বিদায়ের কষ্ট শুধু ব্যক্তিগত নয়, তা এক বৃহত্তর মানবিক অনুভূতিকে স্পর্শ করে।
৪। নবমী নিশিতে কেন মন বিষাদে আচ্ছন্ন হয় বর্ণনা করো ।
উত্তরঃ নবমী নিশিতে মন বিষাদে আচ্ছন্ন হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে একধরনের আবেগী, সাংস্কৃতিক ও মানসিক প্রভাব। নবমী রাত মানেই শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রায় শেষপ্রান্ত অৰ্থাৎ নবমীর রাত থেকেই শুরু হয় পার্বতীর চলে যাওয়ার প্রস্তুতি, মন ভরে ওঠে বিষণ্নতায়, মানসিক যন্ত্রণায়। উমা চলে গেলে কবির গৃহের সোনার প্রদীপটি নিভে যায় । গৃহ আরো দ্বিগুণ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় । তাই মধুকবি নবমীর রজনীর কাছে, নক্ষত্রদের কাছে মিনতি করেন এ রাতের যেন অবসান না হয়। নক্ষত্রমণ্ডলী যেন রজনীকে নিয়ে গৃহে ফিরে না যায় । ঘরের মেয়ে যেন পিতা মাতার কাছে আরো কিছু বেশি সময় থাকার সুযোগ পায়। তিনি চলে গেলেই আবার দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষা শুরু হবে । বাঙালি মায়েদের চোখদুটি কন্যারূপী উমাকে দেখবার আশায় দিন গুণবে। শারদীয়া উৎসবে শিশু, যুবক – যুবতী , বৃদ্ধ সকলেরই মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায় । জীবনে লাগে বৈচিত্র্যের স্পর্শ । মাত্র কয়েকদিনের জন্য একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। গতানুগতিকতার বাইরে বেরিয়ে দৈনন্দিন কাজের থেকে ছুটি মেলে । কয়েকটা দিন মেলে মুক্তির স্বাদ । জীবনে ফিরে আসে আনন্দের হিল্লোল । এ সবই সম্ভব হয় শুধুমাত্র দেবী দুর্গা মর্ত্যে আবির্ভূতা হলে । তিনিই আমাদের জন্য বহন করে নিয়ে আসেন সুখ , শান্তি ও সমৃদ্ধি। স্নেহময়ী জননীর অকৃপণ স্নেহধারা , আশীর্বাদ আমাদের মধ্যে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে , আমরা উজ্জীবিত হই। ফিরে আসে কর্মচাঞ্চল্য । শরীর ও মন ভরে ওঠে প্রাণচাঞ্চল্যে।
দুর্গাপূজা কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়; এটি একটি সামাজিক মিলনমেলার সময়। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে কাটানো আনন্দমুখর মুহূর্তগুলো নবমীর রাতেই শেষ হয়ে আসার ইঙ্গিত দেয়। এই বিচ্ছিন্নতার অনুভূতিই মনকে ভারাক্রান্ত করে। উৎসবের আনন্দময় পরিবেশ থেকে আবার রুটিন জীবনের বাস্তবতায় ফিরে যাওয়ার ভাবনা অনেকের মনেই একটি ধূসর ছায়া ফেলে। জীবনের সেই একঘেয়েমি যেন উৎসবের শেষ দিনে আরও বেশি প্রকট হয়ে ওঠে। বাঙালি সমাজে দুর্গাপূজার সঙ্গে অনেক স্মৃতি, আবেগ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য জড়িত। নবমীর নিশি বিদায়ের ঘণ্টা বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে অনেক পুরনো স্মৃতি ও আবেগ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, যা বিষাদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
নবমীর নিশি সাধারণত শরতের রাত এবং এটি হিন্দুদের সব থেকে প্রিয় ঋতু । শরৎ ঋতু মানেই আকাশে পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘ ভেসে বেড়ানো , কাশফুলের মাথা দোলানো এবং সমগ্র প্রকৃতির সেজে ওঠা, এই সময় প্রকৃতির মধ্যে একধরনের শান্ত, গম্ভীর এবং শূন্য অনুভূতি বিরাজ করে। পূর্ণিমার আলো বা মেঘমুক্ত আকাশ যেন বিদায়ের এক অনন্ত বেদনার প্রতীক হয়ে ওঠে, যা মানুষের মনেও প্রতিফলিত হয়।
নবমী নিশি কেবল উৎসবের এক পর্যায় নয়, এটি একটি মানসিক এবং আবেগঘন মুহূর্ত, যেখানে আনন্দের পাশাপাশি বেদনার ছোঁয়াও থাকে। তাই এটি বাঙালির মনে বিশেষ এক বিষাদের ছায়া ফেলে। তাই শুধু মধুকবি নয় আমাদের মনও চায় না উমাকে যেতে দিতে । তাই নবমীর রাত সকলের কাছেই দুঃখের , বেদনার ।
(গ) শূন্যস্থান পূরণ করোঃ
১। তিনদিন __________ জ্বলিতেছে ঘরে।
উত্তরঃ স্বর্ণদীপ ।
২। __________ এ সৃষ্টিতে কর্ণ-কুহরে
উত্তরঃ মিষ্টতম ।
৩। নয়নের মণি মোর __________ হারাবে
উত্তরঃ নয়ন ।
৪। গেলে তুমি, __________ এ পরাণ যাবে
উত্তরঃ দয়াময়ি ।
৯। ব্যাসবাক্য সহ সমাসের নাম লেখোঃ
চন্দ্রচূড়, জটাজাল, ত্রিভুবন, স্ববলে, দ্বৈপায়ন
উত্তরঃ চন্দ্রচূড়― চন্দ্র চূড়াতে যাহার (শিব) — বহুব্রীহি সমাস।
জটাজাল— জটা রূপ জাল ― রূপক কর্মধারয় সমাস।
ত্রিভুবন— তিন ভুবনের সমাহার ― দ্বিগু সমাস।
স্ববলে— বলের সহিত ― অব্যয়ীভাব সমাস।
দ্বৈপায়ন— দ্বীপে জন্ম যার (ব্যাসদেব) — বহুব্রীহি সমাস।
১০। বাক্য রচনা করোঃ
জটাজাল, দ্বৈপায়ন, সংস্কৃত, তৃষ্ণায় আকুল, পুণ্যবান।
উত্তরঃ জটাজাল— দেবাদিদেব মহাদেবের মাথায় জটাজাল আছে ।
দ্বৈপায়ন— দ্বীপে জন্ম বলে ব্যাসদেবের নাম দ্বৈপায়ন ।
সংস্কৃত— সংস্কৃত ভাষা প্রাচীন ভারতের জ্ঞানচর্চার প্রধান মাধ্যম ছিল।।
তৃষ্ণায় আকুল— গ্রীষ্মের প্রচণ্ড রোদে তৃষ্ণায় আকুল হয়ে সে একটি পানির সন্ধান করছিল।
পুণ্যবান — পুণ্যবান মানুষ কখনও অসৎ পথে হাঁটে না।
১১। পদান্তর করোঃ
ভারত, সংস্কৃত, রস, কঠোর, গঙ্গা, তৃষ্ণা।
উত্তরঃ ভারত → ভারতীয় (বিশেষণ), ভারতবর্ষ (বিশেষ্য)।
সংস্কৃত → সংস্কৃতি (বিশেষ্য), সংস্কৃতকরণ (ক্রিয়া)।
রস → রসিক (বিশেষণ), রসায়ন (বিশেষ্য) ।
কঠোর → কঠোরতা (বিশেষ্য), কঠোরভাবে (ক্রিয়া বিশেষণ) ।
গঙ্গা → গঙ্গাপ্রবাহ (বিশেষ্য), গঙ্গাজল (বিশেষ্য) ।
তৃষ্ণা → তৃষ্ণার্ত (বিশেষণ), তৃষ্ণা মেটানো (ক্রিয়া) ।
১২। তুমি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার দরুন অনুপস্থিতির কারণ দর্শিয়ে প্রধান শিক্ষককে সম্বোধন করে একখানি আবেদনপত্র রচনা করো ।
উত্তরঃ
মাননীয় প্রধান শিক্ষক
[বিদ্যালয়ের নাম]
[বিদ্যালয়ের ঠিকানা]
তারিখ: [তারিখ লিখুন]
বিষয়: অনুপস্থিতির কারণ জানিয়ে আবেদনপত্র।
মহাশয় ,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আপনার বিদ্যালয়ের [ছাত্র/ছাত্রীর শ্রেণি] শ্রেণির একজন নিয়মিত ছাত্র/ছাত্রী। [অনুপস্থিত থাকার কারণ] কারণে আমি [তারিখ লিখুন] থেকে [তারিখ লিখুন] পর্যন্ত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে পারিনি। এই অনুপস্থিতির জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
অতএব, আমি আপনাকে অনুরোধ করছি, আমার এই অনুপস্থিতি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য এবং অনুগ্রহ করে উক্ত দিনগুলিতে আমার ছুটি মঞ্জুর করলে আমি বাধিত থাকব, ভবিষ্যতে আমি চেষ্টা করব যাতে এমন পরিস্থিতি আর না ঘটে।
-ধন্যবাদ
আপনার সদয় বিবেচনা প্রত্যাশী।
[ছাত্র/ছাত্রীর র নাম]
[ছাত্র/ছাত্রীরর শ্রেণি ও রোল নম্বর]
(ঘ) বিপরীতার্থক শব্দ লেখো:
প্রভাত, বান্ধিল, অর্ধ, ধীর, দুবলা, গোড়ায়, নারী, দুঃখ, মন্দ, মৌন, স্থল, দিবস, জনম।
উত্তরঃ প্রভাত — সন্ধ্যা।
বান্ধিল — ছাড়িল।
অর্ধ — পুরো/পূর্ণ।
ধীর — অধীর।
দুবলা — সবলা।
গোড়ায় — শেষে।
নারী — পুরুষ।
দুঃখ — আনন্দ।
মন্দ — ভালো।
মৌন — কোলাহল।
স্থল ― জল।
দিবস ― রজনী।
জনম — মরণ।
পদান্তর করোঃ
প্রভাত, ধীর, ক্ষিপ্র, দুর্বল, নারী, দুঃখ, আনন্দ, মৌন, স্থল, দিবস, হিম, জন্ম।
উত্তরঃ
প্রভাত → প্রাতঃকালে (বিশেষণ)
ধীর → ধৈর্য (বিশেষ্য)
ক্ষিপ্র → ক্ষিপ্রতা (বিশেষ্য)
দুর্বল → দুর্বলতা (বিশেষ্য)
নারী → নারীত্ব (বিশেষ্য)
দুঃখ → দুঃখিত (বিশেষণ)
আনন্দ → আনন্দিত (বিশেষণ)
মৌন → মৌনতা (বিশেষ্য)
স্থল → স্থলভাগ (বিশেষ্য)
দিবস → দিবাগত (বিশেষণ)
হিম → হিমেল (বিশেষণ)
জন্ম → জন্মদাতা (বিশেষ্য)অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তরঃ
১। ‘সনেট’ সম্পর্কে লেখো।
উত্তরঃ আধুনিক বিশ্ব সাহিত্যে সনেট ইতালির অন্যতম উপহার।ইতালিয়ান কবি পেত্রার্ক প্রথম সনেট রচনা করেন। ইতালী ও ‘সনেত্তোর’ (Sonetto) শব্দ থেকে ‘সনেট কথাটির জন্ম হয়েছে। ইতালিও ভাষায় ‘সুওনো’ (Suono) বলে একটি শব্দ আছে। এর অর্থ হল ধ্বনি। এই ‘সুয়নো’ শব্দে ক্ষুদ্রার্থবাচক রূপ হয় সনেত্তো অর্থাৎ এর আক্ষরিক অর্থ হল ক্ষুদ্র ধ্বনি। চৌদ্দটি পঙক্তিতে বিশেষ ধরনের ক্ষুদ্রকায় কবিতার নামই সনেট, এক একটি পঙক্তি চৌদ্দটি অক্ষরে সীমিত।
বাংলায় সনেটকে চতুর্দশপদী কবিতা এবং বাংলা ভাষায় প্রথম সনেট রচয়িতারূপে মধুসূদনের নাম স্মরণীয়। মধুসূদনের ফরাসি দেশের ভাসাই নগরীতে বসবাসকালে যে কয়টি সনেট রচনা করেন সেগুলি পরবর্তীকালে ‘ চতুর্দশপদী কবিতাবলী’ নাম দিয়ে ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। মধুসূদন মোট ১০৮ টি সনেট রচনা করেছেন। তার মধ্যে ১০৬ টি এই গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। মধুসূদনের বিখ্যাত সনেটগুলি যথাক্রমে— কাশীরামদাস, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কপোতাক্ষনদ, কালিদাস। মধুসূদন প্রথম সনেটের নামকরণ করলেন ‘চতুর্দশপদী কবিতা’। তার প্রত্যেকটি সনেট ১৪ অক্ষরের ১৪ পক্তির স্তবক বন্ধে রচিত। তিনি সনেটের অষ্টক ও যটকের গঠন সম্পর্কে বিশেষ মনোযোগী ছিলেন ।
মধুসূদনের পরবর্তীকালে বাংলা সনেটের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের নাম উল্লেখ করতে হয়। রবীন্দ্রনাথ শেক্সপীয়রীয় পদ্ধতিতে সনেট রচনা করেছেন। তিনি সনেটের মিল বিন্যাস সম্পর্কে খুব বেশি মনোযোগ প্রদান করেননি। তাঁর সনেটগুলি সংকলিত হয়েছে, ‘ কড়ি ও কোমল’, ‘ মানসী’, ‘ সোনার তরী’, ‘ চিত্রা’, ‘ চৈতালি’, ‘ কল্পনা’, ‘ নৈবেদ্য’, ‘ উৎসর্গ’, ‘ গীতালি’, ‘ পরিশেষ’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থে। রবীন্দ্রনাথের সনেটের সংখ্যা ২৮৮। এর মধ্যে ৭৬টিতে তিনি সনেটপন্থী মিল যোজনার চেষ্টা করেছেন। কোন কোন সমালোচক তাঁর ‘কড়ি ও কোমল‘ কাব্যগ্রন্থের কোন কোন সনেটে ফরাসি সনেটের প্রভাব লক্ষ করেছেন ।
রবীন্দ্রসমকালীন বাংলা কাব্য সাহিত্যে দেবেন্দ্রনাথ সেন, অক্ষয়কুমার বড়াল, কামিনী রায়, প্রমথ চৌধুরী, প্রিয়ংবদা দেবী সনেট রচনায় সবিশেষ কৃতিত্বের অধিকারী। রবীন্দ্রোত্তর বাংলা সাহিত্যের আধুনিক পর্বে সনেট রচনায় কৃতিত্ব দেখিয়েছেন মোহিতলাল মজুমদার, জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, অমিয় চক্রবর্ত, অজিত দত্ত, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে প্রমুখ কবিরা।
২। মাইকেল মধুসূদন দত্তের ছন্দের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ, যিনি বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রবর্তন করেন। এটি বাংলা সাহিত্যের একটি বিশেষ অর্জন এবং তাঁর সৃষ্টিশীল প্রতিভার প্রতিফলন। অমিত্রাক্ষর ছন্দের মাধ্যমে তিনি বাংলা কবিতার প্রকরণে নতুনত্ব এনেছিলেন এবং একে আধুনিক কাব্যের স্তরে উন্নীত করেছিলেন।
অমিত্রাক্ষর ছন্দের বৈশিষ্ট্য:
ক) অমিলযুক্ত ছন্দ: এই ছন্দে প্রতিটি পঙক্তির শেষে মিল থাকে না। ফলে এটি রচনায় একটি গদ্যরীতি এবং স্বাভাবিকতার অনুভূতি প্রদান করে।
খ) মাত্রাবিন্যাস ও ছন্দোবদ্ধতা: অমিত্রাক্ষর ছন্দে প্রতি পঙক্তিতে নির্দিষ্ট মাত্রার বিন্যাস থাকে। মাইকেল সাধারণত ১৪ মাত্রার বিন্যাস ব্যবহার করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, তাঁর মহাকাব্য "মেঘনাদবধ কাব্য" এই ছন্দে রচিত।
গ) অভিজাত ধ্বনি: অমিত্রাক্ষর ছন্দে একটি অভিজাত ধ্বনি এবং ভাষার গাম্ভীর্য লক্ষ্য করা যায়। এটি বিশেষত শোক, গৌরব, এবং মহাকাব্যের জন্য উপযুক্ত।
ঘ) গদ্য ও কবিতার মেলবন্ধন: অমিত্রাক্ষর ছন্দ গদ্য ও কবিতার মধ্যে একটি সেতু তৈরি করে। এটি একদিকে গদ্যের মতো স্বাভাবিক এবং অন্যদিকে কবিতার মতো ছন্দোবদ্ধ।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত অমিত্রাক্ষর ছন্দকে বাংলা ভাষায় প্রবর্তন করে একে সমৃদ্ধ করেছিলেন। তিনি এটি ইংরেজি সাহিত্যের ব্ল্যাঙ্ক ভার্স থেকে প্রভাবিত হয়ে সৃষ্টি করেন। তাঁর কাব্য "মেঘনাদবধ কাব্য" অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত, যা বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। এই কাব্যে তিনি রামায়ণের একটি অংশ নিয়ে রাবণের পুত্র মেঘনাদকে কেন্দ্র করে একটি মহাকাব্য রচনা করেন।
৪। বিশ্বসাহিত্যে কে প্রথম সনেট রচনা করেন?
উত্তরঃ- ইতালিয় কবি পেত্রার্ক।
৫। বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম সনেটের প্রবর্তক কে?
উত্তরঃ- মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
৬। সনেটের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তরঃ- সনেটের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
1. নির্দিষ্ট কাঠামো: সনেট সাধারণত ১৪টি পঙক্তি নিয়ে গঠিত হয়। প্রতিটি পঙক্তি নির্দিষ্ট মাত্রায় এবং ছন্দে লেখা হয়।
2. ছন্দ ও মাত্রা: সনেটের প্রতিটি লাইন একটি নির্দিষ্ট ছন্দ মেনে চলে। অনেক ক্ষেত্রে আইআম্বিক পেন্টামিটার (দশমাত্রিক) ছন্দ ব্যবহৃত হয়।
3. শ্লোকের বিন্যাস: সনেটের পঙক্তিগুলো সাধারণত দুই ভাগে বিভক্ত:
o অক্টেভ: প্রথম ৮টি লাইন, যেখানে মূল বিষয়ের উপস্থাপন করা হয়।
o সেসটেট: শেষ ৬টি লাইন, যেখানে মূল বিষয়ের উপসংহার বা সংশ্লেষ ঘটানো হয়। (পেট্রার্কীয় সনেটে এই বিন্যাস বেশি দেখা যায়।)
4. ছন্দমিলের বিন্যাস:
o শেক্সপিয়রীয় সনেটে (ইংরেজি সনেট) রাইম স্কিম: ABABCDCDEFEFGG।
o পেট্রার্কীয় সনেটে (ইতালীয় সনেট) রাইম স্কিম: ABBAABBACDCDCD বা CDECDE।
5. বিষয়ের গভীরতা: সনেটে সাধারণত প্রেম, প্রকৃতি, সৌন্দর্য, মৃত্যু, সময় ইত্যাদি গভীর বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
6. পরিণতি বা ভোল্টা (Volta): সনেটের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো ভোল্টা বা মোড়। এটি সাধারণত নবম পঙক্তির পরে দেখা যায়, যেখানে কবিতার ভাব বা বিষয়বস্তুর মোড় পরিবর্তন হয়।
7. সংক্ষেপ ও প্রাঞ্জলতা: সনেট সংক্ষিপ্ত হলেও তাতে গভীরতা থাকে এবং শক্তিশালী ভাব প্রকাশ করা হয়।
এই বৈশিষ্ট্যগুলো সনেটকে অন্য কবিতার ধারা থেকে আলাদা করে।
About the Author
Gobinda Debnath
At Digital Pipal Academy, I dedicate myself to guiding students toward better education with unwavering effort. Believing that success stems from preparation, hard work, and learning from failure, I strive to inspire and empower learners on their educational journeys.
Sudev Chandra Das (B.Sc. Mathematics)
Hi! I'm Sudev Chandra Das, Founder of Digital Pipal Academy. I've dedicated myself to guiding students toward better education. I believe, 'Success comes from preparation, hard work, and learning from failure.' Let’s embark on a journey of growth and digital excellence together!.