SEBA Class 10 Bengali Chapter 6 "সাগর-সঙ্গমে নবকুমার" all answers solutions.

Gobinda Debnath

Heading with Bright Purple Background
SEBA Class 10 Bengali Chapter 6 "সাগর-সঙ্গমে নবকুমার" - All Questions and Answers

SEBA Class 10 Bengali Chapter 6 "সাগর-সঙ্গমে নবকুমার" - All Questions and Answers

📚 Welcome to Digital Pipal Academy, your go-to platform for free, high-quality educational content for Assam Board students. In this post, we provide detailed solutions for SEBA Class 10 Bengali Chapter 6, "সাগর-সঙ্গমে নবকুমার", ensuring students understand the key concepts clearly and effectively.

Get Free NCERT PDFs

If you want to download free PDFs of any chapter from any subject, click the link below and join our WhatsApp group.

(যদি তুমি যেকোনো বিষয়ের বিনামূল্যে PDF ডাউনলোড করতে চাও তাহলে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করো এবং আমাদের WhatsApp গ্রুপে যোগ দাও)

Join Our WhatsApp

 

What You’ll Get in This Post?

✔️ Comprehensive explanations for all textbook questions
✔️ Simplified answers for better understanding
✔️ Exam-oriented solutions for SEBA Board students

Get well-structured answers to help you excel in your exams with confidence! 🚀📖

সাগর-সঙ্গমে নবকুমার

 

SEBA Class 10 Bengali Chapter 6 (গদ্যাংশ)


ক্রিয়াকলাপ:

প্রশ্ন ১। অতিরিক্ত সংক্ষিপ্ত উত্তর দেয়।

(ক) নবকুমার কে ?

উত্তরঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচিত সাগর সঙ্গমে নবকুমার দ্যাংশের একটি চরিত্র হল নবকুমার, যে সপ্তগ্রামের অধিবাসী এক কর্মক্ষম সুন্দর ও বলিষ্ঠ ব্রাহ্মণ সন্তান

(খ) নবকুমার সঙ্গীগণ কর্তৃক পরিত্যক্ত হওয়ার প্রধান কারণ কী ছিল ?

উত্তরঃ নবকুমার তার সঙ্গীদের সাথে নৌকোয় করে গঙ্গাসাগরে স্নান করতে যায়, ফিরার পথে তারা দিক ভুলে যায় এবং প্রবল স্রোতে একটি বিজান দ্বীপে এসে ঠেকে। সকলেই ওই দ্বীপে যেতে না চাওয়ায় তখন নবকুমার নৌকার যাত্রীদের সকলের ক্ষুধাপিপাসা নিবারণের জন্য কাঠ সংগ্রহ করতে একাই সেই বিজান দ্বীপে চলে যান। এদিকে জোয়ার আসায় নৌকা ভেসে যাই এবং ফিড়ে এসে নবকুমার দেখতে পাই যে নৌকাও নেই, কোনো জনমানবও নেই এভাবে নবকুমারের সঙ্গীগণ কর্তৃক পরিত্যক্ত হন

(গ) নবকুমার নির্জন সমুদ্রতীরে পরিত্যক্ত হল কেন ?

উত্তরঃ নবকুমার তার সঙ্গীদের সাথে নৌকোয় করে গঙ্গাসাগরে স্নান করতে যায়, ফিরার পথে তারা দিক ভুলে যায় এবং প্রবল স্রোতে একটি বিজান দ্বীপে এসে ঠেকে। সকলেই ওই দ্বীপে যেতে না চাওয়ায় তখন নবকুমার নৌকার যাত্রীদের সকলের ক্ষুধাপিপাসা নিবারণের জন্য কাঠ সংগ্রহ করতে একাই সেই বিজান দ্বীপে চলে যান। এদিকে জোয়ার আসায় নৌকা ভেসে যাই এবং ফিড়ে এসে নবকুমার দেখতে পাই যে নৌকাও নেই, কোনো জনমানবও নেই এভাবে নবকুমার একাকী সেই বিজন বনে(দ্বীপে) নির্বাসিত হন

(ঘ) ঘুম ভাঙার পর নবকুমার বহুদূরে কী দেখেছিল ?

উত্তরঃ ঘুম ভাঙার পর নবকুমার বহুদূরে এক আলোকবিন্দু দেখছিল

(ঙ) কখন কাপালিকের সঙ্গে নবকুমারের সাক্ষাৎ হয়েছিল ?

উত্তরঃ কাপালিকের ধ্যানভঙ্গের পরে নবকুমারের সাথে কাপালিকের দেখা হয়েছিল।

(চ) পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ? উক্তিটি কার ?

উত্তরঃ পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ? উক্তিটি কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলার ।

(ছ) কস্তম শব্দের অর্থ কি ?

উত্তরঃ কস্তম শব্দের অর্থ হলকে তুমি

(জ) নবকুমার জাতিতে ছিল_______?

উত্তরঃ নবকুমার জাতিতে ছিল ব্রাহ্মণ।

(ঝ) নবকুমার পর্ণকুটিরে কী খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করেছিল ?

উত্তরঃ নবকুমার পর্ণকুটিরে কাপালিকের দেওয়া কিছু ফল ও জল খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করে়ছিল

(ঞ) অস্পষ্ট সন্ধ্যালোকে কে নবকুমারকে পর্ণকুটিরের পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ?

উত্তরঃ অস্পষ্ট সন্ধ্যালোকে কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা নবকুমারকে পর্ণকুটির পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল

(ট) “কাপালিক মনুষ্য, আমিও মনুষ্য” উক্তিটি কার ?

উত্তরঃ “কাপালিক মনুষ্য, আমিও মনুষ্য” উক্তিটি উক্তিটি নবকুমারের ।

(ঠ) কাপালিকের পর্ণকুটিরে নবকুমার কী দেখেছিল ?

উত্তরঃ কাপালিকের পর্ণকুটিরে পৌঁছে নবকুমার দেখেছিল যে পর্ণকুটিটি কিয়াপাতা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, এবং সেখেনা কয়েকটি ব্যাঘ্রচর্ম্ম, এক কলস জল ও কিছু ফলমূল ছিল

(ড) কাপালিকের বয়স কত ছিল ?

উত্তরঃ কাপালিকের বয়স ছিল প্রায় পঞ্চাশ বৎসর।

(ঢ) প্রাতে উঠে নবকুমার কী করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল ?

উত্তরঃ প্রাতে উঠে নবকুমার বাড়ি যাবার উপায় ভেড় করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল ।

 

প্রশ্ন ২। সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও :

 

(ক) ‘সাগর সঙ্গমে নবকুমার’ পাঠটি কার লিখিত এবং কোন গ্রন্থের অন্তর্গত ?

উত্তরঃ ‘সাগর সঙ্গমে নবকুমার’ পাঠটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখিত এবং এটি ‘কপালকুণ্ডলা’ গ্রন্থের অন্তর্গত।

 

(খ) নবকুমার কোথায়, কীভাবে পরিত্যক্ত হয়েছিল ?

উত্তরঃ নবকুমার তার সঙ্গীদের সাথে নৌকোয় করে গঙ্গাসাগরে স্নান করতে যায়, ফিরার পথে তারা দিক ভুলে যায় এবং প্রবল স্রোতে একটি বিজান দ্বীপে এসে ঠেকে। সকলেই ওই দ্বীপে যেতে না চাওয়ায় তখন নবকুমার নৌকার যাত্রীদের সকলের ক্ষুধাপিপাসা নিবারণের জন্য কাঠ সংগ্রহ করতে একাই সেই বিজান দ্বীপে চলে যান। এদিকে কাঠ যোগাড় করতে দেরী হওয়ায় এবং সমুদ্রে জোয়ার আসার কারণে নির্জন বনে নবকুমার সঙ্গীগণ কর্তৃক পরিত্যক্ত হয়েছিল ।

 

(গ) কী রূপ পরিস্থিতিতে কী কারণে নবকুমার বিজন বনে পরিত্যক্ত হয়েছিল ?

উত্তরঃ নবকুমার তার সঙ্গীদের সাথে নৌকোয় করে গঙ্গাসাগরে স্নান করতে যায়, ফিরার পথে তারা দিক ভুলে যায় এবং প্রবল স্রোতে একটি বিজান দ্বীপে এসে ঠেকে। সকলেই ওই দ্বীপে যেতে না চাওয়ায় তখন নবকুমার নৌকার যাত্রীদের সকলের ক্ষুধাপিপাসা নিবারণের জন্য কাঠ সংগ্রহ করতে একাই সেই বিজান দ্বীপে চলে যান। এদিকে জোয়ার আসায় নৌকা ভেসে যাই এবং ফিড়ে নৌকা বা তার আরোহী কাউকে দেখতে পেলো না। সে প্রথমে ভাবলো, জোয়ারের বেগ কমলে নৌকা ফিরে আসতে পারে । কিন্তু নৌকা আর ফিরল না, রাত্রি হল। নবকুমার ক্ষুধা তৃষ্ণায় এবং ভয়ে কাতর হয়ে পড়ল এবং এজন্য নবকুমার বিজন বনে পরিত্যক্ত হয়েছিল।

 

(ঘ) কাপালিককে নবকুমার কোথায় কী অবস্থায় দেখতে পায় তা লেখো ।

উত্তরঃ নবকুমার একাকী বিজন বনে(দ্বীপে) নির্বাসিত হবার পর ক্ষুধা – তৃষ্ণায় কাতর হয়ে লোকালয় সন্ধানে ব্যস্ত হয়ে পথ চলতে থাকে । এমতাবস্থায় বহুদূরে এক আলোকশিখা দেখতে পেয়ে বুঝল যে নিকটে  অবশ্যই মানুষ রয়েছে — এই আশায় সে সেদিকে চলতে থাকে ।

আলোর কাছে গিয়ে দেখতে পেল এক ভীষণ-দর্ষন গলিত শবের উপর বসে হোমাগ্নি জ্বেলে এক কাপালিক ধ্যান করছে, পরিধানে কোনো কার্পাসবস্ত্র ছিল না, কটিদেশ হইতে জানু পর্য্যন্ত শার্দ্দুলচর্ম্মে আবৃত এবং গলদেশে রুদ্রাক্ষমালা, মুখে গোফদাড়িতে পরিপূর্ণ ছিল । সম্মুখে কাঠে আগুন জ্বলছে। চারিদিকে অসংখ্য নরমুণ্ড, হাড়, কঙ্কাল পড়ে রয়েছে। নবকুমার অস্থি , নরকঙ্কাল, নরমুণ্ড, হাড় ও অগ্নিবেষ্টিত কাপালিককে নিরীক্ষণ করতে থাকে।

 

(ঙ) নবকুমার কার সহায়তায় কেমন করে পুনরায় পর্ণকুটীরে পৌঁছতে পেরেছিল ?

উত্তরঃ নবকুমার পরদিন প্রভাতে কাপালিকের সেই পর্ণকুটিতে কাপালিককে আর দেখতে না পেয়ে, চারিপাশে খুজঁতে শুরু করে । কাপালিককে খুজঁতে খুজঁতে নবকুমার পর্ণকুটিতে যাওয়ার পথ হারিয়ে ফেলেন। পরে অন্ধকারে এক অতি সুন্দরী রমণীর সঙ্গে তার দেখা হয়। রমণী নবকুমারকে পথ হারিয়েছে কি না জিজ্ঞাসা করে এবং পূর্বের কুটিরে নবকুমারকে পৌঁছে দিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। সেই রমণীটি ছিল কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলার যার সহায়তায় নবকুমার পুনরায় পর্ণকুটিরে পৌঁছতে পেরেছিল।

 

(চ) কাপালিকের পর্ণকুটিরের যথাযথ বিবরণ দাও ।

উত্তরঃ কাপালিকের পর্ণকুটিরের বর্ণনা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং রহস্যময়। কাপালিকের পর্ণকুটিরটি একটি নির্জন, বিপজ্জনক ও গহীন বনাঞ্চলে অবস্থিত যেটা কেয়াপাতায় তৈরিসেই ঘরে ব্যাঘ্রচর্ম, এক কলস জল ও কিছু ফলমূল ছিল । সাগর ও নদীর সঙ্গমস্থলের গভীর জঙ্গলের মধ্যে সেই পর্ণকুটিটি নির্মিত। এই স্থানটি জনবসতি থেকে দূরে, ভয়ানক ও ভীতিকর পরিবেশে আবৃত।  চারপাশে ঘন অরণ্য এবং উচ্চ বৃক্ষরাজি পর্ণকুটিরকে আচ্ছাদিত করে রেখেছে। বিভিন্ন ঝোপঝাড়, বুনো লতাগুল্ম ও অদ্ভুত পাখির ডাক এই পরিবেশের গাঢ়তা বাড়িয়েছে।  কুটিরের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা হাড়গোড়, অগ্নিকুণ্ড ও পূজার সামগ্রী কাপালিকের অঘোর তন্ত্রচর্চার ইঙ্গিত দেয়। কাপালিকের অভ্যাস ও তার গাঢ় দৃষ্টি এই স্থানকে আরও ভয়াবহ করে তোলে।

 

(ছ) কাপালিকের পর্ণকুটিরে নবকুমার কী করে প্রাপ্ত তণ্ডুল আত্মসাৎ করেছিল?

উত্তরঃ নবকুমার দেখে কাপালিকের পর্ণকুটিরে পাকোপযোগী কিছু কিছু সামগ্রী রয়েছে। সেখানে একটি পাত্রে নবকুমার কিছু তণ্ডুল (চাল) দেখতে পায়। কাপালিক তখন অনুপস্থিত ছিল। প্রচণ্ড ক্ষুধার তাড়নায় নবকুমার আর নিজেকে সংযত রাখতে পারেনি। সে সেই তণ্ডুলগুলি কুটির মধ্যে এক মৃৎপাত্রে সিদ্ধ করে আত্মসাৎ করেছিল ।  এই কাজটি করার সময় নবকুমারের মনে দ্বিধা ছিল—কারণ এটি তার নীতিবোধের বিরুদ্ধে ছিল। তবুও তার ক্ষুধা ও পরিস্থিতি তাকে এই কাজ করতে বাধ্য করে।

 

(জ) “কোথা যাইতেছ? যাইও না। ফিরিয়া যাও — পলায়ন করো।” — উক্তিটি কার ? কে, কাকে, কখন, কেন এ উক্তি করেছিল ? নবকুমার পরে কী করল ?

উত্তরঃ “কোথা যাইতেছ? যাইও না। ফিরিয়া যাও — পলায়ন করো।” উক্তিটি কপালকুণ্ডল, নবকুমারকে বলেছিল। কাপালিকের সঙ্গে পরদিন নবকুমারের দেখা হলে নবকুমার গৃহে ফিরতে কাপালিকের সাহায্য চাইলে কাপালিক সে বিষয়ে কোনো উত্তর না দিয়ে নবকুমারকে বধ হেতু পূজাস্থানে নিয়ে যাবার সময়  কপালকুণ্ডলা নবকুমারকে রক্ষা হেতু এই উক্তি করেছিল নবকুমার এই সতর্কবার্তা শুনে কিছুক্ষণের জন্য বিভ্রান্ত ও হতবাক হয়ে পড়ে এরপর নবকুমার যখন বোঝে শারীরিক শক্তিতে কাপালিকের সঙ্গে পেরে ওঠা অসম্ভব তখন সে বুদ্ধি খাটিয়ে সেই অবস্থা থেকে উদ্ধার পেতে চেষ্টা করেছিল।

 

প্রশ্ন ৩। শূন্যস্থান পূরণ করো :

 

(ক) সে তো আশঙ্কাসূচক, কিন্তু ______ ? ______ সকলই করিতে পারে। তবে কি______?  পলাইব বা ______ ?

উত্তরঃ সে তো আশঙ্কাসূচক, কিন্তু কিসের আশঙ্কা ? তান্ত্রিকেরা সকলই করিতে পারে । তবে কি পলাইব ? পলাইব বা কেন ?

 

(খ) নবকুমার কহিলেন, “এ পর্যন্ত ______ দর্শনে কি জন্য ______ ছিলাম ?” কাপালিক কহিল ______ নিযুক্ত ছিলাম ।

উত্তরঃ নবকুমার কহিলেন, “এ পর্যন্ত প্রভুর দর্শনে কি জন্য বঞ্চিত ছিলাম ।কাপালিক কহিল “নিজ ব্রতে নিযুক্ত ছিলাম । ”

 

(গ) ভ্রমণ করিতে করিতে ______ শ্রম জন্মিল । ______ অনাহার; এজন্য ______ ______ হইলেন।

উত্তরঃ ভ্রমণ করিতে করিতে নবকুমারের শ্রম জন্মিল । সমস্ত দিন অনাহার; এজন্য অধিক অবসন্ন হইলেন ।

 

(ঘ) ______ হইতে জানু পর্যন্ত ______ আবৃত। গলদেশে ______;

উত্তরঃ কটিদেশ হইতে জানু পর্যন্ত শাৰ্দ্দুলচৰ্ম্মে আবৃত । গলদেশে রুদ্রাক্ষমালা ;

 

(ঙ) পরে ______ শয়ন করিলেন, সমস্ত ______ ______ শীঘ্রই ______ হইলেন ।

উত্তরঃ পরে ব্যাঘ্রচর্ম্মে শয়ন করিলেন, সমস্ত দিবসজনিত ক্লেশহেতু শীঘ্রই নিদ্রাভিভূত হইলেন ।

 

প্রশ্ন ৪। রচনাধর্মী উত্তর দাও :

 (ক) “পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ?” — উক্তিটির আলোকে ঘটনার পূর্বাপর আলোচনা করো।

উত্তরঃ সপ্তগ্রাম নিবাসী নবকুমার একবার গঙ্গাসাগরে তীর্থদর্শনে গিয়েছিল। ফেরার সময় তাদের নৌকা ঘোরতর কুয়াশায় সঙ্গীহীন হয়ে পড়েছিল । রোদ উঠলে তারা দেখতে পায়, তারা রসুলপুরের নদীর মোহনায় এসে পড়েছে। সেখানে সমুদ্রের মতই নদীর বিস্তার। তারা সমুদ্রের পশ্চিমতটের কাছে এস, সেখানে তাদের নৌকা বাঁধল। জোয়ারের দেরী দেখে আরোহীরা সম্মুখের সমুদ্রসৈকতে রান্নাবান্না করার জন্য নামে। কিন্তু নৌকায় রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় কাঠ ছিলো না। বাঘের ভয়ে কেউ বনের মধ্যে প্রবেশ করতে সাহস করল না। সাহসী যুবক নবকুমার তখন একা কাঠ আনতে যায়। কাঠ যোগাড় এবং বহন করে আনতে নবকুমারের কিছু দেরী হয়। তার মধ্যে জোয়ার এসে পড়ায় নাবিকেরা এবং তার সঙ্গীসাথিরা নৌকা ছেড়ে দেয় এবং জোয়ারের তীব্র বেগে নৌকা বহুদূর চলে যায়। প্রতিবেশী এবং সহযাত্রী সকলের নবকুমারের কথা মনে থাকলেও নৌকা নবকুমারকে ছেড়ে সপ্তগ্রামে ফিরে আসে। প্রচারিত হয় যে হয়তো নবকুমারকে বাঘে হত্যা করেছে।

নবকুমার অনেক কষ্টে কাঠ নিয়ে ফিরে এসে দেখে নৌকা, কোনো জনমানবও নেই। নৌকা ফিরে আসবে এই আশায় সে সারাদিন সেখানে অপেক্ষা করতে থাক । নবকুমার দেখে সেখানে কোনো “গ্রাম নাই, আশ্রয় নাই, লোক নাই, আহার্য না, নদীর জল অসহ্য লবণাত্মক; অথচ ক্ষুধা – তৃষ্ণায় তাঁহার হৃদয়বিদীর্ণ হইতেছিল।” তার উপর এই বিজান বনে নরখাদক বা়ঘের ভয়ও আছে। অতএব নবকুমার মনে মনে বোঝে তার প্রাণনাশই নিশ্চিত। নানা চিন্তায় অস্থির নবকুমার এদিক ওদিক ভ্রমণ করতে থাকে। ক্রমে অন্ধকার হয়। ভ্রমণ করতে করতে নবকুমারের দেহ অবসন্ন হয়ে পড়ে। সে বালিয়াড়ির পাশে এক জায়গায় বসে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল সে জানতেই পারল নাঘুম যখন ভাঙে তখন অনেক রাত। বাঘের ভয়ে সেও ভীত হয়ে এদিক ওদিক নিরীক্ষণ করে দেখতে থাকে। হঠাৎ বহুদূরে এক আলোকবিন্দু দেখতে পেয়ে সে বুঝল যে নিকটে অবশ্যই কোনো লোকালয় আছে। নবকুমার তাড়াতাড়ি সেখানে উপস্থিত হয় এবং দেখে এক ভীষণ-দর্শন কাপালিক ধ্যানমগ্ন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর কাপালিক তাকে তার পর্ণকুটিরে নিয়ে যায়। পরে নবকুমার কাপালিকের দেওয়া সামান্য ফলমূল আহার করে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ে ।

পরদিন সকালে নবকুমার, কাপালিকের পর্ণকুটিরে আর কাপালিককে দেখতে পেল না, সে সারাদিন অপেক্ষা করে নিরাশ হয়, ক্ষুধায় কাতর নবকুমার ফলান্বেষণে বের হয়। একটি গাছের খুব সুস্বাদু ফল খেতে নিবিড় বনমধ্যে সে পথ হারিয়ে ফেলে, কিছুক্ষণ পরে সমুদ্র সৈকতে উপস্থিত হয়। বসে বসে সে সমুদ্রের অনন্ত শোভা দেখতে থাকে। সন্ধে ঘনিয়ে আসে হঠাৎ নবকুমার সেখানে এক অপূর্ব রমণী মূর্তি দেখে হতবাক হয়। অনেকক্ষণ পরে সেই তরুণী জিজ্ঞেস করে, “পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ?” কোনো উত্তর না পাওয়ায় সে আবার বলে, “আইস”। নবকুমার তরুণীর পিছনে পিছনে চলল, কিন্তু কাপালিকের কুটিরের কাছে এসেই সুন্দরী বনের মধ্যে যেন কোথায় চলে গেল। রমণী সে আর কেও নয় শয়ং কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা ছিল।

কুটিরে কাপালিকের সঙ্গে নবকুমারের সাক্ষাৎ হয়। কাপালিকের আদেশ মতো নবকুমার তাকে অনুশরণ করতে থাকে, নবকুমার ভাবে তার বাড়ি যাবার কোনো উপায় হবে হয়তো। কিছুদূর যাবার পর হঠাৎ সেই রমণী নবকুমারের পিঠে স্পর্শ করে মৃদুস্বরে — “কোথা যাইতেছ? যাইও না, ফিরিয়া যাও — পলায়ন কর।” বলে বনের মধ্যে কোথার যে চলে তা নবকুমার কিছুই বুঝতে পারল না। নবকুমার মনে মনেই ভাবতে থাকে যে হয়তো তাকে বলি দেওয়ার জন্য পুজোর জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তান্ত্রিকের পুজোয় নরমাংসের প্রয়োজন হয় এবং তান্ত্রিকেরা সকলই করিতে পারে, কিন্তু পলায়ন করব কেন? কাপালিক ও মনুষ্য আমি (নবকুমার) ও মনুষ্য এইসব ভাবতে ভাবতে কাপালিকের সহিত নবকুমার সেই পুজোর স্থানে পৌঁছে যায়। পুজোর জায়গায় কাপালিক নবকুমারকে কতগুলি শুকনো, কঠিন লতাগুল্ম দিয়ে দৃঢ়ভাবে বেঁধে সমুদ্র সৈকতে ফেলে রাখে। নবকুমার নিজেকে মুক্ত করতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। কাপালিক বলির প্রাথমিক কাজ শেষ করে খড়গ নেওয়ার জন্য আসন ত্যাগ করে দেখে সেখানে খড়গ নেই। কপালকুণ্ডলাকে বারবার ডেকেও কোনো উত্তর পেল না। তখন কাপালিক বাড়ির দিকে যায়। ইতিমধ্যে  কপালকুণ্ডলা খড়গ দিয়ে নবকুমারের বাঁধন খুলে তাকে সঙ্গে নিয়ে পালিয়ে যায়। কপালকুণ্ডলা নবকুমারকে নিয়ে নিভৃত বনের মধ্যে এক মন্দিরে অধিকারীর আশ্রয় নেয় । অধিকারী কপালকুণ্ডলাকেও আর কাপালিকের কাছে ফিরতে দিল না । কারণ সেখানে গেলে তার আর রক্ষা থাকবে না। নবকুমারের সঙ্গে তার বিবাহ দিয়ে অধিকারী পরদিন তাদের মেদিনীপুরের পথ পর্যন্ত রেখে আসে। পরে তারা একসাথে সপ্তগ্রামে এসে সুন্দর জীবন অতিবাহিত করেন।

 

(খ) ‘সাগর সংগমে নবকুমার’ পাঠটির সারাংশ লেখো।

উত্তরঃ ‘সাগর সংগমে নবকুমার’ পাঠটি কবি ঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়  রচিত “কপালকুণ্ডলা” উপন্যাসটি থেকে নেওয়া হয়ছে, যে উপন্যাসটি ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।

সপ্তগ্রাম নিবাসী নবকুমার একবার গঙ্গাসাগরে তীর্থদর্শনে গিয়েছিল। ফেরার সময় তাদের নৌকা ঘোরতর কুয়াশায় সঙ্গীহীন হয়ে পড়েছিল । রোদ উঠলে তারা দেখতে পায়, তারা রসুলপুরের নদীর মোহনায় এসে পড়েছে। সেখানে সমুদ্রের মতই নদীর বিস্তার। তারা সমুদ্রের পশ্চিমতটের কাছে এসে পড়েছিল । জোয়ারের দেরী দেখে আরোহীরা সমুদ্র সৈকতে রান্নাবান্না করার জন্য নামে। কিন্তু রান্নার জন্য কাঠের অভাব ছিল। বাঘের ভয়ে কেউ বনের মধ্যে প্রবেশ করল না। সাহসী নবকুমার একাই কাঠ আনতে যায়। কাঠ যোগাড় এবং বহন করে আনতে নবকুমারের কিছু দেরী হয়। তার মধ্যে জোয়ার এসে পড়ায় নাবিকেরা এবং তার সঙ্গীসাথিরা নৌকা ছেড়ে দেয় এবং জোয়ারের তীব্র বেগে নৌকা বহুদূর চলে যায়। প্রতিবেশী এবং সহযাত্রী সকলের নবকুমারের কথা মনে থাকলেও নৌকা নবকুমারকে ছেড়ে সপ্তগ্রামে ফিরে আসে। প্রচারিত হয় যে হয়তো নবকুমারকে বাঘে হত্যা করেছে।

নবকুমার অনেক কষ্টে কাঠ নিয়ে ফিরে এসে দেখে নৌকা, কোনো জনমানবও নেই। নৌকা ফিরে আসবে এই আশায় সে সারাদিন সেখানে অপেক্ষা করতে থাক । নবকুমার দেখে সেখানে কোনো “গ্রাম নাই, আশ্রয় নাই, লোক নাই, আহার্য না, নদীর জল অসহ্য লবণাত্মক; অথচ ক্ষুধা – তৃষ্ণায় তাঁহার হৃদয়বিদীর্ণ হইতেছিল”। তার উপর এই বিজান বনে নরখাদক বা়ঘের ভয়ও আছে। অতএব নবকুমার মনে মনে বোঝে তার প্রাণনাশই নিশ্চিত। নানা চিন্তায় অস্থির নবকুমার এদিক ওদিক ভ্রমণ করতে থাকে। ক্রমে অন্ধকার হয়। ভ্রমণ করতে করতে নবকুমারের দেহ অবসন্ন হয়ে পড়ে। সে বালিয়াড়ির পাশে এক জায়গায় বসে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল সে জানতেই পারল না যখন ঘুম ভাঙে তখন অনেক রাত। বাঘের ভয়ে সেও ভীত হয়ে এদিক ওদিক নিরীক্ষণ করতে থাকে। হঠাৎ অনেক দূরে একটা আলো দেখতে পেয়ে সে বুঝল যে নিকটে অবশ্যই কোনো লোকালয় আছে। আলো দেখে নবকুমারের বেঁচে থাকবার আশা পুনরায় জাগ্রত হয়। উঠে আলোর উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করে । আলোর কাছাকাছি পৌঁছে দেখে যে একটি অল্প উঁচু বালির স্তুপের উপর আলো জ্বলছে এবং তার সামনে দেখা যাচ্ছে ছবির ন্যায় স্থির একটি মানুষকে। নবকুমার সেইদিকে দ্রুতবেগে চলতে শুরু করে। চিত্রপটের ন্যায় বসে থাকা মানুষটির কাছে পৌঁছে নবকুমার চিন্তিত হয়ে পড়ে। বালিস্তুপের শিখরে বসে থাকা মানুষটি চোখ বন্ধ করে ধ্যান করছিল। নবকুমার ধ্যানস্থ মানুষটির সামনে হাজির হয়ে রোমাঞ্চিত হয়। চলে আসবে অথবা তাঁর কাছে থাকবে সিদ্ধান্ত নিতে পারল না। শিখরে আসীন মানুষটি চোখ বন্ধ করে ধ্যান করছিল। নবকুমারকে প্রথমে দেখতে পেল না। নবকুমার দেখলো —মানুষটির বয়স ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত বাঘের চামড়া পরিহিত। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, মুখ গোফদাড়িতে পরিপূর্ণ । সম্মুখে কাঠে আগুন জ্বলছে। গলে যাওয়া একটি শবদেহের উপর বসে রয়েছেন । চারিদিকে অসংখ্য নরমুণ্ড, হাড়, কঙ্কাল পড়ে রয়েছে । নবকুমার বুঝতে পারে এ ব্যক্তি কাপালিক।

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর কাপালিক তাকে তার পর্ণকুটিরে নিয়ে যায়। সেখানে নবকুমারকে খাওয়ার জন্য কাপালিক কিছু ফলমূল দেয় । যাওয়ার আগে কাপালিক বলে যায় সে ফিরে না আসা পর্যন্ত নবকুমার যেন চলে না যায় । নবকুমার ফলমূল খেয়ে বাঘের চামড়ার উপর শুয়ে পড়ে ।

পরদিন অনেক বেলা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও নবকুমার কাপালিকের দেখা পেল না। নবকুমার কুটির ত্যাগ করে ফলমূলের আশায় বালিস্তপের চারিদিকে ঘুরে বেড়াতে থাকে। ঘুরতে ঘুরতে নবকুমার বনের মধ্যে প্রবেশ করে পথ হারিয়ে ফেলে। এমন সময় সাগরের গর্জন শুনতে পায় এবং শীঘ্রই সাগরের দেখা পায়। নবকুমার সাগরের পারে বহুক্ষণ বসে থাকে  ফেরার জন্য উঠে দাঁড়াতেই একটি অপূর্ব সুন্দরী নারীকে দেখতে পায়। এই দুর্গম বনের মধ্যে এমন দেবীমূর্তি দেখে নবকুমারের শরীর অবশ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ বাক্-শক্তি বন্ধ হয়ে থাকে। বহুক্ষণ পর তরুণী মৃদুস্বরে বলে— “পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ ?” কোনো উত্তর না পেয়ে সে আবার বলে — “আইস” । নবকুমার তরুণীর পিছনে পিছনে চলে, কিন্তু কাপালিকের কুটিরের কাছে এসেই সুন্দরী রমণী বনের মধ্যে চলে যায় । রমণী সে আর কেও নয় শয়ং কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা ছিল।

কুটিরে কাপালিকের সঙ্গে নবকুমারের সাক্ষাৎ হয়। কাপালিকের আদেশ মতো নবকুমার তাকে অনুশরণ করতে থাকে, নবকুমার ভাবে তার বাড়ি যাবার কোনো উপায় হবে হয়তো। কিছুদূর যাবার পর হঠাৎ সেই রমণী নবকুমারের পিঠে স্পর্শ করে মৃদুস্বরে বলে —— “কোথা যাইতেছ ? যাইও না, ফিরিয়া যাও পলায়ন কর।” নবকুমার কিছুই বুঝতে পারল না। এই কথা বলেই রমণী সরে যায়। প্রত্যুত্তর শোনার জন্য অপেক্ষা করল না। নবকুমার কিছুক্ষণ অভিভূত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। রমণী কোনদিকে গেল কিছুই বুঝতে পারল না। মনে মনে ভাবতে থাকে — “এ কাহার মায়া ? না আমারই ভ্রম হইতেছে। যে কথা শুনিলাম সে তো আশঙ্কাসূচক, কিন্তু কিসের আশঙ্কা? তান্ত্রিকেরা সকলই করিতে পারে। তবে কি পলাইব? পলাইব বা কেন? সে দিন যদি বাঁচিয়াছি, আজও বাঁচিব। কাপালিক মনুষ্য, আমিও মনুষ্য।”

 

(গ) “এ কি দেবী — মানুষ — না কাপালিকের মায়া মাত্র” —এই উক্তিটির আলোকে নবকুমারের মনোভাব ব্যক্ত করো ।

উত্তরঃ কপালকুণ্ডলা এবং নবকুমারকে কেন্দ্র করেই ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাসের কাহিনির বিস্তার করা হয়েছে। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র হলো কপালকুণ্ডলা। কিন্তু কপালকুণ্ডলার পরেই যার গুরুত্ব সে হলো নবকুমার। এছাড়া সে কেন্দ্রীয় চরিত্র কপালকুণ্ডলার স্বামীও বটে। এই সমস্ত কথা বিবেচনা করে নবকুমারকে উপন্যাসটির নায়ক বলে অভিহিত করতে হয়।

নবকুমারকে নিয়ে উপন্যাসটি শুরু হয়েছিল। নবকুমার প্রকৃতিসৌন্দর্যে মুগ্ধ, উদারচেতা, পরোপকারী এবং সাহসী যুবকরূপে পাঠকদের কাছে পরিচিত হয়। নৌকারোহীদের ক্ষুদ্রতার পরিপ্রেক্ষিতে নবকুমারের স্বাতন্ত্র্য শুরুতে আমাদের মুগ্ধ দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

একদিন নবকুমার সঙ্গীসাথি গণ সহিত গঙ্গাসাগর থেকে ফেরার সময় এক নদীর মোহনায় সকলের উপকারের জন্য রান্নার উপযোগী কাঠ যোগাড় করতে গিয়েছিল। কিন্তু ফেরায় দেরী হয় এবং জোয়ারের বেগে নৌকা অনেকদূরে ভেসে যায়। নবকুমারের সঙ্গীরা এই পরিস্থিতিতে তার জন্য না ফিরে দেশের দিকে যাত্রা করল। নবকুমার সমুদ্রতীরে বালিয়াড়ি ও অরণ্যে আচ্ছান্ন একটি নির্জন স্থানে নৌকারোহীদের দ্বারা পরিত্যক্ত হল। কাঠবহন করে নদীতীরে এসে সে নৌকা বা তার আরোহী কাউকে দেখতে পেল না। প্রথমে ভাবল, জোয়ারের বেগ কমে গেলে নৌকা ফিরে আসতে পারে। কিন্তু নৌকা আর ফিরল না। রাত্রি হল, নবকুমার ক্ষুধা তৃষ্ণায় এবং ভয়ে কাতর হয়ে পড়ল। এমতাবস্থায় সে অনেকদূরে একটি আলো দেখতে পেল। আলোর কাছে গিয়ে দেখল শবের উপর বসে হোমাাগ্নি জ্বেলে এক কাপালিক ধ্যান করছে। নবকুমার অস্থি, নরকঙ্কাল এবং অগ্নিবেষ্টিত কাপালিকের কাছে ভীতচি অনেকক্ষণ বসে থাকল। কাপালিকের পূজা শেষ হলে, নবকুমারের পরিচয় জিজ্ঞাসা করল এবং অবশেষে তাকে এক পাতার কুটিরে শুতে স্থান দিল এবং কিছু ফলমূল খেতে দিল। নবকুমার ফল খেয়ে ক্লান্তিতে ও চিন্তায় ঘুমিয়ে পড়ল।

পরেরদিন বিকালে নবকুমার কুটিরের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ বনান্তরালে সমুদ্রতীরে গিয়ে উপস্থিত হল এবং পর্ণকুটিরে যাওয়ার পথ হারিয়ে ফেলল। কোনোউপায় না পেয়ে একটু পরে সমুদ্র সৈকতে উপস্থিত হয়ে সে অনন্তশোভা দেখতে লাগল। হঠাৎ নবকুমার সেখানে এক অপূর্ব সুন্দরী রমণীকে দেখতে পেল। তরুণীটি যেন বনমালা, আশ্চর্য সুন্দরী। নবকুমার হঠাৎ এইরূপ দেবীমূর্ত্তি দেখিয়া নিস্পন্দশরীর হইয়া দাঁড়ায়া পরিলেন, তার কথাবলার শক্তি যেন শেষ হয়ে গিয়েছে শুধু স্তব্ধ হইয়া চাহিয়া রহিলেন যদিও নবকুমার মুগ্ধ, তবুও তার মনে প্রশ্ন ওঠে—এই অপূর্ব নারীর অস্তিত্ব কি সত্যিই মানবীয়, নাকি তার কল্পনার কোনও রূপ? নবকুমার একই সঙ্গে বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের দোলাচলে ভুগতে থাকেন। তার মন বাস্তব ও পরাবাস্তবের মধ্যে সংঘাতের শিকার হয়। নবকুমার এই সুন্দরীকে কাপালিকের কোনও অলৌকিক সৃষ্টি বলেও সন্দেহ করেন। কিন্তু আসলো তরুণীটি ছিল কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলাকপালকুণ্ডলাকে দেখবার পরে নবকুমার যেন এই কঠোর বাস্তব জগৎ থেকে সৌন্দর্যলোকে চলে গেছে। পরে সেই রমণী অর্থা কপালকুণ্ডলা নবকুমারকে কাপালিকের হা়ত থেকে রক্ষা করেছিল। অবশেষে কপালকুণ্ডলার দ্বারা সে মুক্তিলাভ করে পলায়ন করে এবং নবকুমারের সঙ্গে কপালকুণ্ডলার বিবাহ হয়।

 

(ঘ) “কাপালিক মনুষ্য আমিও মনুষ্য” —উক্তিটির বক্তা কে? সে এরূপ বলার যথাযথ কারণ উল্লেখ করো ।

উত্তরঃ উক্ত অংশটি ঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়  রচিত ‘সাগর সংগমে নবকুমার’ পাঠটি থেকে নেওয়া হয়েছে।

কবি “কপালকুণ্ডলা” উপন্যাসটি থেকে নেওয়া হয়ছে, উক্তিটির বক্তা নবকুমার। সে হল সপ্তগ্রাম নিবাসী এক বাহ্মণ কুমার।

একবার নবকুমার গঙ্গাসাগরে তীর্থদর্শনে গিয়েছিল। ফেরার সময় তাদের নৌকা ঘোরতর কুয়াশায় সঙ্গীহীন হয়ে পড়েছিল । রোদ উঠলে তারা দেখতে পায়, তারা রসুলপুরের নদীর মোহনায় এসে পড়েছে। সেখানে সমুদ্রের মতই নদীর বিস্তার। তারা সমুদ্রের পশ্চিমতটের কাছে এসে পড়েছিল । জোয়ারের দেরী দেখে আরোহীরা সমুদ্র সৈকতে রান্নাবান্না করার জন্য নামে। কিন্তু রান্নার জন্য কাঠের অভাব ছিল। বাঘের ভয়ে কেউ বনের মধ্যে প্রবেশ করল না। সাহসী নবকুমার একাই কাঠ আনতে যায়। কাঠ যোগাড় এবং বহন করে আনতে নবকুমারের কিছু দেরী হয়। তার মধ্যে জোয়ার এসে পড়ায় নাবিকেরা এবং তার সঙ্গীসাথিরা নৌকা ছেড়ে দেয় এবং জোয়ারের তীব্র বেগে নৌকা বহুদূর চলে যায়। প্রতিবেশী এবং সহযাত্রী সকলের নবকুমারের কথা মনে থাকলেও নৌকা নবকুমারকে ছেড়ে সপ্তগ্রামে ফিরে আসে। প্রচারিত হয় যে হয়তো নবকুমারকে বাঘে হত্যা করেছে।

নবকুমার অনেক কষ্টে কাঠ নিয়ে ফিরে এসে দেখে নৌকা, কোনো জনমানবও নেই। নৌকা ফিরে আসবে এই আশায় সে সারাদিন সেখানে অপেক্ষা করতে থাক । নবকুমার দেখে সেখানে কোনো “গ্রাম নাই, আশ্রয় নাই, লোক নাই, আহার্য না, নদীর জল অসহ্য লবণাত্মক; অথচ ক্ষুধা – তৃষ্ণায় তাঁহার হৃদয়বিদীর্ণ হইতেছিল”। তার উপর এই বিজান বনে নরখাদক বা়ঘের ভয়ও আছে। অতএব নবকুমার মনে মনে বোঝে তার প্রাণনাশই নিশ্চিত। নানা চিন্তায় অস্থির নবকুমার এদিক ওদিক ভ্রমণ করতে থাকে। ক্রমে অন্ধকার হয়। ভ্রমণ করতে করতে নবকুমারের দেহ অবসন্ন হয়ে পড়ে। সে বালিয়াড়ির পাশে এক জায়গায় বসে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল সে জানতেই পারল না যখন ঘুম ভাঙে তখন অনেক রাত। বাঘের ভয়ে সেও ভীত হয়ে এদিক ওদিক নিরীক্ষণ করতে থাকে। হঠাৎ অনেক দূরে একটা আলো দেখতে পেয়ে সে বুঝল যে নিকটে অবশ্যই কোনো লোকালয় আছে। আলো দেখে নবকুমারের বেঁচে থাকবার আশা পুনরায় জাগ্রত হয়। উঠে আলোর উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করে । আলোর কাছাকাছি পৌঁছে দেখে যে একটি অল্প উঁচু বালির স্তুপের উপর আলো জ্বলছে এবং তার সামনে দেখা যাচ্ছে ছবির ন্যায় স্থির একটি মানুষকে। নবকুমার সেইদিকে দ্রুতবেগে চলতে শুরু করে। চিত্রপটের ন্যায় বসে থাকা মানুষটির কাছে পৌঁছে নবকুমার চিন্তিত হয়ে পড়ে। বালিস্তুপের শিখরে বসে থাকা মানুষটি চোখ বন্ধ করে ধ্যান করছিল। নবকুমার ধ্যানস্থ মানুষটির সামনে হাজির হয়ে রোমাঞ্চিত হয়। চলে আসবে অথবা তাঁর কাছে থাকবে সিদ্ধান্ত নিতে পারল না। শিখরে আসীন মানুষটি চোখ বন্ধ করে ধ্যান করছিল। নবকুমারকে প্রথমে দেখতে পেল না । নবকুমার দেখলো —মানুষটির বয়স ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত বাঘের চামড়া পরিহিত। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, মুখ গোফদাড়িতে পরিপূর্ণ । সম্মুখে কাঠে আগুন জ্বলছে। গলে যাওয়া একটি শবদেহের উপর বসে রয়েছেন । চারিদিকে অসংখ্য নরমুণ্ড, হাড়, কঙ্কাল পড়ে রয়েছে । নবকুমার বুঝতে পারে এ ব্যক্তি কাপালিক।

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর কাপালিক তাকে তার পর্ণকুটিরে নিয়ে যায়। সেখানে নবকুমারকে খাওয়ার জন্য কাপালিক কিছু ফলমূল দেয় । যাওয়ার আগে কাপালিক বলে যায় সে ফিরে না আসা পর্যন্ত নবকুমার যেন চলে না যায় । নবকুমার ফলমূল খেয়ে বাঘের চামড়ার উপর শুয়ে পড়ে ।

পরদিন অনেক বেলা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও নবকুমার কাপালিকের দেখা পেল না। নবকুমার কুটির ত্যাগ করে ফলমূলের আশায় বালিস্তপের চারিদিকে ঘুরে বেড়াতে থাকে। ঘুরতে ঘুরতে নবকুমার বনের মধ্যে প্রবেশ করে পথ হারিয়ে ফেলে। এমন সময় সাগরের গর্জন শুনতে পায় এবং শীঘ্রই সাগরের দেখা পায়। নবকুমার সাগরের পারে বহুক্ষণ বসে থাকে  ফেরার জন্য উঠে দাঁড়াতেই একটি অপূর্ব সুন্দরী নারীকে দেখতে পায়। এই দুর্গম বনের মধ্যে এমন দেবীমূর্তি দেখে নবকুমারের শরীর অবশ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ বাক্-শক্তি বন্ধ হয়ে থাকে। বহুক্ষণ পর তরুণী মৃদুস্বরে বলে— “পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ ?” কোনো উত্তর না পেয়ে সে আবার বলে — “আইস” । নবকুমার তরুণীর পিছনে পিছনে চলে, কিন্তু কাপালিকের কুটিরের কাছে এসেই সুন্দরী রমণী বনের মধ্যে চলে যায় । রমণী সে আর কেও নয় শয়ং কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা ছিল।

কুটিরে কাপালিকের সঙ্গে নবকুমারের সাক্ষাৎ হয়। কাপালিকের আদেশ মতো নবকুমার তাকে অনুশরণ করতে থাকে, নবকুমার ভাবে তার বাড়ি যাবার কোনো উপায় হবে হয়তো। কিছুদূর যাবার পর হঠাৎ সেই রমণী নবকুমারের পিঠে স্পর্শ করে মৃদুস্বরে বলে —— “কোথা যাইতেছ ? যাইও না, ফিরিয়া যাও পলায়ন কর।” নবকুমার কিছুই বুঝতে পারল না। এই কথা বলেই রমণী সরে যায়। প্রত্যুত্তর শোনার জন্য অপেক্ষা করল না। নবকুমার কিছুক্ষণ অভিভূত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। রমণী কোনদিকে গেল কিছুই বুঝতে পারল না। মনে মনে ভাবতে থাকে — “এ কাহার মায়া ? না আমারই ভ্রম হইতেছে। যে কথা শুনিলাম সে তো আশঙ্কাসূচক, কিন্তু কিসের আশঙ্কা? তান্ত্রিকেরা সকলই করিতে পারে। তবে কি পলাইব? পলাইব বা কেন? সে দিন যদি বাঁচিয়াছি, আজও বাঁচিব। — নবকুমার তাই বলিলেন যে কাপালিক মনুষ্য, আমিও মনুষ্য।”

 

(ঙ) নবকুমারকে গল্পটির নায়ক বলা যায় কি ? নবকুমারের চরিত্রের বর্ণনা দাও ।

উত্তরঃ কপালকুণ্ডলা এবং নবকুমারকে কেন্দ্র করেই ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাসের কাহিনির বিস্তার করা হয়েছে এবং উপন্যাসের নায়ক নবকুমারকে বলা যেতে পারে, কারণ নবকুমারকে নিয়েই উপন্যাসের শুরু। সেখানে নবকুমার ধীর, স্থির, সৌন্দর্যপ্রিয় এবং পরোপকারী এক যুবক।

          সপ্তগ্রাম নিবাসী নবকুমার একবার গঙ্গাসাগরে তীর্থদর্শনে গিয়েছিল। ফেরার সময় তাদের নৌকা ঘোরতর কুয়াশায় সঙ্গীহীন হয়ে পড়েছিল । রোদ উঠলে তারা দেখতে পায়, তারা রসুলপুরের নদীর মোহনায় এসে পড়েছে। সেখানে সমুদ্রের মতই নদীর বিস্তার। তারা সমুদ্রের পশ্চিমতটের কাছে এসে পড়েছিল । জোয়ারের দেরী দেখে আরোহীরা সমুদ্র সৈকতে রান্নাবান্না করার জন্য নামে। কিন্তু রান্নার জন্য কাঠের অভাব ছিল। বাঘের ভয়ে কেউ বনের মধ্যে প্রবেশ করল না। সাহসী নবকুমার একাই কাঠ আনতে যায়। কাঠ যোগাড় এবং বহন করে আনতে নবকুমারের কিছু দেরী হয়। তার মধ্যে জোয়ার এসে পড়ায় নাবিকেরা এবং তার সঙ্গীসাথিরা নৌকা ছেড়ে দেয় এবং জোয়ারের তীব্র বেগে নৌকা বহুদূর চলে যায়। প্রতিবেশী এবং সহযাত্রী সকলের নবকুমারের কথা মনে থাকলেও নৌকা নবকুমারকে ছেড়ে সপ্তগ্রামে ফিরে আসে। প্রচারিত হয় যে হয়তো নবকুমারকে বাঘে হত্যা করেছে।

নবকুমার অনেক কষ্টে কাঠ নিয়ে ফিরে এসে দেখে নৌকা, কোনো জনমানবও নেই। নৌকা ফিরে আসবে এই আশায় সে সারাদিন সেখানে অপেক্ষা করতে থাক । নবকুমার দেখে সেখানে কোনো “গ্রাম নাই, আশ্রয় নাই, লোক নাই, আহার্য না, নদীর জল অসহ্য লবণাত্মক; অথচ ক্ষুধা – তৃষ্ণায় তাঁহার হৃদয়বিদীর্ণ হইতেছিল”। তার উপর এই বিজান বনে নরখাদক বা়ঘের ভয়ও আছে। অতএব নবকুমার মনে মনে বোঝে তার প্রাণনাশই নিশ্চিত। নানা চিন্তায় অস্থির নবকুমার এদিক ওদিক ভ্রমণ করতে থাকে। ক্রমে অন্ধকার হয়। ভ্রমণ করতে করতে নবকুমারের দেহ অবসন্ন হয়ে পড়ে। সে বালিয়াড়ির পাশে এক জায়গায় বসে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল সে জানতেই পারল না যখন ঘুম ভাঙে তখন অনেক রাত। বাঘের ভয়ে সেও ভীত হয়ে এদিক ওদিক নিরীক্ষণ করতে থাকে। হঠাৎ অনেক দূরে একটা আলো দেখতে পেয়ে সে বুঝল যে নিকটে অবশ্যই কোনো লোকালয় আছে। আলো দেখে নবকুমারের বেঁচে থাকবার আশা পুনরায় জাগ্রত হয়। উঠে আলোর উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করে । আলোর কাছাকাছি পৌঁছে দেখে যে একটি অল্প উঁচু বালির স্তুপের উপর আলো জ্বলছে এবং তার সামনে দেখা যাচ্ছে ছবির ন্যায় স্থির একটি মানুষকে। নবকুমার সেইদিকে দ্রুতবেগে চলতে শুরু করে। চিত্রপটের ন্যায় বসে থাকা মানুষটির কাছে পৌঁছে নবকুমার চিন্তিত হয়ে পড়ে। বালিস্তুপের শিখরে বসে থাকা মানুষটি চোখ বন্ধ করে ধ্যান করছিল। নবকুমার ধ্যানস্থ মানুষটির সামনে হাজির হয়ে রোমাঞ্চিত হয়। চলে আসবে অথবা তাঁর কাছে থাকবে সিদ্ধান্ত নিতে পারল না। শিখরে আসীন মানুষটি চোখ বন্ধ করে ধ্যান করছিল। নবকুমারকে প্রথমে দেখতে পেল না। নবকুমার দেখলো —মানুষটির বয়স ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত বাঘের চামড়া পরিহিত। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, মুখ গোফদাড়িতে পরিপূর্ণ । সম্মুখে কাঠে আগুন জ্বলছে। গলে যাওয়া একটি শবদেহের উপর বসে রয়েছেন । চারিদিকে অসংখ্য নরমুণ্ড, হাড়, কঙ্কাল পড়ে রয়েছে । নবকুমার বুঝতে পারে এ ব্যক্তি কাপালিক।

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর কাপালিক তাকে তার পর্ণকুটিরে নিয়ে যায়। সেখানে নবকুমারকে খাওয়ার জন্য কাপালিক কিছু ফলমূল দেয় । যাওয়ার আগে কাপালিক বলে যায় সে ফিরে না আসা পর্যন্ত নবকুমার যেন চলে না যায় । নবকুমার ফলমূল খেয়ে বাঘের চামড়ার উপর শুয়ে পড়ে ।

পরদিন অনেক বেলা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও নবকুমার কাপালিকের দেখা পেল না। নবকুমার কুটির ত্যাগ করে ফলমূলের আশায় বালিস্তপের চারিদিকে ঘুরে বেড়াতে থাকে। ঘুরতে ঘুরতে নবকুমার বনের মধ্যে প্রবেশ করে পথ হারিয়ে ফেলে। এমন সময় সাগরের গর্জন শুনতে পায় এবং শীঘ্রই সাগরের দেখা পায়। নবকুমার সাগরের পারে বহুক্ষণ বসে থাকে  ফেরার জন্য উঠে দাঁড়াতেই একটি অপূর্ব সুন্দরী নারীকে দেখতে পায়। এই দুর্গম বনের মধ্যে এমন দেবীমূর্তি দেখে নবকুমারের শরীর অবশ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ বাক্-শক্তি বন্ধ হয়ে থাকে। বহুক্ষণ পর তরুণী মৃদুস্বরে বলে— “পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ ?” কোনো উত্তর না পেয়ে সে আবার বলে — “আইস” । নবকুমার তরুণীর পিছনে পিছনে চলে, কিন্তু কাপালিকের কুটিরের কাছে এসেই সুন্দরী রমণী বনের মধ্যে চলে যায় । রমণী সে আর কেও নয় শয়ং কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা ছিল।

কুটিরে কাপালিকের সঙ্গে নবকুমারের সাক্ষাৎ হয়। কাপালিকের আদেশ মতো নবকুমার তাকে অনুশরণ করতে থাকে, নবকুমার ভাবে তার বাড়ি যাবার কোনো উপায় হবে হয়তো। কিছুদূর যাবার পর হঠাৎ সেই রমণী নবকুমারের পিঠে স্পর্শ করে মৃদুস্বরে বলে —— “কোথা যাইতেছ ? যাইও না, ফিরিয়া যাও পলায়ন কর।” নবকুমার কিছুই বুঝতে পারল না। এই কথা বলেই রমণী সরে যায়। প্রত্যুত্তর শোনার জন্য অপেক্ষা করল না। নবকুমার কিছুক্ষণ অভিভূত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। রমণী কোনদিকে গেল কিছুই বুঝতে পারল না। মনে মনে ভাবতে থাকে — “এ কাহার মায়া ? না আমারই ভ্রম হইতেছে। যে কথা শুনিলাম সে তো আশঙ্কাসূচক, কিন্তু কিসের আশঙ্কা? তান্ত্রিকেরা সকলই করিতে পারে। তবে কি পলাইব? পলাইব বা কেন? সে দিন যদি বাঁচিয়াছি, আজও বাঁচিব। কাপালিক মনুষ্য, আমিও মনুষ্য।”

এইসব ভাবতে ভাবতে কাপালিকের সহিত নবকুমার সেই পুজোর স্থানে পৌঁছে যায় । পুজোর জায়গায় কাপালিক নবকুমারকে কতগুলি শুকনো, কঠিন লতাগুল্ম দিয়ে দৃঢ়ভাবে বেঁধে সমুদ্র সৈকতে ফেলে রাখে। নবকুমার নিজেকে মুক্ত করতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। কাপালিক বলির প্রাথমিক কাজ শেষ করে খড়গ নেওয়ার জন্য আসন ত্যাগ করে দেখে সেখানে খড়গ নেই। কপালকুণ্ডলাকে বারবার ডেকেও কোনো উত্তর পেল না। তখন কাপালিক বাড়ির দিকে যায়। ইতিমধ্যে  কপালকুণ্ডলা খড়গ দিয়ে নবকুমারের বাঁধন খুলে তাকে সঙ্গে নিয়ে পালিয়ে যায়। কপালকুণ্ডলা নবকুমারকে নিয়ে নিভৃত বনের মধ্যে এক মন্দিরে অধিকারীর আশ্রয় নেয় । অধিকারী কপালকুণ্ডলাকেও আর কাপালিকের কাছে ফিরতে দিল না। কারণ সেখানে গেলে তার আর রক্ষা থাকবে না। নবকুমারের সঙ্গে তার বিবাহ দিয়ে অধিকারী পরদিন তাদের মেদিনীপুরের পথ পর্যন্ত রেখে আসে। পরে তারা একসাথে সপ্তগ্রামে এসে সুন্দর জীবন অতিবাহিত করেন।

 

প্রশ্ন ৫। ব্যাখ্যা করো :

 (ক) “রাত্রি মধ্যে ব্যাঘ্র ভল্লুকের সাক্ষাৎ পাইবার সম্ভাবনা। প্রাণনাশই নিশ্চিত”

উত্তরঃ উক্ত অংশটি বঙ্কিমচন্দ্রে চট্টোপাধ্যায়র রচিত সাগর-সঙ্গমে নবকুমার” গদ্য থেকে নেওয়া হয়েছে। সপ্তগ্রাম নিবাসী নবকুমার সমুদ্র – দর্শন, গঙ্গাস্নান করিবার জন্য প্রতিবেশীদের সঙ্গে গঙ্গাসাগরে গিয়েছিল । ফিরে আসার সময় ঘন কুয়াশার জন্য মাঝি দিক ঠিক করতে পারল না । নৌকার মধ্যে মহা কোলাহল শুরু হল। নৌকার আরোহীরা সমুদ্রসৈকতে রান্না করার জন্য চেষ্টা করলেও নৌকায় রান্নার জন্য কাঠ ছিল না। বাঘের ভয়ে নিজান বন থেকে কেউ কাঠ যোগাড় করতে যেতেও সম্মত হল না । তখন নবকুমার একাই বনে কাঠ যোগাড় করতে গেল । কাঠের জন্য তাকে বনের অনেক ভেতরে যেতে হল । নবকুমার ফিরে এসে দেখল সহযাত্রীরা তাকে ত্যাগ করে চলে গেছে।

নৌকা ফিরে আসার আশায় নবকুমার বহুক্ষণ অপেক্ষা করল। কিন্তু নৌকা কিংবা নৌকারোহী কেউই এল না। নবকুমার ভীষণ ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ল। সে এদিক ওদিক খুঁজতে লাগল। ক্রমে বেলা শেষ হয়ে গিয়ে সূর্যাস্ত হল। নৌকা ফিরে আসার হলে এতক্ষণ আসত।

এতক্ষণে নবকুমার বুঝতে পারল তাঁকে ছেড়ে সবাই চলে গেছে। সে দেখল এখানে গ্রাম নেই, আশ্রয় নেই, লোক নেই, খাদ্য নেই, পানীয় জল নেই, নদীর জলে প্রচণ্ড লবণ । অথচ খিদে তেষ্টায় তাঁর প্রাণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। প্রচণ্ড শীতের মধ্যে গায়ে বস্ত্র পর্যন্ত নেই, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা শীতের মধ্যে আকাশের নিচে আশ্রয়হীনভাবে বস্ত্রহীনভাবে নদীতীরে শুয়ে থাকতে হবে । এছাড়াও বাঘ ভাল্লুকের আক্রমণে প্রাণনাশেরও আশঙ্কা আছে ।

–– এখানে গভীর বনাঞ্চলে রাত্রিকালীন ভ্রমণের ভয়াবহতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। রাতের অন্ধকারে মানুষ বন্য প্রাণীর সহজ শিকার হয়ে উঠতে পারে। ব্যাঘ্র (বাঘ) এবং ভল্লুক (ভালুক) গভীর বনে বিপজ্জনক প্রাণী হিসেবে উপস্থিত থাকে।"প্রাণনাশই নিশ্চিত" বাক্যটি বনভূমিতে বন্য প্রাণীর আক্রমণে মানুষের জীবনহানির সম্ভাবনার প্রতি ইঙ্গিত দেয়। এই বাক্যটি সেই সময়ের পরিবেশের কঠোর বাস্তবতাকে চিহ্নিত করে।

 

(খ) “কোথা যাইতেছ? যাইও না। ফিরিয়া যাও — পলায়ন কর ।”

উত্তরঃ উক্ত অংশটি বঙ্কিমচন্দ্রে চট্টোপাধ্যায়র রচিত সাগর-সঙ্গমে নবকুমার” গদ্য থেকে নেওয়া হয়েছে এবং উক্তিটি কপালকুণ্ডলার । নৌকার সঙ্গীরা ফেলে চলে যাবার পর নবকুমারকে একাকী প্রচণ্ড শীতের মধ্যে খিদে তৃষ্টায় অধীর হয়ে নানা চিন্তা করতে করতে বালিয়াড়ির পাশে ঘুমিয়ে পড়ল। অনেক রাতে তার ঘুম ভাঙল। হঠাৎ বেশদূরে আলো দেখে নবকুমার তাড়াতাড়ি সেদিকে ছুটে গেল। সেখানে একজন কাপালিকের দর্শন পেল। কিছুক্ষণ পর কাপালিক নবকুমারকে নিজের পর্ণকুটিরে নিয়ে গেল। পরদিন ক্ষুধার্ত নবকুমার ফলের খোঁজে বেরলো। একটি গাছের ভীষণ সুস্বাদু ফল খেয়ে ঘন বনের মধ্যে পথ হারিয়ে ফেলল। একটু পরে সমুদ্র সৈকতে উপস্থিত হয়ে সে অনন্তশোভা দেখতে লাগল। হঠাৎ নবকুমার সেখানে এক অপূর্ব সুন্দরী রমণীকে দেখতে পেল । বহুক্ষণ পরে সেই তরুণী নবকুমারকে জিজ্ঞেস করল সে পথ হারিয়েছে কিনা। কোনো উত্তর না পেয়ে তরুণী আবার বলল “আইস”। কুটিরের কাছে এসেই সুন্দরী রমণী বনের মধ্যে চলে গেল । কুটিরে কাপালিকের সাথে নবকুমারের সাক্ষাৎ হল । কাপালিক নবকুমারকে সঙ্গে নিয়ে চলল । নবকুমার ভাবল এবার মনে হয় তার বাড়ি যাওয়ার কোনো উপায় হবে। কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ রমণী নবকুমারের পিঠে স্পর্শ করে মৃদুস্বরে বলল “কোথা যাইতেছ? যাইও না, ফিরিয়া যাও পলায়ন কর। ”

–– এখানে এটি একটি ভীতি, দ্বিধা বা বিপদের সংকেত প্রদানকারী আহ্বান যেখানে নবকুমারকে বিপদ থেকে সাবধান করে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।

 

(গ) “কখনও স্তূপতলে, কখনও স্তূপ শিখরে ভ্রমণ করিতে লাগিলেন”

উত্তরঃ উক্ত অংশটি বঙ্কিমচন্দ্রে চট্টোপাধ্যায়র রচিত সাগর-সঙ্গমে নবকুমার” গদ্য থেকে নেওয়া হয়েছে। নবকুমার গঙ্গাসাগর থেকে ফেরার সময় এক নদীর মোহনায় সকলের উপকারের জন্য রান্নার উপযোগী কাঠ যোগাড় করতে গিয়েছিল । কিন্তু ফেরায় দেরী হয় এবং জোয়ারের বেগে নৌকা অনেকদূরে ভেসে যায়। নবকুমারের সঙ্গীরা এই পরিস্থিতিতে তার জন্য না ফিরে দেশের দিকে যাত্রা করল। নবকুমার ভালো করে নিরীক্ষণ করে বুঝল সে যেখানে আছে সেখানে গ্রাম নেই, আশ্রয় নেই, লোক নেই, খাদ্য নেই। নদীর জলে অসহ্য লবণ আছে। অথচ খিদে তেষ্টায় তাঁর জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠল। প্রচণ্ড শীত নিবারণের জন্য আশ্রয় নেই, গায়ের বস্ত্র পর্যন্ত নেই ।

মনের অস্থিরতার কারণে নবকুমার একজায়গায় বেশীক্ষণ বসে থাকতে পারল না। ক্ষণা উঠে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে লাগল, ক্রমশ অন্ধকার হয়ে এলো। আকাশে নক্ষত্র দেখা দিল। অন্ধকারে সর্বত্র জনহীন নীরব, সমুদ্রের গর্জন ছাড়া কোনো কিছুর শব্দ ছিল না কখনো হয়তো বন্য পশুর চিৎকার শুনতে পেল। তা সত্ত্বেও নবকুমার সেই অন্ধকারে হিমবর্ষণকারী আকাশের নিচে বালিস্তুপের চারিপাশে ঘুরে বেড়াতে লাগল । কখনো উপত্যকায়, আবার কখনো বালিস্তুপের উপরে ঘুরে বেড়াতে লাগল। পথ চলতে চলতে প্রতি পদক্ষেপেই হিংস্র পশু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা, আবার একজায়গায় বসে থাকলেও সেই সম্ভাবনা একই বিপদেসম্ভাবনা রয়েছেতাই নবকুমার কখনও স্তূপতলে, কখনও স্তূপ শিখরে ভ্রমণ করিতে লাগিলেন ।

 

(ঘ) “অকস্মাৎ এইরূপ দুর্গমধ্যে দৈবী মূর্তি দেখিয়া নিস্পন্দ শরীর হইয়া দাঁড়াইলেন। তাঁহার বাকশক্তি রহিত হইল। স্তব্ধ হইয়া চাহিয়া রহিলেন ।”

উত্তরঃ উক্ত অংশটি বঙ্কিমচন্দ্রে চট্টোপাধ্যায়র রচিত সাগর-সঙ্গমে নবকুমার” গদ্য থেকে নেওয়া হয়েছে। নবকুমার গঙ্গাসাগর থেকে ফেরার সময় এক নদীর মোহনায় সকলের উপকারের জন্য রান্নার উপযোগী কাঠ যোগাড় করতে গিয়েছিল। কিন্তু ফেরায় দেরী হয় এবং জোয়ারের বেগে নৌকা অনেকদূরে ভেসে যায়। নবকুমারের সঙ্গীরা এই পরিস্থিতিতে তার জন্য না ফিরে দেশের দিকে যাত্রা করল। নবকুমার সমুদ্রতীরে বালিয়াড়ি ও অরণ্যে আচ্ছান্ন একটি নির্জন স্থানে নৌকারোহীদের দ্বারা পরিত্যক্ত হল। কাঠবহন করে নদীতীরে এসে সে নৌকা বা তার আরোহী কাউকে দেখতে পেল না। প্রথমে ভাবল, জোয়ারের বেগ কমে গেলে নৌকা ফিরে আসতে পারে। কিন্তু নৌকা আর ফিরল না। রাত্রি হল, নবকুমার ক্ষুধা তৃষ্ণায় এবং ভয়ে কাতর হয়ে পড়ল। এমতাবস্থায় সে অনেকদূরে একটি আলো দেখতে পেল। আলোর কাছে গিয়ে দেখল শবের উপর বসে হোমাাগ্নি জ্বেলে এক কাপালিক ধ্যান করছে। নবকুমার অস্থি, নরকঙ্কাল এবং অগ্নিবেষ্টিত কাপালিকের কাছে ভীতচি অনেকক্ষণ বসে থাকল। কাপালিকের পূজা শেষ হলে, নবকুমারের পরিচয় জিজ্ঞাসা করল এবং অবশেষে তাকে এক পাতার কুটিরে শুতে স্থান দিল এবং কিছু ফলমূল খেতে দিল। নবকুমার ফল খেয়ে ক্লান্তিতে ও চিন্তায় ঘুমিয়ে পড়ল।

পরেরদিন বিকালে নবকুমার কুটিরের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ বনান্তরালে সমুদ্রতীরে গিয়ে উপস্থিত হল এবং পর্ণকুটিরে যাওয়ার পথ হারিয়ে ফেলল। কোনোউপায় না পেয়ে একটু পরে সমুদ্র সৈকতে উপস্থিত হয়ে সে অনন্তশোভা দেখতে লাগল। হঠাৎ নবকুমার সেখানে এক অপূর্ব সুন্দরী রমণীকে দেখতে পেল। তরুণীটি যেন বনমালা, আশ্চর্য সুন্দরী। নবকুমার হঠাৎ এইরূপ দেবীমূর্ত্তি দেখিয়া নিস্পন্দশরীর হইয়া দাঁড়ায়া পরিলেন, তার কথাবলার শক্তি যেন শেষ হয়ে গিয়েছে শুধু স্তব্ধ হইয়া চাহিয়া রহিলেন তরুণীটি ছিল কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলাকপালকুণ্ডলাকে দেখবার পরে নবকুমার যেন এই কঠোর বাস্তব জগৎ থেকে সৌন্দর্যলোকে চলে গেছে। পরে সেই রমণী অর্থা কপালকুণ্ডলা নবকুমারকে কাপালিকের হা়ত থেকে রক্ষা করেছিল।

 

: টীকা লেখো :

 

ক) নবকুমার:

নবকুমার সপ্তগ্রামের অধিবাসী এক ব্রাহ্মাণ সন্তান। এক কর্মক্ষম সুন্দর ও বলিষ্ঠ যুবক। একবার নবকুমার গঙ্গাসাগরে স্নানার্থী একদল নৌকা যাত্রীর সঙ্গে গঙ্গাসাগরে যায়। গঙ্গাসাগরে স্নান পর্ব শেষ করে যাত্রীবাহী নৌকা এক রাত্রি শেষে প্রবল স্রোতে রসুলপুরে এসে ঠেকে। চারিদিক কুয়াশাচ্ছন্ন থাকায় দিক নির্ণয় করা

যাচ্ছিল না। স্রোতের টানে নৌকা সমুদ্রে গিয়ে পড়লে, সকলেরই ভয় হল যে যে-কোনো সময় নৌকা ডুবে যেতে পারে। এমতাবস্থায় সাহসী যুবক নবকুমার সকলের সাহস জোগাল। শেষ পর্যন্ত স্থির হল নৌকা তীরে ভিড়িয়ে স্নানাহারাদি সম্পন্ন করা দরকার। কিন্তু রান্নার কাঠ না থাকায় নদী তীরে হাতে একখানা দা নিয়ে নবকুমার জঙ্গলে শুকনো কাঠ সংগ্রহ করতে গেল। এদিকে জোয়ার আসায় নৌকা ভেসে গেল। নবকুমার একাকী বিজন বনে নির্বাসিত হল। ক্ষুধাপিপাসায় কাতর হয়ে বালিয়াড়ির গায়ে পিঠ দিয়ে সে ঘুমিয়ে পড়ে। গভীর রাত্রিতে এক কাপালিক তাকে তাঁর পর্ণকুটিরে নিয়ে গিয়ে ফলাহার দিয়ে বাঁচায়। সে বনে নবকুমার কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলার সাক্ষাৎ পায়। কপালকুণ্ডলা কাপালিকের হাত থেকে বাঁচার জন্য নবকুমারকে সঙ্গে নিয়ে পালিয়ে যায় এবং তাদের বিবাহ হয়। তারা সপ্তগ্রামে ফিরে আসে।

 

খ) কাপালিক:

কাপালিক শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত শব্দ "কপাল" থেকে, যার অর্থ "কপাল" বা মাথার খুলি। কাপালিক এক প্রকার তান্ত্রিক সাধক, যারা শৈব সম্প্রদায়ভুক্ত এবং তন্ত্রসাধনার পথ অনুসরণ করেন।কাপালিকেরা সাধনার দ্বারা অসাধ্য সাধন করতে পারে। তারা মহাকাল, ভবানী বা অন্যান্য দেব-দেবীর পূজা করেন। এরা সাধনার সময় কপালের খুলির মালা (কাপাল) পরিধান করতেন এবং মৃতদেহের ওপর বসে সাধনা করতেন। কাপালিকের সাধনার জন্য মৃতদেহের প্রয়োজন হয়।

নদীতীরে গভীররাতে নবকুমারের সঙ্গে এক কাপালিকের দেখা হয়। কাপালিকের ইশারায় নবকুমার তাঁর সঙ্গে গভীর বনে পর্ণকুটিরে প্রবেশ করে। কাপালিকের দেওয়া ফলমূল ও জল খেয়ে প্রাণ বাঁচায়। এবং সমস্ত পণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে। কাপালিকের পালিতা কন্যার নাম কপালকুণ্ডলা। সে বনচারিনী, বনের সমস্ত রাস্তাঘাট তার চেনা। কাপালিকের হাত থেকে সুকৌশলে নবকুমারকে বাঁচাবার জন্য কপালকুণ্ডলা কাপালিকের খড়গ চুরি করে নেয়। পরিশেষে নবকুমারের সঙ্গে কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলার ভবানীদেবীর মন্দিরে বিবাহ হয়। তারপর কপালকুণ্ডলা নবকুমারের সঙ্গে সপ্তগ্রামে চলে আসে।

 

নিজে করো:

কপালকুণ্ডলা:

কপালকুণ্ডলা একজন বনের মেয়ে, যিনি তন্ত্রসাধক কপালিকের পালিতা কন্যা ছিলেন

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে নবকুমার এক জনবিচ্ছিন্ন দ্বীপে আটকা পড়েন। সেখানে এক কাপালিক তাকে বলি দিতে উদ্যত হয়। তখন কাপালিকের পালিতা কন্যা কপালকুণ্ডলা তার প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। স্থানীয় মন্দিরের অধিকারীর সহায়তায় নবকুমার কপালকুণ্ডলাকে বিয়ে করে নিজের বাড়ি সপ্তগ্রামে ফিরে আসেন। 

 

 পদ্মাবতী:

পদ্মাবতী ছিলেন সিংহল রাজকন্যা। তিনি ছিলেন অপরূপা সুন্দরী, বুদ্ধিমতী ও সাহসী নারী। তাঁর সৌন্দর্য ও গুণাবলীর কারণে মেওয়ার রানা রতন সিং-এর সঙ্গে তাঁর বিবাহ সম্পন্ন হয়। চিতোর দুর্গ আক্রমণ করে দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খিলজী পদ্মাবতীকে দখল করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পদ্মাবতী তাঁর সম্মান রক্ষার্থে বহু নারীর সঙ্গে জহর ব্রত গ্রহণ করে আত্মবলিদান করেন। পদ্মাবতীর কাহিনি শুধু প্রেমের নয়, নারী সতীত্ব, সাহস এবং মর্যাদার প্রতীক হিসেবে মধ্যযুগীয় সাহিত্যে গভীর স্থান দখল করে আছে।

 

প্রশ্ন ১: ব্যাকরণ :

(ক) সন্ধি – বিচ্ছেদ করো ।

প্রতীক্ষা — প্রতি + ইক্ষা ( স্বরসন্ধি )

অত্যন্ত — অতি + অন্ত ( স্বরসন্ধি )

প্রত্যাগমন — প্রতি + আগমন ( স্বরসন্ধি )

নিরাশ্রয় — নিঃ + আশ্রয় ( স্বরসন্ধি )

দিগন্ত — দিগ্‌ + অন্ত ( ব্যঞ্জন সন্ধি )

পুনরুদ্দীপ্ত — পুনঃ + উদ্দীপ্ত ( বিসর্গ সন্ধি )

অত্যুচ্চ — অতি + উচ্চ ( স্বরসন্ধি )

শ্রেয়স্কর — শ্রেয় + কর ( বিসর্গ সন্ধি )

কিঞ্চিত — কিম + চিৎ ( ব্যঞ্জন সন্ধি )

সন্ন্যাস — সম + ন্যাস ( ব্যঞ্জন সন্ধি )

 

নিজে করো —

পঞ্চাশ, মৃন্ময়, নিরীক্ষণ, পর্যন্ত, ইতস্তত, নীরব, সময়ান্তরে, সদুপায় ।

উত্তরঃ পঞ্চাশ পঞ্চ + আশ

মৃন্ময় — মৃণ্  + ময় ।

নিরীক্ষণ — নিঃ + ঈক্ষণ ।

পর্যন্ত — পরি + অন্ত ।

ইতস্তত — ইতঃ + ততঃ

নীরব — নিঃ + রব ।

সময়ান্তরে — সময় + অন্তরে ।

সদুপায় — সৎ + উপায় ।

 

(খ) ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম লেখো ।

পর্ণকুটির, দেহরত্ন, পথভ্রান্তি, অনুচিত, কণ্ঠাগত, কার্পাসবস্ত্র, শিখরাসীন, তন্দ্রাভিভূত, কাষ্ঠভার ।

উত্তরঃ পর্ণকুটির — পর্ণ দ্বারা নির্মিত কুটির কর্মধারয় সমাস ।

দেহরত্ন — দেহ যেখানে রত্নতুল্য তৎপুরুষ সমাস ।

পথভ্রান্তি — পথ থেকে ভ্রান্তি তৎপুরুষ সমাস ।

অনুচিত — যা উচিত নয় বহুব্রীহি সমাস।

কণ্ঠাগত — যা কণ্ঠে গিয়ে উপস্থিত— অধিকরণ তৎপুরুষ।

কার্পাসবস্ত্র — কার্পাস দ্বারা নির্মিত বস্ত্র কর্মধারয় সমাস।

শিখরাসীন — শিখরে যে আসীন — অধিকরণ তৎপুরুষ ।

তন্দ্রাভিভূত — তন্দ্রার দ্বারা অভিভূত তৎপুরুষ সমাস ।

কাষ্ঠভার — কাষ্ঠের ভার তৎপুরুষ সমাস।

 

(গ) বাক্যরচনা করো:

আকাশকুসুম , আক্কেল সেলামী , আদাজল খেয়ে , আঁতে ঘা , কেঁচে গণ্ডুষ , কূপমণ্ডুক , চিনির বলদ , টনক নড়া , ধর্মের ষাঁড়, পায়াভারি ।

উত্তরঃ আকাশকুসুমতুমি সবসময় আকাশকুসুম কল্পনা না করে বাস্তব নিয়ে ভাবো।

আক্কেল সেলামীভুল কাজ করার জন্য তাকে আক্কেল সেলামী দিতে হলো।

আদাজল খেয়ে পরীক্ষায় সফল হতে চাইলে আদাজল খেয়ে চেষ্টা করো ।

আঁতে ঘা — কাউকেই আঁতে ঘা দিয়ে কথা বলা উচিত নয় ।

কেঁচে গণ্ডুষ — পুজোর ছুটিতে আড্ডা মেরে হরিলাল সব অঙ্ক ভুলে গেছি, এখন আবার আমায় কেঁচে গণ্ডূষ করতে হবে ।

কূপমণ্ডুক — সংস্কার অথবা কুসংস্কারের বশীভূত হলে এমনই কুপমণ্ডুক হয়ে পড়তে হবে যে , আমাদের স্বাধীন বিচারশক্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে ।

চিনির বলদ — গোপালবাবু সংসারের জন্য সারা জীবন খেটেই গেলেন যেন চিনির বলদ ।

টনক নড়াপুলিশের উপস্থিতিতে চোরদের টনক নড়ে গেল।

ধর্মের ষাঁড়অফিসে কাজ না করেও সে বড় কথা বলে, যেন একেবারে ধর্মের ষাঁড়।

পায়াভারিবিনা অভিজ্ঞতায় বড় দায়িত্ব নিলে পায়াভারি হতে পারে।

 

(ঘ) সন্ধি ও সমাসের মধ্যে পাঁচটি পার্থক্য নিরূপণ করো।

উত্তরঃ সন্ধি ও সমাসের মধ্যে পাঁচটি পার্থক্য :

(১) সন্ধিতে শব্দগুলোর পৃথক পরিচয় থাকে না, এক শব্দে মিশে যায়।কিন্তু সমাসে মূল শব্দগুলো সংকুচিত বা পরিবর্তিত হয়ে এক নতুন শব্দে পরিণত হয়।

(২) সন্ধি তিন প্রকার — স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জনসন্ধি ও বিসর্গসন্ধি । অপরদিকে সমাস পাঁচ প্রকারের কর্মধারয়, তৎপুরুষ, দ্বন্দ্ব, বহুব্রীহি, দ্বিগু।

(৩) সন্ধির মিলন উচ্চারণগত, কিন্তু সমাসের মিলন অর্থগত।

(৪) দুটি বা ততোধিক শব্দের সংযোগের ফলে ধ্বনি পরিবর্তন হওয়াকে সন্ধি বলে। অন্যদিকে দুটি বা ততোধিক শব্দের যোগে একটি নতুন অর্থবোধক শব্দ গঠিত হলে তাকে সমাস বলে।

(৫) সন্ধি শব্দার্থে কোনও পরিবর্তন আনে না, কিন্তু শব্দার্থে সমাসের প্রভাব গুরুতর। এটি শব্দার্থের বিপুল পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে ।

 

(ঙ) অর্থানুসারে বাক্য রচনা করো ।

অস্ত্যর্থক, নস্ত্যর্থক এবং প্রশ্নাত্মক বাক্য

উত্তরঃ

. অস্ত্যর্থক (হ্যাঁ-সূচক) বাক্য: যেমন, আজ আকাশে রোদ উঠেছে। তুমি নিশ্চয়ই পরীক্ষায় ভালো করেছো।

২. নস্ত্যর্থক (না-সূচক) বাক্য: যেমন, আজ স্কুল ছুটি হয়নি। তুমি এখনও কাজ শেষ করোনি।

৩. প্রশ্নাত্মক বাক্য: যেমন, তুমি কি আজ ক্লাসে যাবে? কখন শুরু হবে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি ?

 

(চ) অস্ত্যর্থক বাক্যে পরিবর্তন করো ।

নস্ত্যর্থক — আমি কখনও মিথ্যা কথা বলি না ।

অস্ত্যর্থক — আমি সর্বদা সত্য কথা বলি ।

নস্ত্যর্থক — পৃথিবীতে কেহ অমর নয় ।

অস্ত্যর্থক — পৃথিবীতে সকলেই মরণশীল ।

নস্ত্যর্থক — এ কাজ করা সম্ভব নয় ।

অস্ত্যর্থক — এ কাজ করা অসম্ভব ।

নস্ত্যর্থক — কে না সন্তানকে ভালবাসে ।

অস্ত্যর্থক — সকলেই সন্তানকে ভালবাসে ।

নস্ত্যর্থক — কেনা জন্মভূমিকে ভালবাসে ।

অস্ত্যর্থক — সবাই জন্মভূমিকে ভালবাসে

 

(ছ) নস্ত্যর্থক বাক্যে পরিবর্তন করো ।

অস্ত্যর্থক — কাপুরুষেরা মৃত্যুকে ভয় করে ।

নস্ত্যর্থক — কাপুরুষ ছাড়া কেহই মৃত্যুকে ভয় করে না ।

অস্ত্যর্থক — সে ছিল মূর্খ ।

নস্ত্যর্থক — সে পণ্ডিত ছিল না ।

অস্ত্যর্থক — পৃথিবীতে তুমি অতুলনীয় ।

নস্ত্যর্থক — পৃথিবীতে তোমার তুলনা নেই ।

 

(ঝ) প্রশ্নাত্মক বাক্যে পরিবর্তন করো ।

অস্ত্যর্থক — টাকায় সবই পাওয়া যায় ।

প্রশ্নাত্মক — টাকায় কী না পাওয়া যায় ?

অন্ত্যর্থক — জননী ও জন্মভূমি স্বর্গ হতেও বড়।

প্রশ্নাত্মক জননী ও জন্মভূমি স্বর্গ হতেও বড় নয় কি ?

নস্ত্যর্থক — পরের অনিষ্ট করা উচিত নয়।

প্রশ্নাত্মক পরের অনিষ্ঠ করা কি উচিত ?




Why Choose Digital Pipal Academy?

Q: Is Digital Pipal Academy the No. 1 Educational Website for Assam Education for Free Learning?

Answer: Yes, Digital Pipal Academy is a leading platform providing high-quality, free educational resources for Assam Board students.

Q: What is the Best Website for Learning Class 10 in Assam?

Answer: Digital Pipal Academy is the best website for learning Class 10 in Assam. Visit www.pipalacademy.com for free study materials, NCERT & SCERT solutions, and expert guidance.

At Digital Pipal Academy, we provide:
✔️ Detailed NCERT & SCERT solutions 📖
✔️ Simple explanations with real-life applications
✔️ Exam-focused content for SEBA Board students 🎯
✔️ Free and accessible learning materials 💡
✔️ Regular updates and latest syllabus coverage 📅


FAQs – SEBA Class 10 Bengali Chapter 6 "সাগর-সঙ্গমে নবকুমার"

Q1: What is "সাগর-সঙ্গমে নবকুমার" about?

Answer: "সাগর-সঙ্গমে নবকুমার" is a story that portrays the adventurous journey of Nabakumar. It highlights his challenges, experiences, and moral lessons learned throughout his journey.

Q2: How many questions are covered in the SEBA Class 10 Bengali Chapter 6 solutions?

Answer: This post includes all textbook questions with detailed solutions, ensuring complete exam preparation.

Q3: Are the answers provided in this post useful for SEBA Board exams?

Answer: Yes, all answers are written in a structured and exam-friendly manner, making them highly useful for SEBA Board exams.

Q4: Can I download the solutions for Chapter 6?

Answer: Currently, the solutions are available online for free at Digital Pipal Academy. Stay tuned for downloadable PDF versions in the future!

Q5: Where can I find solutions for other SEBA Class 10 Bengali chapters?

Answer: You can explore Digital Pipal Academy for free solutions to all SEBA Class 10 Bengali chapters, as well as other subjects like Mathematics and Science.


📌 Related Posts:

📖 অধ্যায় ৫: আবার আসিব ফিরে - সকল প্রশ্নোত্তর
📖 অধ্যায় ২: বাংলার নবযুগ - সকল প্রশ্নোত্তর

For more SEBA Class 10 Bengali Questions & Answers, visit Digital Pipal Academy and stay updated with our latest educational content! 🚀

Author Image

About the Publisher

Gobinda Debnath is a skilled Computer Trainer at Digital Pipal Academy and an experienced Content Writer. Passionate about technology and education, he helps students enhance their digital skills through engaging and practical training.

 

Sudev Chandra Das

About the Content Reviewer

Hi! I'm Sudev Chandra Das (B.Sc. Mathematics), the Founder of Digital Pipal Academy. I've dedicated myself to guiding students toward better education. I believe, 'Success comes from preparation, hard work, and learning from failure.' Let’s embark on a journey of growth and digital excellence together!

 

Note for Users

If you find any incorrect answers, please notify us via Instagram at @pipalacademy or email us at info@pipalacademy.com. For content that may infringe copyright, kindly refrain from copying our content. Thank you for supporting Digital Pipal Academy!

যদি আপনি কোনো ভুল উত্তর পান, অনুগ্রহ করে আমাদের @pipalacademy ইনস্টাগ্রামে জানাবেন অথবা info@pipalacademy.com ইমেইলের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। কপিরাইট লঙ্ঘন করতে পারে এমন বিষয়বস্তুর জন্য, আমাদের বিষয়বস্তু কপি করা থেকে বিরত থাকুন। ডিজিটাল পিপাল একাডেমিকে সমর্থন করার জন্য ধন্যবাদ!

Join Our WhatsApp


For any queries, feel free to reach us at info@pipalacademy.com.

 

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !