SEBA Class 10 Bengali Chapter 11
অরুণিমা সিনহা :
আত্মবিশ্বাস ও সাহসের এক নাম
লেখক —ড. জয়শ্রী গোস্বামী মহন্ত
অনুশীলনী
২। অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নঃ
(ক) অরুণিমা রেলগাড়িতে চড়ে কোথায় যাচ্ছিল ?
উত্তরঃ অরুণিমা
রেলগাড়িতে চড়ে লখনউ থেকে দিল্লিতে যাচ্ছিল ।
(খ) অরুণিমার বয়স কত ছিল?
উত্তরঃ অরুণিমার বয়স
প্রায় ২৬ বছর ছিল ।
(গ) অরুণিমা কোন খেলায় পারদর্শী ছিল?
উত্তরঃ অরুণিমা
ভলিবল খেলায় পারদর্শী ছিল।
(ঘ) কখন অরুণিমার হিমালয় শিখরে ওঠার স্বপ্ন তীব্র হয়েউঠেছিল?
উত্তরঃ হাসপাতালের
বিছানায় শুয়ে থাকার সময় অরুণিমার মনে হিমালয় শিখরে ওঠার স্বপ্ন তীব্র হয়েউঠেছিল।
(ঙ) অরুণিমাকী কী সম্মান লাভ করেছিল ?
উত্তরঃ ভারত সরকার
অরুণিমাকে ২০১৫ সালে ‘পদ্মশ্রী’ এবং ‘তেনজিং নোরগে’
সম্মানে বিভূষিত করেছিলেন। ২০১৪ সালে সে ভূতপূর্ব
রাষ্ট্রপতি ড. এ.পি.জে আব্দুল কালামের কাছ থেকে ‘অ্যামেজিং
ইন্ডিয়ান অ্যাওয়ার্ড’লাভ করেন। ভারতের
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর মোদি অরুণিমার লেখা বই উন্মোচন করে তার ভূয়সী
প্রশংসা করেন।
২। সংক্ষিপ্ত উত্তর দাওঃ
(ক) অরুণিমা কেন ডাকাতদের হাতে তার সোনার চেন দিতে
চায়নি?
উত্তরঃঅরুণিমাএকটি ভীষণ
সাহসী মেয়ে ছিল এবংচেনটি তার মায়ের দেওয়া আশীর্বাদ ছিল তাই অরুণিমা ডাকাতদের হাতে
চেনটি দেয়নি।
(খ) কারা কারা অরুণিমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল?
উত্তরঃ অরুণিমার বোন, এভারেস্ট বিজয়ী বাচেন্দ্রী পাল এবংনক্রিকেট দলেরক্রিকেটারযুবরাজ সিং ওঅরুণিমাকে
অনুপ্রেরণা দিয়েছিল।
(গ) কোন ক্রিকেটার অরুণিমাকে বিশেষ অনুপ্রেরণা
দিয়েছিলেন?তিনি নিজে কোন অসুখে ভুগছিলেন?
উত্তরঃ ক্রিকেটার যুবরাজ
সিং অরুণিমাকে বিশেষ অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন, তিনি নিজে ক্যান্সাররোগে
ভুগছিলেন।
(ঘ) অরুণিমা প্রথমে কোন পর্বতে আরোহণ করেছিলেন ?তার উচ্চতা কত?
উত্তরঃঅরুণিমা
প্রথমেলাদাখে অবস্থিত শামসের কাংরির পর্বতে আরোহণ করেছিল। যেটির
উচ্চতা প্রায় ২২,৪০৮ ফুট ছিল। যেখানে সে২১,৭১৮ ফুট আরোহণ করতে সক্ষম হয় এবং মাত্র ৬৯০ ফুট বাকি থাকতেই তারা অভিযান বন্ধ রেখেই নীচে নেমে আসতে
বাধ্য হয়।
(ঙ) স্টিফেন হকিংকে?তাঁর কী
অসুবিধা ছিল?
উত্তরঃ স্টিফেন হকিং
ছিলেন একজন ইংরেজ পদার্থ বিজ্ঞানী। তিনি শারীরিকভাবে
অক্ষম ছিলেন।
কিন্তু তিনি তাঁর বিরল প্রতিভাএবং বিজ্ঞান সাধনায় বিস্ময়কর আবিষ্কারের দ্বারা সারা
বিশ্ববাসীর হৃদয় জয় করিতে সক্ষম হয়েছিলেন।
৩। দীর্ঘ উত্তর লেখোঃ
(ক) অরুণিমা কোন ঘটনায় পা হারিয়েছিল?এই ঘটনা কি তাকে তার লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পেরেছিল ?
উত্তরঃ অরুণিমা এক
অতন্ত সাহসী মেয়ে যার বয়স প্রায় ২৬ বছর। তার
বাড়ি ছিল উত্তর প্রদেশে। সে ছিল খুব ভালো বলিবল খেলোয়াড়
এবং জাতীয় পর্যায়ে অনেক সুনাম অর্জনও করেন।
একদিন অরুণিমা ট্রেনে করিয়া
লখনউ থেকে দিল্লী যাইতেছিল। হঠাৎ মাঝ রাত্রিতে চলন্ত রেলগাড়িতে একদল ডাকাত পড়িল। চলন্ত
রেলগাড়ির কামরায় তখন অনেক মানুস ছিল। সবই আতঙ্কিত। সবার মুখ শুকিয়ে
ছোট হয়ে গিয়েছে। কেউ কাউকে সাহস জোগানোর মনোবল পাচ্ছিল না। বরং
ডাকাতদলের দাবিমতোই হাতের,
কানের এবং গলার অলঙ্কার সহ যার হাতে যত টাকাপয়সা ছিল সবইপ্রাণেরভয়ে
নীরবে বিনা প্রতিবাদে ভয়ে ভয়ে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছিল।
ডাকাতরা সকলের কাছ হইতে
সোনাদানা টাকা-পয়সা ছিনতাই করিয়া লইতেছিল। অরুণিমাকেও ডাকাতরা তাহার গলার চেইন
খুলিয়া দিবার জন্য তাড়া দিল। কিন্তু অরুণিমা চেন খুলিয়া দিতে অস্বীকার করিলে
ডাকাতরা ক্ষুণ্ণ হইয়া অরুণিমাকে চলন্ত ট্রেন হইতে ছুড়িয়া ফেলিয়া দিল।সে সময় অন্য
একটি রেলগাড়ি আসছিল। অরুণিমা চলন্ত রেলগাড়িতে ধাক্কা খেয়ে বস্তার মতো পড়ে গেল।
অরুণিমা প্রাণপণে চিৎকার দিলেও রেলইঞ্জিন ও চাকারশব্দের জন্য তার গলার আওয়াজ চাপা
পরে যায়। প্রায় সাত
ঘন্টা সময় সে রেললাইনের কাছে পড়ে থাকল এবং এই সময়সীমার মধ্যে প্রায় সেই রেলপথ
দিয়া সারারাত ৩৯টি ট্রেন চলাচল করিল। রাতের অন্ধকারে অরুণিমাকে কেউ দেখতে পায়নি,
অথবা ভয়ে কেহই অরুণিমাকে উদ্ধার করিতে আগাইয়া আসে নাই। প্রায়
৭
ঘণ্টা সময় অরুণিমা রেল লাইনের ধারে আহত অবস্থায় চালের বস্তার মতো পড়িয়া রহিল।
ভোর হইবার পর লোকে দেখিল যে লখনউ-দিল্লিগামীরেললাইনের
ধারে একটি যুবতি গুরুতর ভাবে আহত হইয়া পড়িয়া আছে। প্রথমে তাহাকে বেরিলি হাসপাতালে
ভর্তি করানো হইল। তারপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাহাকে দিল্লীর অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট
অব মেডিক্যাল সায়েন্স-এ ভর্তি করানো হইল। এই ঘটনায় অরুণিমা একটি পা চিরকালের জন্যে
হারাইল এবং অন্য একটি পায়ে লোহার রড ঢুকিয়ে তাহার সাহায্যে চলাফেরা করিতে সক্ষম
হইল।অরুণিমাকে দেখে কেউ কেউ মনে মনে বলতে লাগল যে টিকিট কাটা ছিল না তাইটিটি যখন অরুণিমার
কাছে টিকিট চাইল হয়তো তক্ষুনি রেল কামরা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিল। আবার কেউ কেউ বলতে
লাগল যে হয়তো অন্য কোনো কারণবশতঃ অরুণিমা আত্মহত্যা করার জন্য রেললাইনে গিয়েছিল। কথাগুলি
অরুণিমার কানে আসছিল, এগুলি মনকে দুঃখ দেওয়া ছাড়াও সকল কথাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে
নিয়ে নতুন করে জীবন গড়ে তুলতে সংকল্পবদ্ধ করে তুলেছিল৷
এই দুর্ঘটনা তাহাকে নিজের
লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করিতে পারেনি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে
থাকার সময় অরুণিমার মনে হিমালয়ের শিখরে ওঠার স্বপ্নে তীব্র হয়ে উঠতে লাগল। এভারেস্ট
বিজয়ের আকাঙ্ক্ষায়
সে পায়ের ব্যথা ও বিকলাঙ্গতার কথা ভুলে গেল।
(খ) পর্বত অভিযানে অরুণিমা কী ধরনের বাধার সম্মুখিনহয়েছিল?এবং কীভাবে তা অতিক্রম করেছিল ?
উত্তরঃঅরুণিমা
অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে থাকিবার সময় মনে মনে সংকল্প করিয়াছেন এতে যে তিনি
এভারেস্ট শৃঙ্গ আরোহণ করিবেন। তিনি তাঁহার বিকলাঙ্গতার কথা ভুলিয়া গেলেন। তাই
হাসপাতাল হইতে বাহির হইয়া বাড়িতে গেলেন না। সোজা এভারেস্ট বিজয়ী বাচেন্দ্রী পালের
সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলেন। তাঁর দু-চোখে তখন এভারেস্ট বিজয়ের স্বপ্ন এবং পৃথীবীর
শীর্ষতম স্থানলাভ করার ইচ্ছা যেন তীব্র হয়ে উঠেছিল।
তার আকাঙক্ষা দেখে অনেকেই তাকে পরামর্শ দিয়ে
বলেছিলেন,
একটি কৃত্রিম পা, আর অন্যটি থেকেও না-থাকার
মতো, হিমালয় পর্বতারোহণ, যা অতি কঠিন
কৌশল এবং পরিশ্রম সাপেক্ষ, তাতে এরকম অবস্থায় সাফল্য লাভ করা
তোমার পক্ষে সম্ভব নয়। তার চেয়ে সাধারণ ভাবে জীবনযাপন করো, এরকম
কঠিন কাজে এগিয়ে জীবনটিকে বিপদাপন্ন করার প্রয়োজন নেই।
কিন্তু যার
চোখে এভারেস্ট বিজয়ের স্বপ্ন এবং অন্তরে প্রচণ্ড সাহস এবং আত্মবিশ্বাস তাকে এ সকল
কথায় লক্ষা থেকে বিচ্যুত করতে পারবে কি? লক্ষ্য স্থির রেখে
অরুণিমা দিনে দিনে এগিয়ে যাচ্ছিল। আগে লাগানো কৃত্রিম পা-টি পর্বতারোহণের জন্য
উপযোগী ছিল না। নতুন পা লাগাতে প্রায় ষাট সত্তর হাজার টাকার প্রয়োজন। অনেক চেষ্টার
পর তাও জোগাড় হল। বেশ কিছু সহৃদয় ব্যক্তি সাহায্য করলেন। সত্যিই দেখা গেল একদিন
কৃত্রিম পা এবং অন্যটি লোহার রডের সহায়তায় চলাফেরা করা, এই
পায়ের সাহায্যে যুবতি মনে অদম্য উৎসাহ এবং দুচোখে হাজার স্বপ্ন নিয়ে অরুণিমা উত্তর
কাশীতে থাকা ইকো এভারেস্ট এক্সিপিডিশনগ্রুপে যোগদান করিলেন।অবশেষে লাদাখে অবস্থিত শামসের
কাংরির ২১৭১৮ ফুট উচ্চতায় আরোহণ করতে সে সক্ষম হয়। পরবর্তী শামসের কাংরির
উচ্চতম শিখরের মাত্র ৬৯০ ফুট অতিক্রম করতে বাকি থাকতেই তারা অভিয়ান বই রেখেই নীচে
নেমে আসতে বাধ্য হয়। পরে এই অসম্পূর্ণতাই তার মনে পর্বের সংকল্প অধিক দৃঢ় করেছিল।
তার মনে মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের আকাঙক্ষা আরও দৃঢ় হল।
অবশেষেমাউন্ট
এভারেস্ট বিজয় করতে প্রস্তুত ছিল অরুণিমা, মাউন্ট এভারেস্টের
শিখরে উঠে ফটো তোলার, ভিডিওর মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে নিজের বিরল
অভিজ্ঞতার বিষয়ে জানানোর অভিপ্রায়ে যে দুটি ক্যামেরা সঙ্গে নিয়েছিল। নিয়েছিল জল ও
অক্সিজেন। চার নম্বর ক্যাম্পে পৌঁছতেই দুটি পা থেকে রক্ত ঝরে সে এক ভয়ঙ্কর অবস্থা
হয়েছিল।সঙ্গে যে শেরপা ছিল সে অরুণিমাকে বারবার সতর্ক করে দিচ্ছিল যে-কোনো
মুহূর্তে অক্সিজেন শেষ হতে পারে, তখন মৃত্যুকে ডাকিয়া নিতে
হইবে, ইহা ছাড়া অন্য উপায় থাকিবে না। কিন্তু অরুণিমার একটাই
কথা এতদূর আসিয়া ফিরিয়া যাইবার কোনো মানে হয় না। অদম্য সাহস ও উৎসাহ লইয়া সে
অগ্রসর হইয়াছিল। কিন্তু দুইটি পা-হাঁটু হইতে রক্ত লইয়া অতি কষ্টে অগ্রসর হইতেছিল।
পথে চোখে অনেক মৃতদেহ সে দেখিতে পায়। কিন্তু কিছু তাহাকে দমিয়ে রাখিতে পারেনি।
কাঠমান্ডু হইতে যাত্রা শুরু করিয়া ৫২ দিনের পর অবশেষে অরুণিমা রাত ৮ টায় ৮৮৪৮
মিটার উচ্চতায় অবস্থিত মাউন্ট এভারেস্টের শিখরে পদার্পণ করিতে সক্ষম হইল।এইরূপ সে
বিপদজনিত বাধার সম্মুখিনহইয়া পর্বত অভিযানেজয় লাভ করেছিল।
(গ) অরুণিমা সিনহার এভারেস্ট বিজয়ের কাহিনি বর্ণনা করো।
উত্তরঃ অরুণিমা
অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে থাকিবার সময় মনে মনে সংকল্প করিয়াছেন এতে যে তিনি
এভারেস্ট শৃঙ্গ আরোহণ করিবেন। তিনি তাঁহার বিকলাঙ্গতার কথা ভুলিয়া গেলেন। তাই
হাসপাতাল হইতে বাহির হইয়া বাড়িতে গেলেন না। সোজা এভারেস্ট বিজয়ী বাচেন্দ্রী পালের
সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলেন। তাঁর দু-চোখে তখন এভারেস্ট বিজয়ের স্বপ্ন এবং পৃথীবীর
শীর্ষতম স্থানলাভ করার ইচ্ছা যেন তীব্র হয়ে উঠেছিল।
বাচেন্দ্রী পাল তার সকল
কথা সহমর্মিতার সঙ্গে শুনলেন। মেয়েটির দু চোখের স্বপ্ন, চ্যালেঞ্জ
এবং আত্মপ্রত্যয়ের জন্য তারও মনে বিশ্বাস জাগল যে সঠিক প্রশিক্ষণ এবং সাহস পেলে এই
মেয়েটি নিশ্চয় একদিন লক্ষ্যে উপনীত হতে পারবে। তার আকাঙক্ষা দেখে অনেকেই তাকে
পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন, একটি কৃত্রিম পা, আর অন্যটি থেকেও না-থাকার মতো, হিমালয় পর্বতারোহণ,
যা অতি কঠিন কৌশল এবং পরিশ্রম সাপেক্ষ, তাতে
এরকম অবস্থায় সাফল্য লাভ করা তোমার পক্ষে সম্ভব নয়। তার চেয়ে সাধারণ ভাবে জীবনযাপন
করো, এরকম কঠিন কাজে এগিয়ে জীবনটিকে বিপদাপন্ন করার প্রয়োজন
নেই।
কিন্তু যার
চোখে এভারেস্ট বিজয়ের স্বপ্ন এবং অন্তরে প্রচণ্ড সাহস এবং আত্মবিশ্বাস তাকে এ সকল
কথায় লক্ষা থেকে বিচ্যুত করতে পারবে কি? লক্ষ্য স্থির রেখে
অরুণিমা দিনে দিনে এগিয়ে যাচ্ছিল। আগে লাগানো কৃত্রিম পা-টি পর্বতারোহণের জন্য
উপযোগী ছিল না। নতুন পা লাগাতে প্রায় ষাট সত্তর হাজার টাকার প্রয়োজন। অনেক চেষ্টার
পর তাও জোগাড় হল। বেশ কিছু সহৃদয় ব্যক্তি সাহায্য করলেন। সত্যিই দেখা গেল একদিন
কৃত্রিম পা এবং অন্যটি লোহার রডের সহায়তায় চলাফেরা করা, এই
পায়ের সাহায্যে যুবতি মনে অদম্য উৎসাহ এবং দুচোখে হাজার স্বপ্ন নিয়ে অরুণিমা উত্তর
কাশীতে থাকা ইকো এভারেস্ট এক্সিপিডিশনগ্রুপে যোগদান করিলেন।
তাঁহার শারীরিক ও মানসিক দুই
দিকেই দৃঢ়তার অভাব ছিল না। তিনি পা হারানোর দুর্ভাগ্যকে সৌভাগ্যে পরিণত করিবার
জন্য উদগ্রীব হইয়া উঠিলেন। প্রায় এক বছর কাল নাগাড়ে উৎসাহ উদ্যম অব্যাহত রাখিয়া
অনুশীলনে আত্মমগ্ন হইয়াছিলেন। পর্বতাভিযানে তাঁহার সহায়তা করা নেপালি লোকটিও তার
রক্তভেজা পায়ের অবস্থা দেখে প্রাণ বাঁচাতে তাকে বেশ কয়েকবারই ফিরে যাবার পরামর্শ
দিয়েছিল। কিন্তু অরুণিমা যে কোনো প্রকার বাধাবিপত্তির কাছে হার মানতে
শেখেনি।অবশেষে লাদাখে অবস্থিত শামসের কাংরির ২১৭১৮ ফুট উচ্চতায় আরোহণ করতে
সে সক্ষম হয়। পরবর্তী শামসের কাংরির উচ্চতম শিখরের মাত্র ৬৯০ ফুট অতিক্রম করতে বাকি
থাকতেই তারা অভিয়ান বই রেখেই নীচে নেমে আসতে বাধ্য হয়। পরে এই অসম্পূর্ণতাই তার
মনে পর্বের সংকল্প অধিক দৃঢ় করেছিল। তার মনে মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের আকাঙক্ষা আরও দৃঢ়
হল। এই সময়সীমায় তার মনোবল আরও বাড়িয়ে লক্ষ্যে উপনীত হবার জন্য এগিয়ে যেতে
অনুপ্রাণিত করেছিলেন প্রখ্যাত ক্রিকেটার যুবরাজ সিং-ও। যিনি ক্যান্সার আক্রান্ত
ছিল এবং নিজের অদম্য মানসিক শক্তিতে সেই মারণব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভ করে তাঁর
জীবনে লক্ষ্য পূরণের পথে সফল হন।যুবরাজ দেখিয়ে
দিয়েছিটেই মনের বল এবং আত্মবিশ্বাস থাকলে শারীরিক বাধা কোনো প্রতিরোধ সৃষ্টি করতে
পারে না এবং জীবনের উত্তরণের পথে কোনো বাধা হতে পারে না।
মাউন্ট শামসের কাংরির শিখরে না
ওঠার বেদনা অরুণিমার মনোবল কমাতে পারেনি। বরং সেই অবস্থায় ২১১০৮ ফুট ওপরে যাবার
মনোবল তার মনে মাউন্ট এভারেস্টে যাওয়া যে সম্ভবপর সেটি আরও দৃঢ় করে তুলল। এবার
মাউন্ট এভারেস্ট বিজয় করতে প্রস্তুত ছিল অরুণিমা, মাউন্ট
এভারেস্টের শিখরে উঠে ফটো তোলার, ভিডিওর মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে
নিজের বিরল অভিজ্ঞতার বিষয়ে জানানোর অভিপ্রায়ে যে দুটি ক্যামেরা সঙ্গে নিয়েছিল।
নিয়েছিল জল ও অক্সিজেন। চার নম্বর ক্যাম্পে পৌঁছতেই দুটি পা থেকে রক্ত ঝরে সে এক
ভয়ঙ্কর অবস্থা হয়েছিল। সঙ্গে যে শেরপা ছিল সে অরুণিমাকে বারবার সতর্ক করে দিচ্ছিল
যে-কোনো মুহূর্তে অক্সিজেন শেষ হতে পারে, তখন মৃত্যুকে ডেকে
নেওয়া ছাড়া আর কেনো উপায় থাকবে না। পরে অরুণিমা বলেছিল, 'এতদূর
এসে আর ফিরে যাবার প্রশ্ন ওঠে না। যা হয় দেখা যাবে।
অদম্য সাহস এবং উৎসাহ নিয়ে সে
এগিয়ে গিয়েছিল। রক্ত ঝরতে থাকা দুটি হাঁটু থেকে রুমাল দিয়ে রক্ত মুছতে মুছতে এগিয়ে
যাবার সময় রাস্তার বহু অভিযাত্রীর মৃতদেহ দেখতে পায় সে। কিন্তু কিছুই তাকে দমিয়ে
রাখতে পারেনি। প্রচণ্ড পরিশ্রম, অদম্য মনোবল এবং কষ্ট সহিষ্ণুতার
ফল অবশেষে মিলল। কাঠমান্ডু থেকেযাত্রা শুরু করবার ৫২ দিন পর অবশেষে রাত ৮ টায় সে
৮৮৪৮ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত মাউন্ট এভারেস্টের শিখরে পদার্পণ করতে সক্ষম হল। অনেক
অভিযাত্রীরই সেই স্থানে পৌঁছার পর সঙ্গে নেওয়া অক্সিজেন প্রায় শেষ হবার উপক্রম
ঘটে। তাই এভারেস্টের বুকে পা রেখেই তারা অতি দ্রুত নেমে আসতে বাধ্য হয়। কারণ
অক্সিজেন শেষ হবার আগেই উপর থেকে নেমে আসা পথের প্রথম ক্যাম্পে পৌঁছতেই হবে।
অরুণিমারও অক্সিজেন প্রায় শেষ হয়ে আসছিল। সঙ্গে শেরপাকে মাউন্ট এভারেস্টের শিখরে
দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় তার ছবি ও ভিডিও নিতে অনুরোধ করেছিল। শেরপা বলছিল, এখানে বেশি সময় অপেক্ষা করলে প্রাণ সংশয় হতে পারে, বলে
তাকে বুঝিয়ে ভারতের জাতীয় পতাকা হাতে দণ্ডায়মান অরুণিমার ছবি তুলে দিয়েছিল। প্রায়
দেড় ঘন্টার মতো অরুণিমা এভারেস্টে ছিল। তারিখটি ছিল ২১ মে ২০১৩।এইরূপ দৃঢ় মনোবল
লইয়া - অরুণিমা এভারেস্ট বিজয়ের জন্য প্রস্তুত হইয়াছিলেন।
।ব্যাকরণ।
ভাষায় এমন কিছু শব্দ বা
ব্যাক্যাংশ থাকে যেগুলো আক্ষরিক অর্থ প্রকাশ না করে বিশিষ্ট অর্থে ভাষাকে
তাৎপর্যময় করে। সেগুলোকে বলা হয় বিশিষ্টার্থক বাক্যাংশ বা বাগধারা।
অসাধু উপায়ে অর্জিত তার বিশাল
সম্পদ তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেল। এখানে তাস দিয়ে সত্যি সত্যিই ঘর বানানো হয়নি।ক্ষণস্থায়ী জিনিসের সঙ্গে তুলনা
করে বলা হয়েছে।‘তাসের ঘর’
পদগুচ্ছ আভিধানিক অর্থ প্রকাশ না করেবিশিষ্ট অর্থ প্রকাশ
করেছে ।
প্রবাদ-প্রবচন
বিশিষ্টার্থক বাক্যাংশের মতই
বাংলা চলিত ভাষার অন্যতম সম্পদ। অশিক্ষিত ও সুরসিক জনসাধারণ এর স্রষ্টা। সংক্ষেপে
অধিক ভাবপ্রকাশ করতে এবং প্রকাশ ভঙ্গিতে তির্যকতা দান করতে প্রবাদ-প্রবচন ব্যবহার
করা হয়। যেমন এক মাঘে শীত যায় না। এর অর্থ হচ্ছে ভবিষ্যতে সুযোগ আসবেই।
১) নিচের বিশিষ্টার্থক বাক্যাংশগুলোর
সাহায্যে সার্থক বাক্য রচনা করো।
রাহুর দশা; আক্কেল-সেলামি; বালির বাঁধ; গোড়ায়
গলদ; চাঁদের হাট।
উত্তরঃরাহুর দশা – পরীক্ষার আগে মোবাইল হারিয়ে রাহুল যেন রাহুর দশায় পড়েছিল।
আক্কেল-সেলামি – নতুন দোকানে চাকরি পেয়ে মালিককে আক্কেল-সেলামি দিতে হলো।
বালির বাঁধ – পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া ব্যবসা শুরু করা মানে বালির বাঁধ তৈরি করা।
গোড়ায় গলদ – গণিত পরীক্ষায় খারাপ ফল হলো কারণ গোড়ায় গলদ ছিল তার মূল ধারণাতেই।
চাঁদের হাট – পয়লা বৈশাখের মেলায় এমন ভিড় ছিল যেন চাঁদের হাট বসেছে।
২)নিচের প্রবচনগুলোর অর্থ উল্লেখ করে বাক্যে
প্রয়োগ করো।
ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে; বানরের
গলায় মুক্তার মালা; পেটে খেলে পিটে সয়;দশচক্রে ভগবান ভূত;ভাগের মা গঙ্গা পায় না।
উত্তরঃ
১.
ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে
অর্থ: এক ব্যক্তি দুর্দশায় পড়লে তার চেয়েও দুর্বল বা অযোগ্য কেউ তা দেখে উপহাস
করে।
বাক্যে প্রয়োগ: পরীক্ষায় ফেল করেও
রাজীব তার বন্ধুর কম নম্বর দেখে উপহাস করছে, যেন ঘুঁটে পোড়ে
গোবর হাসে।
২.বানরের
গলায় মুক্তার মালা
অর্থ: যে মূল্য বোঝে না, তার কাছে মূল্যবান বস্তু দেওয়া।
বাক্যে প্রয়োগ: এত দামি বই উপহার
পেয়েও সে সেগুলো ছিঁড়ে ফেলেছে, একেবারে বানরের গলায় মুক্তার
মালা।
৩.পেটে
খেলে পিটে সয়
অর্থ: শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তি ও কর্মক্ষমতা পুষ্টিকর খাদ্যের উপর নির্ভর করে।
বাক্যে প্রয়োগ: শরীর ভালো রাখতে হলে
পুষ্টিকর খাবার খাওয়া দরকার, কারণ পেটে খেলে পিটে সয়।
৪.দশচক্রে
ভগবান ভূত
অর্থ: অনেকের মিলিত ষড়যন্ত্র বা অপপ্রচারে সত্য মিথ্যা হয়ে যেতে পারে।
বাক্যে প্রয়োগ: নির্দোষ রমেশকে সবাই
মিলে দোষী বানিয়ে দিল, যেন দশচক্রে ভগবান ভূত।
৫.ভাগের
মা গঙ্গা পায় না
অর্থ: অধিকার থাকা সত্ত্বেও কেউ তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়।
বাক্যে প্রয়োগ: অফিসের সব কর্মচারী
বোনাস পেলেও রফিক পেল না, যেন ভাগের মা গঙ্গা পায় না।
বিরাম চিহ্নঃ
কথা বলার সময় বাক্যের মধ্যে থামাকে বলা হয় বিরাম।
লেখার সময় বাক্যের অর্থ সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে কতগুলো চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকেই
বিরাম চিহ্ন বলা হয়। যেমন—
১)
দাঁড়ি (।)
২)
কমা (,)
৩)
সেমিকোলন (:)
৪)
প্রশ্নচিহ্ন (?)
৫)
বিস্ময়চিহ্ন (!)
৬)
উদ্ধৃতি চিহ্ন (‘’)
৭)
ড্যাশ (—)
৮)
হাইফেন (-)
৯)
কোলন (:)
১০)
বন্ধনি চিহ্ন (())
৩)নিচের অনুচ্ছেদেউপযুক্ত বিরামচিহ্ন
ব্যবহার করো।
হে ভারত ভুলিও না নীচ
জাতি মূর্খ দরিদ্র অজ্ঞ মুচি মেথর তোমার রক্ত তোমার ভাই হে বীর সাহস অবলম্বনকর
সদর্পে বল আমি ভারতবাসী ভারতবাসী আমার ভাই বল মূর্খ ভারতবাসী দরিদ্র ভারতবাসী
ব্রাহ্মাণ ভারতবাসী চণ্ডাল ভারতবাসী আমার ভাই ভারতবাসী আমার প্রাণ ভারতের সমাজ
আমার শিশুশয্যা যৌবনের উপবন সবার্ধক্যের বারাণসী বল ভাই ভারতবাসী মৃত্তিকা আমার
স্বর্গ ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ আর বল দিনরাত ধাম মা আমার দুর্বলতা কাপুরুষতা
দূর কর আমায় মানুষ কর
উত্তরঃহে ভারত, ভুলিও না—নীচ জাতি, মূর্খ, দরিদ্র,
অজ্ঞ, মুচি, মেথর—তোমার
রক্ত, তোমার ভাই।
হে বীর, সাহস অবলম্বন কর,
সদর্পে বল—“আমি ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই।”
বল—“মূর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র
ভারতবাসী, ব্রাহ্মণ ভারতবাসী, চণ্ডাল
ভারতবাসী—আমার ভাই, ভারতবাসী আমার প্রাণ। ভারতের সমাজ আমার
শিশুশয্যা, যৌবনের উপবন, বার্ধক্যের
বারাণসী।”
বল, “ভাই ভারতবাসী!
মৃত্তিকা আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ।”
আর বল দিনরাত—“ধাম মা! আমার দুর্বলতা, কাপুরুষতা দূর কর, আমায় মানুষ কর।”