SEBA Class 10 Bengali Chapter 10
তোতা কাহিনী
লেখক—সৈয়দ মুজতবা আলী
ক্রিয়াকলাপ -
১। সঠিক উত্তরটি বেছে নাও।
(ক) কোরান কোন ভাষায় রচিত?
(১) ফরাসি, (২) ফার্সি, (৩) আরবি, (৪) ইংরেজি।
উত্তরঃ (৩) আরবি
(সঠিক)।
(খ) তোতা কাহিনি পাঠকের লেখক কে?
(১) সৈয়দ
মুজতবা আলী, (২) কাজী নজরুল ইসলাম, (৩)
মহম্মদ পুলিশ,
(৪)
জসীমউদ্দীন।
উত্তরঃ (১) সৈয়দ
মুজতবা আলী (সঠিক)।
(গ) সদাগর কোন দেশের লোক ছিলেন?
(১) ইতালি, (২) ইরাক, (৩) ইরান, (৪) ভারত।
উত্তরঃ (৩) ইরান
(সঠিক)।
২। শূন্যস্থান পূর্ণ করো।
(ক) রুমী তাঁর আধাত্মিক অভিজ্ঞতা __________ বর্ণনা করেছেন।
উত্তরঃ রুমী তাঁর
আধাত্মিক অভিজ্ঞতা মসনবিতে বর্ণনা করেছেন।
(খ) সে তোতা __________ বৃহস্পতি,__________ কালিদাস।
উত্তরঃ সে তোতা জ্ঞানে
বৃহস্পতি,রসে
কালিদাস।
(গ) ঘোড়া চুরি পর আর __________
তালা মেরে কি লাভ!
উত্তরঃ ঘোড়া চুরির
পর আর আস্তাবলে
তালা মেরে কি লাভ!
৩। সংক্ষিপ্ত উত্তর দেয়।
(ক) ‘তোতা কাহিনী’ পাঠটি কোন গ্রন্থের
অন্তর্গত?
উত্তরঃ‘তোতা
কাহিনী’ পাঠটি ‘মসনবি’গ্রন্থের
অন্তর্গত।
(খ) ‘গোপীজন বল্লভ’বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ“গোপীজনবল্লভ”
বলতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকেবঝানো হয়েছে।
(গ) তোতার পাণ্ডিত্যকে লেখক কার সঙ্গে তুলনা করেছেন?
উত্তরঃ তোতার পাণ্ডিত্যকে
লেখক ম্যাক্সমূলারের সাঙ্গে তুলনা করেছেন।
(ঘ) তোতাটি কোন দেশের খাঁচায় বন্দী ছিল?
উত্তরঃ তোতাটি ইরান দেশের
খাঁচায় বন্দি ছিল।
(ঙ) সদাগরের দিলের দোস্ত কে?
উত্তরঃ সদাগরের
দিলের দোস্ত হল বন্দি তোতা পাখিটি।
৪। চার/পাঁচটি বাক্যে উত্তর দাও।
(ক) মৌলানা রুমী সম্বন্ধে পারস্য দেশের জ্ঞানী-গুণীরা কী
মনোভাব পোষণ করতেন?
উত্তরঃমৌলানা
জালালউদ্দীন রুমী ছিলেন পারস্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি, সুফি দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক। পারস্য দেশের জ্ঞানী-গুণীরা তাকে
গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে দেখতেন। তাদের মধ্যে অনেকেই রুমীর কাব্য ও দর্শনের
অনুপ্রেরণায় মুগ্ধ ছিলেন এবং তার রচনাকে মানব আত্মার পরিশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক
জাগরণের অনন্য উৎস হিসেবে গণ্য করতেন।
পারস্যের দার্শনিক ও কবিরা রুমীর"মসনভী-ই-মানভী"গ্রন্থকে একপ্রকার
"দ্বিতীয় কোরআন" হিসেবে উল্লেখ করেছেন, কারণ এতে গভীর
আধ্যাত্মিকতা, নৈতিক শিক্ষা ও মানবতার বার্তা সংযোজিত রয়েছে।তাছাড়া
ইহাতে পঁচিশ হাজার শ্লোক রহিয়াছে যাহা তাঁহার অগাধ পাণ্ডিত্যের স্বাক্ষর বহন করে।
পারস্য দেশের জ্ঞানী-গুণী পণ্ডিতবর্গ তাঁহার অগ্নাধ পাণ্ডিত্যের তুলনা প্রসঙ্গে
বলিয়াছেন আল্লা যদি আরবী ভাষায় কোরান প্রকাশ না করিয়া ফারসি ভাষায় প্রকাশ করিতেন
তবে তাঁহার মসনবি কেতাবকে কোরান নাম দিয়া নিঃসন্দেহে প্রকাশ করা যাইত।
(খ) সদাগর ভারতীয় তোতার বর্ণনা কীভাবে করেছেন?
উত্তরঃইরান
দেশের এক সদাগর এক ভারতীয় তোতাকে বন্দি করিয়া খাঁচায় রাখিয়াছিলেন। তোতাটি ছিল
অসাধারণ। তাঁহার জ্ঞান,
বুদ্ধি, বিবেচনায় সওদাগর মুগ্ধ ছিলেন। সুযোগ
পাইলেই তিনি তাঁহার সহিত রসালাপ তত্ত্বালোচনায় ব্যস্ত থাকিতেন। তোতাটির তুলনা
করিতে গিয়া বলিয়াছেন সে জ্ঞানে বৃহস্পতি, রসে কালিদাস,
সৌন্দর্যে রুডলফ ভেলেন্টিনো ও পাণ্ডিত্যে ম্যাক্সমুলার।
বিভিন্ন
ভ্রমণ কাহিনি ও সাহিত্যে ভারতীয় তোতাকেএকটি রহস্যময় ও আকর্ষণীয় পাখিহিসেবে
চিত্রিত করা হয়েছে।প্রাচীন আরবি ও পার্সি সাহিত্যে ভারতীয় তোতাকে জ্ঞানী ও
ভবিষ্যদ্বক্তা হিসেবে দেখা হতো এবং মধ্যযুগীয় বাংলার লোককথা ও ‘শুকসপ্ততি’-তে
তোতাকেকথক ও গল্প বলার প্রতীকহিসেবে দেখা যায়।
(গ) সদাগরের প্রশ্নে তোতা হিন্দুস্থান থেকে কোন উপহার
আনার কথা জানিয়েছিলেন?
উত্তরঃ সওদাগর
ভারতবর্ষে কার্পেট বিক্রয় করিতে যাইবেন বলিয়া মনস্থির করিলেন। অর্থ উপার্জন করিয়া
ফিরিবার সময় সকলের জন্য উপহার আনিবেন বলিয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিলেন। যাহাকে তিনি
দিলের দোস্ত ভাবেন সেই তোতাকেও জিজ্ঞাসা করিলেন কী উপহার তাঁহার প্রয়োজন। উত্তরে
তৈাতা জানাইল যে কোন পাখি খাঁচা হইতে মুক্তি চায়না? সেইজন্য এত
বৎসর খাঁচায় বন্দি থাকিয়া মুক্তির উপায় জানাই তাঁহার একমাত্র উপহার। হিন্দুস্থানে
তাঁহার কোনো জাত ভাইয়ের সহিত দেখা হইলে তাঁহার বন্দি দশার কথা জানাইয়া কীভাবে
মুক্তি পাইতে পারে সেই উপায় জানিয়া আসাই হইবে তাঁহাকে দেওয়া প্রিয় উপহার।
এই গল্পে তোতার মাধ্যমে বন্দিত্ব ও স্বাধীনতার
আকাঙ্ক্ষার প্রতীকী চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
(ঘ) ‘তার মুক্তির উপায় বলে দিতে পারো?’—কে, কোন প্রসঙ্গে, কাকে এ প্রশ্ন করেছেন?
উত্তরঃসওদাগর
ভারতবর্ষের বুকে উড়িয়া যাওয়া একঝাঁক তোতাপাখিকে এই প্রশ্ন করিয়াছেন।
ভারতবর্ষে ব্যবসার কাজ শেষ হইলে সওদাগর দেশে ফিরিয়া
যাইবার সময় সকলের জন্য উপহার ক্রয় করিলেন কিন্তু তোতার উপহারের কথা বেমালুম ভুলিয়া
গিয়াছিলেন। বনের মধ্য দিয়া যাইবার সময় হঠাৎ উড়ন্ত একঝাঁক তোতা দেখিয়া তাঁহার বন্দি
তোতার উপহারের কথা মনে পড়িল। তখনই সদাগর চিৎকার করিয়া তাঁহাদের জানাইল তোমাদের এক
বন্ধু ইরান দেশের খাঁচায় বন্দি। তোমরা বলিয়া দিতে পার কীভাবে সে মুক্তি পাইবে?
(ঙ) “কিন্তু এ তো ঘুঘু”।—কার সম্বন্ধে কেন একথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃইরানে বন্দি
অবস্থায় থাকা তোতার সম্বন্ধে এই কথা বলা হইয়াছে।
কারণ সওদাগর তোতার নিকট
অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন যে হিন্দুস্থানে তোতার জাতভাইদের নিকট তাঁহার মুক্তির উপায়
জানিয়া আসিবেন। কিন্তু হিন্দুস্থানে ঘটা তোতার মৃত্যুর কথা খলিতে না পারিয়া সওদাগর
তোতার নিকট দেখা দিলেন না। একদিন ভুল করিয়া তোতার ঘরে প্রবেশ মাত্র তোতা তাঁহাকে
সওগাতের জন্য পাকড়াও করেন। সেইহেতু তিনি তোতাকে ঘুঘুর সহিত তুলনা করেন। কারণ ঘুঘু
ফন্দিবাজ ও ধূর্তী তোতা নিরীহ পাখি হইলেও স্বার্থসিদ্ধির জন্য উদ্গ্রীব।
(চ) কীভাবে তোতা খাঁচা থেকে মুক্তি পেল?
উত্তরঃসওদাগরের সহিত
তোতার দেখা হইয়াছিল হিন্দুস্থান হইতে ফিরিবার বেশ কিছুদিন পর। সওদাগরকে
দেখিবামাত্র তোতা তাঁহার সওগাতের বিষয়ে জানিতে চাহিল। তিনি কিছু না বলায় তোতা
তাঁহার দিকে এমনভাবে তাকাইল যে তিনি বেইমান। কথা দিয়া কথা রাখিতে পারেন না। তখন
বাধ্য হইয়া সদাগর হিন্দুস্থানে ঘটা তোতার দুঃসংবাদের কথা বলা মাত্র তোতাটি ধপ্
করিয়া মরিয়া গেলএবং মৃতের ভান করে পড়ে থাকে।সদাগর ভাবল যে তোতা মারা গেছে। কিন্তু সদাগর
চোখের জল মুছিতে মুছিতে খাঁচা খুলিয়া তোতাকে আঙ্গিনায় ছুঁড়িয়া ফেলিয়া দিবা মাত্র
সে উড়িয়া গিয়া বাড়ির ছাদে বসিল। আসলে মরার ভান করিয়া থাকিবার জন্য সে মুক্তি পাইল।
(ছ) “একই ভুল, দুবার করলুম”—কে, কেন একথা বলেছেন? এখানে ভুলটা কী?
উত্তরঃ সওদাগর এই কথা
বলিয়াছেন।
বন্দি তোতার মুক্তির উপায় জানিতে চাহিলে হিন্দুস্থানের
উড়ন্ত তোতা যেভাবে ধপ্ করিয়া পড়িয়া মারা গিয়াছিল, সওদাগর নিরীহ
তোতার মৃত্যুর জন্য নিজেকে বিকার দিয়াছিলেন। দ্বিতীয়বার নিজের বন্ধু বন্দি তোতাকে
হিন্দুস্থানের তোতার দুঃসংবাদ জানাইলে সেও একইভাবে মৃত্যুবরণ করিল। একই ভুল দুইবার
করায় দুইটি নিরীহ তোতাকে মৃত্যুবরণ করিতে হইল বলিয়া সদাগর আফসোস করিলেন।
৫। রচনামূলক উত্তর লেখো।
(ক) ‘তোতাকাহিনি’ নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো।
উত্তরঃনামকরণ বিষয়টি
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সৈয়দ মুজতবা আলীর রচিত"তোতা
কাহিনী"গল্পের নামকরণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও সার্থক।
গল্পের মূল উপজীব্য বিষয় এবং প্রতীকী অর্থ এই নামের মধ্যেই নিহিত রয়েছে।বিশেষ
করিয়া লেখকদের রচিত গল্প,
উপন্যাস, কবিতা ইত্যাদির ক্ষেত্রে। কারণ
নামকরণের মধ্য দিয়া বিষয়বস্তুর আভাস পাওয়া যায়। যেমন বোতলের উপর লেবেল দেখিয়া
ভিতরের বস্তুটি সম্বন্ধে ধারণা জন্মে। এই গল্পটি মৌলানা রুমীর লেখা ‘মসনবি’
গ্রন্থের অন্তর্গত।
আলোচ্য তোতা কাহিনী গল্পটি
মৌলানা রুমীর পাণ্ডিত্যের বিষয় লইয়া আরম্ভ হইলেও গল্পটির সম্পূর্ণ একটি তোতার
কাহিনী বিবৃত হইয়াছে। সদাগর এক ভারতীয় তোতাকে বন্দি করিয়া খাঁচায় রাখিয়া তাঁহার
সহিত সখ্যতা স্থাপন করিয়া পরম আনন্দিত। তোতার মুক্তি পাইবার উপায় জানিবার
ব্যাকুলতায় তিনি ভারতবর্ষের অন্যান্য তোতাদের শরণাপন্ন হইলেন। সেখান হইতে যে
অভিজ্ঞতা অর্জন করিলেন তাহাতে ভারতবর্ষের নিরীহ তোতার মৃত্যুসংবাদের কথা ব্যক্ত
করিতে চাহিলেন না। কিন্তু তাহার প্রিয় তোতার বক্রদৃষ্টি ও অনুরোধ উপেক্ষা করিতে না
পারিয়া যেইমাত্র ঘটনাটি বিবৃত করিলেন তৎক্ষণাৎ তোতাটি ধপ্ করিয়া মরিয়া গেলএবং
মৃতের ভান করে পড়ে থাকে।সদাগর ভাবল যে তোতা মারা গেছে। কিন্তু সদাগর চোখের জল
মুছিতে মুছিতে খাঁচা খুলিয়া তোতাকে আঙ্গিনায় ছুঁড়িয়া ফেলিয়া দিবা মাত্র সে উড়িয়া
গিয়া বাড়ির ছাদে বসিল।সদাগর তাজ্জব হয়ে তোতার দিকে তাঁকিয়ে থাকেন। তিনি এর অর্থ
কিছুই বুঝিতে পারিলেন না।তখন তোতা গম্ভীর
হয়ে সদাগরের
উদ্দেশে বলে যে, হিন্দুস্থানের তোতাটি আসলে মরেনি, মরার ভান করে খাঁচা থেকে
মুক্তির উপায় জানিয়েছিল।
তোতার আধ্যাত্মিক জ্ঞান বিতরণের
মাধ্যমে গল্পটির পরিসমাপ্তি ঘটে। গল্পটি পাঠ করিয়া স্বভাবতই তোতা কাহিনী নামকরণ
সার্থক হইয়াছে বলা যায়।
(খ) প্রবাসের বন্দি জীবন থেকে তোতা কিভাবে মুক্তি পেল
পাঠ অবলম্বনে আলোচনা করো।
উত্তরঃ স্বাধীনতার
হীনতায় কে বাঁচিতে চায় কথাটি কেবল মনুষ্য কূলে নয় জীবজগতেও চরম সত্য। এবং এর উপর
অনেক গ্রন্থে উল্লেখিত আছে, তেমনি এক কাহিনী মৌলানা রুমী তাঁর আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা
মসনবিতে বর্ণনা করেছেন। তোতা কাহিনি গল্পটি তারই মধ্যে একটি।
গল্পটিতে হিন্দুস্থানের একটি তোতা
ইরানের এক সওদাগরের খাঁচায় দীর্ঘদিন বন্দি করে রেখেছিলেন। স্বদেশে
ফিরিবার জন্য তাঁহার প্রাণ ব্যাকুল হইয়াছিল।কিন্তু সওদাগর তাঁহাকে ভালোবাসার জালে
এরূপভাবে আবদ্ধ করিয়া রাখিয়াছিল যে সে কিছুতেই মুক্তির উপায় খুঁজিয়া পায় নাই। সে
তোতাটি জ্ঞানে,
পাণ্ডিত্যে, রূপে, রসে
অসাধারণ ছিল। তাই সদাগর অবসর পেলেই তার সঙ্গে তত্ত্বালোচনা ও রসালাপে মেতে উঠতেন।
অবশেষে একদিন যখন ভারতবর্ষে চড়া
দামে কার্পেট বিক্রি হচ্ছে জেনে সদাগর স্থির করেন ভারতবর্ষে গিয়ে কার্পেট বিক্রি
করে অর্থ উপার্জন করবেন। হিন্দুস্তান থেকে ফেরার সময় সবার জন্য কিছু উপহার আনার
ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তোতাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করায় তোতা জানায় যে হিন্দুস্তানে তার
জাতভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলে তার বন্দিদশা থেকে মুক্তির উপায় জেনে আসাই হবে তার
উপহার।
ভারতবর্ষ থেকে ফেরার সময় একঝাঁক
তোতা দেখে সদাগর জিজ্ঞেস করলেন তোমাদের এক জাতভাই ইরান দেশের খাঁচায় বন্দি হয়ে
আছে। তার মুক্তির উপায় কী?
দুঃসংবাদটি শোনা মাত্র একটি পাখি ধপ করেমাটিতে পড়ে মরে গেল। পাখিটির
মৃত্যুর জন্য সদাগর নিজেকেই দায়ী করেন। বাড়ি ফিরে সদাগর তোতার সঙ্গে দেখা করেননি।
কিন্তু হঠাৎ একদিন ভুল করে তোতার ঘরে ঢুকে পড়েন। তোতা উপহার অর্থাৎ মুক্তির উপায়
জানতে চাইলে সদাগরের নির্লিপ্ততা তাকে আঘাত করে। বাধ্য হয়ে সদাগর হিন্দুস্তানে ঘটা
ঘটনাটি বলেন। শোনা মাত্র তোতাটিও ধপ করে পড়ে মরে যায়। বন্ধুর এমন আকস্মিক মৃত্যুতে
অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে খাঁচা থেকে তাকে বের করে ছুঁড়ে ফেলেন সদাগর। মুহূর্তে সে উড়ে
গিয়ে বাড়ির ছাদে গিয়ে বসে। এইভাবে কৌশল প্রয়োগ করিয়া বন্দি তোতা মুক্তি লাভ করিল
এবং সদাগরের উদ্দেশে বলে, হিন্দুস্তানের তোতাটি আসলে মরেনি,
মরার ভান করে খাঁচা থেকে মুক্তির উপায় জানিয়েছিল। সদাগরের শেষ
তত্ত্ব জানাবার অনুরোধে তোতা বলেছিল মরার আগে মরতে পারলেই মোক্ষ লাভ হয়।
(গ) সদাগরের চরিত্র বর্ণনা করো।
উত্তরঃসওদাগর ছিলেন
এক ব্যবসায়ী মানুষ যিনি ইরান দেশে বাস করিতেন। ব্যবসার
কাজে তাঁহাকে সর্বদা ব্যস্ত থাকিতে হয়। একবার একটি ভারতীয় তোতাকে বন্দি করিয়া
নিজের দেশ ইরানে লইয়া আসিলেন। তোতা কথকী পাখি। অর্থাৎ অনর্গল কথা বলিতে ভালোবাসে।সদাগরও
রসিক ছিলেন ও তত্ত্বাধানী।সে তোতাটি জ্ঞানে, পাণ্ডিত্যে, রূপে, রসে অসাধারণ ছিল। তাই সদাগর অবসর পেলেই তার
সঙ্গে তত্ত্বালোচনা ও রসালাপে মেতে উঠতেন।
সওদাগরের অন্তর রসবোধে পূর্ণ
ছিল। কর্মজীবনের হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও জ্ঞানী তোতার সহিত রসালাপ করিবার জন্য
অবসর খুঁজিতেন। প্রতিনিয়ত কর্মে ব্যস্ত থাকিলে মানুষের মন সুকুমার বৃত্তি হারাইয়া
যন্ত্রে পরিণত হয়।সওদাগরের চরিত্রের অন্য একটি বৈশিষ্ট্য কর্তব্যপরায়ণতা। বিদেশে
ব্যবসা করিয়া স্বদেশে ফিরিবার সময় আত্মীয়-পরিজনের জন্য অনেকেই সামর্থ্য অনুযায়ী
উপহার আনে। সওদাগর সেরূপ কেবল জ্ঞাতি-কুটুম্বের জন্যই নহে, তাঁহার আশ্রিত বন্দি তোতার জন্যও উপহার আনিয়াছেন।
সওদাগর মানবতাবোধে পূর্ণ একটি
চরিত্র। ভারতীয় তোতার মৃত্যু ঘটার দুঃসংবাদটি তাঁহার প্রিয় বন্দি তোতাকে না দিবার
জন্য নিজেকে আড়াল করিয়া রাখিবার চেষ্টা করিয়াছিল। যখন দেখা যায় ভারতের আকাশে
উড্ডীয়মান নিরীহ তোতার মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী করিতে দ্বিধাবোধ করেন নাই। ইহার
পর দিলের দোস্ত তোতার মৃত্যুর জন্য সওদাগরের অনুশোচনার অন্ত ছিল না।সওদাগরের
চরিত্রের অন্যতমবৈশিষ্ট্য অজানাকে জানিবার আগ্রহ। তোতার বিদায় মুহূর্তে সওদাগরের
কণ্ঠে আকুল জিজ্ঞাসা আমাদের মুগ্ধ করে "যাবার আগে আমাকে শেষ তত্ত্ব বলে যাও।
আর তো তোমাকে পাইব না।
(ঘ) তোতাকে বন্দী করে রাখার কারণ বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃমানুষ
সুন্দরের পূজারী। দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততার ক্লান্তি যখন তাঁহার মনকে পীড়িত করে তখন
সাময়িক স্বস্তি পাইবার জন্য সে সুন্দরের আরাধনায় ব্রতী হয়। সওদাগর বিভিন্ন
দেশ-বিদেশে ব্যবসার কাজে ঘুড়িয়া বেড়ান। পাখি পোষা সদাগরেরও সে একটা শখ ছিল তাই একবার
ভারতে আসিয়া একটি তোতাকে নিজ দেশ ইরানে লইয়া খাঁচায় বন্দি করিয়া রাখিলেন। তোতার
অপর নাম টিয়াবা শুকপাখি। অবিকল মানুষের মতো কথা বলে। স্বভাবতই মানুষ তোতার প্রতি
আকৃষ্ট হয়। তবে তার তোতাটির কিছু বিশেষত্ব ছিল। তোতাটি ছিল জ্ঞানে বৃহস্পতি, রসে কালিদাস, সৌন্দর্যে রুডলফ ভেলেন্টিনো এবং পাণ্ডিত্যে
ম্যাক্সম্যুলারের মতো। কাজেই সওদাগর অবসরের মুহূর্ত
সুন্দরভাবে কাটাইবার জন্য এবং দার্শনিক আলোচনা ও তাত্ত্বিক আলোচনা করতেতোতাকে
বন্দি করিয়া রাখিয়াছিলেন।
সওদাগর তাঁহার সহিত তাত্ত্বিক
আলোচনার মাধ্যমে জীবনের অনেক অজানা তত্ত্ব জানিতে পারিয়াছেন। তোতাকে বন্দি করিয়া
রাখার ইহা অন্যতম কারণ মনে করা যায়। সদাগর তোতার রূপ-গুণে মুগ্ধ ছিলেন। বহু বছর
তোতার সহিত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করিয়া তোতার সহিত তাঁহার হৃদয়ের সম্পর্ক স্থাপিত
হইয়াছিল। মোটকথা তোতা ছিল সওদাগরের একাধারে বন্ধু, জ্ঞান ভাণ্ডার,
বিস্তারের চাবিকাঠি এবং অবসর বিনোদনের সুন্দর মুহূর্ত।
৬। ব্যাখ্যা করো।
(ক) জ্ঞানে বৃহস্পতি, রসে কালিদাস,
সৌন্দর্যে রুডলফ ভেলেটিনো, পাণ্ডিত্যে ম্যাক্সমূলার।
উত্তরঃ আলোচ্য অংশটি
সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত 'তোতা কাহিনী' গল্প হইতে চয়ন করা হইয়াছে।
এই বাক্যে বিভিন্ন গুণাবলীর
তুলনামূলক উপস্থাপন করা হয়েছে। এখানে চারটি বিশেষণের সঙ্গে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের
নাম যুক্ত করা হয়েছে,
যাঁরা ওই ক্ষেত্রে বিখ্যাত এবং পাঠের তোতাটি যেন সমস্ত শ্রেষ্ঠ
বিষয়ের বাহক।
যেরূপ দেবতাদের গুরু
বৃহস্পতিগুরু এবং জ্ঞানের প্রতীক। গুরু সর্ব জ্ঞানের আকর। এখানে বোঝানো হয়েছে যে
তোতাটি জ্ঞানে অতুলনীয়। বিভিন্ন বিষয়ে তোতা যেভাবে সদাগরকে জ্ঞান বিতরণ করিত
তাহাতে তোতার জ্ঞানের গভীরতা অনুধাবন করিয়া জ্ঞানে বৃহস্পতি বলিয়া উল্লেখ করা
হইয়াছে। রসালাপেও তোতা ছিল দক্ষ। সাহিত্যের নবরস যেন তোতার কেন্দ্রীভূত ছিল।
সেইহেতু রসে কালিদাসের সহিত তুলনা করা হইয়াছে। সংস্কৃত সাহিত্যিক কালিদাস কবিতা ও
নাটকের জন্য বিখ্যাত। তিনি শৃঙ্গার ও কাব্যরসে অতুলনীয় ছিলেন। তাই এখানে বোঝানো
হয়েছে যে ব্যক্তি রস ও আবেগ প্রকাশে কালিদাসের মতো দক্ষ।
রুডলফ ভেলেটিনো ছিলেন হলিউডের
একজন বিখ্যাত অভিনেতা,
নর্তক যাহাকে শ্রেষ্ঠ সুন্দর বলিয়া অভিহিত করা হইত।যিনি তাঁর
অসাধারণ সৌন্দর্য ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের জন্য জনপ্রিয় ছিলেন। তোতার সৌন্দর্য
এইরূপ মনোমুগ্ধকর ছিল যে সৌন্দর্যের প্রতীক বলিয়া চিহ্নিত রুডলফের সহিত তুলনা করা
হয়েছে।
পাণ্ডিত্যের ক্ষেত্রে
ম্যাক্সমুলারের নাম সর্বজনবিদিত। তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত জার্মান ইন্দোলজিস্ট ও
ভাষাবিদ। তাঁর পাণ্ডিত্য ছিল অসাধারণ। অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী বলিয়া
ম্যাক্সমুলারের সহিত তোতার পাণ্ডিত্যের তুলনা করা হইয়াছে। মোটের উপর তোতার
রূপ-গুণের সৌন্দর্য ও গভীরতার কথা বলিতে গিয়া লেখক উপর্যুক্ত ব্যক্তিত্বের সহিত
তুলনা করিয়াছেন।
(খ) গোঁফ কামানোর পরও হাত ওঠে অজানতে চাড়া দেবার জন্য।
উত্তরঃআলোচ্য অংশটি
সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত 'তোতা কাহিনী' গল্প হইতে চয়ন করা হইয়াছে।
যখন কেউ দীর্ঘদিন ধরে গোঁফ রাখে
এবং তা কামানোর পর,
তখন তার শরীর ও মন স্বাভাবিকভাবেই পুরোনো অভ্যাস অনুযায়ী আচরণ করতে
চায়। অর্থাৎ, গোঁফ কামানোর পরও সে নিজের অজান্তেই হাত ওঠায়
গোঁফে চাড়া দেওয়ার জন্য, যদিও বাস্তবে সেখানে গোঁফ নেই।
এটি মূলত মানুষের অভ্যাসগত আচরণ বোঝাতে ব্যবহৃত
হয়। বহুদিনের গড়ে ওঠা অভ্যাস সহজে বদলানো যায় না, এবং অনেক সময়
মানুষ নিজের অজান্তেই পুরোনো অভ্যাস অনুসরণ করে।ইহা
অভ্যাসজনিত কারণ বলা যাইতে পারে।
সওদাগর বন্দি তোতার জন্য সওগাত
আনিতে গিয়া যে করুণ অবস্থা প্রত্যক্ষ করিয়াছেন তাহা প্রকাশ না করিবার জন্য তোতার
নিকট হইতে দূরত্ব বজায় রাখিবার যথাসাধ্য চেষ্টা করিলেন। তোতার ঘরে প্রবেশ করা
বন্ধকরিলেন যাহাতে উপহারের জন্য তোতার মুখামুখি না হইতে পারেন। কিন্তু অন্তরের
লালিত অভ্যাস কি এত সহজে পরিহার করা সম্ভব? তাই একদিন অনবধানে
তোতার ঘরে প্রবেশ করিলেন। অভ্যাসজনিত কারণে মানুষ নিজের অজান্তে সেই কর্মে
প্রবৃত্ত হয় তাহা বুঝাইবার জন্য উপযুক্ত উক্তির অবতারণা করা হইয়াছে।
(গ) সদাগর ফাটা বাঁশের মধ্যিখানে।
উত্তরঃআলোচ্য অংশটি
সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত 'তোতা কাহিনী' গল্প হইতে চয়ন করা হইয়াছে।
এই প্রবাদটি সাধারণত এমন
পরিস্থিতির জন্য ব্যবহৃত হয় যেখানে কেউ চরম বিপদ বা কঠিন সমস্যার মধ্যে আটকে
পড়েছে এবং কোনো দিকেই সহজে সমাধান নেই। অনেকটা"দুই দিকেই
বিপদ"বা"গোদের ওপর
বিষফোঁড়া"ধরনের অর্থ বহন করে। অবস্থানের দ্বারা
নির্ণয় করা যায় মানুষের প্রকৃত অবস্থা। অর্থাৎ মানুষটি স্বাচ্ছন্দ্য কিংবা
বিড়ম্বনার মধ্য দিয়া কাল যাপন করিতেছেন কিনা। যেরূপ ফাটা বাঁশের মধ্যে যদি কোন
কিছু প্রবেশ করানো হয় তাহা হইলে সেই বস্তুটি উভয় পাশের চাপে পিষ্ট হইতে থাকে।
যন্ত্রণায় ছটফট করে। অনবধানে সওদাগর তোতার ঘরে প্রবেশ করিবামাত্র তোতার উচ্ছসিত
কণ্ঠের স্বাগত বাণী শুনিয়া তাঁহার যেরূপ অবস্থা হইল তাহাতে যেন তিনি চোখে সরিষার
ফুল দেখিতে পাইলেন। তোতা সওগাতের বিষয়ে জানিতে চাহিলে তাঁহার যেরূপ অবস্থা ঘটিল
তাহা উপর্যুক্ত উদ্ধৃতির সহিত তুলনীয়। কারণ তিনি যে সওগাত আনিতে অসমর্থ হইয়াছেন
তাহা যেরূপ প্রকাশ করিতে পারিতেছেন না তদ্রুপ সওগাত আনিবার বিষয়ে যে করুণ হৃদয়
বিদারক অভিজ্ঞতা অর্জন করিয়াছেন তাহাও গোপন করিতে পারিতেছেন না। সওদাগরের
যন্ত্রণাক্লিষ্ট মানসিক অবস্থার বর্ণনা প্রসঙ্গে আলোচ্যউদ্ধৃতির অবতারণা করা
হইয়াছে।
(ঘ) ঘোড়া চুরির পর আস্তাবলে তালা মেরে কি লভ্য।
উত্তরঃ আলোচ্য অংশটি
সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত 'তোতা কাহিনী' গল্প হইতে চয়ন করা হইয়াছে। উদ্ধৃতিটির
আক্ষরিক অর্থ হইতেছে কোন বস্তু সুরক্ষিত রাখিবার জন্য তালা-চাবির প্রয়োজন। কিন্তু
বস্তুটি চুরি যাইবার পর তাহার সুরক্ষা অবান্তর অর্থাৎ সেখানে তালা-চাবির ব্যবহার
অর্থহীন। এটি বোঝাতে ব্যবহৃত হয় যে, যখন কোনো অনিষ্ট বা
ক্ষতি ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে, তখন সতর্কতা অবলম্বন বা ব্যবস্থা
গ্রহণ করলে তাতে কোনো লাভ হয় না। এই প্রবচন সাধারণত দেরিতে নেওয়া পদক্ষেপের
অসারতা বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন পরীক্ষার আগে পুরো সময়টা খেলাধুলায়
কাটিয়ে দেওয়ার পর পরীক্ষার আগের রাতে সারা রাত পড়লেও ভালো ফল আশা করা বৃথা;আস্তাবল
হইতে ঘোড়া চুরি হইবার পর শূন্য আস্তাবলে তালা বন্ধ করিবার কোন প্রয়োজন থাকে না;ব্যাংকে চুরি হয়ে যাওয়ার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ালে তাতে আর চুরি
ঠেকানো যাবে না।
প্রকৃত অর্থ হইতেছে সওদাগরের
মুখে ভারতীয় বন্দি তোতার মুক্তির উপায় জানিবামাত্র উড়ন্ত একঝাঁক ভারতীয় তোতার
মধ্যে একটি ধপ্ করিয়া পড়িয়া মৃত্যু বরণ করিল। সদাগর ইহাতে অনুশোচনা করিলেন যে
বন্দি তোতার কাহিনী বলিবার জন্য তিনি নিরীহ একটি পাখির মৃত্যুর কারণ হইলেন। এইরূপ
দুঃসংবাদ তিনি আর কখনই দিবেন না বলিয়া প্রতিজ্ঞা করিলেন। কিন্তু দ্বিতীয়বারও তিনি
একই ভুল করিলেন। ভারতের আকাশে উড়ন্ত তোতার মৃত্যুসংবাদ বলিবামাত্র প্রিয় বন্দি
তোতার মৃত্যু ঘটে তিনি বিচলিত হইয়া একই ভুল দুইবার করিবার জন্য অনুশোচনা করিলেন।
প্রতিজ্ঞা পালনে অসমর্থ ব্যক্তির প্রতিজ্ঞা করা অর্থহীন বলিয়া প্রতিপন্ন হয়।
এটি মূলত সতর্কতার গুরুত্ব
বোঝায়—আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া ভালো, পরে আফসোস করার থেকে!
(ঙ) মরার আগেই যদি মরতে পারো, তবেই
মোক্ষ লাভ।
উত্তরঃ আলোচ্য অংশটি
সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত 'তোতা কাহিনী' গল্প হইতে চয়ন করা হইয়াছে।
মৃত্যু জীবনের পরিসমাপ্তি।
জীবনের ক্ষুধা-তৃষ্ণা,
লোভ-লালসা, চাওয়া-পাওয়া সকল আকাঙ্খার মৃত্যুতে
অবসান ঘটে। মানুষ যতদিন বাঁচিয়া থাকে ততদিন এই সমস্ত চাহিদা তাঁহাকে অনবরত ঘিরিয়া
রাখে। জগতে সমস্ত অশান্তি, যন্ত্রণার উৎস এই সকল অনন্ত
চাহিদাপূর্ণ জীবন। মৃত্যু জীবনে একবারই আসে। কবীর, লালন ফকির
বলিয়াছেন জীবনেই মৃত্যু লাভ করিলে মানুষের সমস্ত জ্বালা-যন্ত্রণার অবসান ঘটে।
জীবনে যদি কেহ মৃত্যু লাভকরে তখন তাঁহারা জাগতিক চাহিদা হইতে উদ্ভুত সর্ব প্রকার
অশান্তি, যন্ত্রণার ঊর্ধ্বে অবস্থান করে। সে তখন মুক্ত
পুরুষে পরিণত হয় এবং মনুষ্য জীবনের চরম প্রাপ্তি নির্বাণ লাভ করিতে পারে।
নির্বার্ণ প্রাপ্তি বা মোক্ষ লাভ মানুষের একান্ত কাম্য। হাঁস যেরূপ কর্দমযুক্ত জল
হইতে কেবল জলটুকু গ্রহণ করে সেইরূপ প্রকৃত সাধক জীবনকালেই জীবনের সার বস্তু গ্রহণ
করিয়া মোক্ষ লাভে সমর্থ হয়।
এই উক্তিটি আধ্যাত্মিক ও
দার্শনিকভাবে গভীর অর্থ বহন করে। এখানে "মরা" শব্দটি শুধুমাত্র শারীরিক
মৃত্যু বোঝায় না,
বরং আত্মিক, মানসিক ও ইন্দ্রিয়জনিত
আসক্তিগুলোর বিলোপকেও নির্দেশ করে।
এখানে"মরার আগেই যদি মরতে পারো" – এটি মানসিক ও
আত্মিক মৃত্যুর কথা বলে, যেখানে একজন ব্যক্তি তার অহংকার,
মোহ, লোভ, কামনা-বাসনা
এবং সাংসারিক আসক্তিগুলোকে ত্যাগ করতে পারে। এটি প্রকৃত আত্মসংশোধনের ইঙ্গিত দেয়। এবং "তবেই
মোক্ষ লাভ" – মোক্ষ হলো মুক্তি, চূড়ান্ত
আত্মজ্ঞান ও নির্বাণ। যদি কেউ জীবনের মধ্যে থেকেই পার্থিব আকাঙ্ক্ষাগুলো থেকে
মুক্ত হতে পারে, তাহলে সে প্রকৃত অর্থে মোক্ষ লাভ করতে
পারে।
যদি কেউ জীবিত থাকতেই তার
মানসিক ও পার্থিব আসক্তিগুলো থেকে মুক্তি পায়, তবে সে প্রকৃত মুক্তির
স্বাদ পেতে পারে। এটি যোগ, বৌদ্ধধর্ম, বৈদান্তিক
দর্শন এবং সুফিবাদের মতো আধ্যাত্মিক দর্শনেও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
৭। টিকা লেখোঃ
কালিদাস:- কালিদাস
সংস্কৃত ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি ও নাট্যকার হিসেবে পরিচিত। তিনি প্রাচীন ভারতের
গুপ্ত যুগের (চতুর্থ থেকে পঞ্চম শতাব্দী) অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক ছিলেন। তার
লেখা কাব্য ও নাটকসমূহ সংস্কৃত সাহিত্যের মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।
তার রচিত প্রধান গ্রন্থসমূহ হলো:
ক) অভিজ্ঞানশকুন্তলম – এটি তার সর্বাধিক বিখ্যাত নাটক, যা মহাভারতের
"শকুন্তলা" কাহিনির উপর ভিত্তি করে রচিত।
খ) মেঘদূত – এক অসাধারণ কাব্যগ্রন্থ, যেখানে এক নির্বাসিত যক্ষ
তার প্রিয় স্ত্রীর কাছে বার্তা পাঠানোর জন্য একটি মেঘকে দূত হিসেবে কল্পনা করে।
গ) রঘুবংশম – এটি রঘু বংশের রাজাদের বীরত্ব ও গৌরব নিয়ে রচিত মহাকাব্য।
ঘ) কুমারসম্ভব – দেবী পার্বতী ও শিবের প্রেমকাহিনি নিয়ে রচিত এক অনন্য মহাকাব্য।
কালিদাসের লেখায় প্রকৃতির অপূর্ব বর্ণনা, মানবপ্রেমের কোমলতা, ভক্তির গভীরতা এবং ভাষার
স্নিগ্ধতা প্রকাশ পেয়েছে। তার সাহিত্য ভারতীয় সংস্কৃতি ও কাব্যকলার অন্যতম
শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।
কুমারসম্ভম:-কুমারসম্ভবমহাকবি
কালিদাস রচিত একটি বিখ্যাত মহাকাব্য। এটি সংস্কৃত ভাষায় রচিত এবং ভারতের শ্রেষ্ঠ
মহাকাব্যগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এই মহাকাব্যের মূল বিষয় হলো
পার্বতী ও শিবের বিবাহ এবং তাঁদের পুত্র কার্তিকেয় (কুমার)-এর জন্ম। কার্তিকেয়
পরবর্তীকালে অসুর তারকাসুর বধ করেন। তাই, "কুমারসম্ভব"
নামের অর্থ—"কুমারের (কার্তিকেয়ের) জন্ম"।কালিদাস তাঁর কাব্যে চিত্রময়
ভাষা, অলংকার, রস ও ছন্দের অপূর্ব
সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন। প্রকৃতি ও মানব-অনুভূতির নিখুঁত বর্ণনায় তিনি অসামান্য
দক্ষতা দেখিয়েছেন।
এই মহাকাব্যেরপ্রধান ঘটনাবলি:
1.
পার্বতীর তপস্যা ও শিবের প্রতি ভক্তি
2.
কামদেবের শিবকে বিরক্ত করা ও তাঁর
ভস্মীভূত হওয়া
3.
শিব-পার্বতীর মিলন
4.
কুমার কার্তিকেয়ের জন্ম
কুমারসম্ভবকেবল একটি পৌরাণিক
কাহিনি নয়,
এটি প্রেম, তপস্যা, সৌন্দর্য
ও মানবিক অনুভূতির এক অনন্য নিদর্শন। এটি ভারতীয় সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হিসেবে চিরস্মরণীয়।
ম্যাক্সমুলার:- ১৮২৬ খ্রিস্টব্দে জর্মানিতে জন্মগ্রহণ একজন
প্রখ্যাত জার্মান ভাষাতাত্ত্বিক, প্রাচ্যবিদ, এবং
সংস্কৃত পণ্ডিত ছিলেন। তিনি ভারতের প্রাচীন সাহিত্য, বিশেষ
করে বেদ, উপনিষদ এবং অন্যান্য সংস্কৃত গ্রন্থের অনুবাদ ও
বিশ্লেষণের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। তাঁর শিক্ষা জীবন কটেছে ব্রিটেনে। ১৮৮৮
খ্রিস্টব্দে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদে বৃত হন।ম্যাক্স মুলার ভারতীয়
সংস্কৃতি ও দর্শনের প্রতি গভীর আগ্রহী ছিলেন। তিনি মনে করতেন, ভারতীয় সভ্যতা বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ধারক।
রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের অনুরাগী ছিলেন। সংস্কৃত ভাষা ও ঋকবেদ সম্বন্ধে চর্চা করেন।
১৯০০ খ্রিস্টব্দে ২৮ অক্টোবর তিনি পরলোক গেমন করেন।
রুডলফ ভেলেন্টিনো
(১৮৯৫-১৯২৬):-
বিখ্যাত আমেরিকান অভিনেতা । জন্ম
ইতালিতে। তাঁর মা ম্যারি বার্টা গেব্রিয়েল জাতিতে ফরাসি ছিলেন। বাবা ইতালিয়ানএবং
পেশায় ছিলেন পশু ডাক্তার (Veterinarian) ভেলেন্টিনোর এগার বছর বয়সে বাবা মারা যান। প্রবল দারিদ্র্যের মধ্যে
ভেলেটিনো কৃষিবিদ্যা শিক্ষা করেন জিওনাতে। তাঁর
বিখ্যাত অভিনীত ছবি The
Four Horsemen of the Apocalypse, The Sheik, Blood and Sand, the Eagle ইত্যাদি প্রধান।তার আকর্ষণীয় চেহারা, করুণাভরা চোখ
এবং নাটকীয় অভিনয়শৈলী তাকে রূপালী পর্দার এক অনন্য প্রেমিক চরিত্রে পরিণত করেছিল।
১৯২৬
সালে মাত্র ৩১ বছর বয়সে আকস্মিক মৃত্যুর ফলে তার ভক্তদের মধ্যে গভীর শোকের সৃষ্টি
হয়,
এবং সে সময় তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় হাজার হাজার মানুষ সমবেত
হয়েছিল। মৃত্যুর পরও রুডলফ ভেলেন্টিনো হলিউড ইতিহাসের অন্যতম শ্রদ্ধেয় এবং
কিংবদন্তিতুল্য অভিনেতা হিসেবে পরিচিত রয়ে গেছেন।
৮। পাঠভিত্তিক ব্যাকরণ ।
(ক) বাংলা শব্দ ভাণ্ডারে দুই ধরনের শব্দ পাওয়া যায়। মৌলিক
ও আগন্তুক।
মৌলিক শব্দের মধ্যে—(i) তৎসম, (ii)
অর্ধ-তৎসম, (iii) তদ্ভব শব্দগুলি রয়েছে।
আর আগন্তুক শব্দের মধ্যে আছে—(i) দেশী, (ii) বিদেশী শব্দ।
উদাহরণ— কৃষ্ণ (তৎসম), কেষ্ট (অর্ধ-তৎসম), কানু
(তদ্ভব)
দেশী শব্দ—ঝোল, ডিঙ্গি
বিদেশী শব্দ অনেক আছে। যেমন— ফারসি, আরবি, ইংরাজি, পর্তুগিজ
ইত্যাদি ভাষার শব্দ।
বিদেশী শব্দের উদাহরণ—
তারিফ—আরবি
শব্দ।
অফিস—ইংরাজি
শব্দ।
কেরানি—পর্তুগিজ
শব্দ।
আলমারি—পর্তুগিজ
শব্দ।
হুজুর—আরবি
শব্দ।
দিল—ফারসি
শব্দ।
কোন শব্দের অন্তর্গত লেখো।
ফুরসৎ; খবর; সওদা; বেয়াদবি; ইয়ারগিরি; চিড়িয়া
; সওগাত;বেবাক; আপসোস;
বেমক্কা; বেইমান; দোস্ত;
আক্কেল; কেরামতি; তাজ্জব;
বদনসিব; দরজা ৷
উত্তরঃ ফুরসৎ→ফারসি
খবর→আরবি
সওদা→আরবি
বেয়াদবি→ফারসি
ইয়ারগিরি→ফারসি
চিড়িয়া→হিন্দি/সংস্কৃত
সওগাত→আরবি
বেবাক→ফারসি
আপসোস→ফারসি
বেমক্কা→ফারসি
বেইমান→ফারসি
দোস্ত→ফারসি
আক্কেল→আরবি
কেরামতি→আরবি
তাজ্জব→ফারসি
বদনসিব→ফারসি
দরজা→ফারসি
(খ) পদ পরিবর্তন করো ।
দেশ; জ্ঞান; সৌন্দর্য; পাণ্ডিত্য;
মুক্তি; প্রতিকুল; পাগল;
জল; বন্ধু; তত্ত্ব;
স্থির; ক্ষুধা; মান।
উত্তরঃ দেশ(বিশেষ্য)
→দেশীয়(বিশেষণ)
জ্ঞান(বিশেষ্য)
→জ্ঞানী(বিশেষণ)
সৌন্দর্য(বিশেষ্য)
→সুন্দর(বিশেষণ)
পাণ্ডিত্য(বিশেষ্য)
→পাণ্ডিত্যপূর্ণ(বিশেষণ)
মুক্তি(বিশেষ্য)
→মুক্ত(বিশেষণ)
প্রতিকূল
(বিশেষণ) →প্রতিকূলতা(বিশেষ্য)
পাগল(বিশেষ্য/বিশেষণ)
→পাগলামী(বিশেষ্য)
জল
(বিশেষ্য) →জলীয়(বিশেষণ)
বন্ধু(বিশেষ্য)
→বন্ধুত্ব(বিশেষ্য)
তত্ত্ব(বিশেষ্য)
→তাত্ত্বিক(বিশেষণ)
স্থির(বিশেষণ)
→স্থিতি(বিশেষ্য)
ক্ষুধা(বিশেষ্য)
→ক্ষুধার্ত(বিশেষণ)
মান(বিশেষ্য)
→মান্য(বিশেষণ)
(গ) বাক্য পরিবর্তন করো।
(i) সদাগর ভারতবর্ষে এসে মেলা পয়সা কামালেন। (যৌগিক বাক্য)
উত্তরঃ (i) সদাগর ভারতবর্ষে এসে অনেকপয়সা কামালেনএবং ধনী হলেন।
(ii) যাবার আগে আমাকে শেষ তত্ত্ব বলে যাও। (জটিল বাক্য)
উত্তরঃ(ii) যাওয়ার আগে তুমি আমাকে শেষ তত্ত্ব বলে যেতে হবে ।