ASSEB/SEBA Class 10 Bengali Chapter 13
জীবন-সংগীত
কবি—হেমচন্দ্র
বন্দ্যোপাধ্যায়
ক্রিয়াকলাপ
১) অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর
দাওঃ
(ক) ‘জীবন-সংগীত’কবিতাটির কবি কে?
উত্তরঃ‘জীবন-সংগীত’কবিতাটির
কবি হলেন হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।
(খ) কবি মানুষের আয়ুকে কীসের সাথে তুলনা করেছেন?
উত্তরঃ কবি মানুষের
আয়ুকে শৈবালের উপর জলবিন্দুর সাথে তুলনা করেছেন।
(গ) এ পৃথিবীতে কোন বস্তু দুর্লভ?
উত্তরঃ এ পৃথিবীতে
মহিমা অনেক দুর্লভ।
(ঘ) কবিতাটি কোন কবির কোন কবিতার বঙ্গানুবাদ?
উত্তরঃ কবিতাটি কবি
লংফেলোর ইংরেজি কবিতা ‘The Psalm of Life’ এর বঙ্গানুবাদ।
(ঙ) কবি সংসারকে কীসের সঙ্গে তুলনা করেছেন?
উত্তরঃ কবি সংসারকে
যুদ্ধক্ষেত্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
(চ) কবির মতে যশোদ্বারে আসার উপায় কী?
উত্তরঃ কবির মতে যশোদ্বারে
আসার একমাত্র উপায় হল প্রাতঃস্মরণীয় মহাজ্ঞানী, মহাজনদের পদাঙ্ক অনুসরণ করা।
(ছ) কবির মতে পৃথিবীতে মানুষের জীবন কয়বার হয়?
উত্তরঃ কবির মতে
পৃথিবীতে মানুষের জীবন একবারইহয়।
(জ) সময়ের সার কী?
উত্তরঃসময়ের সার হইল
বর্তমান।যা একবার চলে গেল ফিড়ে আসে না।
(ঝ) আত্মার স্বরূপ কী?
উত্তরঃ আত্মার
স্বরূপ হল অনিত্য বা অস্থায়ী এবং অব্যয়।
(ঞ) কবির মতে কী করে দুঃখের ফাঁস গলায় প’রে?
উত্তরঃ কবির মতে
মানুষ সুখের আশা করিয়া দুঃখের ফাঁস গলায় পরে।
(ট) সময়ের ধর্ম কী?
উত্তরঃসময়েরধর্ম হল
বেগমান ও ক্ষণস্থায়ীযা কারও জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকে না।
২) শূন্যস্থান পূরণ করোঃ
(ক) কর যুদ্ধ________ যায় যাবে
যাকপ্রাণ
________জগতে দুর্লভ।
উত্তরঃ কর যুদ্ধ বীর্যবান যায় যাবে যাকপ্রাণ
মহিমাই জগতে দুর্লভ।
(খ) সংকল্প সাধন হবে ________
কীর্তি রবে
সময়ের সার_______।
উত্তরঃ সংকল্প সাধন হবে ধরাতলে কীর্তি রবে
সময়ের
সার বর্তমান।
(গ) ________ মহাজন যে পথে করে গমন
হয়েছেন________।
উত্তরঃ মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথ করে গমন
হয়েছেন প্রাতঃস্মরণীয় ।
(ঘ) ক’রো না________ বৃথা ক্ষয় এ জীবন
সংসার ________ মাঝে;
উত্তরঃ করো না মানবগণ বৃথা ক্ষয় এ
জীবন
সংসারসমরাঙ্গনমাঝে।
৩) সংক্ষিপ্ত উত্তর দাওঃ
(ক) পৃথিবীতে যশোলাভের প্রকৃষ্ট উপায় কী?
উত্তরঃযশোলাভের
প্রকৃষ্ট উপায় নিজেকেনিষ্ঠা, কর্মপরায়ণতা ও
মানবকল্যাণে আত্মনিয়োগকরতে হয়। কবি মনে করেন, খ্যাতি বা যশ
কেবলমাত্র অলস ব্যক্তি বা সুযোগসন্ধানীদের দ্বারা অর্জিত হয় না, বরং যারা আত্মনিবেদিত চিত্তে কঠোর পরিশ্রম করে এবং ভগবানে বিশ্বাস রাখিয়া
একাগ্রচিত্তে আপন ব্রতে কর্ম করিয়া যান, তারাই প্রকৃত যশ লাভ করে।
(খ) কবি দারা-পুত্র-পরিবার পরিবেষ্টিত সংসার নিয়ে মানুষকে
ক্রন্দন করতে নিষেধ করেছেন কেন?
উত্তরঃকবি হেমচন্দ্র
বন্দ্যোপাধ্যায়সংসারের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দুঃখ-কষ্টে ক্রন্দন করতে নিষেধ করেছেন, কারণ তিনি জীবনকে ত্যাগ ও আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মহত্ত্বের পথে এগিয়ে
যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কবির দৃষ্টিতে, সংসার একটি
ক্ষণস্থায়ী ও মোহময় বন্ধন, যেখানে দারা, পুত্র, পরিবার প্রভৃতি আমাদের মায়ার জালে আবদ্ধ করে
রাখে এবং মানবজীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য—আত্মোন্নতি ও মুক্তি—থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
কবি বিশ্বাস করেন, জীবনে সত্যিকার
সার্থকতা আসে আত্মসংযম, ধৈর্য ও আত্মশক্তির বিকাশের মাধ্যমে।
তিনি মনে করেন, সংসারবদ্ধ জীবনে অতিমাত্রায় আবেগ ও আসক্তি
মানুষের মানসিক দুর্বলতা বাড়ায় এবং তাকে দুঃখ-কষ্টের আবর্তে ফেলে দেয়। তাই,
তিনি মানুষকে সংসারের ক্ষণস্থায়ী সুখ-দুঃখ নিয়ে ক্রন্দন না করে
দৃঢ়চিত্তে এগিয়ে চলার পরামর্শ দেন, যেন তারা প্রকৃত জীবনবোধ
উপলব্ধি করতে পারে।
(গ) জীবাত্মা সম্বন্ধে কবির অভিমত কী?
উত্তরঃহেমচন্দ্র
বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত জীবন-সংগীত কবিতায় কবি জীবাত্মা সম্পর্কে এক গভীর
দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন, জীবাত্মা অমর, অবিনশ্বর, অক্ষয় এবং পৃথিবী মিথ্যা।মানবের আত্মা নিত্যবস্তু, ইহার ধ্বংস নাই।এই দেহ নশ্বর হলেও জীবাত্মা চিরকাল বিরাজমান
থাকে।কবি মৃত্যুকে এক অন্তর্বর্তীকালীন বিশ্রাম হিসেবে দেখেন, যা পুনর্জন্মের মাধ্যম হয়ে ওঠে।
কবিতায় জীবাত্মাকে এক অনন্ত
যাত্রার পথিক হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, যে বারবার জন্মগ্রহণ
করে এবং নতুন নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে। এই চক্রক্রমিক জন্ম-মৃত্যু সম্পর্কে কবি
আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন। তাঁর মতে, এই সংসারে মানুষের
জন্ম এবং কর্মফল ভোগ করাই এক অনিবার্য সত্য। শুধু মানুষের কর্মই ধর্ম।
(ঘ) কবি আপন ব্রত সাধনে মানুষকে কী করতে বলেছেন?
উত্তরঃকবিতায় কবি
মানুষদের নিজ নিজ ব্রত সাধনে অবিচল থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জীবন একটি সংগীতের মতো, যেখানে প্রত্যেককে নিজের
কর্তব্য ও সাধনার পথে দৃঢ় থাকতে হবে। কবি মানুষকে ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখিয়া একাগ্রচিত্তে
নিজ-নিজ কাজে অবিচল থাকিয়া অগ্রসর হইতে বলিয়াছেন।তিনি
আশাবাদী কণ্ঠে উদ্বুদ্ধ করেছেন যে, সত্য ও ন্যায়ের পথে
অবিচল থাকলে জীবনের সার্থকতা নিশ্চিত হবে। তাই “জীবন-সংগীত”কবিতায় কবি
মানুষকে আত্মবিশ্বাসী,
সাহসী ও ধৈর্যশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
(ঙ) মানুষের জীবনে বরণীয় হবার পথ কীভাবে প্রশস্ত হওয়া
সম্ভব?
উত্তরঃমানুষের জীবনে
বরণীয় হওয়ার পথ মূলত আত্মত্যাগ, পরোপকার, ন্যায়নিষ্ঠা
ও সততার মাধ্যমে প্রশস্ত হয়। কবি মানবজীবনকে একটি সুরের মতো কল্পনা করেছেন,
যা কেবলমাত্র সৎকর্ম ও নৈতিক আদর্শের মাধ্যমে মধুর ও প্রশংসনীয় হয়ে
উঠতে পারে। কবি মনে করেন, নিজের স্বার্থ ছাড়িয়ে সমাজ ও
মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করলে মানুষ সত্যিকারের মহৎ হতে পারে।জীবনের প্রতিকূলতায়
হতাশ না হয়ে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতাই সত্যিকারের বরণীয় হওয়ার পথ তৈরি করে।
কবির মতে একমাত্র
ভগবানের উপর বিশ্বাস রাখিয়া একমনে মহাজ্ঞানী মহাজনদের পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া চলাই বুদ্ধিমানের
কাজ। সংসার সময়ে ভীত না হইয়া মৃত্যুকে তুচ্ছ করিয়া দৃঢ়পণে বীর্যবানের মত যুদ্ধ
করিয়া যাওয়াই শ্রেষ্ঠ পথ।
(চ) বিশ্বের মানবজাতিকে কবি ভবিষ্যতের উপর নির্ভর করতে
নিষেধ করেছেন কেন?
উত্তরঃকবি বিশ্বেরমানবজাতিকে
ভবিষ্যতের উপর অন্ধভাবে নির্ভর করতে নিষেধ করেছেন, কারণ তিনি
বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিতে চান। কবির মতে, ভবিষ্যতের আশায় বসে
থাকলে বর্তমানের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তিনি মানুষকে কর্মে বিশ্বাসী হতে
বলেন, কারণ শুধু আশার উপর নির্ভর করলে জীবন সার্থক হবে
না।সময়ের সার বর্তমান, ভবিষ্যৎ আমাদের অজানা।
কবি
মনে করেন,
ভবিষ্যত অনিশ্চিত—কী ঘটবে তা কেউ জানে না। কিন্তু বর্তমান নিশ্চিত
এবং একে যথাযথভাবে কাজে লাগানো সম্ভব। তাই তিনি উপদেশ দেন যে, মানুষ যেন অলসভাবে ভবিষ্যতের অপেক্ষা না করে, বরং
বর্তমানকে কাজে লাগিয়ে নিজের উন্নতি ও সমাজের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করে।
৪। রচনাধর্মী উত্তর দাওঃ
(ক) “জীবন সংগীত” কবিতাটির সারাংশ লেখো।
উত্তরঃ হেমচন্দ্র
বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত“জীবন সংগীত”কবিতাটি
মানবজীবনের দর্শন ও কর্তব্যবোধকে কেন্দ্র করে রচিত। কবিতায় মানবজীবনকে একটি
সংগ্রামময় অভিযাত্রা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।‘জীবন
সংগীত’ অর্থাৎ জীবনের গীত, জীবনের মূলমন্ত্র।কবি
বলেছেন,
মানুষকে কখনো হতাশা বা ক্লান্তির কাছে নত হওয়া উচিত নয়। বরং সাহস,
ধৈর্য এবং অধ্যবসায়ের সঙ্গে জীবনের প্রতিটি বাধা অতিক্রম করতে হবে।
সুখ-দুঃখ, জয়-পরাজয়, আনন্দ-বেদনা — সবই
জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জীবনের প্রকৃত সাফল্য লুকিয়ে আছে আত্মবিশ্বাস এবং কঠোর
পরিশ্রমে।
কবির
মতে মানবজীবন নিশার স্বপনের ন্যায় অসার, অলীক এবং ব্যর্থ নয়।
মানব সৃষ্টির ন্যায় ঈশ্বরের সৃষ্টির এক সুমহান উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে। এ পৃথিবীতে
মানুষরূপে জীবন লাভ হয়তো একবারই হয়েছে। পুনরায় এ জীবন হয়তো পাওয়া যাবে না। তাই
অযথা বাহ্যদৃশ্যে ভুলে গিয়ে অবহেলায় অনাদরে এ দুর্লভ জীবন নষ্ট করা যুক্তিহীন।
মানুষের আত্মা অক্ষয় অব্যয় নিত্য এবং যার ধ্বংস নেই। অযথাক্রন্দনে ব্যাপৃত থেকে
কোনো লাভ নেই। তীব্র আশার বশবর্তী হয়ে সংসারে মানুষ নিজ নিজ কাজে না হতে পারলেই
জীবনের সার্থকতা সম্ভব।
মানব জীবনো শুধু নিরবচ্ছিন্ন সুখের আশা করিয়া লাভ
নাই। সময় বেগবান ও ক্ষণস্থায়ী। ইহা কারও জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকে না। সংসারে
ধন-সম্পদ,
আয়ু সকলই ক্ষণস্থায়ী মায়ামাত্র। যা একদিন অচিরেই সময়ের কাল-গর্ভে
বিলীন হয়ে যাইবে। তাই কবির মতে সংসাররূপ সমরাঙ্গনে ভীত না হইয়া, মৃত্যুকে তুচ্ছ
করে বীর্যবানের মতো যুদ্ধ করাই শ্রেষ্ঠ পথ। কারণ সংসারে জীবনের মহিমা দুর্লভ।
ভবিষ্যতের উপর নির্ভর করে, সুখের অতীতকে পুনর্বার ডেকে আনার
প্রয়াস মূর্খতার পরিচায়ক।
একমাত্র ঈশ্বরে বিশ্বাস রেখে, একাগ্রতা সহকারে নিজের কাজ করে যেতে হয়। এভাবে অগ্রসর হতে অবশ্যই সংকল্প
সার্থক হবে। সময়ের সার বর্তমান। জীবনের সারবস্তু কেবল জ্ঞানীরাই জেনেছেন। তাই
মহাজ্ঞানী-মহাজনদের পদাঙ্ক অনুসর করে চলতে পারলে, আপন আপন
কর্তব্যে জীবনকে প্রাতঃস্মরণী বরণীয় করে তোলা সম্ভব।
সবশেষে, কবিতায় আশা ও বিশ্বাসের বার্তা রয়েছে। কবি মনে করেন, যাঁরা নিরলস পরিশ্রম করেন এবং সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকেন, তাঁরাই প্রকৃত অর্থে জীবনকে সফল করে তোলেন।এইভাবে "জীবন সংগীত"কবিতাটি মানুষকে জীবনের উদ্দেশ্য ও সংগ্রামের প্রতি
উৎসাহিত করে এবং আশাবাদী মনোভাব গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করে।
(খ) জীবন-সংগীত কবিতাটি মুখস্থ করে আবৃত্তি করো।
উত্তরঃ পাঠ্যপুস্তক
নিজের মুখস্থ করে আবৃত্তি করো।
(গ) কবিতায় কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় কীভাবে মানব
জীবনের প্রকৃত সত্য প্রকাশ করেছেন, তা আলোচনা করো।
উত্তরঃকবি হেমচন্দ্র
বন্দ্যোপাধ্যায়ের “জীবন সংগীত”কবিতায় মানবজীবনের প্রকৃত সত্য অত্যন্ত
স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি এই কবিতার মাধ্যমে মানুষের জীবনসংগ্রাম, কর্তব্যবোধ, আত্মবিশ্বাস এবং আত্মত্যাগের মর্মার্থ
তুলে ধরেছেন।
মানব-জীবন
নিশার স্বপনের ন্যায় অসার, অলীক এবং ব্যর্থ নয়। মানব
সৃষ্টিতে ঈশ্বরের এক সুমহান উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে।কবির
মতে এই পৃথিবীতে মানব জীবন হয়তো একবারই হয়, পুনরায় এ জীবন হয়তো পাওয়াই যাবে না। তাই এই জীবন অলীক
বা ব্যর্থ বলিয়া ভাবা উচিত নয়। তাই অযথা বাহিরের চাকচিক্যময় দৃশ্য দর্শনে
বিভ্রান্ত হইয়া অবহেলায় অনাদরে দুর্লভ মানব জীবন নষ্ট করা যুক্তিহীন।মানুষের আত্মা অক্ষয়, অব্যয়, নিত্য এবংযার ধ্বংস
নাই।জীবনে শুধুমাত্র নিরবচ্ছিন্ন সুখের আশা করিয়া দুঃখের ফাঁস গলায় ধারণ করার কোন
যুক্তি নেই। সময় বড় বলবান, ক্ষণস্থায়ী এবং বেগবান। যাহা কাহারও জন্য অপেক্ষা না করিয়া বসে থাকে না। ধনসম্পদ, আয়ু, সকলই ক্ষণস্থায়ী। সকল কিছুই অতীতের কালগর্ভে বিলীন হইয়া যাইবে। সেই
জন্য মানুষের উচিত সংসার যুদ্ধে ভীত না হইয়া বীর্যবানের মত দৃঢ়পণে যুদ্ধ করিয়া
যাওয়াই শ্রেয়। কারণ এই জগতে মহিমাই দুর্লভ বস্তু। ভবিষ্যতে নির্ভর করিয়া সুখের
অতীতকে পুনরায় ডাকিয়া আনিয়া মূর্খতার পরিচয় দেওয়া উচিত নহে। ইহাই মানব জীবনের
প্রকৃত সত্য।
কবি জীবনকে একটি নিরবচ্ছিন্ন
সংগ্রাম বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি মনে করেন, প্রতিকূলতা এবং বাধাই
মানুষের প্রকৃত পরিচয় নির্ধারণ করে। সুখ-দুঃখ, জয়-পরাজয়,
আশা-নিরাশা — এই সবকিছুর মধ্য দিয়েই জীবন প্রবাহিত হয়। মানুষের
কর্তব্য হলো ধৈর্য এবং সাহসের সঙ্গে সকল প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করা।কবিতায় কবি
আত্মবিশ্বাসের গুরুত্বও তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, হতাশা ও
ভয়ের কাছে আত্মসমর্পণ না করে মানুষকে নিজের শক্তি , সাহসের ও ভগবানের উপর বিশ্বাস
রাখিয়া একমনে মহাজ্ঞানী মহাজনদের পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া চলাতে হবে। আত্মপ্রত্যয়ী মানুষই
জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারে।
কবি মনে করেন, প্রকৃত জীবন সে-ই, যা মানবসেবায় নিবেদিত। ব্যক্তি
স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে অন্যের কল্যাণে কাজ করাই জীবনের প্রকৃত লক্ষ্য হওয়া উচিত।
আত্মত্যাগের মাধ্যমে মানুষ নিজের জীবনকে মহিমান্বিত করে তুলতে পারে।কবি মানুষকে
সত্যের পথে অবিচল থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মিথ্যা
ও অন্যায়ের দ্বারা সাময়িক সাফল্য লাভ করা গেলেও প্রকৃত সুখ ও শান্তি কেবল সত্য ও
ন্যায়ের পথে চলার মাধ্যমেই পাওয়া যায়।
"জীবন সংগীত"কবিতায় কবি মানবজীবনের প্রকৃত সত্যকে গভীর জীবনদর্শনের
মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। তিনি মানুষকে সংগ্রামী, আত্মবিশ্বাসী
এবং মানবকল্যাণে নিবেদিত হওয়ার আদর্শ শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁর এই কবিতা মানুষের মনে
আশার আলো জাগায় এবং জীবনের পথে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা দেয়।
(ঘ) মানব জীবন ক্ষণস্থায়ী এবং সমরাঙ্গন তুল্য – কীভাবে এ
জীবন সার্থক হতে পারে,যুক্তিসংগত আলোচনা করো।
উত্তরঃমানবজীবন
স্বল্পকালীন এবং অনিশ্চিত। কবি, দার্শনিক এবং চিন্তাবিদরা প্রায়ই
মানবজীবনকে ক্ষণস্থায়ী এবং যুদ্ধক্ষেত্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এই তুলনাটি জীবনের
কঠিন বাস্তবতা, সংগ্রাম এবং আত্মউন্নয়নের প্রতিফলন। তবে এ
জীবনকে সার্থক করা সম্ভব যদি মানুষ সঠিক জীবনদৃষ্টি এবং কর্তব্যবোধকে গ্রহণ করে।
সময় বড় বলবান, ক্ষণস্থায়ী এবং বেগবান। যাহা কাহারও জন্য অপেক্ষা না করিয়া বসে থাকে না। ধনসম্পদ, আয়ু, সকলই ক্ষণস্থায়ী। সকল কিছুই অতীতের কালগর্ভে বিলীন হইয়া যাইবে। 'সময়ের সার বর্তমান'। জীবনে অযথা ক্রন্দন-না করিয়া তীব্র ইচ্ছার বশবর্তী
হইয়া ইহ সংসারের নিজ নিজ কাজে যত্নবান হইতে পারিলেই জীবনের সার্থকতা অবশ্যই আসিবে।
অবহেলায় অনাদরে জীবন নষ্ট না করিয়া, ভগবানে অগাধ বিশ্বাস
রাখিয়া একাগ্র চিত্তে সংকল্প গ্রহণ করিয়া স্বীয়কার্যে রত থাকিয়া অগ্রসর হইতে
পারিলে জীবনের সার্থকতা অবশ্যম্ভাবী। ক্ষুদ্র এই জীবনে সময়ের অপচয় নয়, বরং তা যথাযথভাবে ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ। সৃজনশীলতা, কর্মব্যস্ততা এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে মানুষ জীবনকে সার্থক করে তুলতে
পারে।
সংসার এক সমরাঙ্গন। জীবনকে
সমরাঙ্গনের সঙ্গে তুলনা করা অর্থাৎ জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই নানা বাধা-বিপত্তির
মুখোমুখি হতে হয়। প্রকৃতপক্ষে, এই চ্যালেঞ্জগুলো মানুষের
আত্মবিকাশের মাধ্যম।তাই সংসার সমরাঙ্গনে ভীত না হইয়া মৃত্যুকে তুচ্ছ করিয়া
বীর্যবানের মত দৃঢ়পণে যুদ্ধ করাই শ্রেয়।অযথা সুখের আশার বশবর্তী হইয়া দুঃখের ফাঁস
গলায় পরার কোন অর্থ নাই। কারণ পৃথিবীতে কোন সুখ নাই। অতীতের ক্ষণস্থায়ী সুখকে
জীবনে পুনরায় ডাকিয়া আনার চেষ্টা করা মূর্খতার কাজ মাত্র। জীবন সার্থক হয় যখন
মানুষ শুধু নিজের স্বার্থ নয়, বরং মানবকল্যাণের জন্য কাজ
করে। আত্মত্যাগ, সহমর্মিতা এবং অন্যের উপকারে নিজেকে নিবেদন
করা জীবনকে অর্থবহ করে তোলে। মহাত্মা গান্ধী, নেলসন
ম্যান্ডেলা বা মাদার তেরেসার জীবন তার উজ্জ্বল উদাহরণ।
একমাত্র মহাজ্ঞানী মহাজনদের
পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া চলিতে পারিলেই নিজ নিজ জীবনকে প্রাতঃস্মরণীয় ওবরণীয় করেতোলা
সম্ভব।মানবজীবন যদিও ক্ষণস্থায়ী এবং সংগ্রামময়, তবুও সততা, অধ্যবসায়, মানবসেবা
এবং আত্মউন্নয়নের মাধ্যমে একে সার্থক করা সম্ভব। নিজ নিজ লক্ষ্য অর্জন এবং সমাজে
ইতিবাচক অবদান রেখে যাওয়াই মানবজীবনের প্রকৃত সার্থকতা।
(ঙ) “জীবাত্মা অনিত্য নয়”—কথাটির বিস্তারিত আলোচনা করো।
উত্তরঃহেমচন্দ্র
বন্দ্যোপাধ্যায়ের"জীবন-সংগীত"কবিতাটি এক গভীর দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক
বোধসম্পন্ন রচনা,
যেখানে তিনি মানবজীবন, আত্মার প্রকৃতি ও
মৃত্যুর রহস্য নিয়ে আলোচনা করেছেন। কবিতাটিতে তিনি"জীবাত্মা
অনিত্য নয়"—এই ধারণাটি তুলে ধরেছেন, যা মূলত আত্মার অমরত্বের দর্শনকে নির্দেশ করে।
"অনিত্য" শব্দের অর্থ হলোঅস্থায়ী, ক্ষণস্থায়ী
বা নশ্বর। কিন্তু কবি
এখানে বলছেন যেজীবাত্মা অনিত্য নয়, অর্থাৎ আত্মা নশ্বর
নয়, বরং তা চিরস্থায়ী। এই ধারণাটি মূলত উপনিষদ ও গীতার
দর্শনের উপর ভিত্তি করে তৈরি, যেখানে বলা হয়েছে যে দেহ নশ্বর
হলেও আত্মা অবিনশ্বর।হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতাটিতে বুঝিয়েছেন যে মানুষের
শারীরিক মৃত্যু হয়, কিন্তু তার আত্মা কখনো বিনষ্ট হয় না।
আত্মা এক শরীর থেকে অন্য শরীরে স্থানান্তরিত হয় (পুনর্জন্মের ধারণা), বা চিরস্থায়ীভাবে কোনো মহাজাগতিক শক্তির সঙ্গে মিশে যায়।অর্থাৎ, আত্মার কখনো জন্ম হয় না, মৃত্যু হয় না।
কবি
বোঝাতে চেয়েছেন যে দেহ শুধু আত্মার একটি বাহক বা বাহ্যিক রূপ, যা সময়ের সঙ্গে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং শেষ পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু
আত্মা সেই মূল শক্তি, যা ধ্বংস হয় না। তিনি বলতে চান যেমৃত্যু
আসলে দেহের ক্ষয়, আত্মার নয়।কবিআত্মাকে ঈশ্বরের একটি অংশ হিসেবে দেখেছেন। ঈশ্বর যেহেতু অনন্ত, তাই আত্মাও অনন্ত। এই দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলা যায় যেআত্মা সময়ের
ঊর্ধ্বে এবং চিরন্তন সত্য।
"জীবাত্মা অনিত্য নয়"—এই ভাবনাটি কবিতার মূল বক্তব্যগুলোর একটি,
যা মৃত্যুভয়ের নিরসন ঘটায় এবং আত্মার চিরস্থায়ী প্রকৃতির উপর জোর
দেয়। কবি চেয়েছেন মানুষ যেন শুধুমাত্র দেহগত অস্তিত্বের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ না
রেখে আত্মার প্রকৃত স্বরূপ বোঝার চেষ্টা করে। এটি এক গভীর আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক
উপলব্ধি, যা মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, সাহস এবং মৃত্যুকে ভয় না করার শক্তি জোগায়।
ভগবদ্গীতায় (২.২০) বলা হয়েছে:
“ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিন্
নায়ং ভূত্বা ভবিতা वाন ভূয়ঃ।
অজো নিত্যঃ শাশ্বতোऽয়ং পুরাণো
ন হন্যতে হন্যমান শরীরে॥”
এখানে বলা হয়েছে, আত্মা কখনো
জন্মগ্রহণ করে না, কখনোই মৃত্যুবরণ করে না। এটি চিরন্তন,
শাশ্বত ও অপরিবর্তনীয়। শরীর নষ্ট হলেও আত্মার কোনো বিনাশ ঘটে না।
বৈদিক
শাস্ত্র,
দর্শন এবং ভগবদ্গীতার আলোকে এটি স্পষ্ট যে, আত্মা
কখনো জন্ম নেয় না এবং কখনোই মরে না। এটি এক শরীর থেকে অন্য শরীরে গমন করে, কিন্তু নিজে অবিনশ্বর ও চিরন্তন। যেমন পুরোনো পোশাক ত্যাগ করে মানুষ নতুন
পোশাক গ্রহণ করে, তেমনি আত্মাও এক দেহ ত্যাগ করে অন্য দেহ
ধারণ করে।আত্মা জন্ম-মৃত্যুর চক্রে আবর্তিত হয়, কিন্তু নিজে
কখনো ধ্বংস হয় না।
৫। নিহিতার্থ লেখোঃ
(ক) ‘সময়ের সার বর্তমান’।
উত্তরঃউদ্ধৃত
পংক্তিটিকবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত‘জীবন-সংগীত’কবিতার
একটি অংশ।
“সময়ের সার বর্তমান” বলতে কবি বোঝাতে
চেয়েছেন যে বর্তমান সময়ই জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অতীত আর ভবিষ্যৎ নিয়ে
চিন্তা না করে,
বর্তমানকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোই প্রকৃত বুদ্ধিমানের কাজ। বর্তমান
সময়ের সঠিক ব্যবহারই ভবিষ্যতের সাফল্য নির্ধারণ করে, তাই
মুহূর্তগুলোর গুরুত্ব বোঝা এবং সেগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো উচিত।অন্ধকার
ভবিষ্যতে নির্ভর করিয়া কাজ করার মধ্যে কোন সার্থকতা নাই। জীবনের সংকল্প সাধন করিতে
বর্তমানেই সমভব। আপন ব্রত সাধনে মানুষকে একাগ্র চিত্তে ভগবানে বিশ্বাস রাখিয়া নিজ
নিজ কাজে ব্যস্ত থাকিতে পারিলেই কীর্তি থাকিয়া যাইবে। এই কথা একমাত্র মহাজ্ঞানী
মহাজনেরাই উপলব্ধি করিতে পারেন, কারণ সময়ের সার বর্তমান।
(খ) ‘মহিমাই জগতে দুর্লভ’।
উত্তরঃউদ্ধৃত
পংক্তিটিকবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত‘জীবন-সংগীত’কবিতার
একটি অংশ।
প্রকৃত গৌরব, মহিমা, যশ, খ্যাতি সাফল্য বা মহত্ব অর্জন করা সহজ নয়;
এটি কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য ও সাধনার ফল। সমাজে
যারা মহিমান্বিত হন, তারা সাধারণ মানুষের চেয়ে ব্যতিক্রমী
গুণাবলি ধারণ করেন এবং বহু প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সাফল্য লাভ করেন।সংসার
যুদ্ধে ভীত না হইয়া জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করিয়া বীর্যবানের মতো দৃঢ়পণে যুদ্ধ করিয়া
যাওয়ার মধ্য দিয়াই মহিমা লাভ হয়। ইহা জগতে খুব দুর্লভ বস্তু। একমাত্র ত্যাগী পুরুষ, মহাজ্ঞানী, মহাপুরুষেরাই এই মহিমার অধিকারী হইয়া
থাকেন। তাই জীবনে সত্যিকারের মহিমা অর্জন করতে হলে অধ্যবসায়, আত্মত্যাগ ও দৃঢ় সংকল্প প্রয়োজন।
(গ) আয়ু যেন শৈবালের নীর।
উত্তরঃউদ্ধৃত
পংক্তিটিকবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত‘জীবন-সংগীত’কবিতার
একটি অংশ।যার নিহিতার্থ হলো—মানবজীবন অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী এবং
অনিশ্চিত,
যেমন জলাশয়ে ভেসে থাকা শৈবালের অস্তিত্ব। যেভাবে শৈবাল জলস্রোতের
উপর ভাসমান থাকে, যেকোনো মুহূর্তে প্রবাহের ধাক্কায় সে স্থান
পরিবর্তন করতে পারে বা বিলীন হয়ে যেতে পারে একইভাবে, মানুষের
আয়ুও অনিশ্চিত ও ক্ষণস্থায়ী। জীবন ক্ষণিকের, কখন কোন
মুহূর্তে শেষ হয়ে যাবে, তা কেউ জানে না। তাই কবি এই উপমার
মাধ্যমে বুঝিয়েছেন যে, মানুষের উচিত সময়ের মূল্য দেওয়া এবং
জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো। শুধু দৃঢ়পণে কাজ করিয়া যাওয়াই
মানুষের কর্তব্য, কারণ আয়ুকাল ক্ষণস্থায়ী।
(ঘ) ভবিষ্যতে করো না নির্ভর।
উত্তরঃউদ্ধৃত
পংক্তিটিকবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত‘জীবন-সংগীত’কবিতার
একটি অংশ।
কবির এই উক্তির মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, ভবিষ্যতের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়। কেবল ভবিষ্যতের আশায় বসে
থাকলে কোনো সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়। বর্তমান সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানোই শ্রেয়,
কারণ ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। যদি কেউ বর্তমানকে উপেক্ষা করে ভবিষ্যতের
ওপর ভরসা করে, তবে সে তার লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হতে পারে। আমাদের
জীবনে ভবিষ্যৎ অন্ধকারময় অজানা। ভবিষ্যতে কি আছে তাহা আমরা জানি না। তাই উহার উপর
নির্ভর করিয়া কাজ করা বোকামি। সময়ের সার বর্তমান। সুতরাং, ভবিষ্যতের
অপেক্ষায় না থেকে বর্তমানেই যথাযথ পরিশ্রম ও প্রস্তুতি গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের
কাজ।
(ঙ) সংসার সমরাঙ্গন।
উত্তরঃউদ্ধৃত
পংক্তিটিকবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত‘জীবন-সংগীত’কবিতার
একটি অংশ।
‘সংসার এক সমরাঙ্গন’
বলতেকবি
সংসারকে একটি যুদ্ধক্ষেত্রের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যেখানে প্রতিটি মানুষ এক একজন সৈনিকের মতো জীবনযুদ্ধে লড়াই করে। সুখ-দুঃখ,
সাফল্য-ব্যর্থতা, আশা-নিরাশা—সবকিছু মিলিয়ে
মানুষের জীবন সংগ্রামময়। ঠিক যেমন যুদ্ধে সাহস, ধৈর্য ও কৌশল
প্রয়োজন, তেমনই সংসারের প্রতিটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়
অধ্যবসায়, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও বিচক্ষণতা জরুরি।
এই সংসারে মানবজীবন বৃথা নষ্ট না করিয়া উপযুক্ত সময়ে ভগবানের উপর বিশ্বাস
রাখিয়া মহাপুরুষ মহাজ্ঞানীদের পথ অবনুকরণ করিয়া নিজ নিজ সংকল্প সাধনার্থে
সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগিয়া যাওয়াই বুদ্ধিমান মানুষের কাজ।
৬) টিকা লেখাঃ
লংফেলো – হেনরি ওয়াডসওয়ার্থ লংফেলো (Henry
Wadsworth Longfellow) ছিলেন একজন বিশিষ্ট আমেরিকান কবি, যিনি ১৯শ শতাব্দীতে ইংরেজি সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাঁর
কবিতাগুলো সাধারণত ছন্দোবদ্ধ, সুরেলা ও আবেগপূর্ণ, যা সহজেই পাঠকদের মন ছুঁয়ে যায়। তিনি ১৮০৭
সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে আমেরিকার পোর্টল্যান্ড, মেইনেতে
জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন এবং সাহিত্যচর্চার
পাশাপাশি অনুবাদের কাজও করতেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে
রয়েছে"The
Song of Hiawatha", "Evangeline", এবং"Paul
Revere’s Ride"। তার কবিতাগুলো
সাধারণত প্রেম, প্রকৃতি, ইতিহাস
ও মানবজীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে রচিত। তাঁর লেখনীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ছন্দোবদ্ধ
গঠন ও গীতিময়তা, যা পাঠকদের হৃদয়ে সহজেই গেঁথে যায়।
বাংলা ভাষায় লংফেলোর জনপ্রিয়
কবিতাগুলোর অনুবাদ পাওয়া যায়। তাঁর বিখ্যাত কবিতা"A Psalm of Life"বা"জীবনের
গীত"বহু
পাঠকের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে। এ কবিতায় তিনি জীবনের সার্থকতা, কর্মের
গুরুত্ব ও ভবিষ্যতের প্রতি আশাবাদের কথা বলেছেন।
৭। ব্যাখ্যা লেখোঃ
(ক) “মানব জীবন সার এমন পাবে না আর
বাহ্য দৃশ্যে ভুলো না রে মন।”
উত্তরঃআলোচ্য অংশটিকবি
হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত‘জীবন-সংগীত’কবিতারহইতে
সংগ্রহ করা হইয়াছে।এই অংশে কবি মানব জীবনের প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করিয়াছেন।
কবির মতে, মানবজীবন অত্যন্ত মূল্যবান এবং হয়তো এই পৃথিবীতে মানবজীবন একবারই হইয়াছে। যা
পুনরায় পাওয়া সম্ভব নয়। এই জীবন অসার নহে। সৃষ্টিকর্তার মানব সৃষ্টির মধ্যে এক
সুমহান উদ্দেশ্য লুকাইয়া আছে। এই জীবন অমূল্য রত্নস্বরূপ, যা
হারিয়ে গেলে পুনরায় ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়।তাই মানুষকে উচিত এই জীবনকে সঠিকভাবে কাজে
লাগানো। বাহ্যিক মোহ ও ভোগ-বিলাসিতায় মত্ত হয়ে প্রকৃত সত্য থেকে বিচ্যুত হওয়া
বোকামি। কবি পাঠকদের মনে করিয়ে দিতে চান যে, বাহ্যিক
চাকচিক্যে নিজেকে ভুলিয়ে না রেখে জীবনের আসল উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া উচিত। প্রকৃত
অর্থে আত্মশুদ্ধি, নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধই জীবনকে সার্থক
করে তোলে।ভোগ-বিলাস ও ক্ষণস্থায়ী আকর্ষণের পিছনে না ছুটে ভগবানের উপর বিশ্বাস রাখিয়া মহাপুরুষ মহাজ্ঞানীদের পথ
অবনুকরণ করিয়া নিজ নিজ সংকল্প সাধনার্থে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাইয়া যাইতে
পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে ব্যক্তি তার জীবনকে যথাযথভাবে
কাজে লাগাতে পারে।
(খ) “সাধিতে আপন ব্রত স্বীয় কার্যে হও রত
একমনে ডাক ভগবান।”
উত্তরঃআলোচ্য অংশটি
কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত ‘জীবন-সংগীত’কবিতার
থেকে নেওয়াহয়েছে। কবিতাটি ইংরেজ
কবি লংফেলোর ইংরাজি কবিতার এক সার্থক ভাবানুবাদ।
এখানে কবি আমাদের নিজ নিজ ব্রত
বা সংকল্পকে পূর্ণ করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। প্রথমত “সাধিতে আপন ব্রত”, অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তির একটি লক্ষ্য থাকা উচিত এবং সেই লক্ষ্য অর্জনে
কঠোর সাধনা করতে হবে। মানুষ যদি তার ব্রত সাধনে আত্মনিয়োগ করে, তবে সে সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে পারে।দ্বিতীয়ত “স্বীয় কার্যে হও রত”, যার অর্থ হলো নিজের কর্মে
মনোযোগী হওয়া। পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও আত্মনিবেদন ছাড়া কোনো
কাজেই সফলতা আসে না। তৃতীয়ত “একমনে ডাক ভগবান”,
কবি আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন যে কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি আমাদের
ভগবানের প্রতি ভক্তি ও প্রার্থনায় একাগ্র হওয়া উচিত। ভগবানের নাম স্মরণ করলে
মানসিক শান্তি ও শক্তি পাওয়া যায়, যা জীবনের পথে আমাদের
এগিয়ে নিয়ে যায়।
মানব সৃষ্টি পৃথিবীতে ঈশ্বরের এক মহান সৃষ্টি।
এই সৃষ্টির মধ্যে ঈশ্বরের এক সুমহান উদ্দেশ্য আছে। জীবনে প্রতিটি মানুষের কোন না
কোন সংকল্প আছে যাহার মাধ্যমে মানুষ তার নশ্বর জীবন ত্যাগ করিয়াও মহান হইতে
চায়।মানুষকে তাহার সংকল্প ও ব্রত পালন করিতে হইলে একাগ্রতা, নিষ্ঠা সহকারে নিজের কাজে মনোনিবেশ করিতে হইবে। ভগবানে অটল বিশ্বাস রাখিয়া
অসীম ধৈর্য্য সহকারে নিজের কর্তব্য পালনে রত থাকিলে আরাধ্য সাধন করা অবশ্যম্ভাবী। এই পঙক্তি আমাদের অধ্যবসায়, কর্মনিষ্ঠা ও ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রাখার শিক্ষা দেয়। যদি আমরা আমাদের
ব্রত সাধনে একাগ্র হই এবং নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে ভগবানকে স্মরণ করি, তবে আমরা সাফল্য অর্জন করতে পারব।
(গ) “সেই চিহ্ন লক্ষ্য করে অন্য কোন জন পরে
যশোদ্বারে আসিবে সত্বর”
উত্তরঃআলোচ্য অংশটি
কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত ‘জীবন-সংগীত’কবিতার
থেকে নেওয়াহয়েছে। কবিতাটি ইংরেজ
কবি লংফেলোর ইংরাজি কবিতার এক সার্থক ভাবানুবাদ।
উল্লিখিত পঙক্তিটি আত্মোন্নতি ও ভগবানের প্রতি
একনিষ্ঠ ভক্তির গুরুত্ব প্রকাশ করে। এখানে কবি আমাদের নিজ নিজ ব্রত বা সংকল্পকে
পূর্ণ করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। কবির মতে প্রত্যেক ব্যক্তির একটি লক্ষ্য থাকা
উচিত এবং সেই লক্ষ্য অর্জনে কঠোর সাধনা করতে হবে। মানুষ যদি তার ব্রত সাধনে
আত্মনিয়োগ করে,
তবে সে সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে পারে।“স্বীয়
কার্যে হও রত”, যার অর্থ হলো নিজের কর্মে মনোযোগী হওয়া।
পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও আত্মনিবেদন ছাড়া কোনো কাজেই সফলতা আসে
না।
কবি
আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন যে কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি আমাদের ভগবানের প্রতি ভক্তি ও
প্রার্থনায় একাগ্র হওয়া উচিত। ভগবানের নাম স্মরণ করলে মানসিক শান্তি ও শক্তি
পাওয়া যায়,
যা জীবনের পথে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যায়।জগতের মানুষ সংসার সমরে ভীত
না হইয়া মৃত্যুকে তুচ্ছ করিয়া বীর্যবানের মতো দৃঢ়পণে মহাজনদের অংকিত পদচিহ্ন
অনুসরণ বা লক্ষ্য করিয়া চলিতে পারিলে মোক্ষ প্রাপ্তি ও যশোদ্বারে আসা সম্ভব হয়।
এই পঙক্তি আমাদের অধ্যবসায়, কর্মনিষ্ঠা ও ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রাখার শিক্ষা দেয়। যদি আমরা আমাদের
ব্রত সাধনে একাগ্র হই এবং নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে ভগবানকে স্মরণ করি, তবে আমরা সাফল্য অর্জন করতে পারব।
(ঘ) করো না সুখের আশ, প’রো না দুঃখের ফাঁস
জীবনের উদ্দেশ্য তা নয়।”
উত্তরঃউদ্ধৃত অংশটিকবি
হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচিত‘জীবন-সংগীত’কবিতা
হইতে সংগ্রহ করা হইয়াছে।
উক্ত
অংশটিতে আমাদের জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও পথচলা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়।
এখানে বলা হয়েছে যে,
সুখের অতিরিক্ত আকাঙ্ক্ষা করা উচিত নয় এবং দুঃখের ফাঁদেও নিজেকে
জড়ানো উচিত নয়। জীবন হলো এক গতিশীল প্রবাহ, যেখানে সুখ ও
দুঃখ দুটোই অবশ্যম্ভাবী। তবে, কেবল সুখের আশায় বিভোর হওয়া
কিংবা দুঃখের গ্লানিতে হারিয়ে যাওয়া জীবনযাত্রার সঠিক পথ নয়।জীবনের সময় খুব অল্প।
ইহা বেগবান, কাহারও জন্য ইহা অপেক্ষা করিয়া থাকে না। মানুষের
সহায়, সম্পদ ও আয়ু সকলই কালগর্ভে বিলীন হইয়া যাইবে। তাই
মানুষকে সুখের চিন্তা না করিয়া শুধুমাত্র নিজ-নিজ কর্মে লীন হতে হয়।
জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো আত্মোন্নয়ন, কর্তব্যপরায়ণতা ও মানবকল্যাণে নিজেকে নিবেদন করা। মানুষ যদি শুধু সুখের
পেছনে ছোটে, তবে সে বাস্তব জীবনের কঠিন বাস্তবতা ভুলে যাবে।
আবার, দুঃখকে যদি সর্বস্ব করে তোলে, তবে
সে জীবনের সৌন্দর্য অনুভব করতে পারবে না। তাই, সঠিক
দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করাই শ্রেয়।এই চরণগুলো আমাদের উদাসীনতা ত্যাগ করে, জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ করে। সুখ এবং দুঃখ—দুটোই
জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তবে এগুলোর ওপর অতি নির্ভরশীল না হয়ে
আমাদের উচিত লক্ষ্য ও আদর্শের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
৮।ব্যাকরণ।
(ক) ব্যাসবাক্য সহ সমাসের নাম লেখো।
মহাজন — মহান যে জন (উপপদতৎপুরুষ সমাস)
সমরাঙ্গন — সমর রূপ অঙ্গন (রূপ কর্মধারয়সমাস)
অনিত্য — ন-নিত্য ( নঞ তৎপুরুষ সমাস)
নিজ করো—
ধরাতল, যশোদ্বারে, প্রাতঃস্মরণীয়, কীর্তিধ্বজা,
বরণীয়, জীবাত্মা।
উত্তরঃ ধরাতল→ ধরার তল।তৎপুরুষ
সমাস
যশোদ্বারে→যশোর দ্বারে।
সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস
প্রাতঃস্মরণীয়→ যা প্রাতে
স্মরণীয়।বহুব্রীহি সমাস
কীর্তিধ্বজা→কীর্তিই
ধ্বজা। কর্মধারয় সমাস
বরণীয়→ বরণের যোগ্য।তৎপুরুষ
সমাস
জীবাত্মা→ জীবই আত্মা।
তৎপুরুষ সমাস
(খ) বিপরীত শব্দে পরিবর্তন করো।
গমন
—আগমন।
মহাজন—নীচজন।
স্থির
— অস্থির।
অনিত্য
— নিত্য।
জীবন
— মরণ।
নিজ করো—
লক্ষ্য, ভয়, জন্ম, সময়, সুখ, যত্ন, কাতর, বর্তমান, রত, দৃঢ়, সার।
উত্তরঃ লক্ষ্য — লক্ষ্যহীন/ অলক্ষ্য।
ভয় —
সাহস।
জন্ম
— মৃত্যু।
সময়
— অসময়।
সুখ —
দুঃখ।
যত্ন
— অযত্ন।
কাতার
— অকাতর/নির্লিপ্ত।
বর্তমান
— অতীত/
ভবিষ্যৎ।
রত —বিরত।
দৃঢ়
—দুর্বল।
সার —
অসার /নিরর্থক।
(গ) পদ পরিবর্তন করুন।
নির্ভর
— নির্ভরতা।
সমর —
সামরিক।
চিন্তা
— চিন্তণীয়।
চিহ্ন
— চিহ্নিত।
জীব —
জৈব।
দুঃখ
— দুঃখিত।
নিজ করো—
বীর্যবান, ভয়, লক্ষ্য, ব্রত, সময়, সাধন, সার, কাতর।
উত্তরঃ বীর্যবান (বিশেষণ) →বীর্য (বিশেষ্য)
ভয় (বিশেষ্য) →ভীত (বিশেষণ)
লক্ষ্য (বিশেষ্য) →লক্ষ্যনীয় (বিশেষণ)
ব্রত (বিশেষ্য) →ব্রতী (বিশেষণ)
সময় (বিশেষ্য) →সাময়রিক (বিশেষণ)
সাধন (বিশেষ্য) →সাধনীয় (বিশেষণ)
সার (বিশেষ্য) →সারংশ (বিশেষণ)
কাতর (বিশেষণ) →কাতরতা (বিশেষ্য)।
(ঘ) বিশেষ্যপদের বিশিষ্টার্থক প্রয়োগ।
‘হাত’
হাত করা (আয়ত্ত করা) — লোকটি টাকা দিয়ে সাক্ষীকে
হাত করেছে।
হাত ছাড়া (বেহাত হওয়া) — সুযোগটা আমার হাতছাড়া
হয়ে গেছে।
হাত টান (চুরির অভ্যেস) — চাকরটির হাত টানের দোষ
আছে।
হাত খালি (রিক্ত হস্ত)— বর্তমানে আমার হাত খালি।
হাত দেওয়া (শুরু করা) — কাল থেকেই আমি ঘরের হাত
দেব।
‘মাথা’
মাথা পড়া (নষ্ট করা) — আদর বেশি দিয়ে মা-বাবারা
ছেলের মাথা খেয়েছেন।
মাথা ঘামান (চিন্তা করা) —এ ব্যাপারে বেশি মাথা
ঘামিয়ে লাভ নেই।
মাথাঠান্ডা করা (শান্ত হওয়া) — মাথা ঠাণ্ডা করেই
বড় কাজ করতে হয়,
তবেই ফল পাওয়া যায়।
মাথায় ঢোকা (বোধগম্য) — এ সহজ অঙ্কটিও তোমার মাথায়
ঢুকছে না দেখছি।
বিশেষণপদের বিশিষ্টার্থক প্রয়োগ।
‘কাঁচা’
কাঁচা পয়সা (সহজ লভ্য) — বইয়ের ব্যবসায় লোকটি কাঁচা
পয়সা কামিয়েছে।
কাঁচা হাত (অদক্ষ) — এ কাজটি কাঁচা হাতের বলে মনে
হয়।
কাঁচা ঘুম (অপূর্ণ) — কাঁচা ঘুম শরীর খারাপ করে।
কাঁচা পথ (মেঠো পথ) — কাঁচাপথে চলাফেরা করতে বড়ই
কষ্ট হয়।
‘ছোট’
ছোট করা (হীনজ্ঞান করা) — কাউকে কখনও ছোট করে দেখতে
নেই।
ছোট নজর (নন্দিত) — লোকটির নজর খুব ছোট, তাকে কেউ সম্মান দেয় না।
ছোট লোক (অভদ্র) — ছোট লোকের মতো গালাগাল করছ কেন?
নিজ করো—
(১) মুখ, কান, চোখ, গা।
(২) পাকা, বড়, কড়া, নরম।
উত্তরঃ
১। মুখ করা(ঝগড়া করা) — মেয়ের খুব মুখ।
মুখ চাওয়া (সাহায্য
পাওয়া) — অবশেষে ভগবান আমাদের উপর মুখ তুলে তাকিয়েছেন।
মুখ পুড়া (নিন্দিত/লজ্জ্বিত
হওয়া)—ছেলের দোষকর্মের জন্য বাবা-মায়ের মুখ পুড়েছে।
কান কাটা (লজ্জ্বিত
হওয়া) — “পরীক্ষায় ফেল করে ওর তো একপ্রকার কান কাটা অবস্থা!"
কানে কালা (শুনে
পায় না) — অনেক ডাকাডাকি করলাম, কিন্তু সে কোনো উত্তরই দিল না;
মনে হচ্ছে লোকটা একেবারেকানে কালাহয়ে গেছে!
কান মলা(শাস্তি
বা তিরস্কার দেওয়া)—পরীক্ষায় খারাপ ফল করায় শিক্ষক রাহুলকে কান মলে শাসনকরলেন।
চোখ উঠা(অসুখ
হওয়া) — তিরিক্ত ধুলাবালির কারণে রিয়াদের চোখ উঠেছে, তাই সে আজ স্কুলে যেতে পারেনি।
চোখ দেওয়া(নজর
রাখা) — পরীক্ষার হলে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উপর কঠোরভাবেচোখ দেন, যাতে কেউ নকল করতে না পারে।
চোখে-চোখে(সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা)—পরীক্ষার হলে শিক্ষক
ছাত্রদেরচোখে-চোখেরাখছিলেন, যাতে কেউ নকল করতে না
পারে।
গায়ে লাগা(অপমানজনক)
— শিক্ষক তাকে উপদেশ দিলেও সে সেটা গায়ে লাগিয়ে রাগ করে বসে রইল।
২। পাকা কথা(দৃঢ় বা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।) — আমাদের বাড়ির সামনে যে
জমিটা আছে,
তা বিক্রির ব্যাপারে বাবা এবং ক্রেতার মধ্যেপাকা কথাহয়ে
গেছে
পাকা রাস্তা (মজবুত
রাস্তা) — গ্রামের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য সরকার নতুনপাকা রাস্তানির্মাণ
করেছে।
বড় কথা (অহংকারী
বা দম্ভপূর্ণ কথা) — সে সবসময় বড় কথা বলে, কিন্তু কাজের সময়
তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না।
বড় লোখ(বিত্তশালী
ব্যক্তি)—গ্রামের মানুষরা বিশ্বাস করত যে, বড় লোক হওয়ার জন্য
কেবল ধনী হওয়া যথেষ্ট নয়; সত্যিকারের বড় লোক সেই, যে দুঃস্থদের সাহায্যে এগিয়ে আসে।
কড়া কথা(কঠোর
বা স্পষ্টভাবে বলাকথা) — শিক্ষক তার দায়িত্বে অবহেলা করায় প্রধান শিক্ষক তাকে
কড়া কথা শুনিয়ে দিলেন।
কড়া লোক (কঠিন
স্বভাবের বা নিয়মানুবর্তী ব্যক্তি) — আমাদের অফিসের ম্যানেজার বেশকড়া লোক, সময়ের একটু হেরফের হলেই তিনি কঠোরভাবে সতর্ক করে দেন।
নরম মনের(আবেগপ্রবণ
ব্যক্তি) — রিয়া খুবনরম মনেরমেয়ে, তাই সে অন্যের দুঃখ
দেখলেই কেঁদে ফেলে।
নরম(কোমল)
—শিশুটির গালের স্পর্শ ছিল তুলোর মতো নরম।