SEBA Class 10 Bengali Chapter 4: "প্রতিনিধি" কবি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – Questions and Answers by Digital Pipal Academy
Digital Pipal Academy provides detailed and accurate solutions for SEBA Class 10 Bengali Chapter 4: "প্রতিনিধি", written by the legendary poet রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর. Our expert faculty has crafted these answers to help students thoroughly understand the poem's themes, poetic style, and deeper meanings.
Get Free NCERT PDFs
If you want to download free PDFs of any chapter from any subject, click the link below and join our WhatsApp group.
(যদি তুমি যেকোনো বিষয়ের বিনামূল্যে PDF ডাউনলোড করতে চাও তাহলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করো এবং আমাদের WhatsApp গ্রুপে যোগ দাও)
Join Our WhatsApp Group
These solutions are designed according to the Assam State Board syllabus for 2025-2026 and cover all important questions to aid in effective exam preparation. With step-by-step explanations and insights into the poet's vision, students can confidently approach their studies and perform well in their exams.
Let Digital Pipal Academy guide you toward academic success with quality resources for SEBA Class 10 Bengali literature!
SEBA Class 10 Bengali Chapter 4 all Questions Answer:-
প্রতিনিধি কবি:- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
অনুশীলনীর প্ৰশ্নোত্তরঃ
১। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর
দাও।
(ক) শিবাজি কে ?
উত্তরঃ শিবাজি
মহারাজ ছিলেন
মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা এবং একজন সাহসী ও দূরদর্শী শাসক।
শিবাজি ভারতের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব
হিসেবে পরিচিত।
(খ) ‘প্রতিনিধি’ কবিতার কবি কে ?
উত্তরঃ প্রতিনিধি কবিতার কবি হলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।
(গ) শিবাজি কখন তাঁর গুরুকে দ্বারে দ্বারে
ভিক্ষা করতে দেখেছেন ?
উত্তরঃ একদিন প্রভাতে শিবাজি তাঁর গুরুকে দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা
করতে দেখেছেন ।
(ঘ) শিবাজি বালাজির হাতে কী লিখে দিয়েছিলেন ?
উত্তরঃ শিবাজি বালাজির হাতে একটি চিঠি লিখে দিয়েছিলেন ।
(ঙ) কোথা থেকে শিবাজি তাঁর গুরুকে ভিক্ষা করতে
দেখেছেন ?
উত্তরঃ দুর্গদ্বার থেকে শিবাজি তাঁর গুরুকে ভিক্ষা করতে
দেখেছেন ।
(চ) গুরু তাঁর শিষ্য শিবাজির , কাঁধে ঝুলি তুলে দিলেন কেন
?
উত্তরঃ গুরু শিবাজিকে, দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভিক্ষা করার জন্য কাঁধে ঝুলি তুলে দিয়েছিলেন।
(ছ) শিবাজি তাঁর গুরুকে (চিঠিতে) কী দান
করেছিলেন ?
উত্তরঃ শিবাজি তাঁর গুরুকে চিঠিতে তার রাজ্য এবং রাজধানী দান
করেছিলেন।
(জ) আলোচ্য কবিতায় শিষ্য গুরুর প্রসাদ কখন
গ্রহণ করেছিলেন ?
উত্তরঃ আলোচ্য কবিতায় শিষ্য গুরুর প্রসাদ মধ্যাহ্ন স্নানের পর
গ্রহণ করেছিলেন ।
(ঝ) গুরু তাঁর শিষ্যকে কী দিয়ে তাঁর পতাকা
নির্মাণ করে নিতে বলেছিলেন ?
উত্তরঃ গুরু তাঁর শিষ্যকে বৈরাগীর উত্তরীয় গেরুয়া কাপর দিয়ে
তাঁর পতাকা নির্মাণ করে নিতে বলেছিলেন ।
(ঞ) কবির কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে পাঠ্য কবিতাটি
গৃহীত হয়েছে ?
উত্তরঃ কবির “কথা ও কাহিনী” কাব্যগ্রন্থ থেকে পাঠ্য কবিতাটি
গৃহীত হয়েছে ।
২। সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও:
(ক) কী উদ্দেশ্যে শিবাজি তাঁর গুরুর পদে রাজ্য
ও রাজধানী দান করেছিলেন ?
উত্তরঃ একদিন প্রভাতে শিবাজি দুর্গশীর্ষ থেকে দেখতে পান যে
তাঁর গুরু সর্বত্যাগী, গেরুয়াকাপড়ধারী
সন্ন্যাসী হয়ে দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করছেন । তাই তিনি ভেবেছেন যে হয় তো তার গুরুকে
রাজ্য ও রাজধানী দেওয়ার পর তার গুরু ভিক্ষা করা বন্ধ করে দেবেন এবং তাই শিবাজি তার গুরুকে রাজ্য ও রাজধানী সমর্পণ করেছিলেন ।
(খ) প্রকৃত রাজার ধর্ম কী ?
উত্তরঃ প্রকৃত রাজার আসল ধর্ম হলো সুষ্ঠুভাবে প্রজাপালন করা ।
রাজার রাজত্ব প্রজাদের সুশাসনের জন্য , উৎপীড়নের জন্য নয় । রাজ্য রাজার নয় , তিনি
ভগবানের প্রতিনিধি মাত্র।
(গ) রাজর্ষি হওয়ার যোগ্যতা কারা পেতে পারেন ?
উত্তরঃ প্রকৃত
রাজা হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি ভিক্ষুকের প্রতিনিধি অর্থাৎ যিনি তাঁর
ব্যক্তিগত সুখ-সুবিধার কথা না ভেবে প্রজার কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করেন। তিনি
ক্ষমতার আসনে থেকেও অহংকার মুক্ত, লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে, এবং সর্বদা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ব্রতী। তিনি হবেন রিক্ত, ঐশ্বর্যহীন, সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী। রাজা শুধুমাত্র শাসক নন; তিনি তাঁর প্রজাদের বন্ধু, অভিভাবক এবং তাদের
সুখ-দুঃখের সঙ্গী। প্রকৃত রাজার এই গুণগুলো থাকলেই তিনি রাজর্ষি হওয়ার যোগ্যতা ও গুণ পেতে পারেন।
(ঘ) রবীন্দ্রনাথ রচিত চারটি কাব্যগ্রন্থের নাম
লেখো ।
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত চারটি কাব্যগ্রন্থ হলো —
বলাকা, শিশু, পূরবী
ও সোনার তরী ।
(ঙ) রাজাকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলা হয় কেন ?
উত্তরঃ ঈশ্বর
যেমন সৃষ্টির রক্ষক, তেমনই রাজাও তার রাজ্যের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ।
একজন রাজা শুধু শাসনকারী নয়; তিনি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার ধারক এবং রক্ষক। ঈশ্বরের
প্রতিনিধিত্ব করার অর্থ হলো, রাজার উচিত তার ক্ষমতা ব্যবহার করে মানুষের কল্যাণে কাজ
করা। রাজা গুণসম্পন্ন হলে সুশাসক ও আদর্শ রাজা বলে পরিচিত হন
। তাই রাজাকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলা হয় ।
(চ) গুরু রামদাস কীভাবে শিষ্য শিবাজিকে
পরীক্ষা করতে চেয়েছেন ?
উত্তরঃ যখন
শিবাজি তার গুরুকে সবকিছু অর্থাৎ রাজ্য
এবং রাজধানী অর্পণ করে দিয়েছিলেন তখন গুরু
শিবাজিকে জিজ্ঞাসা করেন যে তিনি তাঁর সর্বস্ব দান করে করে দিয়েছেন কেন? এখন সে কীভাবে চলবে, তাঁর কী গুণ আছে? কারণ তিনি সবকিছু
অর্পণ করে দিয়েছিলেন। উত্তরে শিবাজি
বলেন যে তিনি গুরুর দাসত্বে তাঁর প্রাণ আনন্দে দান করতে পারবেন। তখন গুরু রামদাস শিবাজিকে
পরীক্ষা করার জন্য তার
ভিক্ষার ঋুলি শিষ্যের কাঁধে তুলে দিয়ে ভিক্ষা করতে নিয়ে যান। অবশেষে
শিবাজি সেই পরীক্ষাই উর্ত্তীর্ণ হন এবং গুরু রামদাস শিষ্যের ত্যাগে অত্যন্ত প্রীত হয়ে পুনরায়
তাঁকে রাজ্যভার অর্পণ করে গুরুর নামে রাজ্যশাসন করতে বললেন । সে সময় গুরু রামদাস শিষ্যকে ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে
দিয়ে ভিক্ষা করতে নিয়ে যান ।
(ছ) গুরু রামদাস তাঁর শিষ্যকে গুরুর নামে
রাজ্যভার গ্রহণ করতে বললেন কেন ?
উত্তরঃ শিষ্যকে
গুরুর নামে রাজ্যভার গ্রহণ করতে বলা মানে গুরুর আদর্শকে সামনে রেখে, ন্যায়
ও ধর্মের পথে রাজ্য পরিচালনা করা। এতে গুরুর নাম ও শিক্ষা সাধারণ মানুষের মধ্যে
প্রতিষ্ঠিত হয়।
গুরু তাঁর শিষ্যকে কঠিন দায়িত্ব দিয়ে পরীক্ষা করতে
চেয়েছিলেন যে, শিষ্য গুরুর আদর্শ ও শিক্ষা অনুযায়ী কাজ করতে সক্ষম কি না।
ক্ষমতা মানুষের চরিত্র পরীক্ষা করার একটি মাধ্যম, এবং গুরু দেখাতে
চেয়েছিলেন যে প্রকৃত শিষ্য ক্ষমতার মোহে নয়, কর্তব্যে নিবেদিত থাকে।
এখানে গুরু রামদাস তাঁর শিষ্য শিবাজিকে গুরুর নামে রাজ্যশাসন করতে বলছেন কারণ যখন শিবাজি তার গুরুকে সবকিছু অর্পণ করে দিয়েছিলেন তখন গুরু
রামদাস তার একটি পরীক্ষা নেন এবং
সেই পরীক্ষাই শিবাজি উর্ত্তীর্ণ হওয়াই গুরু রামদাস শিষ্যের ত্যাগে অত্যন্ত প্রীত হয়ে পুনরায়
তাঁকে রাজ্যভার অর্পণ করে গুরুর নামে রাজ্যশাসন করতে বললেন ।
(জ) প্রকৃত রাজধর্ম কী তা বুঝিয়ে লেখো ।
উত্তরঃ রাজধর্মের
প্রকৃত অর্থ হলো প্রজাদের সেবা করা, তাদের সুখ-দুঃখের অংশীদার হওয়া এবং ক্ষমতার অহংকারকে
পরিহার করে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে নিজেকে নিবেদন করা। প্রকৃত
রাজা কখনও সিংহাসনের গৌরব বা বাহ্যিক আভিজাত্যে সীমাবদ্ধ থাকেন না। বরং তিনি
প্রজাদের মধ্যে মিশে যান, তাদের
অভাব-অভিযোগ, দুঃখ-কষ্টকে নিজের করে নেন। ক্ষমতা তার জন্য
বিলাস নয়, এটি তার জন্য এক মহান দায়িত্ব।
৩। শূন্যস্থান পূরণ করো
।
(ক) ____ রাজার সাজে ____ , ____ মাঝে
কে তুমি ________কর বাস ।
উত্তরঃ আমারে, রাজার সাজে বসায়ে সংসার মাঝে কে তুমি আড়ালে কর বাস ।
(খ) ____ উত্তরীয় ____ করিয়া নিয়ো’
কহিলেন গুরু _______।
উত্তরঃ বৈরাগীর উত্তরীয় পতাকা , করিয়া নিয়ো কহিলেন গুরু রামদাস।
(গ) অবশেষে ____ নগরের এক ____
নদীকূলে ____সারি ।
উত্তরঃ অবশেষে দিবসান্তে নগরের এক প্রান্তে , নদীকূলে সন্ধ্যাস্নান সারি।
(ঘ) দুর্গে ____ বাজে ক্ষান্ত দিয়া ____
বিশ্রাম ____ পুরবাসী।
উত্তরঃ দুর্গে দ্বিপ্রহর বাজে ক্ষান্ত দিয়া কর্মকাজে
বিশ্রাম করিছে পুরবাসী ।
(ঙ) ____ মা আমার লয়েছে ____ভার
সুখে আছে সর্ব ____।
উত্তরঃ অন্নপূর্ণা মা আমার লয়েছে বিশ্বের ভার , সুখে আছে সর্ব চরাচর।
(চ) এ কেবল ____ জল ঢেলে _____।
বৃথা
চেষ্টা____মিটাবারে ।
উত্তরঃ এক কেবল দিনে রাত্রে জল ঢেলে ফুটা পাত্রে
, বৃথা চেষ্টা তৃষ্ণা মিটাবারে
।
(ছ) ‘তোমারি ____ প্রাণ ____ করিব দান ।
____ কহিলা নমি তাঁরে ।
উত্তরঃ তোমারি দাসত্বে প্রাণ আনন্দে করিব দান । শিবাজি
কহিলা নাম তাঁরে ।
৪। রচনাধর্মী উত্তর লেখো
।
(ক) “প্রতিনিধি” কবিতাটির সারাংশ লেখো ।
উত্তরঃ পাঠ্য কবিতাটি একটি মারাঠা গাথার ইংরেজি অনুবাদ
অবলম্বনে রচিত। আকওয়ার্থ সাহেব এই অনুবাদ করেছিলেন। সেই বইয়ের ভূমিকা থেকে কবিতায়
বর্ণিত ঘটনাটি গৃহীত হয়েছে। শিবাজির গেরুয়া পতাকা 'ভগোয়া ঝেন্ডা' নামে খায়।
প্রতিনিধি' কবিতা কবির 'কথা ও
কাহিনী' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। মারাঠাদের জাতীয় বীর
শিবাজি ও তাঁর গুরু রামদাসের আদর্শনিষ্ঠ জীবন, ত্যাগ ও
সাধনার গভীরতাকে উপাদান হিসেবে গ্রহণ করে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধিক জাহিনিমূলক
কবিতা রচনা করেছেন।
ভারতীয় আদর্শে অনুপ্রাণিত রাজা
হবেন ভিক্ষুকের প্রতিনিধি। তিনি হবেন উক্ত, ঐশ্বর্যহীন, সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী। প্রকৃত
রাজার এই গুণগুলো থাকলেই তিনি রাজর্ষি হবার গুণ ও যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন।
অর্থাৎ তিনি হবেন রাজা হয়েও ঋষিতুল্য ব্যক্তি। ভারতীয় সংস্কৃতির পুরাতন বিশ্বাসকেই
কবি আলোচ্য কবিতায় ব্যক্ত করেছেন।
একদিন সকালে শিবাজি দুর্গের
উপরিভাগ থেকে দেখেন যে তাঁর গুরু সর্বত্যাগী গেরুয়াবস্ত্র পরিহিত সন্ন্যাসী
দ্বারে দ্বারে মুষ্টিভিক্ষা করছেন । দৃশ্যটি দেখে শিবাজি ভাবলেন তিনি গুরু
রামদাসকে অপর্যাপ্ত দান করে তাঁকে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বিরত করবেন । শিবাজি একটি
পত্র লিখে বালাজির হাতে দিয়ে গুরুর কাছে পাঠিয়ে দেন । সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী গান
গেয়ে গেয়ে পথ চলেছেন । তাঁর চিত্ত কামনা বাসনা শূন্য। রামদাস গান শেষ করে
মধ্যাহ্নস্নান সেরে যখন দুর্গদ্বারে আসলে বালাজি গুরুকে প্রণাম করে রাজার পত্রটি তাঁর
চরণকমলে রাখেন । গুরু আগ্রহভরে পত্রটি পড়ে বুঝলেন শিষ্য ছত্রপতি শিবাজি নিজের
রাজ্য ও রাজধানী তাঁর পাদপদ্মে দান করেছেন । পরদিন গুরু রাজার কাছে গিয়ে এরকম
কাজের কারণ জানতে চান । তাঁর কী গুণ আছে ! রাজ্য রাজধানী নিয়ে তিনি কী করবেন!
প্রত্যুত্তরে শিবাজি বলেন যে তিনি
গুরুর দাসত্বে তাঁর প্রাণ আনন্দে দান করবেন । তখন গুরু রামদাস শিষ্যকে তাঁর
ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে দিয়ে নগরের পথে ভিক্ষা করতে নিয়ে যান। রাজাকে ভিখারির পোশাকে
দেখে প্রজাগণ কম্পিত হাতে লজ্জাভরে ভিক্ষা দেয় । অবশেষে গুরু নগরের একপ্রান্তে
দিনের শেষে নদীর ধারে ভিক্ষায় পাওয়া চাল রান্না করে সারাদিনের ক্ষুধার্ত
শিবাজিকে অন্নপ্রসাদ দান করেন । শিষ্য শিবাজি গুরু রামদাসকে জানান তিনি আরো কঠিন ।
পরীক্ষা দিতে তৈরি । রামদাস শিষ্যের ত্যাগে অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে পুনরায় তাঁকে
রাজ্যের দায়িত্ব অর্পণ করে গুরুর নামে গুরুর হয়ে রাজ্য শাসন করতে বলেন । রাজার
রাজত্ব প্রজাদের সুশাসনের জন্য , অত্যাচারের জন্য নয়। এ – রাজ্য তাঁর নয় । তিনি ঈশ্বরের দূত মাত্র ।
প্রজাদের মঙ্গল সাধনই একমাত্র কর্তব্য হওয়া উচিত সকল রাজার। রাজধর্মের প্রকৃত অর্থ হলো প্রজাদের সেবা করা, তাদের সুখ-দুঃখের
অংশীদার হওয়া এবং ক্ষমতার অহংকারকে পরিহার করে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে নিজেকে
নিবেদন করা। প্রকৃত রাজা কখনও সিংহাসনের গৌরব বা বাহ্যিক আভিজাত্যে
সীমাবদ্ধ থাকেন না। বরং তিনি প্রজাদের মধ্যে মিশে যান, তাদের অভাব-অভিযোগ, দুঃখ-কষ্টকে
নিজের করে নেন। ক্ষমতা তার জন্য বিলাস নয়, এটি তার জন্য এক
মহান দায়িত্ব।
(খ) কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো ।
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের রচিত "প্রতিনিধি" কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিশ্লেষণ করতে হলে কবিতার মূল ভাব, বিষয়বস্তু
এবং এর মাধ্যমে প্রকাশিত বার্তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। নিচে এর ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "প্রতিনিধি" কবিতাটি একটি
গভীর দার্শনিক ও মানবতাবাদী চিন্তার প্রতিফলন। "প্রতিনিধি" শব্দের অর্থ
একজন প্রতিনিধি বা দূত, যিনি কোনো বৃহত্তর সত্ত্বা, ধারণা বা গোষ্ঠীর
প্রতিনিধিত্ব করেন। কবিতাটিতে মানবজীবনের দায়বদ্ধতা, ত্যাগ, ও
বৃহত্তর কল্যাণের ধারণা ফুটে উঠেছে। কবি এই নামের মাধ্যমে বুঝাতে চেয়েছেন, প্রতিটি
মানুষ আসলে কোনো না কোনো মহৎ আদর্শের প্রতিনিধি।
নামটি কবিতার মূল ভাবনাকে স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে। এটি
বোঝায় যে, ব্যক্তিগত
স্বার্থ ছাড়িয়ে সমাজের, মানবতার এবং বৃহত্তর জীবনের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার
মধ্যেই মানবজীবনের প্রকৃত সার্থকতা নিহিত।
প্রতিনিধি" কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেখিয়েছেন, একজন
ব্যক্তি যখন বৃহত্তর সত্তার প্রতিনিধিত্ব করেন, তখন তিনি নিজের চেয়ে বড় কোনো মহৎ উদ্দেশ্য বা দায়িত্বের
সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান। নামকরণের মাধ্যমে কবি মূলত দেখিয়েছেন, প্রতিটি মানুষ তার কাজের মাধ্যমে কোনো মহান
আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। ব্যক্তি জীবনে সার্থকতার মাপকাঠি হলো, সে কতটুকু নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে অন্যের মঙ্গল সাধনে নিয়োজিত হয়েছে।
কবিতায় এই ভাবনা প্রকটভাবে উঠে এসেছে, যা
"প্রতিনিধি" নামকে যথার্থ করে তোলে।
"প্রতিনিধি"
নামটি একটি গভীর দার্শনিক বার্তা বহন করে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, মানবজীবন
একটি মহৎ আদর্শের বাহক। আমাদের জীবন শুধু নিজের জন্য নয়; এটি
সমাজের, মানবতার
ও বিশ্বচেতনার প্রতিনিধিত্ব করে। নামকরণটি সার্থক, কারণ এটি কবিতার মূল উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে। ব্যক্তি
জীবনের সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হয়ে বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন এবং নিজেকে দায়িত্বশীল
প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার আহ্বান এই নামের মাধ্যমে চমৎকারভাবে প্রতিফলিত
হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ এখানে সমাজসেবার পাশাপাশি আধ্যাত্মিক দায়িত্ববোধের কথাও তুলে
ধরেছেন।
কবিতাটিতে রবীন্দ্রনাথ শিবাজির
রাজর্ষি রূপটি ফুটিয়ে তোলেন। ঈশ্বরের প্রতিনিধি হয়ে শিবাজির রাজ্যশাসনের
দৃষ্টান্ত রবীন্দ্রনাথের হৃদয়কে যেমন নাড়া দিয়েছিল— তেমনি তাঁকে অনুপ্রাণিত
করেছিল রামদাস স্বামীর ধর্ম আন্দোলন। গুরু রামদাস ও শিষ্য শিবাজির মিলনে
মহারাষ্ট্রের হিন্দু ধর্মের পুনরুজ্জীবন, মহাজাতির পুনর্গঠন। “যে রাজ্য শিবাজি গুরু রামদাসকে দান করেছিলেন,
গুরু শিষ্যকে সেই রাজ্যই শাসন করতে দিলেন, অন্ধ কর্তৃত্বে নয় , ঈশ্বরে প্রতিনিধি রূপে
মাত্র”। প্রতিনিধি কবিতায় শিবাজি শাসকের নয়, সেবকের
ভূমিকায় প্রতিফলিত হয়েছেন ।
সন্ন্যাসীর ত্যাগ , বৈরাগ্য এবং বিশ্বমানবতার সঙ্গে
একাত্মতার প্রতীক গৈরিক পতাকা শিবাজির রাজধর্মের অবলম্বন ছিল । তিনি এই আদর্শে
গুরু রামদাস দ্বারা দীক্ষিত হয়েছেন। অনেকে কল্পনা করিয়াছেন , দস্যুজন সুলভ দুর্নিবার ও উত্তরোত্তর বর্ধমান লুণ্ঠন প্রবৃত্তিই এই
শক্তিকে অতীব ভীষণ ও অজেয় করিয়া তুলিয়াছিল । রবীন্দ্রনাথের কবিতায় শিবাজির
মহত্ত্ব ও আদর্শের উজ্জ্বল চিত্র প্রতিভাসিত হয়েছে । সেজন্য ‘ প্রতিনিধি ’
নামকরণটি সার্থক হয়েছে ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "প্রতিনিধি" নামকরণ কবিতার
ভাব, বার্তা
এবং বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সঙ্গতিপূর্ণ। নামটি কবিতার মর্মবাণীকে ধারণ করে
এবং মানুষের জীবনকে মহৎ আদর্শের প্রতিনিধি হিসেবে দেখার এক অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি
উপস্থাপন করে।
(গ) রাজা শিবাজির উপর গুরু রামদাসের প্রভাব
আলোচনা করো ।
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের রচিত “প্রতিনিধি” কবিতাটি
তাঁর কাব্যগ্রন্থ “কথা ও
কাহিনী”-র অন্তর্ভুক্ত একটি উল্লেখযোগ্য কবিতা। এই কবিতায় রাজা
শিবাজি এবং তাঁর আধ্যাত্মিক গুরু রামদাসের সম্পর্ক এবং প্রভাব অত্যন্ত শৈল্পিকভাবে
তুলে ধরা হয়েছে। এখানে শিবাজি একজন ধর্মপ্রাণ, সাহসী এবং মানবিক শাসক হিসেবে চিত্রিত হয়েছেন, আর রামদাস
তাঁর জীবনের নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক।
শিবাজির চরিত্র ছিল মূর্ত – মহৎ নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের
প্রতীক । তিনি বাংলা ও মহারাষ্ট্রকে ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন । ছত্রপতি
শিবাজি আধুনিককালে হিন্দুদের জাতীয় বীর মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা । সম্রাট
আকবরের মতন হিন্দু মুসলমান উভয়ের কাছে প্রিয় ছিলেন । এটা ঐতিহাসিক সত্য যে
শিবাজি মুসলমান রাজশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন । কিন্তু সে সময় বহু বিখ্যাত
মুসলমান শিবাজির বিপদে আপদে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন । তখন হিন্দু মুসলমান
সম্প্রদায়ের মধ্যে ছিল না কোনো তিক্ততা । মোগল সম্রাট আকবরের অধীনে বহু হিন্দু
উচ্চপদে আসীন ছিলেন । এ দৃষ্টান্ত বহু মুসলমান নবাব অনুসরণ করেছিলেন । আকবরের সময়
হিন্দুদের সঙ্গে সম্রাটের যে সম্পর্ক ছিল , শিবাজির সময়েও মুসলমানদের সঙ্গে শিবাজির অনুরূপ সম্পর্ক ছিল ।
হিন্দুরা আকবরের প্রতি যে শ্রদ্ধা পোষণ করে থাকে , মুসলমানরাও
শিবাজিকে সেরকম শ্রদ্ধার আসনে বসিয়ে থাকেন ।
গুরু রামদাস শিবাজির জীবনে কেবল আধ্যাত্মিক প্রেরণা দেননি, বরং
শাসক হিসেবে শিবাজিকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। কবিতায় রামদাস এবং শিবাজির কথোপকথনের
মাধ্যমে বোঝা যায়, শিবাজি কেমনভাবে গুরুর আদর্শ অনুসরণ করে নিজেকে জনগণের
প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
শিবাজির মতন মহাপুরুষেরা শুধু যেসব জাতির উপকার করেছেন
এমন নয় , তাঁরা মনুষ্যত্বের উদ্ধারসাধক । মানব
সমাজের দাসত্ব পাশ মোচনকারী বলে পৃথিবীর সব দেশেই তাঁদের আবির্ভাব বাঞ্ছনীয় ।
জগতের মঙ্গলের জন্য শিবাজির মতন মহাপুরুষের জন্ম নেওয়া অবশ্যই দরকার ।
রামদাস শিবাজিকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেন যে রাজধর্ম শুধু
রাজপ্রসাদে বিলাসিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। জনগণের সেবাই হলো প্রকৃত রাজধর্ম।
রামদাসের শিক্ষা শিবাজিকে আত্মত্যাগ ও নিরহঙ্কার নেতৃত্বের পথ গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ
করে। কবিতায় এটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
রামদাসের শিক্ষা শিবাজিকে বুঝতে সাহায্য করে যে একজন সঠিক রাজা কেবল একজন
শাসক নন, তিনি তাঁর প্রজাদের প্রতিনিধি। শিবাজির রাজত্বে এই
ধারণার প্রতিফলন ঘটে, যেখানে তিনি নিজের ক্ষমতা জনগণের কল্যাণে
উৎসর্গ করেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ এই কবিতার মাধ্যমে গুরু-শিষ্যের সম্পর্কের
গভীরতা এবং নৈতিক শাসনের মডেল তুলে ধরেছেন। রামদাস শিবাজির মধ্যে মানবিকতা, ত্যাগ
এবং কর্তব্যপরায়ণতার বীজ বপন করেছিলেন, যা তাঁকে একজন আদর্শ শাসক হতে সাহায্য করেছিল।
এইভাবে, “প্রতিনিধি” কবিতায় গুরু রামদাসের প্রভাব রাজা শিবাজির জীবনে অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যা রবীন্দ্রনাথ গভীরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
(ঘ) ভারতের পুরাতন সংস্কৃতি অনুসারে ভারতীয়
রাজধর্মের স্বরূপ আলোচনা করো ।
উত্তরঃ
ভারতের পুরাতন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য অনুসারে রাজধর্ম (রাজকর্ম বা রাজনীতির ধর্ম) এমন একটি আদর্শিক নীতি বা নির্দেশিকা ছিল, যা রাজা বা শাসককে সঠিকভাবে শাসন করতে সাহায্য করত। এটি শুধু শাসকের দায়িত্বের প্রতি নির্দেশনা ছিল না, বরং সমগ্র সমাজের নৈতিক, আধ্যাত্মিক, এবং সামাজিক কল্যাণের প্রতি দৃষ্টিপাত ছিল। ভারতীয় পুরাতন সংস্কৃতি, বিশেষ করে ধর্মশাস্ত্র (যেমন মনুস্মৃতির মতো শাস্ত্র) এবং আধ্যাত্মিক গ্রন্থগুলো, রাজধর্মের সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করেছে। রাজধর্মের স্বরূপের মূল কিছু দিক নিম্নরূপ:
রাজধর্মের প্রথম এবং প্রধান উপাদান ছিল ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা। রাজা বা শাসককে দেশের মানুষকে ন্যায় দেবার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হতো। এজন্য রাজা ন্যায়পাল, সতর্ক এবং সদা সতীকেরূপে শাসন করতেন। রাজা বা শাসকের জন্য ধর্মের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থাকা অপরিহার্য ছিল। তিনি নিজেকে ধর্মের রক্ষক হিসেবে দেখতেন এবং তার শাসনকাজের মধ্যে ধর্মানুসরণ এবং নৈতিকতার প্রতি শ্রদ্ধা থাকত। রাজা জনগণের নৈতিক জীবনযাত্রার উদাহরণ হতে চাইতেন।
রাজধর্মের
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল শাসকের ত্যাগের মনোভাব। রাজা নিজে ব্যক্তিগত সুখের
চেয়ে জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিতেন। তিনি সমাজের শ্রেণীবিভাগ ও দরিদ্র জনগণের
প্রতি সহানুভূতি ও দায়িত্ববোধ প্রকাশ করতেন। রাজা স্বকীয় তেজে এবং প্রভাবে অগ্নি , বায়ু , সূর্য
, চন্দ্র, যম, কুবের, বরুণ এবং মহেন্দ্রের সঙ্গে তুলনীয় ।
সেজন্য তিনি বয়সে বালক, বৃদ্ধ — যাই হোন না কেন — তিনি
সকলের পুজ্য। রাজা সর্বতেজোময়। তাঁর অনুগ্রহে প্রভূত সম্পদ ও উন্নতি এবং ক্রোধে
মৃত্যু। সেজন্য কখনো কোনো কারণে রাজার প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করা উচিত নয় রাজার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ আত্মহনন তুল্য।
রাজরোষ অগ্নি অপেক্ষা ক্ষতিকর। রাজার বিরুদ্ধাচরণ বশতঃ রাজরোষে পতিত হলে সেই মানুষের
ধন , সম্পদ, পশু সহ সবংশে ধ্বংস
হয় ।
রাজধর্মের আরেকটি
গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল রাজ্যের শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা। রাজাকে যুদ্ধ, আইন-শৃঙ্খলা
রক্ষা, এবং দাঙ্গা বা অস্থিরতা মোকাবিলা করতে সাহায্য করা
হতো। এ ছাড়া তাকে জনগণের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়া হতো। রাজা দেশের সাংস্কৃতিক উন্নয়ন এবং শিক্ষা
প্রচারের জন্য দায়ী ছিলেন। পুরাণ, দর্শন, এবং ধর্মীয়
শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে রাজাকে উৎসাহিত করা হতো। সে কারণে প্রাচীন ভারতের
রাজারা পুঁথি-পত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মন্দির,
এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রকে প্রচার করতেন। রাজা জনগণের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত রাখতেন।
দানশীলতা,
দরিদ্রদের সাহায্য, শত্রুদের প্রতি মমতা,
এবং সাধুসঙ্গ ও সেবা এসবই রাজধর্মের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাকে জনগণের
প্রভূত দানের ব্যবস্থা করতে বলা হতো। ভারতের
পুরাতন সংস্কৃতিতে রাজাকে সবার ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহনশীল থাকতে বলা হতো।
ভারতীয় রাজধর্মের মূলনীতি ছিল যে রাজা কোন ধর্মকে অত্যধিক প্রাধান্য দেবেন না এবং
সকল ধর্মের অনুশীলনকে সম্মান করবেন।
রাজা একটি আধ্যাত্মিক
নেতা হিসেবে সমাজের নৈতিক উৎকর্ষের জন্য কাজ করতেন। তিনি আত্ম-উন্নয়ন ও শান্তির
জন্য নিজেও দর্শন ও আধ্যাত্মিকতা অনুসরণ করতেন, এবং অন্যদেরও সেই পথে প্রেরণা
দিতেন।
(ঙ) গুরু রামদাসের গানের বিশেষত্ব উল্লেখ করো
।
উত্তরঃ মহারাষ্ট্রের মারাঠা জাতির জাতীয় বীর ছত্রপতি শিবাজির
গুরুদেব ছিলেন গুরু রামদাস । গুরুর আদর্শনিষ্ঠা, জীবন, ত্যাগ ও সাধনা রাজা
শিবাজিকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে । গেরুয়াধারী সর্বত্যাগী সাধক গুরু রামদাসের
ভগবৎ ভক্তি অপরিসীম । প্রকৃত রাজধর্ম কী তা তিনি শিষ্য শিবাজিকে শিখিয়েছেন ।
ভারতীয় সংস্কৃতির পুরাতন বিশ্বাসই হলো আদর্শবান রাজাই হবেন ভিক্ষুকের প্রতিনিধি।
ত্যাগ ও সাধনাপূর্ণ ঐশ্বর্যহীন, রিক্ত রাজাই রাজর্ষি
হওয়ার যোগ্য। গুরু রামদাস শিবাজিকে এই পাঠই শিখিয়েছেন। রাজ্য নিয়ে রাজ্যহীন
হয়ে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে রাজ্য শাসন করাই হলো উপযুক্ত রাজার প্রধান কর্তব্য।
গুরুর পাদুকা দুটি সিংহাসনে স্থাপন করে শিবাজি রাজ্য শাসন করতেন। বৈরাগীর উত্তরীয়
গেরুয়া রঙের । সেজন্য শিবাজির পতাকার রং ছিল গেরুয়া।
গুরু রামদাস (১৫৩৪–১৫৮১) শিখ ধর্মের চতুর্থ গুরু তার সাথে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ সংগীতশিল্পী। তাঁর গান বা শবদে (শব্দ) গভীর ধর্মীয় ও
আধ্যাত্মিক বার্তা রয়েছে। গুরু রামদাসের গানে প্রধানত ভক্তি, প্রেম এবং একেশ্বরবাদী চিন্তা প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি
শিষ্যদের ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এবং বিশ্বাসের গুরুত্ব বোঝান। তাঁর গানে ঈশ্বরের
প্রতি অনুগততা এবং তাঁর সান্নিধ্য লাভের আকাঙ্ক্ষা স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। গুরু
রামদাস তাঁর গানে আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। জীবনের লক্ষ্য হল আত্মার
মুক্তি এবং ঈশ্বরের সাথে একাত্মতা লাভ করা। তাই তাঁর গানে সাধনা এবং আত্মবিশ্বাসের
বার্তা থাকে। তিনি তাঁর গানে সমতাবাদ এবং মানবতা প্রচার
করেছেন। তাঁর গানগুলি সামাজিক অনাচার এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ছিল এবং সমাজের
মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিল।
গুরু রামদাসের গানগুলি সাধারণ মানুষের জন্য সহজবোধ্য ছিল।
তিনি পাঞ্জাবি ভাষায় গান লিখেছেন, যা তখনকার সাধারণ মানুষের
ভাষা ছিল, ফলে তাঁর গানের বার্তা সহজে সাধারণ মানুষের
কাছে পৌঁছতে পারত। তাঁর
গানে সঙ্গীত এবং শাব্দিক বাণীর মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক উপদেশ দেওয়া
হয়েছে। গানগুলি ভক্তি, প্রেম, ত্যাগ, এবং ঈশ্বরের কাছে পৌঁছানোর পথ সম্পর্কে
সঠিক দিশা দেয়। গুরু
রামদাসের গানগুলি খুবই সুরেলা এবং হৃদয়গ্রাহী ছিল। তাঁর সংগীত শিখ ধর্মের মূল
মৌলিক অঙ্গ ছিল এবং তা গুরু গ্রন্থ সাহিবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাঁর গানের মাধ্যমে শিখ
ধর্মের মুল আদর্শগুলো প্রচারিত হয়েছিল, যা আজও
শিখ সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫। ব্যাখ্যা লেখো।
(ক) “এ কেবল দিনে রাত্রে জল ঢেলে
ফুটাপাত্রে
বৃথা চেষ্টা তৃষ্ণা মিটাবারে ।”
উত্তরঃ এই পঙক্তিটি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “প্রতিনিধি ”
নামক কবিতা থেকে সংগৃহীত হয়েছে । এই পঙক্তিগুলোতে কবি জীবনকে
একটি ফুটো পাত্রের সাথে তুলনা করেছেন। এখানে ফুটো পাত্র প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত
হয়েছে মানুষের অন্তঃসারশূন্যতা বা অপূর্ণতার জন্য। মানুষ সারাজীবন নিজের ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা এবং চাহিদা পূরণের জন্য প্রচেষ্টা চালায়, কিন্তু প্রকৃত তৃপ্তি অর্জিত হয় না।
জল ঢালা হলো মানুষের চেষ্টার প্রতীক—জীবনের সমস্যা
সমাধানের জন্য বা চাহিদা পূরণের জন্য কৃত কাজ। কিন্তু ফুটো পাত্রে জল যেমন ধরে না, তেমনি মানুষের চিরকালীন আকাঙ্ক্ষা মেটানো যায় না। কবি এই মাধ্যমে
বুঝিয়েছেন যে বাহ্যিক উপকরণ বা বস্তুগত অর্জন কখনোই আত্মার প্রকৃত তৃষ্ণা নিবারণ
করতে পারে না। সংসারের কেউই নিজ নিজ অবস্থায় সন্তুষ্ট নয় । আশা
আকাঙ্ক্ষা যত বাড়তে থাকে ততই অসন্তোষ বাড়ে এবং মানুষ লোভের বশীভূত হয়ে পড়ে ।
আশা আকাঙ্ক্ষা অপরিমিত কিন্তু তা মেটাবার ক্ষমতা একান্তই সীমিত এই সত্যটি মানুষ
ভুলে যায় । তাই নিজের সাধ্যের অতীত অলীক সুখের কল্পনায় নিমগ্ন হয়ে অশান্তিকে
আহবান করে আনে। আশার ছলনা এতই প্রবল যে মানুষ নিজের ক্ষমতা বিচারের শক্তি হারিয়ে
ফেলে , আর সেজন্য তার আকাঙ্ক্ষা যতই হোক না
কেন তার সামান্য ভগ্নাংশমাত্রই সে পায় ।
এই ভাবনার মূলে রয়েছে দার্শনিক বোধ: জীবনের পূর্ণতা অর্জন
করতে হলে বাহ্যিক চাহিদার পরিবর্তে আধ্যাত্মিকতার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
মানবজীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে হলে আধ্যাত্মিক ও অভ্যন্তরীণ উপলব্ধির
প্রয়োজন।
কবিতার এই অংশটি আমাদের আহ্বান জানায় জীবনের গভীরতা ও অর্থ
খুঁজতে,
যা চিরস্থায়ী এবং সার্থক।
(খ) “অন্নপূর্ণা মা আমার লয়েছে বিশ্বের ভার
সুখে আছে সর্বচরাচর ।”
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের “প্রতিনিধি” কবিতার উল্লিখিত অংশটি ঈশ্বরী শক্তির মাতৃত্বের রূপকে
উদ্ভাসিত করে। এখানে কবি অন্নপূর্ণা মায়ের রূপে সৃষ্টির রক্ষাকারী শক্তির কথা
বলেছেন, যিনি
সমস্ত পৃথিবীর ভার নিজের উপর নিয়েছেন এবং সৃষ্টির সকল জীবের সুখ নিশ্চিত করেছেন।
“অন্নপূর্ণা মা আমার লয়েছে বিশ্বের ভার” এখানে অন্নপূর্ণাকে
পৃথিবীর মা এবং সৃষ্টির প্রতীক হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। অন্নপূর্ণা কেবল খাদ্যের
দেবী নন, তিনি
বিশ্বের ভার ধারণ করে জীবজগতের ভারসাম্য রক্ষা করেন। এই "ভার" একাধিক
অর্থে বোঝা যায়—জীবনের দায়িত্ব, সৃষ্টির ভারসাম্য এবং জীবের চাহিদার প্রতিপূর্তি। এটি
মাতৃত্বের চরম নিঃস্বার্থতা এবং ত্যাগকে তুলে ধরে।
“সুখে
আছে সর্বচরাচর” এই লাইনটি বলে যে, অন্নপূর্ণার করুণায় সমগ্র সৃষ্টিজগত সুখে এবং শান্তিতে
রয়েছে। অন্নপূর্ণার স্নেহ এবং দয়ার ফলে জীবজগতে শৃঙ্খলা বজায় থাকে। এটি প্রকৃতির
সহানুভূতিশীল মাতৃত্বকে তুলে ধরে, যা সমস্ত জীবকে অন্ন, আশ্রয় এবং নিরাপত্তা দেয়।
এই অংশে কবি প্রকৃতি এবং ঈশ্বরী শক্তির মধ্য দিয়ে এক অনন্য
মাতৃত্বের রূপ প্রকাশ করেছেন। এটি মানবজাতিকে প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞ এবং
শ্রদ্ধাশীল হতে শেখায়।
(গ) “তোমারি দাসত্বে প্রাণ আনন্দে করিব দান’
শিবাজি কহিলা নমি তারে । ”
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের রচিত “প্রতিনিধি” কবিতাটি এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত, যেখানে
তিনি শিবাজি ও তার গুরু রামদাসের সম্পর্কের মধ্য দিয়ে ভক্তি, ত্যাগ
ও কর্তব্যবোধের গভীর তাৎপর্য তুলে ধরেছেন।
উক্ত লাইনটি কবিতার কেন্দ্রীয় ভাবনার একটি অংশ। এখানে
শিবাজি তার গুরুর প্রতি সম্পূর্ণ সমর্পণ ও ভক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তিনি তার
গুরুকে উদ্দেশ্য করে বলছেন যে, "তোমারি দাসত্বে প্রাণ আনন্দে করিব দান," অর্থাৎ, তিনি
আনন্দের সঙ্গে নিজের জীবন এবং সমস্ত অর্জন তার গুরুর সেবায় উৎসর্গ করবেন।
“তোমারি দাসত্বে”: এখানে শিবাজি গুরুর
প্রতি নিজের পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ প্রকাশ করেছেন। তিনি এই দাসত্বকে শুধু কর্তব্য বা
দায়িত্ব নয়, বরং আনন্দের মাধ্যম
হিসেবে দেখছেন।
“প্রাণ আনন্দে করিব দান”: শিবাজি তার জীবনের
সমস্ত আনন্দ, শক্তি ও অর্জন গুরুর প্রতি উৎসর্গ করতে
প্রস্তুত। এটি কেবল ভক্তির নয়, কর্তব্য ও শৃঙ্খলারও প্রকাশ।
“শিবাজি কহিলা নমি তারে”: শিবাজি এখানে মাথা নত
করে গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। এটি একটি চূড়ান্ত ভক্তির প্রতীক,
যেখানে শিষ্য তার গুরুকে ঈশ্বরের মতো সম্মান দিচ্ছেন।
এই লাইনগুলিতে গুরু-শিষ্য সম্পর্কের পবিত্রতা ও গভীরতা প্রকাশ পায়। শিবাজি
যেমন একজন রাষ্ট্রনায়ক, তেমনই একজন ভক্ত। তার গুরুর প্রতি এই
ত্যাগ ও শ্রদ্ধা তার চরিত্রের মহত্ত্বকে তুলে ধরে। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে
দেখাতে চেয়েছেন, জীবনের প্রকৃত অর্থ তখনই উপলব্ধি হয় যখন কেউ
নিজের স্বার্থ ছেড়ে অন্যের প্রতি সেবা ও ত্যাগের মানসিকতা অর্জন করে।
রবীন্দ্রনাথ এই কবিতায় বোঝাতে চেয়েছেন যে সত্যিকারের নেতা বা মহাপুরুষ সেই,
যে নিজেকে অন্যের সেবায় উৎসর্গ করতে প্রস্তুত। শিবাজি গুরুর প্রতি
যে শ্রদ্ধা ও আত্মত্যাগের উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন, তা একটি
চিরকালীন মূল্যবোধের প্রতীক।
(ঘ) “হে ভবেশ , হে শংকর সবারে
দিয়েছ ঘর,
আমারে দিয়েছ শুধু পথ ।”
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের রচিত “প্রতিনিধি” কবিতার উল্লিখিত অংশে কবি গভীর আধ্যাত্মিক অনুভূতি এবং নিজের
জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি এক ধরনের ত্যাগী মনোভাব প্রকাশ করেছেন।
“হে
ভবেশ, হে
শংকর সবারে দিয়েছ ঘর, আমারে দিয়েছ শুধু পথ।”
এই অংশে কবি ভগবান বা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে কথা বলেছেন। এখানে
"ভবেশ" ও "শংকর" শব্দ দুটি যথাক্রমে ঈশ্বর এবং শিবের প্রতি
ইঙ্গিত করে। কবি বোঝাতে চেয়েছেন, ঈশ্বর জীবজগতে প্রতিটি সৃষ্টির জন্য নিরাপত্তা, আশ্রয়
ও সুখময় জীবন নিশ্চিত করেছেন। "ঘর" এখানে প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করা
হয়েছে, যা
মানুষের দৈনন্দিন জীবনের নিশ্চয়তা ও স্থায়িত্ব বোঝায়।
কিন্তু কবি নিজের ক্ষেত্রে তা ভিন্ন মনে করেছেন। তিনি
দেখেছেন যে ঈশ্বর তাঁকে "পথ" দিয়েছেন। "পথ" এখানে জীবনের
চলমানতা, দায়িত্ব
ও অজানার পথে নিরন্তর এগিয়ে চলার প্রতীক। এই পথ একধরনের চিরন্তন অভিযাত্রা, যেখানে
সান্ত্বনার জন্য কোনো "ঘর" নেই।
এই লাইনগুলি কবির ত্যাগী মানসিকতার প্রকাশ। তিনি স্বাভাবিক
জীবনের নিরাপত্তা, স্বস্তি ও আরামের পরিবর্তে কর্মমুখর, অনিশ্চিত
এবং দায়িত্বপূর্ণ একটি জীবনের পথকে গ্রহণ করেছেন। কবি এই পথের মাধ্যমে মানবকল্যাণ
ও সত্যের সন্ধান করতে চান। এর মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর সৃষ্টিশীলতা এবং মানুষের প্রতি
দায়বদ্ধতার বোধকে তুলে ধরেছেন।
এই কবিতা মূলত ত্যাগ, সাধনা, এবং মানবতার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করার মহৎ আহ্বানকে
চিত্রিত করে। কবি নিজের জীবনের উদ্দেশ্যকে বিশ্বমানবতার সেবায় নিবেদন করেছেন, যা
তাঁকে অনন্য করে তুলেছে।
কহিলেন গুরু রামদাস ।”
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের রচিত "প্রতিনিধি" কবিতার একটি বিশেষ দিক হলো, এটি
প্রতীক ও রূপকের মাধ্যমে গভীর তত্ত্ব এবং দার্শনিক চিন্তাধারাকে ফুটিয়ে তোলে।
এখানে "বৈরাগীর উত্তরীয় পতাকা করিয়া নিয়ো" লাইনটি বহুমাত্রিক অর্থ
বহন করে। এই লাইনটি মানবজীবনের বৈরাগ্য, ত্যাগ, ও গভীর আধ্যাত্মিকতার একটি প্রতীকী উদাহরণ।
লাইনটির ব্যাখ্যা:
বৈরাগ্যের প্রতীক : "বৈরাগী" শব্দটি সেই ব্যক্তিকে নির্দেশ করে যিনি
পার্থিব মোহ-মায়া ত্যাগ করে আধ্যাত্মিক মুক্তির পথে নিজেকে নিবেদিত করেন। বৈরাগীর
উত্তরীয় (বস্ত্র) এখানে ত্যাগ ও আত্মনিবেদনকে প্রতীকায়িত করেছে। গুরু রামদাস
শিষ্যকে বলেছেন, সেই ত্যাগের আদর্শকেই নিজের পতাকা বা লক্ষ্য করে তুলতে।
পতাকার রূপক: পতাকা সাধারণত কোনও আদর্শ বা লক্ষ্যের প্রতিনিধিত্ব করে।
বৈরাগীর উত্তরীয়কে পতাকা করে নেওয়া মানে সেই আধ্যাত্মিক আদর্শকে জীবনের
পথপ্রদর্শক হিসেবে গ্রহণ করা। এটি একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে, যা
ব্যক্তি বা সমাজকে উন্নতির পথে চালিত করবে।
গুরু-শিষ্য সম্পর্ক: এই অংশে গুরু রামদাস
একজন আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক হিসেবে উপস্থিত। তিনি শিষ্যকে নির্দেশ দিচ্ছেন কীভাবে
নিজের জীবনকে মহৎ এবং অর্থবহ করা যায়। এখানে গুরু-শিষ্য সম্পর্কের গভীরতা, শিক্ষা
এবং আদর্শকে তুলে ধরা হয়েছে।
সারমর্ম
"বৈরাগীর
উত্তরীয় পতাকা করিয়া নিয়ো" লাইনটি মূলত জীবনের আধ্যাত্মিক আদর্শকে গ্রহণের
প্রতি আহ্বান জানায়। এটি ত্যাগ, অধ্যবসায় এবং আধ্যাত্মিক মুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরে।
রবীন্দ্রনাথ এখানে কেবল আধ্যাত্মিকতার কথা বলেননি, বরং ত্যাগ ও আদর্শের মাধ্যমে জীবনকে
উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার একটি সর্বজনীন বার্তা প্রদান করেছেন।
মানুষ চক্ষু , কর্ণ , নাসিকা
, জিহ্বা ও ত্বক — এই পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের অধিকারী । এই পঞ্চ
ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমেই পৃথিবীর রূপরস গন্ধ মানুষ অনুভব করে । এই আস্বাদনের ফলেই
মানুষের চিত্ত আনন্দ হিল্লোলে পূর্ণ হয়ে ওঠে । চিত্ত ভূমানন্দের অধিকারী হয় ।
প্রকৃতি প্রেমিক প্রকৃতির রূপৈশ্বর্য এই ভাবেই অবলোকন করেন । সৌন্দর্য ক্ষুদ্র ‘
আমি ’ ধ্বংস করে সপ্তসিন্ধু দশদিগন্ত জুড়ে এক নতুন আমির জন্ম দেয় । তখন
প্রাকৃতিক বর্ণবিভায় প্রকৃতি প্রেমিকের অন্তর্লোক ও বহির্লোক যুগপৎ প্লাবিত হয় । কিন্তু
সংসারে আরেক শ্রেণির মানুষ আছে যাঁরা “ ব্রহ্ম সত্য জগৎ মিথ্যা ” দর্শনে বিশ্বাসী
। তারা জ্ঞানমার্গীয় সাধনায় ইন্দ্রিয় দমন করেন । প্রকৃতির সবই তাদের কাছে অলীক , মায়াময় বলে মনে হয়।
বিশ্বের সকল বিস্ময়ের যিনি উৎস , শব্দের পেছনে যিনি আলো , তমসার ওপারে যিনি জ্যোতির্ময়ী, সপ্তসিন্ধু
দশদিগন্ত জুড়ে যার লীলাখেলা তাকে ইন্দ্রিয়ের দ্বার রুদ্ধ করে উপভোগ করার মধ্যে
কোনো বাহাদুরি নেই । পাবার চেষ্টা করা বাতুলতা মাত্র , তাতে
দিব্যি তর্ক চালানো যায়, তৃপ্তি হয় না । রসিক চিত্ত
সেজন্য রূপসাগরে ডুব দিয়েই অরূপরতন খুঁজে নেন ।
৬। তাৎপর্য লেখো ।
(ক) ওহে ত্রিভুবনপতি, বুঝিনা তোমার
মতি
কিছুই অভাব তব নাহি।
উত্তরঃ এখানে
কবি ঈশ্বর বা সর্বশক্তিমান স্রষ্টার প্রতি সম্বোধন করেছেন। কবি ঈশ্বরকে
“ত্রিভুবনপতি” বলে অভিহিত করেছেন, যার অর্থ তিনটি জগতের অধিপতি। এই সম্বোধনের মাধ্যমে
স্রষ্টার অসীম ক্ষমতা ও মহত্ত্বের প্রতি ভক্তের শ্রদ্ধা প্রকাশ করা হয়েছে।
পরবর্তী লাইনটিতে কবি ঈশ্বরের মনের ভাব বোঝার অক্ষমতা
প্রকাশ করছেন। তিনি বলছেন, “বুঝিনা তোমার মতি,” অর্থাৎ ঈশ্বরের ইচ্ছা বা পরিকল্পনা মানুষের বোধগম্যতার
বাইরে। এখানে ঈশ্বরের অপার জ্ঞান ও মহিমা বোঝানো হয়েছে, যা
মানুষ সহজে অনুধাবন করতে পারে না।
শেষ লাইনে কবি বলেন, “কিছুই অভাব তব নাহি।” এর দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, ঈশ্বর
সর্বতোভাবে পরিপূর্ণ এবং তার কোনো অভাব নেই। এই অভাবহীনতা ঈশ্বরের সর্বশক্তিমান
স্বরূপের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা দেখায় যে তিনি সমস্ত সৃষ্টি এবং তার প্রয়োজন পূরণ করার
ক্ষমতার অধিকারী।
সামগ্রিকভাবে, এই পঙক্তিগুলি ঈশ্বরের প্রতি কবির শ্রদ্ধা, বিস্ময়
এবং ঈশ্বরের অপার ক্ষমতা সম্পর্কে মানুষের সীমাবদ্ধ জ্ঞানকে প্রকাশ করে।
(খ) “গুরু কহে, তবে শোন
করিলি কঠিন পণ
অনুরূপ দিতে হবে ভার ।”
উত্তরঃ এখানে
উল্লেখিত পংক্তিগুলি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "গুরুগৃহ" কবিতা থেকে
নেওয়া হয়েছে।
উক্ত অংশে গুরু শিষ্যকে বলেছেন, “তবে
শোন করিলি কঠিন পণ, অনুরূপ দিতে হবে ভার।” এখানে গুরু শিষ্যকে তার কর্তব্যের
গুরুত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন। শিষ্য যে কোনো দায়িত্ব বা প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করবে, তার
সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ত্যাগ, সংগ্রাম এবং নৈতিক দায়িত্বও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
গুরু এখানে শিষ্যকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে প্রতিটি
প্রতিজ্ঞার সঙ্গেই দায়িত্ব ও কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়।গুরু শিষ্যকে তার
নিষ্ঠার পরীক্ষা দিতে বলেছেন। এটি বোঝায় যে জীবনে সাফল্য অর্জন করতে হলে দৃঢ়
প্রতিজ্ঞা ও ন্যায়পরায়ণতা অপরিহার্য।প্রতিটি দায়িত্ব পালনের জন্য কিছু না কিছু
ত্যাগ করতে হয়। এই ত্যাগই একজন মানুষকে প্রকৃত অর্থে পূর্ণ করে তোলে। গুরু-শিষ্যের
সম্পর্কটি আধ্যাত্মিক জগতে একজন শিক্ষকের দিকনির্দেশনার প্রতীক। গুরু তার শিষ্যকে
দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে আত্মার উৎকর্ষ সাধনের পথ দেখান।
"প্রতিনিধি" কবিতার এই চরণ আমাদের মনে করিয়ে
দেয় যে জীবন শুধুই প্রাপ্তি নয়, দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়েই মানুষের আত্মার প্রকৃত মুক্তি
সম্ভব। পরের
কাছে প্রশংসা লাভের জন্য , বড়ো
সাজার নেশায় মানুষ কি না করে । কিন্তু তার সেই আচরণের মধ্যে ক্ষুদ্রতা বাসা বেঁধে
থাকে । মানুষ যখন অন্তরের টানে , বিবেকের তাড়নায়
মনুষ্যত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তখনই সে প্রকৃত বৃহৎ হয় ।
(গ) অতুল ঐশ্বর্যে রত, তাঁর ভিখারির ব্রত
এ যে দেখি জলে ভাসে শিলা।
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরের "প্রতিনিধি" কবিতাটি গভীর দার্শনিক অর্থ ও মানবতাবাদী মূল্যবোধে
পরিপূর্ণ। এখানে কবি মানুষের মধ্যে থাকা অন্তর্নিহিত বৈপরীত্য ও ঈশ্বরের সৃষ্টি
রহস্যকে তুলে ধরেছেন।
উল্লেখিত অংশটি ("অতুল ঐশ্বর্যে রত, / তাঁর
ভিখারির ব্রত, / এ যে দেখি জলে ভাসে শিলা।") কবিতার অন্যতম
গুরুত্বপূর্ণ স্তবক। এর তাৎপর্য বিশ্লেষণ করা যাক:
অতুল ঐশ্বর্যে রত: এখানে
কবি শিবাজিকে অসীম ঐশ্বর্যের কথা উল্লেখ করেছেন। এই ঐশ্বর্য কেবল বস্তুগত নয়, বরং তা
সমগ্র মানবতাবাদে প্রতিফলিত।
তাঁর ভিখারির ব্রত: যদিও শিবাজি
সর্বশক্তিমানের অধিপতি, তবুও তিনি মানবমনে সহমর্মিতা, দানশীলতা ও ত্যাগের
আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি যেন এই ব্রত পালন করে দেখান যে, সত্যিকারের
ঐশ্বর্য নিজের জন্য কিছু সংগ্রহে নয়, বরং অন্যের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ায়।
জলে ভাসে শিলা:এখানে
"শিলা" প্রতীকী। এটি অটলতা, শক্তি, এবং দৃঢ়তার প্রতীক। শিলা জলে ভাসার চিত্রটি প্রকৃতির এক
অদ্ভুত চমৎকার, যা মানবজীবনের গভীর সত্যকে বোঝায়। শিলা স্বাভাবিকভাবে ভারী
এবং নিমজ্জিত হওয়ার কথা, কিন্তু তার ভেসে থাকা ঈশ্বরের এক অলৌকিক রহস্য। এটি ইঙ্গিত
করে, ঈশ্বরের
সৃষ্টির মধ্যে সবকিছুই ব্যাখ্যার অতীত এবং মানুষকে সেই গভীর সত্য উপলব্ধি করতে হবে।
সারমর্ম: এখানে
যখন শিবাজি সবকিছু ত্যাগ করে গুরুর সাথে ভিক্ষা করতে গিয়েছিলেন তখন রাজা শিবাজিকে
ভিখারির বেশে দেখে সকল পুরবাসী কম্পমান হস্তে লজ্জাভরে রাজাকে ভিক্ষা দেয়, এই দেখে
কবি বলেল যে অতুল ঐশ্বর্যে রত, তাঁর ভিখারির ব্রত এ যে দেখি জলে
ভাসে শিলা।
৬। টীকা লেখো।
শিবাজি
শিবাজি মহারাষ্ট্রের মারাঠা জাতির জাতীয় বীর শিবাজি।
তিনি ছিলেন এক আদর্শবান প্রবল দেশভক্ত রাজা। শিবাজি কোনো
রাজা মহারাজার পুত্র ছিলেন না। তিনি ছিলেন ভারতের ইতিহাসে তথা মহারাষ্ট্রের সাহসী, সুচতুর ও বীরপুরুষ।
তাঁর পিতার নাম ছিল শাহুজি এবং মাতার নাম জীজাবাঈ। জীজাবাঈ সতী এবং বীরাঙ্গনা
ছিলেন। শিবাজি নিজের বাহুবলে, সাহস বীর্য এবং কৌশলে মহারাষ্ট্রে বিশাল একটি হিন্দুরাজ্য স্থাপন
করেছিলেন। শিবাজির ঠাকুরদা কোন্দল দেব শিবাজিকে যুদ্ধের কৌশল শেখাতেন। শিবাজি
ছিলেন মা ভবানী দেবীর ভক্ত। এ দেবীই ছিলেন শিবাজির আরাধ্যা দেবী। সে সময় দিল্লির
সম্রাট ছিলেন ঔরঙ্গজেব। ঔরঙ্গজেব অতি নিষ্ঠুর প্রকৃতির রাজা ছিলেন। তিনি শিবাজির
সাহস ও বীরত্বের কথা অবগত ছিলেন। তিনি অত্যন্ত কৌশল এবং বিশ্বাসঘাতকতায় একবার
সন্ধির ভান করে শিবাজিকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ করেন। শিবাজি দিল্লিতে গেলে ঔরঙ্গজেব
শিবাজিকে গৃহবন্দী করে রাখেন। অনেক দিন পর শিবাজি কৌশলে রোগমুক্তির ভান করে তাঁর
প্রিয়জনদের ফলমূল বিতরণ করার সময় ঝুড়িতে করে বন্দী দশা থেকে পালিয়ে যান। পরে
শিবাজির সঙ্গে ঔরঙ্গজেবের অনেক যুদ্ধ হয়। শিবাজি মহারাষ্ট্রের রায়গড়ে রাজদরবার
স্থাপন করে ছত্রপতি শিবাজি নাম নিয়ে সিংহাসনে বসেন। শিবাজির গুরু ছিলেন রামদাস।
শিবাজি গুরু রামদাসের উপদেশেই রাজ্য শাসন করতেন। বৈরাগীর উত্তরীয় গেরুয়া রঙের। তাই
শিবাজির পতাকার রং ছিল গেরুয়া। আনুমানিক ১৬২৭ সালের
এপ্রিল মাসে শিবাজির জন্ম হয় এবং ১৬৮০ সালের ৩ এপ্রিল মারা যান।
গুরু রামদাস
মহারাষ্ট্রের মারাঠা জাতির জাতীয় বীর ছত্রপতি শিবাজির
গুরুদেব ছিলেন গুরু রামদাস । গুরুর আদর্শনিষ্ঠা, জীবন, ত্যাগ ও সাধনা রাজা
শিবাজিকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে । গেরুয়াধারী সর্বত্যাগী সাধক গুরু রামদাসের
ভগবৎ ভক্তি অপরিসীম । প্রকৃত রাজধর্ম কী তা তিনি শিষ্য শিবাজিকে শিখিয়েছেন ।
ভারতীয় সংস্কৃতির পুরাতন বিশ্বাসই হলো আদর্শবান রাজাই হবেন ভিক্ষুকের প্রতিনিধি।
ত্যাগ ও সাধনাপূর্ণ ঐশ্বর্যহীন, রিক্ত রাজাই রাজর্ষি
হওয়ার যোগ্য। গুরু রামদাস শিবাজিকে এই পাঠই শিখিয়েছেন। রাজ্য নিয়ে রাজ্যহীন
হয়ে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে রাজ্য শাসন করাই হলো উপযুক্ত রাজার প্রধান কর্তব্য।
গুরুর পাদুকা দুটি সিংহাসনে স্থাপন করে শিবাজি রাজ্য শাসন করতেন। বৈরাগীর উত্তরীয়
গেরুয়া রঙের । সেজন্য শিবাজির পতাকার রং ছিল গেরুয়া।
গুরু রামদাস (১৫৩৪–১৫৮১) শিখ ধর্মের চতুর্থ গুরু তার সাথে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ সংগীতশিল্পী। তাঁর গান বা শবদে (শব্দ) গভীর ধর্মীয় ও
আধ্যাত্মিক বার্তা রয়েছে। গুরু রামদাসের গানে প্রধানত ভক্তি, প্রেম এবং একেশ্বরবাদী চিন্তা প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি
শিষ্যদের ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এবং বিশ্বাসের গুরুত্ব বোঝান। তাঁর গানে ঈশ্বরের
প্রতি অনুগততা এবং তাঁর সান্নিধ্য লাভের আকাঙ্ক্ষা স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। গুরু
রামদাস তাঁর গানে আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। জীবনের লক্ষ্য হল আত্মার
মুক্তি এবং ঈশ্বরের সাথে একাত্মতা লাভ করা। তাই তাঁর গানে সাধনা এবং আত্মবিশ্বাসের
বার্তা থাকে। তিনি তাঁর গানে সমতাবাদ এবং মানবতা প্রচার
করেছেন। তাঁর গানগুলি সামাজিক অনাচার এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ছিল এবং সমাজের
মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিল।
(ক) প্রতিশব্দ লেখো :
উত্তরঃ ঘুম — নিদ্রা, তন্দ্রা।
রবি
— সূর্য, দিবাকর, ভানু।
তৃণ — ঘাস, শস্য, পল্লব।
মন্দির — দেবালয় , দেবগৃহ।
সন্ধ্যা — সাঁঝ, গোধূলি।
বিভাবরী — রাত্রি, যামিনী, নিশা।
নিখিল — সমগ্র, সার্বজনীন ।
(খ) সন্ধি বিচ্ছেদ করো :
উত্তরঃ মহাকাশ = মহা + আকাশ।
দেবেন্দ্র = দেব + ইন্দ্র।
চন্দ্রাতপ = চন্দ্র + আতপ।
(গ) বাক্যরচনা করো —
মিটাবারে, চরাচর, দ্বারে
দ্বারে, সমাপন, দাসত্ব, থরথর, প্রতিনিধি, পুরবাসী।
উত্তরঃ মিটাবারে: — সমাজের দুঃখ-দুর্দশা মিটাবারে একদল তরুণ এগিয়ে এসেছে।
চরাচর: — বসন্তের মৃদু বাতাসে চরাচর ভরে উঠেছে পুষ্পের সুগন্ধে।
দ্বারে
দ্বারে: — স্বাধীনতার বার্তা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দ্বারে দ্বারে ঘুরে
বেড়িয়েছিলেন।
সমাপন: — দীর্ঘ প্রতীক্ষার
পর অনুষ্ঠানের সমাপন ঘোষণা করা হলো।
দাসত্ব: — দাসত্বের শৃঙ্খল
ভেঙে মানুষ স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিল।
থরথর: — ভয় পেয়ে শিশুটি
থরথর করে কাঁপছিল।
প্রতিনিধি: — তিনি আমাদের এলাকার
জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
পুরবাসী: — মন্দির উৎসবে অংশ
নিতে পুরবাসীরা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন।
(ঘ) পদ পরিবর্তন করো—
অধুনা,
অগ্নি, আঘাত, অন্তর, দেব, তপ্ত, উল্লাস, মন, সন্ধ্যা, তরুণ, মন্ত, দূর, আগুন, সূর্য,
বৈরাগি, অলস, ঘুম, চন্দ্ৰ ।
উত্তরঃ অধুনা → অধুনিক (বিশেষণ)
অগ্নি → অগ্নিময়
(বিশেষণ)
আঘাত → আঘাত করা
(ক্রিয়া)
অন্তর → অন্তরের
(বিশেষণ)
দেব → দেবতা
(বিশেষ্য)
তপ্ত → তাপ
(বিশেষ্য)
উল্লাস
→ উল্লাসিত
(বিশেষণ)
মন → মনের
(বিশেষণ)
সন্ধ্যা
→ সন্ধ্যাকালীন
(বিশেষণ)
তরুণ → তরুণী
(বিশেষ্য)
মন্ত → মন্তব্য
(বিশেষ্য)
দূর → দূরত্ব
(বিশেষ্য)
আগুন → অগ্নিস্ফুলিঙ্গ
(বিশেষ্য)
সূর্য → সূর্যকিরণ
(বিশেষ্য)
বৈরাগি
→ বৈরাগ্য
(বিশেষ্য)
অলস → অলসতা
(বিশেষ্য)
ঘুম → ঘুমানো
(ক্রিয়া)
চন্দ্র
→ চন্দ্রালো
(বিশেষণ)
৮। নিজে করো — (পদ পরিবর্তন করো)
উচিত , ভ্রম , শীত ,
বিধি , মহত্ব , এক , উদার , সংযম ,
মোহ , নৈশ ।
উত্তরঃ উচিত → উচিততা (বিশেষণ → বিশেষ্য)
ভ্রম → ভ্রান্ত (বিশেষ্য → বিশেষণ)
শীত → শীতল (বিশেষ্য → বিশেষণ)
বিধি → বিধান (বিশেষ্য → বিশেষ্য)
মহত্ব → মহান (বিশেষ্য → বিশেষণ)
এক → একতা (বিশেষণ → বিশেষ্য)
উদার → উদারতা (বিশেষণ → বিশেষ্য)
সংযম → সংযত (বিশেষ্য → বিশেষণ)
মোহ → মোহিত (বিশেষ্য → বিশেষণ)
নৈশ → নৈশতা (বিশেষণ → বিশেষ্য)
(ঙ) উক্তি পরিবর্তন করো
।
প্রশ্ন। উক্তি কত প্রকার ও কী কী ?
উত্তরঃ উক্তি
দুই প্রকার — প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উপস্থিতি।
(১)
প্রত্যক্ষ উক্তি — অনিল বললো, “আমি প্রধানমন্ত্রীকে দেখেছি।”
পরোক্ষ উক্তি — অনিল বললো যে সে প্রধানমন্ত্রীকে
দেখেছে।
(২)
প্রত্যক্ষ উক্তি
— রাম বলল, “আমি আজ যাব
না ।”
পরোক্ষ উক্তি —
রাম জানাল যে সে আজ যাবে না।
(৩) প্রত্যক্ষ উক্তি — শিক্ষক মহাশয় আমাকে বলেছেন, “তোমার বাড়ির
ঠিকানাটা কী ?”
পরোক্ষ উক্তি — শিক্ষক মহাশয় আমার বাড়ির ঠিকানা
জিজ্ঞাসা করলেন।
(৪)
প্রত্যক্ষ উক্তি — হরি বললো, “আমি কালিদাসের নাম শুনেছি।"
পরোক্ষে উক্তি
— হরি বললো যে সে কালিদাসের নাম শুনেছে।
১। বাবা আমাকে বললেন , “এখন আমাকে বিরক্ত করিস না ।”
উঃ বাবা আমাকে বললেন যে তখন তাকে বিরক্ত করতে না।
২। অনিতা মাকে বলল , “আমরা
কোথায় যাচ্ছি মা ।”
উঃ অনিতা
মাকে জিজ্ঞাসা করল,
তারা কোথায় যাচ্ছে।
৩। রানি বিট্টুকে বলল , “তুই কোথায় যাচ্ছিস ?”
উঃ রানি
বিট্টুকে জিজ্ঞাসা করল সে কোথায় যাচ্ছে।
৪। ভদ্রলোকটি বললেন, “ওগো সাধু আমি টাকা –পয়সা চাই না ।”
উঃ ভদ্রলোকটি
বললেন যে,
তিনি সাধুকে জানাচ্ছেন, তিনি টাকা-পয়সা চান না।
চ। প্রবাদ-প্রবচন ।
নানা
মুনির নানা মত, সবুরে মেওয়া
ফলে, সস্তার তিন অবস্থা, ভাগের
মা গঙ্গা পায় না, মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত, দশাচক্রে ভগবান ভূত।
উত্তরঃ ক। নানা
মুনির নানা মত: একেকজন ব্যক্তির চিন্তা ও মতামত একেক রকম হয়।
খ। সবুরে
মেওয়া ফলে: ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলে সফলতা আসে।
গ। সস্তার
তিন অবস্থা: খুব কম দামে কেনা জিনিস সাধারণত ভালো হয় না।
ঘ। ভাগের
মা গঙ্গা পায় না: ভাগাভাগিতে প্রকৃত অধিকারী প্রায়ই বঞ্চিত হয়।
ঙ। মোল্লার
দৌড় মসজিদ পর্যন্ত: সীমিত জ্ঞানের ব্যক্তি তার গণ্ডির বাইরে কিছু করতে পারে না।
চ। দশাচক্রে ভগবান ভূত: দুর্ভাগ্য এলে শক্তিমান ব্যক্তিও অসহায় হয়ে পড়ে।
Note for Users
If you find any incorrect answers, please notify us via Instagram at @pipalacademy or email us at info@pipalacademy.com. For content that may infringe copyright, kindly refrain from copying our content. Thank you for supporting Digital Pipal Academy!
যদি আপনি কোনো ভুল উত্তর পান, অনুগ্রহ করে আমাদের @pipalacademy ইনস্টাগ্রামে জানাবেন অথবা info@pipalacademy.com ইমেইলের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। কপিরাইট লঙ্ঘন করতে পারে এমন বিষয়বস্তুর জন্য, আমাদের বিষয়বস্তু কপি করা থেকে বিরত থাকুন। ডিজিটাল পিপাল একাডেমিকে সমর্থন করার জন্য ধন্যবাদ!
Join Our WhatsApp GroupSudev Chandra Das (B.Sc. Mathematics)
Hi! I'm Sudev Chandra Das, Founder of Digital Pipal Academy. I've dedicated myself to guiding students toward better education. I believe, 'Success comes from preparation, hard work, and learning from failure.' Let’s embark on a journey of growth and digital excellence together!.