SEBA Class 10 Bengali Chapter 8 (গদ্যাংশ) : বলাই

Gobinda Debnath

 

SEBA Class 10 Bengali Chapter 8 (গদ্যাংশ)


বলাই                          কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 ক) অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

প্রশ্ন ১। বলাই পাঠটির লেখক কে ? 

উত্তরঃ বলা পাঠটির লেখক হলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

প্রশ্ন ২। বলাইয়ের সঙ্গে লেখকের কী সম্পর্ক ছিল ? 

উত্তরঃ বলাই সম্পর্কে লেখকের ভাইপো ছিল  

প্রশ্ন ৩। অতি পুরানো বটের কোটরে কারা বাসা বেঁধে আছে ? 

উত্তরঃ অনেক পুরানো বটের কোটরে একজোড়া অতি পুরানো পাখি, ব্যাঙ্গমা – ব্যাঙ্গমী বাসা বেঁধে আছে।

প্রশ্ন ৪। বলাইয়ের মা কোথায় গিয়েছিল ? 

উত্তরঃ বলাইয়ের মা বলাইয়ের জন্মের পর মারা যান  

প্রশ্ন ৫। একদিন সকালে বলাওর কাকাকে কী দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল ? 

উত্তরঃ একদিন সকালের বলাই তার কাকে বাগানেরাস্তার মাঝখানে গজিয়ে ওঠা একটি শিমুল গাছের চারা দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল

প্রশ্ন ৬। বলাইয়ের সবচেয়ে বেশি স্নেহ কীসের উপর ছিল ? 

উত্তরঃ বলাইয়ের সবচেয়ে বেশি স্নেহ বাগানের ছোট চারাগাছটির উপর ছিল

প্রশ্ন ৭। সিমলে থেকে বলাই ওর কাকিমাকে কী পাঠিয়ে দেবার জন্য চিঠি পাঠিয়েছিল ? 

উত্তরঃ সিমলে থেকে বলাই র কাকিকে তার বন্ধুর অর্থা শিমুল গাছের একটি ফটোগ্রাফ দেবার জন্য চিঠি পাঠিয়েছিল  

প্রশ্ন ৮। বলাইয়ের বাবা বলাইকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিলেন ? 

উত্তরঃ বলাইয়ের বাবা বলাইকে সিমলায় পড়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন  

প্রশ্ন ৯। বিলাত যাবার আগে বলাই তার কোন বন্ধুর ছবি নিয়ে যেতে চেয়েছিল ? 

উত্তরঃ বিলাত যাবার আগে বলা তার বন্ধু পরম শিমুল গাছটির ছবি নিয়ে যেতে চেয়েছিল  

প্রশ্ন ১০। মা মারা যাবার পর বলাইকে কে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে ? 

উত্তরঃ মা মারা যাবার পর বলাইকে লেখকের স্ত্রী অর্থাৎ তার কাকিমা কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে  

 

(খ) শুদ্ধ অশুদ্ধ নির্ণয় করো :

১। বলাই একটি মেয়ের নাম  

উত্তরঃ অশুদ্ধ

২। বেশি কথা কইতে পারে না বলে বলাইকে অনেক বেশি ভাবতে হয়  

উত্তরঃ শুদ্ধ  

৩। লেখকের ছোট ভাইয়ের নাম ছিল বলাই  

উত্তরঃ অশুদ্ধ  

৪। শিমুল গাছটি ছিল বলাইয়ের প্রাণের দোসর  

উত্তরঃ শুদ্ধ  

৫। বলাই পাঠটির লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় । 

উত্তরঃ অশুদ্ধ

 

(ঘ) শূন্যস্থান পূরণ করুন :

১। মাঘের শেষে আমের ________ ধরে  

উত্তরঃ বোল

২। ফাল্গুনে ____ শালবনের মতোই ওর  ____ প্রকৃতিটা চার দিকে বিস্তৃত হয়ে ওঠে  

উত্তরঃ পুষ্পিত, অন্তর

৩। ও কাউকে না বলে ___ ___ গিয়ে সেই দেবদারুবনের ___  ___ একলা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে  

উত্তরঃ আস্তে আস্তে, নিস্তব্ধ ছায়াতলে

৪। শিমুলগাছ বাড়েও দ্রুত, কিন্তু বলাইয়ের ____ ____ পাল্লা দিতে পারে না  

উত্তরঃ আগ্রহের, সঙ্গে

৫। আমার সঙ্গে যখন পারলে না, এই ____ শিশুটি গেল কাকির কাছে  

উত্তরঃ মাতৃহীন

৬। ওই গাছ যে ছিল তাঁর বলাইয়ের ____, তারই প্রাণের _____

উত্তরঃ প্রতিরূপ, দোস

 

২। (ক) বাক্য রচনা করো :

ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে, আঁকু পাঁকু, গড়াতে গড়াতে, সুড়সুড়ি, খিলখিল, ছমছম, স্তরে স্তরে, দেখে দেখে, সেসে, ড্যাবা - ড্যাবা, ছোটো ছোটো, অহি-নকুল, জোড়াতাড়া, ঝম-ঝ  

উত্তরঃ 

ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে — ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল ছোট্ট মেয়েটি

আঁকু পাঁকু — আঁকু পাঁকু করে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল

গড়াতে গড়াতে — শিশুটি গড়াতে গড়াতে খেলার মাঠের এক প্রান্তে চলে গেল

সুড়সুড়ি — সুড়সুড়ি দিলে বাচ্চারা হাসতে হাসতে লুটোপুটি খায়

খিলখিল — ঘাসের সুড়সুড়িতে বলাই খিলখিল করে হেসে উঠত  

ছমছম — গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করতেই ছমছম করে উঠল পরিবেশ

স্তরে স্তরে — স্তরে স্তরে সাজানো কাগজগুলো ফাইলের ভেতরে ছিল

দেখে দেখে — বইয়ের পাতাগুলি দেখে দেখে পড়াশোনা করছিল সে

সে বসে — ব’সে ব’সে গল্প করছিলেন দাদু-ঠাকুমা

ড্যাবা-ড্যাবা — ড্যাবা-ড্যাবা চোখ মেলে শিশুটি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল  

ছোটো ছোটো — ছোটো ছোটো পায়ে হাঁটতে শিখছে শিশুটা

অহি - নকুল — অহি-নকুল সম্পর্ক কখনো শান্ত হতে পারে না

জোড়াতাড়া — জোড়াতাড়া দিয়ে মেরামত করা দেওয়ালটি আবার ভেঙে পড়ল

ঝম - ঝম — বর্ষার দিনে ঝম-ঝম বৃষ্টিতে সবাই ভিজে গেল

 

(খ) টিকা লেখ :

বলাই, শিমুল গাছ, ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী, খোঁয়াড় । 

উত্তরঃ 

১। বলাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত "বলাই" গল্পটি একটি সংবেদনশীল ও মনস্তাত্ত্বিক উপাখ্যান, যেখানে প্রকৃতিপ্রেমী, নিস্পাপ এবং অসাধারণ কিশোর চরিত্র বলাইকে কেন্দ্র করে কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ এখানে কেবল বলাইয়ের ব্যক্তিগত গল্প নয়, বরং সমাজে প্রকৃতি বিরোধী মানসিকতার প্রতি একটি প্রখর প্রতিবাদও তুলে ধরেছেন। বলাই ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইপো, জন্মের পরই তার মা মারা যান এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরও কোনো সন্তান ছিল না তাই নিঃসন্তান কাকা কাকিমার কাছে মাতৃহীন বলাই থাক

 সংসারে কাকিমা তার সাঙ্গী এবং অপর এক সাঙ্গী হল বিশ্বপ্রকৃতি। বলাই ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতির প্রতি গভীর মমতা অনুভব করে। গাছ, ফুল, পাখি তার জীবনের অংশ। বিশেষ করে "শিমুল গাছ" তার জন্য অত্যন্ত প্রিয়। বলাই শুধু প্রকৃতিকে ভালোবাসে না, সে প্রকৃতির নানান পরিবর্তন গভীর মনোযোগে লক্ষ্য করে। বৃষ্টির আগমন, পাখির ডানার ঝাপটা—সবই তার কাছে অর্থপূর্ণ। সমাজের প্রচলিত ধ্যানধারণা ও নিয়ম বলাইয়ের জীবনকে তেমনভাবে প্রভাবিত করতে পারে না। সে শিশুসম সরলতায় তার অনুভূতি প্রকাশ করে। কেউ গাছের ফুল তুললে, গাছের পাতা ছিঁড়লে সে বড় কষ্ট পেত যখন বলাইয়ের প্রিয় শিমুল গাছটি কাটা পড়ে, তখন সে মানসিকভাবে ভীষণভাবে ভেঙে পড়ে। এই ঘটনা তার জীবনের এক গভীর দুঃখের স্মৃতি হয়ে থেকে যায়। বলাই চরিত্রটি প্রকৃতির প্রতি মানবজাতির দায়িত্বশীলতার প্রতীক। তার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এবং নিষ্পাপ দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের প্রকৃতি সংরক্ষণের গুরুত্বের প্রতি সচেতন করে তোলে।

 

২। শিমুল গাছ শিমুল গাছ (বৈজ্ঞানিক নাম: Bombax ceiba) একটি বৃহৎ পর্ণমোচী বৃক্ষ। এটি সাধারণত বসন্তকালে সুন্দর লাল রঙের ফুল ফোটানোর জন্য বিখ্যাত। দক্ষিণ এশিয়া, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারত অঞ্চলে এটি খুবই পরিচিত।  উচ্চতা প্রায় ২০ থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে, শাখাগুলি ছড়ানো ও কাঁটাযুক্ত, গাছের পাতা হাতের তালুর মতো খণ্ডিত, বসন্তকালে গাছে বড় আকৃতির লাল বা কমলা ফুল ফোটে। ফুল ফোটার পর গাছে তুলার মতো নরম শিমুল রেশম জন্মায়।

          শিমুল তুলা গদি, বালিশ ও মাট্রেস তৈরিতে ব্যবহার হয়। গাছের বাকল ও মূল আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় শিমুল গাছ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিমুল গাছ শুধু একটি বৃক্ষ নয়, এটি বাংলার প্রকৃতির সৌন্দর্য, গ্রামীণ জীবনের অংশ এবং সংবেদনশীলতা ও ভালোবাসার এক গভীর প্রতীক।

শিমুল গাছ বাংলার সাহিত্য ও লোককথায় বিশেষ স্থান দখল করেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প "বলাই"-এ শিমুল গাছ প্রকৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং সংবেদনশীলতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। গল্পে বলাইয়ের প্রিয় শিমুল গাছটি কাটা পড়া প্রকৃতি ও মানবতার মধ্যে বিরোধের চিত্র ফুটিয়ে তোলে। বলাইয়ের কাকার বাগানে চলাফেড়া করার রাস্তাধ্যে একটি শিমূল গাছে উঠে ছিল । শিমুল গাছের বাড়ন্ত পাতা ব্যাখ্যাই চমৎ হয়। তার আনন্দ প্রকাশের জন্য তার কাকাকে দেখাতে নিয়ে যায়। কিন্তু কাকা গাছের বৃদ্ধিতে অখুশি ছিলেন। তাই বলাইয়ের বাবা বলাইকে বিলেতে শিক্ষা দেবার উদ্দেশ্যে বলাইকে সিমলায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলাইয়ের মন দুঃখে পরিণিত হয়। তাই সিমলা থেকে বিলেতে যাবার আগে তার বন্ধু শিমুল গাছটির ফটোগ্রাফ চাই। কিন্তু তার আগেই সেই গাছটিকে তার কাকা কেটে পেলেছিল।

 

৩। ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী "ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী" একটি জনপ্রিয় রূপকথা, যা বাংলা লোকসাহিত্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন গ্রন্থে এই গল্পের বিভিন্ন রূপ পাওয়া যায়।

ব্যাঙ্গমা ও ব্যাঙ্গমী হলো রূপকথার গল্প এক আশ্চর্য পাখি এবং পাখিনী — যারা কথা বলতে পারে, অতীত ও ভবিষ্যত দেখতে পায় এবং তাদের জ্ঞান অপরিসীম। কোনো রাজা, যুবরাজ বা বীর যখন কঠিন বিপদের সম্মুখীন হন, তখন ব্যাঙ্গমা ও ব্যাঙ্গমীর সাহায্য পেয়ে বিপদ থেকে উদ্ধার পান।

ব্যাঙ্গমা ও ব্যাঙ্গমী কেবল জাদুকরি পাখি নয়, তারা সত্য, জ্ঞান ও ন্যায়ের প্রতীক। মাতৃহীন বলাই কাকিমার কাছে ব্যাঙ্গমা – ব্যাঙ্গমীর গল্প শুনত  "ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী" শুধুমাত্র একটি রূপকথা নয়, বরং মানুষের জীবনের গভীর অন্তর্দর্শন এবং প্রকৃতির সাথে মানসিক সংযোগ স্থাপনের গল্প। এটি বাংলা সাহিত্যে চিরকালীন স্থান ধরে রাখবে।

 

৪। খোঁয়াড় খোঁয়াড় বলতে সাধারণত গবাদি পশু রাখার জন্য নির্ধারিত ঘর বা ঘেরা জায়গাকে বোঝানো হয়। এটি মূলত পশুদের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যেখানে তাদের খাবার, বিশ্রাম এবং রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা থাকে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প "বলাই"-এ খোঁয়াড় একটি বিশেষ প্রসঙ্গ হিসেবে এসেছে। গল্পে গ্রামীণ জীবন ও প্রকৃতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে ফুটিয়ে তুলতে খোঁয়াড়ের উল্লেখ গুরুত্বপূর্ণ। খোঁয়াড় শুধু পশুদের আশ্রয়স্থল নয়; এটি প্রকৃতির প্রতীকী এক চিত্র হয়ে ওঠে। বলাই চরিত্রটি ছোটবেলা থেকেই গাছপালা, পাখি ও প্রকৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা পোষণ করত। খোঁয়াড়ের পাশে থাকা একটি গাছের প্রতি তার বিশেষ টান ছিল। কিন্তু গ্রামবাসী সেই গাছটি কেটে ফেলে। এটি শুধুই একটি গাছ কাটার ঘটনা নয়; বরং এটি মানুষের স্বার্থপরতা এবং প্রকৃতির প্রতি অবজ্ঞার দৃষ্টান্ত।

গল্পে খোঁয়াড় শুধু পশুদের জায়গা হিসেবে নয়, বরং প্রকৃতির সুরক্ষা ও জীবনের ভারসাম্যের প্রতীক হিসেবেও গুরুত্ব বহন করে। এটি গ্রামীণ জীবনের বাস্তবতা এবং মানুষের পরিবেশবিধ্বংসী মানসিকতার একটি ইঙ্গিত দেয়।

 

৩। সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন :

(ক) ছেলেবেলা থেকে বলাইয়ের কী অভ্যাস ছিল ? 

উত্তরঃ ছেলেবেলা থেকে বলাইয়ের বিচিত্র সৃষ্টির অসংখ্য এবং নিবিড় সুন্দর সকল বস্তুকে চুপচাপ চেয়ে থাকার অভ্যাস ছিল । 

() কখন, কেমন করে বলাইয়ের অন্তর-প্রকৃতিতে ঘন রং লাগে ? 

উত্তরঃ সকাল ও বিকালের সূর্য ওঠা এবং অস্ত যাওয়া, স্তরে স্তরে সাজানো ঘন কালো মেঘ, আমগাছের আমের বোল, পুষ্পিত শালবন, বাড়ির সামনে সবুজ ঘাসের আস্তরণ এসব দেখে বলায়ের অন্তর-প্রকৃতিতে ঘন রং লাগে 

(গ) বস্তুত আমরা কোন পদার্থকে মানুষ বলে থাকি ?

উত্তরঃ বস্তুত আমরা মানুষ বলি সেই পদার্থকে যেটা আমাদের ভিতরকার সব জীবজন্তুকে মিলিয়ে এক করে দেয়। 

(ঘ) কেউ গাছের ফুল তোলে এইটে ওর বড়ো বাজে — এখানে ওর বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ? কেউ গাছের ফুল তুললে ওর বাজে কেন ? ওর প্রকৃতি কেমন ? 

উত্তরঃ এখানে ওর বলতেই বলায়কে বোঝানো হয়েছে। কেউ গাছের ফুল তুললে ওর বাজে কারণ সে ছিল প্রকৃতিপ্রেমী সে ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতির প্রতি গভীর মমতা অনুভব করে। ওর প্রকৃতি সংবেদনশীল, প্রকৃতিপ্রেমী, অপার্থিব সরলতা এবং পরিবেশ-সচেতনতা ছিল।

(ঙ) বলাইয়ের সাঙ্গীরা ওকে খ্যাপাবার জন্য কী কী করতো ? 

উত্তরঃ বলাই চরিত্রটি প্রকৃতিপ্রেমী ও সংবেদনশীল তাই সঙ্গীরা বিভিন্নভাবে বলাইকে খ্যাপাবার চেষ্টা করত। তার সঙ্গীরা ইচ্ছাকৃতভাবে গাছ কাটার প্রসঙ্গ তুলত বা গাছ কাটার পরিকল্পনা করত বলে বলাই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠত। তারা বলায়কে খ্যাপার জন্য বাগানের ভিতর দিয়ে চলতে চলতে দুপাশের হাত ড়ে দিয়ে গাছের পাতাগুলো ছিঁড়ে ফেলত এবং গাছের সব ফুল তুলে নিতো ইত্যাদি।

(চ) একদিন বলাই ওর কাকিমার গলা জড়িয়ে ধরে কী বলেছিল ? 

উত্তরঃ একদিন বলাই তার কাকিমার গলা ধরে বলেছিল যে তার কাকিমা যেন ঘাসিয়াড়াকে বাগানের গাছগুলো  কাটতে না করে 

(ছ) বলাই তার রক্তের মধ্যে বিশ্বপ্রাণের কী বাণী শুনতে পেয়েছিল ? 

উত্তরঃ বলা  তার রক্তের মধ্যে বিশ্বপ্রাণের আমি থাকব, আমি থাকব বাণীটি শুনতে পেয়েছিল 

(জ) বলাই কখন চমকে উঠে কাকিমাকে কী অনুরোধ করেছিল ? 

উত্তরঃ বাগানের খোওয়া – দেওয়া রাস্তার মাঝখানে জন্মানো প্রিয় শিমূল গাছটি যখন বলায়ের কাকা উপড়ে ফেলে দেবে বলেছিল তখন বলাই চমকে উঠে এবং কাঁদতে কাঁদতে কাকিমার কাছে গিয়ে গাছটি না কাটার জন্য অনুরোধ করেছিল ।

(ঝ) লেখক তাঁর ভাইপোকে কী বলে শিমুলগাছটা কেটে ফেলার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন? 

উত্তরঃ বাগানের খোওয়া – দেওয়া রাস্তার মাঝখানে গজে ওঠা শিমল গাছের বদলে খুব ভালো অনেকগুলো গোলাপের চারা আনিয়া দেবেন বলে প্রস্তাব দিয়েছিলেন

(ঞ) সিমলা থেকে বলাইয়ের চিঠি এলে কাকিমা কী করেছিলেন ? 

উত্তরঃ সিমলা থেকে বলাইয়ের চিঠি এলে কাকিমা বলাইয়ের কাকাকে শিমুল গাছের ছবি তুলে দেবার কথা বলেছিলেন, কিন্তু ইতিমধ্যে সেই গাছটিকে কেটে ফেলা হয়েছে, এর জন্য কাকিমা দুঃখে দুদিন অন্নগ্রহণ করেননি 

 

৪।  ৪/৫ বাক্যে উত্তর দাও : 

(ক) বলাইয়ের কাকিমা দুদিন অন্নগ্রহণ করেননি কেন ? 

উত্তরঃ মাতৃহীন বলাই ছোটোবেলা থেকেই সন্তানহীন কাকিমার কাছে লালন পালন হয়। দশ বছর তাদের ঘর ভরে ছিল সে। বলাই চরিত্রটি ছিল প্রকৃতিপ্রেমী ও সংবেদনশীল। ওর প্রাণে বন্ধু ছিল একটি শিমুলে গাছ যেটি তার কাকার বাগানের চলাফেরা করার পথে উঠেছিল। ওর সঙ্গে চারাটির প্রাণের সম্পর্ক ছিল। হঠাএকদিনলায়কে পড়ার জন্য ওর বাবা  শিমলায় নিয়ে যান। বলাই চলে যাবার পর কাকিমার ঘর শূন্য হয়ে যায়। শিমলা থেকে বলাই তার কাকিমাকে চিঠি লিখে পাঠায় যে সে বিলেতে চলে যাবে, তাই বিলেত যাবার সময় তার প্রাণের শিমুলগাছের একটি ফটোগ্রাফ তার কাকিমার কাছথেকে চেয়ে পাঠায়, কিন্তু ইতিমধ্যে সেই গাছটিকে কেটে ফেলা হয়েছে, এর জন্য কাকিমা দুঃখে দুদিন অন্নগ্রহণ করেননি কেননা গাছটা ছিল বলাইয়ের প্রাণের সঙ্গী।

(খ) বিলেত যাওয়ার পূর্বে বলা সিমলে থেকে কাকিমাকে চিঠিতে কী লিখে পাঠিয়েছিল ? 

উত্তরঃ বলাই ছোটোবেলা থেকেই সন্তানহীন কাকিমার কাছে লালন পালন হয়। দশ বছর তাদের ঘর ভরে ছিল সে। বলাই চরিত্রটি ছিল প্রকৃতিপ্রেমী ও সংবেদনশীল। ওর প্রাণে বন্ধু ছিল একটি শিমুলে গাছ যেটি তার কাকার বাগানের চলাফেরা করার পথে উঠেছিল। ওর সঙ্গে চারাটির প্রাণের সম্পর্ক ছিল। হঠাএকদিনলায়কে পড়ার জন্য ওর বাবা  শিমলায় নিয়ে যান। বলাই চলে যাবার পর কাকিমার ঘর শূন্য হয়ে যায়। শিমলা থেকে বলাই তার কাকিমাকে চিঠি লিখে পাঠায় যে সে বিলেতে চলে যাবে, তাই বিলেত যাবার সময় তার প্রাণের শিমুলগাছের একটি ফটোগ্রাফ তার কাকিমার কাছথেকে চেয়ে পাঠায়।

(গ) বলাই কেন ছোটবেলা থেকেই কাকিমার কাছে লালিত পালিত হয়েছে ?

উত্তরঃ লাই ছোটবেলা থেকেই কাকিমার কাছে লালিত-পালিত হয়েছিল কারণ তার মা ছোটবেলাতেই মারা যান এবং তার কাকিমাও ছিলেন সন্তানহীন মায়ের মৃত্যুতে বলাই মাতৃহীন হয়ে পড়ে এই অবস্থায় কাকিমাই তার মা-সুলভ স্নেহ ও যত্ন দিয়ে বলাইকে লালন-পালন করেন। বলাইয়ের প্রতি কাকিমার স্নেহ মায়ের অভাব পূরণের চেষ্টা করেছিল।

(ঘ) বলাই কখন চমকে উঠেছিল এবং কেন ? 

উত্তরঃ বাগানের খোওয়া – দেওয়া রাস্তার মাঝখানে জন্মানো প্রিয় শিমূল গাছটি যখন বলায়ের কাকা উপড়ে ফেলে দেবে বলেছিল তখন বলাই চমকে উঠে তার চমকে উঠার কারণ ছিল সে প্রকৃতিপ্রেমী ও সংবেদনশীল এছাড়া গাছটা ছিল বলাইয়ের প্রাণের সঙ্গী।

(ঙ) একদিন লেখককে তাঁর ভাইপোটি কোথায়, কখন, কেন ডেকে নিয়ে গিয়েছিল ? 

উত্তরঃ একদিন সকাল সকাল লেখক একমনে খবরের কাগজ পড়ছিলেন। এমন সময় তাঁর ভাইপো অর্থা বলাই তাকে তাড়াহুড়ো করে ধরে বাগানে নিয়ে যায়। বাগানে যাওয়া খোওয়া দেওয়া রাস্তার মাঝখানে একটি চারা গাছ উঠেছিল, বলাই তার কাকাকে সেই চারা গাঁছটিকে দেখানোর জন্য বাগানে নিয়ে  গিয়েছিল

 

৫। তাৎপর্য বিশ্লেষণ করোঃ 

(ক) “এই ছেলের আসল বয়স সেই কোটি বৎসর আগেকার।”

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গদ্য “বলাই”-তে উল্লেখিত “এই ছেলের আসল বয়স সেই কোটি বৎসর আগেকার” বাক্যটির তাৎপর্য গভীর ও বহুস্তরপূর্ণ। এই বাক্যের মাধ্যমে লেখক শুধুমাত্র বলাই নামের শিশুটির বয়সের প্রথাগত হিসাব নয়, বরং তার চরিত্র, মানসিকতা এবং প্রকৃতির প্রতি তার গভীর সংযোগের দিকটি ফুটিয়ে তুলেছেন।

বলাই প্রকৃতির সন্তান। গাছ, লতা-পাতা, পাখি—সবকিছুর সঙ্গে তার মেলবন্ধন যেন তার জীবনবোধের প্রধান ভিত্তি। তার এই প্রবল প্রকৃতিপ্রেম আধুনিক মানুষের কাছে ব্যতিক্রমী হলেও প্রকৃতির চিরন্তন ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই লেখক তার "কোটি বৎসর আগেকার" বয়সের কথা বলেছেন, যা আদিম মানব সভ্যতার প্রকৃতি-নির্ভর জীবনধারার প্রতীক। বলাই-এর সরলতা এবং প্রকৃতির প্রতি তার নিষ্কলুষ ভালোবাসা আধুনিক শহুরে জীবনের কৃত্রিমতা থেকে আলাদা। লেখক ইঙ্গিত দেন যে বলাই যেন সেই আদি যুগের মানুষের মতোই প্রাকৃতিক নিয়মে চলে। এই "কোটি বছর আগেকার" বয়স তার সহজাত ও আদি জীবনবোধের রূপক। লেখক হয়তো বলতে চেয়েছেন যে প্রকৃতি এবং তার নিয়ম চিরকালীন। বলাই যেন সেই চিরন্তন প্রকৃতির এক প্রতিচ্ছবি, যেখানে বয়স শুধুমাত্র কালের মাপকাঠি নয় বরং চিরায়ত প্রবাহের প্রতিফলন।

এই ছেলের আসল বয়স সেই কোটি বৎসর আগেকার” বাক্যটি কেবল বলাই-এর বয়স নির্দেশ করেনি, বরং প্রকৃতির প্রতি তার সহজাত ভালোবাসা, প্রাকৃতিক জীবনবোধ এবং মানুষের প্রাচীন অস্তিত্বের সঙ্গে তার অন্তর্গত সংযোগের গভীর তাৎপর্য বহন করে।

 

() এতদিনে এইসব চিহ্নকে ছাড়িয়ে গিয়ে বলাই অনেক বড়ো হয়ে উঠেছে।” 

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "বলাই" গল্পে উল্লেখিত উক্তি—“এতদিনে এইসব চিহ্নকে ছাড়িয়ে গিয়ে বলাই অনেক বড়ো হয়ে উঠেছে”—গভীর তাৎপর্য বহন করে। এই বক্তব্য মূলত বলাই চরিত্রের মানসিক পরিপক্বতা, আত্ম-সচেতনতা এবং পরিবেশের প্রতি তার গভীর সংবেদনশীলতার প্রতিফলন।

বলাই একটি বিশেষ ধরনের শিশুর প্রতিমূর্তি, যে প্রকৃতির সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। গল্পজুড়ে তার গাছপালা ও পরিবেশের প্রতি গভীর অনুরাগ প্রকাশিত হয়েছে।

উক্তিটি বলাইয়ের আত্মোপলব্ধির একটি সূচক। এই বিকাশ তাকে সমাজের প্রচলিত ভাবধারা ও প্রতিকূলতার ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছে। যদিও গল্পের শেষে সমাজ বলাইয়ের মতামতকে অবজ্ঞা করে গাছটি কেটে ফেলে, তবুও বলাই মানসিকভাবে জাগ্রত এবং অধিক পরিপক্ব হয়ে ওঠে। গল্পটি মানুষের লোভ ও প্রকৃতির মধ্যকার সংঘাতকে প্রতিফলিত করে। বলাই এখানে প্রকৃতির রক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। সমাজ তার চিন্তাভাবনাকে ছোট বলে ভাবলেও, প্রকৃতপক্ষে সে মানবিক মূল্যবোধের উচ্চতর স্তরে পৌঁছায়।

বলাই ছোটোবেলা থেকেই সন্তানহীন কাকিমার কাছে লালন পালন হয়। দশ বছর তাদের ঘর ভরে ছিল সে। বলাই চরিত্রটি ছিল প্রকৃতিপ্রেমী ও সংবেদনশীল। ওর প্রাণে বন্ধু ছিল একটি শিমুলে গাছ যেটি তার কাকার বাগানের চলাফেরা করার পথে উঠেছিল। ওর সঙ্গে চারাটির প্রাণের সম্পর্ক ছিল। হঠাএকদিনলায়কে পড়ার জন্য ওর বাবা  শিমলায় নিয়ে যান। বলাই চলে যাবার পর কাকিমার ঘর শূন্য হয়ে যায় কারণ সে বড়ো হয়েছে রয়ে গেছে শুর তাঁর ছেলে বেলার সব স্মৃতি।

বলাই অনেক বড়ো হয়ে উঠেছে” বাক্যটি বলাইয়ের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক বিকাশের প্রতীক। এটি শুধু তার বয়স নয়, বরং তার চিন্তা-চেতনার পরিপক্বতাকেও নির্দেশ করে। বলাই আমাদের শেখায় প্রকৃত বড় হওয়া মানে শুধু বয়সের বৃদ্ধি নয়, বরং প্রকৃতি ও নৈতিকতার প্রতি গভীর বোধ সৃষ্টি।

 

(গ) “বছর খানেকের মধ্যে গাছটা নির্লজ্জের মতো মস্ত বেড়ে উঠল।” 

উত্তরঃ বীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প "বলাই" একটি প্রকৃতিপ্রেমী, সংবেদনশীল এবং বিচিত্র চরিত্রের বালক বলাইকে কেন্দ্র করে রচিত। এখানে প্রকৃতির প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, আধুনিকতার চাপ এবং মানবজীবনের অন্তর্লীন দ্বন্দ্ব তুলে ধরা হয়েছে।

উক্তিটি: বছর খানেকের মধ্যে গাছটা নির্লজ্জের মতো মস্ত বেড়ে উঠল।” এখানে "নির্লজ্জের মতো" বলতে মানুষের সমাজে গাছের অপ্রত্যাশিত দ্রুত বৃদ্ধি বোঝানো হয়েছে। সাধারণত, কোনো গাছ বেড়ে উঠলে সেটি প্রাকৃতিক নিয়মেই গ্রহণযোগ্য মনে হয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে লেখক "নির্লজ্জ" শব্দটি ব্যবহার করেছেন সমাজের কৃত্রিম মনোভাবের সমালোচনা করতে। বলাইয়ের পরিবার এবং সমাজের মানুষ ওই গাছকে অবাঞ্ছিত বলে মনে করেছিল।মানুষের চাহিদা মেটাতে প্রকৃতির সঙ্গে করা অহংকারী আচরণের একটি চিত্র এটি। আধুনিক মানুষ যখন নিজের প্রয়োজনেই গাছ কাটে বা উপেক্ষা করে, তখন প্রকৃতির স্বাভাবিক বিকাশকেও তারা বিরূপ দৃষ্টিতে দেখে।

বলাইয়ের প্রণের প্রিয় বন্ধু ছিল একটি শিমুল গাছের চারা যেটি তার কাকার বাগানের খোওয়া – দেওয়ার মাঝখানে উঠেছিল। বলাইয়ের যত্নে শিমুল গাছটা বাগানের খোওয়া – দেওয়ার মাঝখানে “নির্লজ্জের মতো মস্ত বেড়ে উঠে”। অনুবাদক শব্দই নির্লজ্জের মতো বলা হয় কারণ বলায়ের কাকা সেই গাছটিকে কাঁটবার জন্য প্রস্তাব দেওয়াতে বলাই তার কাকাকে গাছটি না কাটার জন্য অনেক অনুরোধ করেন। যেখানে সে চেষ্টা করেছে ও বিতর্কিত করছে সেই গাছটি জন্য সেখানে গাছটি নিতান্তই নির্বোধ, কিছুই জানে না সেজন্য খোওয়া – দেওয়ার রাস্তার মাঝখানে নির্জ্জলের মতো মস্ত তৈরি হয়েছে। 

 

(ঘ) “তারা ওর চির – অসমাপ্ত গল্প।” 

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প বলাই-এ “তারা ওর চির-অসমাপ্ত গল্প” উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করতে গেলে বলাই চরিত্রের গভীর বোধ ও প্রকৃতিপ্রেমকে বোঝা জরুরি। বলাই একজন প্রকৃতিপ্রেমী ও সংবেদনশীল চরিত্র, যার মনন গাছ, পাখি, ফুলের মতো প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। তার জীবনবোধ আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতো নয়। বলাই প্রকৃতির প্রতিটি পরিবর্তনকে নিজের জীবনের অংশ হিসেবে দেখে।বলাইয়ের জীবনে প্রকৃতির সঙ্গে এই সংযোগ এক পূর্ণাঙ্গ গল্পের দিকে যেতে পারেনি, কারণ মানুষ প্রকৃতিকে পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারে না। তারা আকাশে যেমন সীমাহীন, বলাইয়ের প্রকৃতিপ্রেম এবং জীবনের ভাবনাও তেমনি কোনো সুনির্দিষ্ট সীমায় আবদ্ধ নয়।

বাগানের মাটির দিকে বলাই সীমাহীন কৌতূহল নিয়ে অঙ্কুরিত বীজের বিকাশ লক্ষ্য করত, যাদের গায়ে সদ্য গজিয়ে উঠেছে কচি কচি পাতা এবং তারপরে কী হবে। এসমস্ত নিয়েই তার ছিল অসীম কৌতূহল, সীমাহীন ঔৎসুক্য আর অনন্ত প্রশ্ন। তাই গাছগুলে ছিল তাঁর কাছে চির – অসমাপ্ত গল্প।

এই বাক্যটি মানুষের জীবনে প্রকৃতির চিরন্তন উপস্থিতি ও রহস্যের প্রতি ইসকাঙ্গিত দেয়। বলাইয়ের মতো সংবেদনশীল মানুষ প্রকৃতির প্রতিটি মুহূর্তে গল্পের ছোঁয়া খুঁজে পায়, কিন্তু সেই গল্প কখনো সম্পূর্ণ হয় না। তারা ওর চির-অসমাপ্ত গল্প” শুধুমাত্র বলাইয়ের কল্পনাশক্তির নয়, বরং মানুষের অজানা ও অনন্ত অনুসন্ধানের এক সুন্দর প্রতীক। এটি রবীন্দ্রনাথের প্রকৃতি ও জীবনবোধের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

(ঙ) “আমি চিরপথিক, মৃত্যুর পর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অন্তহীন বিকাশ তীর্থে যাত্রা করব রৌদ্রে-বাদলে, দিনে – রাত্রে।” 

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "বলাই" গল্পের এই উক্তিটি মানবজীবনের অস্তিত্ব, আত্মা ও চিরন্তন বিকাশের দর্শনকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। এই বক্তব্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য পাওয়া যায়:

 চিরপথিক” শব্দটি ইঙ্গিত করে যে জীবনের যাত্রা কখনো থেমে থাকে না। মৃত্যুই জীবনের সমাপ্তি নয়, বরং নতুন কিছু শুরু করার দ্বার।মৃত্যুর পর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অন্তহীন বিকাশ তীর্থে যাত্রা” কথাটি আত্মার অমরত্ব এবং পুনর্জন্মের ভাবনা প্রকাশ করে। এটি কেবল শারীরিক জীবন নয় বরং আধ্যাত্মিক পথচলার দিকেও ইঙ্গিত করে।রৌদ্রে-বাদলে, দিনে-রাত্রে” – এই অংশ প্রকৃতির পরিবর্তন ও বৈচিত্র্যের প্রতি মানুষের গ্রহণযোগ্যতাকে বোঝায়। জীবন যেমন সুখ-দুঃখ, আলো-অন্ধকারে পূর্ণ, তেমনই মৃত্যুও প্রকৃতির একটি স্বাভাবিক অংশ।এই বক্তব্যে একটি আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি লুকিয়ে আছে। জীবনের প্রতিটি স্তরে মানুষ পরিণত হয় এবং তার আত্মা এক নতুন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয়।

জীবনের ক্রমবিকাশ বা বিবর্তনের ধারায় উদ্ভিদজগতকে আদিমতম প্রাণীজগৎ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কারণ, পৃথিবীতে প্রথম জীবনের সূচনা হয়েছিল জলজ ও উদ্ভিদকোষের মাধ্যমে। যখন প্রাণীজগৎ সৃষ্টি হয় তখন কোনো পশু, পাখি, জীবনের কলরব ছিল না, চারদিকে ছিল পাথর, জল এবং সূর্যরশ্মি। গাছের "সূর্যের করুণা ও কৃপাপ্রার্থী" হওয়া প্রকৃতপক্ষে প্রকৃতির প্রতি জীবজগতের অবিচ্ছেদ্য নির্ভরশীলতা বোঝায়। সূর্যের কিরণই হল জীবনের মূল উদ্দেশ্য সমস্ত জীবজগতের প্রধান উপাদান। সূর্যকিরণ এবং জলে উদ্ভিদের জন্য উদ্ভিদজগৎ ও প্রাণীজগতের সম্ভব হয়েছে। তাই গাছ তার ক্ষমতাধারণ ও পাওয়ার জন্য সূর্যের করুণা ও কৃপাপ্রার্থী। এই জীবজগৎ গঠনে একমাত্র সূর্য এবং জলের বরদান ছিল এবং চিরদিন থাকবে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই বক্তব্য জীবন-মৃত্যুর অসীমতা, আত্মার মুক্তি ও মানবজীবনের অন্তর্নিহিত বিকাশকে তুলে ধরে। এটি কেবল বোধগম্য দর্শন নয়, বরং এক অন্তর্দৃষ্টির আহ্বান।

 

৬। রচনামূলক প্রশ্ন :

(ক) বলাইয়ের চরিত্র আলোচনা করো। 

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত "বলাই" গল্পটি একটি সংবেদনশীল ও মনস্তাত্ত্বিক উপাখ্যান, যেখানে প্রকৃতিপ্রেমী, নিস্পাপ এবং অসাধারণ কিশোর চরিত্র বলাইকে কেন্দ্র করে কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ এখানে কেবল বলাইয়ের ব্যক্তিগত গল্প নয়, বরং সমাজে প্রকৃতি বিরোধী মানসিকতার প্রতি একটি প্রখর প্রতিবাদও তুলে ধরেছেন। বলাই ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইপো, জন্মের পরই তার মা মারা যান এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরও কোনো সন্তান ছিল না তাই নিঃসন্তান কাকা কাকিমার কাছে মাতৃহীন বলাই থাক

 সংসারে কাকিমা তার সাঙ্গী এবং অপর এক সাঙ্গী হল বিশ্বপ্রকৃতি। বলাই ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতির প্রতি গভীর মমতা অনুভব করে। গাছ, ফুল, পাখি তার জীবনের অংশ। বিশেষ করে "শিমুল গাছ" তার জন্য অত্যন্ত প্রিয়। বলাই শুধু প্রকৃতিকে ভালোবাসে না, সে প্রকৃতির নানান পরিবর্তন গভীর মনোযোগে লক্ষ্য করে। বৃষ্টির আগমন, পাখির ডানার ঝাপটা—সবই তার কাছে অর্থপূর্ণ। সমাজের প্রচলিত ধ্যানধারণা ও নিয়ম বলাইয়ের জীবনকে তেমনভাবে প্রভাবিত করতে পারে না। সে শিশুসম সরলতায় তার অনুভূতি প্রকাশ করে। কেউ গাছের ফুল তুললে, গাছের পাতা ছিঁড়লে সে বড় কষ্ট পেত যখন বলাইয়ের প্রিয় শিমুল গাছটি কাটা পড়ে, তখন সে মানসিকভাবে ভীষণভাবে ভেঙে পড়ে। এই ঘটনা তার জীবনের এক গভীর দুঃখের স্মৃতি হয়ে থেকে যায়। বলাই চরিত্রটি প্রকৃতির প্রতি মানবজাতির দায়িত্বশীলতার প্রতীক। তার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এবং নিষ্পাপ দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের প্রকৃতি সংরক্ষণের গুরুত্বের প্রতি সচেতন করে তোলে।

বলাইয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য তার প্রকৃতিপ্রেম , সংবেদনশীল, এবং মানবিক আবেগে ভরপুর। সে গাছ, পাখি, নদী এবং প্রকৃতির ছোট ছোট উপাদানের প্রতি গভীর মমত্ববোধ অনুভব করে। সে গ্রামের অন্যান্য সাধারণ শিশুদের মতো নয়। খেলাধুলা বা দুষ্টুমি তার মূল আকর্ষণ নয়, বরং প্রকৃতির মধ্যে সে নিজের ভালোবাসা খুঁজে পায়। গল্পের একটি অংশে বলাইয়ের তালগাছের প্রতি বিশেষ টান প্রকৃতির প্রতি তার অগাধ ভালোবাসার প্রমাণ। বলাইয়ের চরিত্র অত্যন্ত সরল। সে জটিলতা থেকে মুক্ত এবং প্রাপ্তবয়স্কদের স্বার্থপরতার ধারণার সঙ্গে পরিচিত নয়। গল্পে দেখা যায়, যখন তালগাছটি কাটা হয়, তখন বলাই গভীরভাবে দুঃখিত হয়। এটি তার নির্মল ও সরল হৃদয়ের প্রতিফলন। বলাইয়ের চরিত্র প্রকৃতির প্রতি মানুষের যে দায়িত্ববোধ থাকা উচিত, তার প্রতিচ্ছবি। রবীন্দ্রনাথ এই চরিত্রের মাধ্যমে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য এবং তা রক্ষার প্রয়োজনীয়তার বার্তা দিয়েছেন।

বলাই শুধুমাত্র একজন ছোট ছেলের চরিত্র নয়; সে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের মেলবন্ধনের এক প্রতীক। তার সরলতা, সংবেদনশীলতা, এবং প্রকৃতিপ্রেম পাঠকদের হৃদয় স্পর্শ করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই চরিত্রের মাধ্যমে আমাদের প্রকৃতিকে ভালোবাসতে এবং তার প্রতি যত্নবান হতে উদ্বুদ্ধ করেন।

 

(খ) বলাই পাঠটি একটি প্রকৃতি বিষয়ক গল্প — এই আলোকে আলোচনা করো 

উত্তরঃ বলাইহল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের রচিত একটি সফল ও সার্থক ছোটগল্পের যেখানে সে প্রকৃতি ও মানব সম্পর্কের এক মর্মস্পর্শী চিত্র তুলে ধরে। এ ধরনের গল্প কেবল বাংলা সাহিত্যে নয়, বিশ্ব সাহিত্যে দুর্লভ। এই গল্পে গ্রাম্য প্রেক্ষাপটে প্রকৃতির প্রতি এক শিশুর গভীর ভালোবাসা এবং সমাজের প্রগতিশীল চিন্তাধারার সাথে তার দ্বন্দ্বকে তুলে ধরা হয়েছে। এই গল্পের প্রধান চরিত্র হল বলাই নামের এক সংবেদনশীল শিশু, যার প্রকৃতি সম্পর্কে গভীর আগ্রহ। সে গাছ, পাখি, ফুল এবং প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানের প্রতি মুগ্ধ। গল্পে বলাইয়ের পছন্দের একটি শিমুলগাছকে কেন্দ্র করে তার প্রাকৃতিক অনুভূতি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। তার মতে, গাছ কাটা অপরাধ; কারণ গাছ কেবল একটি কাঠের স্তূপ নয়, বরং জীবনের অংশ। গল্পে দেখা যায়, বলাইয়ের কাকা সেই গাছটি কাটার সিদ্ধান্ত নেন। আধুনিক সমাজে কাঠ সংগ্রহ ও জমির ব্যবহারিক প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, যা প্রকৃতির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। চাচার এই সিদ্ধান্ত সমাজের প্রাতিষ্ঠানিক মানসিকতার প্রতিনিধিত্ব করে। বলাই’ প্রকৃতির প্রতি এক নিস্পাপ শিশুর আবেগঘন সম্পর্ক এবং সমাজের প্রগতিশীল মনোভাবের মাঝে সংঘাতকে তুলে ধরে। এটি শুধু প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার গল্প নয়, বরং পরিবেশ রক্ষার এক নৈতিক শিক্ষা প্রদান করে।

গাছের প্রতি ছিল তারঅবিচ্ছিন্ন সুখ, পরম আত্মীয়তা, গভীর সমবেদনা ও মমত্ব। বলাই প্রকৃতিকে খুব ভালোবাসত এবং গাছের প্রতি তাঁর বিশেষ মমতা ছিল। তার সঙ্গীরা ইচ্ছাকৃতভাবে গাছ কাটার প্রসঙ্গ তুলত বা গাছ কাটার পরিকল্পনা করত বলে বলাই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠত। তার সঙ্গীরা বলাইয়ের গাছপালার প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা নিয়ে মজা করত। তারা তার এই স্বভাবকে অদ্ভুত বলে উপহাস করত।

 বলা হয়েছে সঙ্ঘীরা ওকে খ্যাপার জন্য বাগানের ভিতর দিয়ে চলতে চলতে দুপাশের হাত ড়ে দিয়ে গাছের পাতাগুলো ছিঁড়ে ফেলত এবং গাছের সব ফুল তুলে নিতো ইত্যাদি। তাঁর বয়সের ছেলেরা গাছে ঢিল মেরে আম, আমলকী পাড়, সে কিছু বলতে না পারে, সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে যেত 

বলায়ের চেয়ে চেয়ে দেখা, মনে মনে ভাবা আর চুপচাপ স্বভাবে ছেলে বলাই। বলাই ছেলেবেলা থেকেই কম কথা বলত এবং সৃষ্টির অসংখ্য ও নিবিড় সকল সুন্দর বস্তুকে চুপচাপ চেয়ে থাকত সকাল ও বিকালের ওঠা এবং অস্ত যাওয়া, স্তরে স্তরে সাজানো ঘন কালো মেঘ, আমগাছের আমের বোল, পুষ্পিত শাশবন, বাড়ির সামনে সবুজ ঘাসের আস্তরণ, এসব দেখে তার মন আনন্দে ভরে ওঠে, এক রঙিন নেশায়। সে তার রক্তের মধ্যে অনুভব করে এক অব্যক্ত স্মৃতি। সে কাউকে না বলে আস্তে আস্তে গিয়ে দেবদারু বনের নিস্তব্ধ ছায়াতলে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। প্রকাণ্ড দেবদারু গাছের ভিতরকার মানুষকে যেন সে দেখতে পায়। তারা কথা কয় না কিন্তু জানে সবই।

          বলাইয়ের প্রকৃতিপ্রীতির সবচেয়ে বড় নিদর্শন হলো তার প্রিয় শিমুল গাছ। তার কাকা যখন গাছটি কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন বলাই প্রাণপণ চেষ্টা করে গাছটি বাঁচাতে। তার কাছে এই গাছটি শুধুই একটি উদ্ভিদ নয়, যেন জীবন্ত বন্ধু। বলাই শিশুকাল থেকেই প্রাকৃতিক জগৎকে ভালোবাসত। সে বৃক্ষ, লতা-পাতা, পাখি এবং জীবজগতের প্রতি অগাধ মমতা প্রকাশ করত। বলাই প্রকৃতিকে বোঝার জন্য কোনো বই বা শিক্ষা নেয়নি। তার প্রাকৃতিক অনুভব এবং সরল ভালোবাসা ছিল সহজাত। গল্পটি শুধু বলাইয়ের প্রকৃতিপ্রীতির কাহিনি নয়, বরং প্রকৃতিকে সংরক্ষণ এবং প্রকৃতির প্রতি মমতা প্রদর্শনের এক সুন্দর বার্তা বহন করে।

এই গল্প আমাদের শেখায় যে প্রকৃতি শুধুই উপকরণ নয়, বরং জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। গল্পটি আজকের পরিবেশ সচেতনতার যুগেও সমান প্রাসঙ্গিক।

 

(গ) “তাদের সঙ্গে ওর কী যে একটা বয়স্যভাব তা ও কেমন করে প্রকাশ করবে।” —এখানে তাদের বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে? ওর-ই বা কে? তাদের এবং ওর চিরকালের সম্পর্কটা কী তা আলোচনা করো। 

উত্তরঃ “তাদের সঙ্গে ওর কী যে একটা বয়স্যভাব তা ও কেমন করে প্রকাশ করবে।” উক্তটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত বলাই  ছোটগল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

এখানে তাদের বলতে নতুন গজে উঠা অঙ্কুরগলোর কোঁকড়ানো কচি পাতাকে বলা হয়েছে। এবং ওর বলতে গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছোট্ট ‘বলাই’-কে বোঝানো হয়েছে

বলাই প্রকৃতি-প্রেমিক এক শিশু। সে মানুষের সমাজ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রাকৃতিক উপাদানের সঙ্গে একটি গভীর আত্মিক সম্পর্ক স্থাপন করে। সে গাছপালা ও প্রকৃতির সঙ্গে কথা বলে, তাদের বেড়ে ওঠা দেখে আনন্দ পায়। প্রকৃতির সঙ্গে এই অদ্ভুত বন্ধুত্ব বা ‘বয়স্যভাব’ অন্যদের কাছে বিস্ময়কর মনে হলেও, বলাইয়ের কাছে এটি অত্যন্ত স্বাভাবিক। এই সম্পর্ক একটি চিরন্তন বন্ধুত্বের প্রতীক যা প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের আবেগময় সংযোগকে তুলে ধরে।

বলাই চরিত্রের গভীর বোধ ও প্রকৃতিপ্রেমকে বোঝা জরুরি। বলাই একজন প্রকৃতিপ্রেমী ও সংবেদনশীল চরিত্র, যার মনন গাছ, পাখি, ফুলের মতো প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। তার জীবনবোধ আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতো নয়। তারা আকাশে যেমন সীমাহীন, বলাইয়ের প্রকৃতিপ্রেম এবং জীবনের ভাবনাও তেমনি কোনো সুনির্দিষ্ট সীমায় আবদ্ধ নয়।

বাগানের মাটির দিকে বলাই সীমাহীন কৌতূহল নিয়ে অঙ্কুরিত বীজের বিকাশ লক্ষ্য করত, যাদের গায়ে সদ্য গজিয়ে উঠেছে কচি কচি পাতা এবং তারপরে কী হবে। এসমস্ত নিয়েই তার ছিল অসীম কৌতূহল, সীমাহীন ঔৎসুক্য আর অনন্ত প্রশ্ন।

বলাই ছেলেবেলা থেকেই কম কথা বলত এবং সৃষ্টির অসংখ্য ও নিবিড় সকল সুন্দর বস্তুকে চুপচাপ চেয়ে থাকত সকাল ও বিকালের ওঠা এবং অস্ত যাওয়া, স্তরে স্তরে সাজানো ঘন কালো মেঘ, আমগাছের আমের বোল, পুষ্পিত শাশবন, বাড়ির সামনে সবুজ ঘাসের আস্তরণ, এসব দেখে তার মন আনন্দে ভরে ওঠে, এক রঙিন নেশায়। সে তার রক্তের মধ্যে অনুভব করে এক অব্যক্ত স্মৃতি। সে কাউকে না বলে আস্তে আস্তে গিয়ে দেবদারু বনের নিস্তব্ধ ছায়াতলে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। প্রকাণ্ড দেবদারু গাছের ভিতরকার মানুষকে যেন সে দেখতে পায়। গাছের উপর কোন অত্যাচার সে সহ্য করতে পারে না।

বলাইয়ের কাল প্রচ্ছন্ন আছে অনন্ত আদিম স্মরণ। বৃষ্টি ধোয়া উত্তর উদর পাহাড়ের শেখের খোঁচা দেবার বাগানে সজাতি শিমুল গাছটি তার প্রাণে সঙ্গী ছিল। বচেহারা হয়ে ওঠা শিমুলগাছটি যখন কাকা কেটে দেবেন, এই শুনে ছুটে গিয়ে কাকিকে অনুরোধ করে তার কাকাকে বারণ করার জন্য। সেইজন্য বিলেতে যাওয়ার পরও সেই গাছটার কথা ভুলতে পারে না। কারণ গাছটি তার প্রাণের দোসর। 

 

(ঘ) বলাই গল্পের মাধ্যমে ওর প্রকৃতিপ্রীতি পরিচয় দাও 

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বলাই’ গল্পে বলাই প্রধান চরিত্র হিসেবে প্রকৃতিপ্রীতি অত্যন্ত সুন্দরভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এই গল্পের মাধ্যমে লেখক প্রকৃতির প্রতি মানুষের সংবেদনশীলতা ও গভীর ভালোবাসাকে তুলে ধরেছেন।

          বলাই ছোটবেলা থেকেমাতৃহারা এবং তাই নিঃসন্তান কাকা – কাকিমার কাছে পরম স্নেহে যত্নে বড়ো হয়েছেন বলাই ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতির প্রতি গভীর মমতা অনুভব করে। গাছ, ফুল, পাখি তার জীবনের অংশ। তার চরিত্রটি প্রকৃতিপ্রেমী ও সংবেদনশীল তাই সঙ্গীরা বিভিন্নভাবে বলাইকে খ্যাপাবার চেষ্টা করত। তার সঙ্গীরা ইচ্ছাকৃতভাবে গাছ কাটার প্রসঙ্গ তুলত বা গাছ কাটার পরিকল্পনা করত বলে বলাই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠত। তারা বলায়কে খ্যাপার জন্য বাগানের ভিতর দিয়ে চলতে চলতে দুপাশের হাত ড়ে দিয়ে গাছের পাতাগুলো ছিঁড়ে ফেলত এবং গাছের সব ফুল তুলে নিতো ইত্যাদি। কেউ যদি গাছের ফুল তুলে নষ্ট করে তা বলাইর প্রাণে বড়ো বাজে। একথা সে কাউকে প্রক করে না। ঘাসিয়াড়া আগাছা নিড়নি দিয়ে নানা ধরনের চারা গাছ নষ্ট করলে তার বড়ো রাগ হয় ।

বলাই ছেলেবেলা থেকেই কম কথা বলত এবং সৃষ্টির অসংখ্য ও নিবিড় সকল সুন্দর বস্তুকে চুপচাপ চেয়ে থাকত সকাল ও বিকালের ওঠা এবং অস্ত যাওয়া, স্তরে স্তরে সাজানো ঘন কালো মেঘ, আমগাছের আমের বোল, পুষ্পিত শাশবন, বাড়ির সামনে সবুজ ঘাসের আস্তরণ, এসব দেখে তার মন আনন্দে ভরে ওঠে, এক রঙিন নেশায়। সে তার রক্তের মধ্যে অনুভব করে এক অব্যক্ত স্মৃতি। সে কাউকে না বলে আস্তে আস্তে গিয়ে দেবদারু বনের নিস্তব্ধ ছায়াতলে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। প্রকাণ্ড দেবদারু গাছের ভিতরকার মানুষকে যেন সে দেখতে পায়। তারা কথা কয় না কিন্তু জানে সবই।

          বলাইয়ের প্রকৃতিপ্রীতির সবচেয়ে বড় নিদর্শন হলো তার প্রিয় শিমুল গাছ। তার কাকা যখন গাছটি কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন বলাই প্রাণপণ চেষ্টা করে গাছটি বাঁচাতে। তার কাছে এই গাছটি শুধুই একটি উদ্ভিদ নয়, যেন জীবন্ত বন্ধু। বলাই শিশুকাল থেকেই প্রাকৃতিক জগৎকে ভালোবাসত। সে বৃক্ষ, লতা-পাতা, পাখি এবং জীবজগতের প্রতি অগাধ মমতা প্রকাশ করত। বলাই প্রকৃতিকে বোঝার জন্য কোনো বই বা শিক্ষা নেয়নি। তার প্রাকৃতিক অনুভব এবং সরল ভালোবাসা ছিল সহজাত। গল্পটি শুধু বলাইয়ের প্রকৃতিপ্রীতির কাহিনি নয়, বরং প্রকৃতিকে সংরক্ষণ এবং প্রকৃতির প্রতি মমতা প্রদর্শনের এক সুন্দর বার্তা বহন করে।

রবীন্দ্রনাথের ‘বলাই’ প্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও সংবেদনশীলতা প্রকাশের এক অনন্য সৃষ্টি। বলাইয়ের চরিত্রের মাধ্যমে লেখক প্রাকৃতিক জগতের প্রতি গভীর মমতার প্রয়োজনীয়তা এবং তার গুরুত্ব উপলব্ধি করিয়েছেন।

 

৭। পাঠনির্ভর ব্যাকরণ:

(ক) নিচের শব্দেগুলোর বিপরীত শব্দ লেখো: 

বিস্তৃত, প্রচ্ছন্ন, অব্যক্ত, অন্তর, প্রকান্ড, অসমাপ্ত, নিষ্ঠুর, অমৃত, নির্লজ্জ, নির্বোধ, বন্ধুর, ক্ষত, প্রতিরূপ, নিবিড়। 

উত্তরঃ বিস্তৃত — সংকীর্ণ।

প্রচ্ছন্ন — প্রকাশ্য।

অব্যক্ত ব্যক্ত।

অন্তর— বাহির।

প্রকাণ্ড — ক্ষুদ্র।

অসমাপ্ত — সমাপ্ত।

নিষ্ঠুর — দয়ালু।

অমৃত — গরল, বিষ।

নির্লজ্জ — লজ্জাশীল।

নির্বোধ — বুদ্ধিমান।

বন্ধু মসৃণ।

ক্ষত — অক্ষত।

প্রতিরূপ — মূলরূপ।

নিবিড় — বিরল।

 

(খ) রেখাঙ্কিত পদগুলোর কারক – বিভক্তি নির্ণয় করো:

১। একদিন সকালে একমনে খবরের কাগজ পড়ছি। 

উত্তরঃ সকালে: কারক অপাদান, বিভক্তি শূন্য (অপাদান কারকের নির্দেশ অর্থে সময়সূচক বিশেষণ) কাগজ: কর্ম কারক, ষষ্ঠী বিভক্তি (সম্পর্ক নির্দেশক)

২। বলাইয়ের কাঁচা হাতে লেখা চিঠি আমাকে দেখতে দিলেন  

উত্তরঃ হাতের: কারক সম্পাদক কারক, বিভক্তি ষষ্ঠী (এঁর)

চিঠি: কারক কর্ম কারক, বিভক্তি প্রত্যয়বিহীন

৩। মাঘের শেষে আমের বোল ধরে। 

উত্তরঃ মাঘের: কারক — অপাদান, বিভক্তি — ষষ্ঠী

আমের: কারক — সম্বন্ধ, বিভক্তি — ষষ্ঠী

৪। বলাইয়ের কাকি দুদিন অন্ন গ্রহণ করলেন না। 

উত্তরঃ বলাইয়ের: কারক সম্পর্ককারক, বিভক্তি ষষ্ঠী (এর)

অন্ন: কারক কর্মকারক, বিভক্তি প্রথা (কোনো বিভক্তি নেই)

৫। বলাই সেই দেবদারু বনের নিস্তব্ধ ছায়ালে একলা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে 

উত্তরঃ ছায়াতলে: কারক — অধিকরণ কারক, বিভক্তি সপ্তমী বিভক্তি ("-তলে")

 

(গ) পদ পরিবর্তন করুন: 

সুন্দর, বিলেত, চিন্তা, গোপন, লো, মৎকৃত, প্রত্যহ, বিস্তৃত, অন্তর, পুষ্প, উৎসুক, প্রস্তাব, গ্রহণ, গম্ভীর, বন্ধুর, অসংগত । 

উত্তরঃ  সুন্দর (বিশেষণ) সুন্দরতা (বিশেষ্য),

বিলেত (বিশেষ্য) বিলেতি (বিশেষণ),

চিন্তা (বিশেষ্য) চিন্তাশীল (বিশেষণ),

গোপন (বিশেষণ) গোপনতা (বিশেষ্য),

লোভ (বিশেষ্য) লোভী (বিশেষণ),

চমৎকৃত (বিশেষণ) চমক (বিশেষ্য),

প্রত্যহ (অব্যয়) প্রাত্যহিক (বিশেষণ),

বিস্তৃত (বিশেষণ) বিস্তার (বিশেষ্য),

অন্তর (বিশেষ্য) অন্তরঙ্গ (বিশেষণ),

পুষ্প (বিশেষ্য) পুষ্পিত (বিশেষণ),

উৎসুক (বিশেষণ) উৎসুকতা (বিশেষ্য),

প্রস্তাব (বিশেষ্য) প্রস্তাবিত (বিশেষণ),

গ্রহণ (বিশেষ্য) গ্রহণযোগ্য (বিশেষণ),

গম্ভীর (বিশেষণ) গম্ভীরতা (বিশেষ্য),

বন্ধুর (বিশেষণ) বন্ধুতা (বিশেষ্য),

অসংগত (বিশেষণ) অসংগতিপূর্ণ (বিশেষণ)

 

৮। যোগ্যতা বিচার করো: 

(ক) প্রকৃতি – প্রীতির প্রয়োজনীয়তা কী? 

উত্তরঃ প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা বা প্রকৃতি-প্রীতি মানুষের শারীরিক, মানসিক এবং নৈতিক উৎকর্ষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সভ্যতার ক্রমবিকাশের পরও মানুষ প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রকৃতি-প্রীতি আমাদের জীবনের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, প্রকৃতির সান্নিধ্য মানুষের মনকে শান্ত করে। গাছপালা, নদী, পাহাড় বা সবুজ মাঠের দৃশ্য আমাদের ক্লান্ত মনকে প্রশান্তি দেয় এবং মানসিক চাপ কমায়। পরিষ্কার বাতাস, সবুজ পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করে। প্রকৃতির মাঝে হাঁটা, ব্যায়াম করলে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় থাকে। প্রকৃতির মধ্যে সময় কাটালে সৃজনশীল চিন্তা এবং উদ্ভাবনী মনোভাবের বিকাশ ঘটে। বহু কবি, লেখক ও শিল্পী প্রকৃতি থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। প্রকৃতি আমাদের ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও সহযোগিতার শিক্ষা দেয়। গাছের নিঃস্বার্থ সেবা, নদীর ধারায় প্রবাহমান জীবনবোধ এসব নৈতিক শিক্ষার অন্যতম উদাহরণ।

প্রকৃতি-প্রীতি মানুষকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে সচেতন করে তোলে। এতে বনাঞ্চল সংরক্ষণ, দূষণ প্রতিরোধ এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার প্রয়াস বৃদ্ধি পায়। প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করলে মানুষ জীবনের গভীর অর্থ বুঝতে পারে। এটি আত্মজিজ্ঞাসা ও জীবনবোধের উৎকর্ষ সাধন করতে সাহায্য করে।

মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তাই প্রকৃতি-প্রীতি কেবল আনন্দের বিষয় নয়; এটি একটি নৈতিক দায়িত্ব এবং জীবনের সমৃদ্ধির অপরিহার্য উপাদান। কিন্তু প্রকৃতিকে প্রকৃতির জন্য প্রাকৃতিক বিনিষ্ট বিশ্ববাসীকে বাঁচাতে হবে। সেইজন্য বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তা ও কর্মপন্থা শুরু করতে হবে। আগামী দিনে মানুষের কাছে কোনো বড়ো ধরনের পরিবেশের পরিবেশ যাতে না হয়, সেইজন্য প্রকৃতির প্রতি যত্নশীল প্রয়োজন। 

 

(খ) মানুষ-জীবজন্তুর সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক আলোচনা রো 

উত্তরঃ মানুষ ও জীবজন্তু প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। প্রকৃতির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর এবং পরস্পর নির্ভরশীল। এই সম্পর্ক বোঝা এবং রক্ষা করা মানবজাতির টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য। মানুষ তার জীবনধারণের জন্য প্রকৃতি থেকে খাদ্য, জ্বালানি, নির্মাণ উপকরণ এবং ওষুধ সংগ্রহ করে। মানুষের জীবনধারণের জন্য আহার প্রয়োজন। অরণ্যের ফলমূল মানুষের প্রথম আহার জুগিয়েছে। কেবল মানুষ নয়, অন্যান্য প্রাণীও আহার জুগেছে অরণ্য । অরণ্যের ডাল দিয়েই মানুষ হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করেছে। বাতাসের দূষণে জীবকুল বিকুল সম্পন্ন হয়। সেজন্য কার্বন ডাই – অক্সাইডের মতো গরল গ্রহণ করে – বিশ্বাসের জন্য আবশ্যকীয় অক্সিজেন সম্পন্ন করেছে। মানবকুলের কল্যাণে উৎসর্গীকৃত অরণ্য বন্যা ও ভূমিক্ষয় থেকে আমাদের দেখা হয়েছে। জৈব সারে রাজনীতি ভূমিকে উর্বর করেছে। সভ্য মানুষের দল, কাঠ, ভেষজ ও অন্যান্য অনেক শিল্প সম্ভার অরণ্যের উপহার। প্রকৃতির অংশ হিসেবে মানুষ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে, তবে আধুনিক সভ্যতার কারণে মানুষ প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। প্রকৃতির অংশ হিসেবে মানুষ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে, তবে আধুনিক সভ্যতার কারণে মানুষ প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। প্রকৃতির সৌন্দর্য মানুষের মানসিক শান্তি দেয় এবং সাহিত্য, শিল্প ও দর্শনে অনুপ্রেরণা জোগায়।

জীবজন্তুর জীবনচক্র প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। গাছপালা, জলাশয় এবং মাটির মতো প্রাকৃতিক উপাদান থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে তারা। মৌমাছি, পোকামাকড়, পাখি এবং অন্যান্য প্রাণী গাছপালার পরাগায়ন ঘটিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রজনন প্রক্রিয়া চালিয়ে রাখে। জীবজন্তু প্রাকৃতিক পরিবেশে যেমন বনভূমি, নদী, পাহাড়ে বাস করে। এদের আবাসভূমি ধ্বংস হলে জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হয়।

মানুষ ও জীবজন্তু একে অপরের সঙ্গে ও প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। গাছপালা ও জীবজন্তুর সুরক্ষা নিশ্চিত করলে মানবজীবনের ভারসাম্য বজায় থাকে। মানুষ পরিবেশের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে জীবজগতের ক্ষতি করছে। বনাঞ্চল উজাড়, বায়ু দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জীবজন্তুর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। প্রকৃতি রক্ষায় মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। টেকসই কৃষি, বনায়ন এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে এই সম্পর্ককে সুস্থভাবে ধরে রাখা সম্ভব।

মানুষ ও জীবজন্তুর সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক একটি জটিল কিন্তু সৌন্দর্যমণ্ডিত বিষয়। এই সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় থাকলে পৃথিবী এক সুন্দর বাসযোগ্য স্থান হয়ে ওঠে। তবে এই ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে মানুষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

 

(গ) বলাইয়ের সঙ্গীরা কী কী উপায়ে বলাইকে খ্যাপাবার চেষ্টা করতো? 

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প বলাই” একটি গভীর মানবিক গল্প যেখানে বলাই চরিত্রটি প্রকৃতিপ্রেমী ও সংবেদনশীল। গল্পে তার সঙ্গীরা বিভিন্নভাবে বলাইকে খ্যাপাবার চেষ্টা করত। বলাই প্রকৃতিকে খুব ভালোবাসত এবং গাছের প্রতি তাঁর বিশেষ মমতা ছিল। তার সঙ্গীরা ইচ্ছাকৃতভাবে গাছ কাটার প্রসঙ্গ তুলত বা গাছ কাটার পরিকল্পনা করত বলে বলাই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠত। তার সঙ্গীরা বলাইয়ের গাছপালার প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা নিয়ে মজা করত। তারা তার এই স্বভাবকে অদ্ভুত বলে উপহাস করত।

 বলা হয়েছে সঙ্ঘীরা ওকে খ্যাপার জন্য বাগানের ভিতর দিয়ে চলতে চলতে দুপাশের হাত ড়ে দিয়ে গাছের পাতাগুলো ছিঁড়ে ফেলত এবং গাছের সব ফুল তুলে নিতো ইত্যাদি। তাঁর বয়সের ছেলেরা গাছে ঢিল মেরে আম, আমলকী পাড়, সে কিছু বলতে না পারে, সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে যেত 

এভাবে বলাইয়ের সঙ্গীরা প্রকৃতির প্রতি তার ভালোবাসা ও সরলতা নিয়ে তাকে খ্যাপানোর চেষ্টা করত, যা গল্পে বলাইয়ের চরিত্রের বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছে।

 

৯। ব্যাকরণঃ

(ক) পদ পরিবর্তন করুন। 

নিক্ষেপ — নিক্ষিপ্ত।

আঘাতআঘাত প্রাপ্ত 

খণ্ড — খণ্ডিত।

ফল — ফলন্ত

কল্পনা — কল্পিত।

উজ্জ্বল — ঔজ্জ্বল্য।

আতঙ্ক — আতঙ্কিত।

শ্রান্ত — শ্রান্তি।

আনন্দ — আনন্দিত।

উদ্ধার — উদ্ধৃত। 

নিজে করো। 

স্ত্রী, চুরি, দুর্বল, পাথর, আহার, সংকীর্ণ, শৃঙ্খল, অবরোধ, গোপন, আবিষ্কার, নিদ্রা, আশ্রয়, ভুল, নিরুদ্দেশ, অংশ, কুলীন, আশ্বাস, তন্ত্র, চমক । 

উত্তরঃ  স্ত্রী স্ত্রীলিঙ্গ (বিশেষ্য),

চুরি চোর (বিশেষ্য),

দুর্বল দুর্বলতা (বিশেষ্য),

পাথর পাথুরে (বিশেষণ),

আহার আহার্য (বিশেষণ),

সংকীর্ণ সংকীর্ণতা (বিশেষ্য),

শৃঙ্খল শৃঙ্খলিত (বিশেষণ),

অবরোধ অবরুদ্ধ (বিশেষণ),

গোপন গোপনীয়তা (বিশেষ্য),

আবিষ্কার আবিষ্কর্তা (বিশেষ্য),

নিদ্রা নিদ্রিত (বিশেষণ),

আশ্রয় আশ্রিত (বিশেষণ),

ভুল ভুলানো (ক্রিয়া),

নিরুদ্দেশ নিরুদ্দেশতা (বিশেষ্য),

অংশ অংশীদার (বিশেষ্য),

কুলীন কুলীনতা (বিশেষ্য),

আশ্বাস আশ্বাসিত (বিশেষণ),

তন্ত্র তান্ত্রিক (বিশেষণ),

চমক — চমকিত (বিশেষণ)

 

(খ) প্রত্যয় কাকে বলে ? প্রত্যয় কত প্রকারের ? বিভিন্ন প্রকার প্রত্যয়ের সংজ্ঞা সহ উদাহরণ দিয়ে লেখো  

উত্তরঃ ধাতু বা শব্দ প্রকৃতির সাথে যে বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি যোগ করে নতুন নতুন শব্দের সৃষ্টি হয় তাকে প্রত্যয় বলে। প্রত্যয় প্রধানত দুই প্রকার । কৃৎ প্রত্যয় ও তদ্ধিত প্রত্যয়  

কৃৎপ্রত্য ধাতু প্রকৃতির সঙ্গে যে প্রত্যয় যোগ করে নতুন শব্দ গঠন করা হ তাকে কৃৎপ্রত্যয় বলে। যেমন—  বাংলা কৃৎ প্রত্যয় :– চল+অন্ত = চলন্ত, কাঁদ+উনি = কাঁদুনি

সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয় :– দৃ+অনট = দর্শন, কৃ + তব্য = শ্রদ্ধা  

তদ্ধিত প্রত্যয়  শব্দ প্রকৃতির সঙ্গে যে প্রত্যয় যোগ করে নতুন শব্দ তৈরি হয় তাকে তদ্ধিত প্রত্যয়। যেমন—          বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয় :— বাবু+গিরি = বাবুগিরি, পাটনা + আই — পাটনাই। 

সংস্কৃত তদ্ধিত প্রত্যয় : — অপত্য অর্থে = রাধা + ষ্ণেয় — রাধেয়,

বিবিধ অর্থ = পৃথিবী + ষ্ণ = পার্থিব, অন্যান্য অর্থে = ভারত + ষ্ণীয় = ভারতীয়। 

 

প্রত্যয় নির্ণয় করো। যেমন —

নাচন, রান্না, চড়াই, ডুবারী, পাণ্ডব, গাঙ্গেয়, দ্বৈপায়ন । 

উত্তরঃ নাচন = নাচ্‌ + অন (কৃৎপ্রত্যয়) 

রান্না = রাঁধ + অনা ( কৃৎ প্রত্যয় ) 

চড়াহ = চড় + আই ( কৃৎ প্রত্যয় ) 

ডুবাবি = ডুব + আরি ( কৃৎ প্রত্যয় ) 

পাণ্ডব = পাণ্ডু + ষ্ণ ( তদ্ধিত প্রত্যয় ) 

গাঙ্গেয = গঙ্গা + ষ্ণেয় ( তদ্ধিত প্রত্যয় ) 

দৈত্য = দিতি + ষ্ণ্য ( তদ্ধিত প্রত্যয় ) 

দ্বৈপায়ন = দ্বীপ + ষ্ণায়ন ( তদ্ধিত প্রত্যয় )

 

(গ) অশুদ্ধি সংশোধন করুন । 

শব্দ সংশোধন:

আবিস্কার — আবিষ্কার।

গননা গণনা।

নিরব — নীরব।

নিরোগী  নিরোগ।

উচিৎ — উচিত। 

নমস্কার — নমস্কার।

জ্বল — উজ্জ্বল।

জেষ্ঠ্য — জ্যেষ্ঠ।

নাটন ​​— অনটন।

স্বরস্বতী — সরস্বতী।

রামায় রামায়ণ।

সন্ধা — সন্ধ্যা।

ব্যা ব্য

বাল্মিকী — বাল্মীকি। 

নিজে করোঃ (শব্দ সংশোধন)

পৌরহিত্য, ব্যবস্তা, সান্তনা, রসায়ণ, সন্মান, পূর্বাহ্ন, বৈশিষ্ট, বিদ্যান, সাধণা, সদ্যজাত, ন্যা, নিশিথ, অভ্যস্থ

উত্তরঃ পৌরহিত্য শুদ্ধরূপ,

ব্যবস্তা ব্যবস্থা,

সান্তনা সান্ত্বনা,

রসায়ণ শুদ্ধরূপ,

সন্মান সম্মান,

পূর্বাহ্ন শুদ্ধরূপ,

বৈশিষ্ট বৈশিষ্ট্য,

বিদ্যান বিদ্বান,

সাধণা সাধনা,

সদ্যজাতসঠিক,

সন্যাস সন্ন্যাস,

নিশিথ শুদ্ধরূপ,

অভ্যস্থ অভ্যস্ত

 

বাক্যাংশের অশুদ্ধি সংশোধনঃ 

আবশ্যক নেই — আবশ্যকতা নেই  

নামজাদা লেখক — নাম করা লেখক  

মুদি দোকান — মুদির দোকান

ছোটবেলার কথা — ছেলেবেলার কথা  

গোপন কথা — গোপনীয় কথা  

আমি সম্পূর্ণ নির্দোষী — আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ  

ছেলেটি অশুদ্ধ সংশোধন করতে পারে না — ছেলেটি অশুদ্ধি সংশোধন করতে পারে না 

নিজে করোঃ (বাক্যাংশের অশুদ্ধি সংশোধন)

মনযোগ দিয়ে লেখাপড়া কর, দেবী দূর্গা দর্শভূজা, আমি সাক্ষী দিতে আদালতে যাব, জ্ঞানমান ব্যক্তি শ্রদ্ধার পাত্র হন, তিনি আরোগ্য হলেন, অপমান হবার ভয় নেই  

উত্তরঃ মনযোগ দিয়ে লেখাপড়া কর মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া কর।

দেবী দূর্গা দর্শভূজা দেবী দুর্গা দশভূজা।

আমি সাক্ষী দিতে আদালতে যাব আমি সাক্ষ্য দিতে আদালতে যাব।

জ্ঞানমান ব্যক্তিই শ্রদ্ধার পাত্র হন জ্ঞানবান ব্যক্তিই শ্রদ্ধার পাত্র হন।

তিনি আরোগ্য হলেন তিনি আরোগ্য লাভ করলেন।

অপমান হবার ভয় নেই অপমান হওয়ার ভয় নেই।

 

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !