ASSEB/SEBA Class 10 Bengali Chapter 9 All solutions:

Gobinda Debnath

 

SEBA Class 10 Bengali Chapter (গদ্যাংশ) 9:                                         

আদরণি

লেখক প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর দাওঃ

প্রশ্ন ১। নগেন বাবুর পেশা কী?

উত্তরঃ নেগেন বাবু পেশায় ডাক্তার ছিলেন

প্রশ্ন ২। জয়রামের পেশা কী?

উত্তরঃ জয়রাম পেশায় মোক্তার ছিলেন।

প্রশ্ন ৩। কুঞ্জবিহারীবাবু পেশায় ছিলেন_________(শূন্যস্থান পূর্ণ করো)

উত্তরঃ কুঞ্জবিহারীবাবু পেশায়জুনিয়ার উকিলছিলেন ।

প্রশ্ন ৪। মেবাবু কে?

উত্তরঃ মেজবাবু হইলেন জমিদার নরেশচন্দ্র রায়চৌধুরী যিনি পীরগঞ্জের বাবুমশায় ছিলেন

প্রশ্ন ৫। জয়রামের বয়স কত?

উত্তরঃ জয়রামের বয়স প্রায় ৫০বৎস

প্রশ্ন ৬। জয়রাম কার কাছে হাতি চেয়ে পাঠালেন?

উত্তরঃজমিদারনরেশচন্দ্রেরায়চৌধুরীর কাছে জয়রাম হাতি চেয়ে পাঠালেন

প্রশ্ন ৭। জয়রামের আদি নিবাস কোথায় ছিল?

উত্তরঃ জয়রামের আদি নিবাস ছিল যশোর জেলায়।

প্রশ্ন ৮। জয়রামের গাভীটির নাম কী ছিল?

উত্তরঃ জয়রামের গাভীটির নাম ছিল মঙ্গলা গাই।

প্রশ্ন ৯। কার নামে জয়রাম তাঁর গরুর বাছুরের নাম রেখেছিলন?

উত্তরঃজনৈক ডেপুটি বাবুর নামে জয়রাম তাঁহার গরুর বাছুরের নাম রেখেছিলেন

প্রশ্ন ১০। উমাচরণ লাহিড়ীর বাসস্থানকোথায় ?

উত্তরঃ উমাচরণ লাহিড়ীর বাসস্থান বীরপুরে।

প্রশ্ন ১১। চৈত্রসংক্রান্তির মেলা কোথায় হয়?

উত্তরঃবামুনহাটেচৈত্রসংক্রান্তির মেলা হয় ।

প্রশ্ন ১২। আদরিণী কে?

উত্তরঃজয়রাম মোক্তারের পালিত হাতিটির নাম ছিল আদরিণী।

প্রশ্ন ১৩।হাতি তোর _______পায়ে_________(শূন্যস্থান পূর্ণ করো)।

উত্তরঃ হাতি তোরগোদা পায় নাতি

প্রশ্ন ১৪। হাতি তোর গোদা পায়ে নাতিএখানে নাতিশব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ এখানে “নাতি” শব্দের অর্থ লাথি।

প্রশ্ন ১৫। জয়রামের কয়টি ছেলে ছিল?

উত্তরঃ জয়রামের তিনটি ছেলে ছিল

প্রশ্ন ১৬। আদরিণী গল্পে উল্লিখিত মেলা দুটির নাম লেখো।

উত্তরঃআদরিণী গল্পে উল্লিখিত মেলা দুটির নাম হল — চৈত্রসংক্রান্তের বামুনহাটের মেলা, রসুলগঞ্জের মেলা।

 

সংক্ষিপ্ত উত্তর দাওঃ

প্রশ্ন ১। জয়রাম মুখোপাধ্যায় কে? তাঁর স্বভাবের পরিচয় দাও

উত্তরঃ জয়রাম মুখোপাধ্যায় একজন মোক্তার ছিলেন এরং তাঁহার আদিনিবাস ছিল যশোর জেলা।

এককালে জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের বদমেজাজি লোক ছিলেন, অতি সামান্য কারণে তিনি তীব্র অভিমান করতেন যদিও তিনি অতিসাধারণ, অতিথিপরায়ণ ও দয়ালু স্বভাবের মানুষতিনি গরিব-দুঃখীদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং অতিথিদের যথাযথভাবে আপ্যায়ন করতে ভালোবাসেন। তাঁর হৃদয় ছিল উদার, আর পরোপকার ছিল তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য।তিনি অতিসাধারণ জীবনযাপন করলেও তাঁর মন ছিল মহান।

প্রশ্ন ২। জয়রাম হাতিচেয়ে পাঠালেন কেন ?

উত্তরঃ জয়রাম মুখোপাধ্যায় পীরগঞ্জের মেজবাবুর মেয়ের নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। কিন্তু যেখানের যাওয়ার রাস্তা খুবই খারাপ এবং দুর্গম, ঘোড়ার গাড়ির পথ নেই তাছাড়া গোরুর গাড়িতে যেতে হলে চারদিন লেগে যাবেসেজন্য জয়রাম নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে এবং দুর্গম পথের কষ্ট কম করার জন্য জমিদার নরেশচন্দ্রের কাছ থেকে হাতি চেয়ে পাঠায়াছিলেন

প্রশ্ন ৩ জয়রামের প্রথমদিকের জীবনযাপন কেমন ছিল ?

উত্তরঃ জয়রামের প্রথম দিকের জীবন এত ভালোছিল না তাঁর আদিবাসযশোর জেলায় যেখানে তিনি প্রথম মোক্তারী করতে আসেন, তখন সেখানে কোনে রেলগাড়ি ছিল না তাই তিনি নৌকায় পদ্মা পার হয়ে,কিছু পথগোরুর গাড়িতে আর বাকিটুকু পায়ে হেঁটে সেই গ্রামে এসেছিলেনতার সাথে কেবলমাত্র একটি ক্যাম্বিসের ব্যাগ ও একটি পিতলের ঘটি ছিলসহায় সম্পত্তি বলতে তেমন কোনরকমের সা-সম্পত্তি ছিল নামাসিক তেরো সিকিতে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে নিজের হাতে রেঁধে খেয়ে মোক্তারী ব্যবসা শুরু করেন।

প্রশ্ন ৪। কার নামে এবং কেন জয়রাম তাঁর বাছুরের নাম রেখেছেন ?

উত্তরঃ জয়রাম মুখোপাধ্যায় তাঁর বাছুরের নাম এক ডেপুটিবাবুর নামে রেখেছিলেন, যৌবন কালে তিনি ছিলেন স্পষ্ট বদরাগী। একদিন জয়রামের সেই ডেপুটিবাবুর সহিত ঝগড়া বাঁধিয়াছিল তাই জয়রাম সেই ক্ষোপে তাঁহার বাছুরের নাম ডেপুটিবাবুর নামে রেখেছিলেন

প্রশ্ন ৫। কী কারণে আদালতে জয়রাম মোক্তারের জরিমানা হয়েছিল?

উত্তরঃ একদিন এক ডেপুটির সম্মুখে জয়রাম মুখোপাধ্যায় আইনের তর্ক করিতেছিলেন, কিন্তু হাকিম কিছুতেই তার কথায় সায় দিতেছিলেন না। ফলে রাগের মাথায় জয়রাম বলিয়া বসিলেন — “আমার স্ত্রী যতটুকু আইনজ্ঞান আছে হুজুরের তাও নাই দেখছি।” এইভাবে আদালতকে অবমান করার কারণে মোক্তার মহাশয়ের পাঁচ টাকা জরিমানা হয়। তিনি এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট পর্যন্ত লড়েছিলেন।

প্রশ্ন ৬। পত্রবাহক ভৃত্য হাতি সম্পর্কে কী খবরএনেছিল?

উত্তরঃ পত্রবাহক ভৃত্য হাতি সম্পর্কে এই খবর আনিয়াছিলেন যেজমিদার নরেশচন্দ্র রায়চৌধুরির দেওয়ানকে যে পত্র প্রদান করিলে দেওয়ান সেই পত্র জমিদারের নিকট প্রেরণ করেন। এবং জমিদার স্বয়ং বলিয়া পাঠাইলেন যে বিবাহের নিমন্ত্রণ যখন করাহইয়াছে তখন আবার হাতি কেন, গোরুর গাড়িতেই আসিবার প্রস্তাব করিলেন।

প্রশ্ন ৭। তাই ত! সব মাটি?’— কে কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন?

উত্তরঃডাক্তারনগেন্দ্রবাবু এই উক্তি করিয়াছেন। জমিদার নরেশচন্দ্র রায়চৌধুরির মেয়ের বিবাহের নিমন্ত্রণ পাইয়া তিন বন্ধু যখন নিমন্ত্রণ রক্ষা করিতে যাইবার বন্দোবস্ত করিতেছিলেন তখন জয়রাম তাঁহার নিজের মক্কেল নরেশচন্দ্র রায়চৌধুরির কাছে বিবাহে উপস্থিত হইবার জন্য হাতি চাহিয়া পাঠাইয়াছিলেন। ইহাতে জয়রামের দুই বন্ধু আশান্বিত হইয়াছিলেন। কিন্তু যখন শুনিলেন জমিদার গোরুর গাড়ি করিয়া যাইবার পরামর্শ দিয়াছেন, তখন বুঝিতে পারিলেন যে সমস্তই মাটি করিয়াছে। বিবাহে বুঝি যাওয়া আর হইয়া উঠিবে না। সেইজন্য তিনি এই উক্তিটি বলেছিলেন

প্রশ্ন ৮। পরের জিনি, জোর ত নেই।—উক্তিটি কার? কোন প্রসঙ্গে তিনি এই উক্তিকরেছেন?

উত্তরঃজয়রামের বৈঠকখানায় উপস্তিত এক জনৈক বন্ধু এই উক্তি করিয়াছিলেন।

জয়রাম বন্ধুদের কাছে বড় গলা করিয়া বলিয়াছিলেন যে জমিদার নরেশচন্দ্র রায়চৌধুরি তাঁহার সুদীর্ঘকালের মক্কেল, সুতরাং বিবাহের নিমন্ত্রণ রক্ষার জন্য তাঁহার কাছে হাতি চাহিয়াপাঠাইলে সকল বন্ধু মিলিয়া বিবাহে উপস্থিত হইতে পারিবেনএবং, বিবাহের আনন্দ উপভোগ করিতে পারিবেনকিন্তু পত্রবাহক আসিয়া যখন জানাইল যে হাতি পাঠাইবেনা, তখন সবান্ধবে জয়রাম মর্মাহত হইয়াছেন তাঁর হাত-পা ঠকঠক করে কাঁপতে থাকে, চোখে দিয়ে রক্ত ​​ফাটিয়া পড়িতেলাগল, মুখের শিরা উপশিরা ফুলে উঠতে লাগলএই প্রসঙ্গে জয়রামের বৈঠকখানায়উপস্তিত এক জনৈক বন্ধু বলিলেন, গোরুর গাড়িতেই না হয় যাওয়া যাক। পরের জিনিস, না দিলে তো আর করিবার কিছুই নাই। কিন্তু জয়রাম বন্ধুর কথায় সায় দিলেন না। তাঁহার অভিমানে ঘা লাগিয়াছিল।

প্রশ্ন ৯। জয়রাম কোথা থেকে হাতি ক্রয় করলেন এবং কেন?

উত্তরঃজয়রাম বীরপুরের জমিদার উমাচরণ লাহিড়ির কাছ হইতে হাতি ক্রয় করেনয়রামের হাতি ক্রয় করার মূলতঃ কারণ ছিল যে তাঁহারই সুদীর্ঘ কালের মক্কেল নরেশচন্দ্র রায়চৌধুরি তাঁহার মেয়ের বিবাহে উপস্থিত হইবার জন্য একটি হাতি দিয়া পাঠাইলেন না। ফলে বন্ধুবর্গের নিকট তিনি লজ্জিত হয়েছিলেনসেই লজ্জা হইতে মুক্তি পাইবার জন্য এবং নিজস্ব আত্মাভিমান রক্ষার জন্য জয়রাম হাতি কিনিলেন। এবং জমিদারের মেয়ে বিবাহের নিমন্ত্রণ রক্ষা করিলেন।

প্রশ্ন ১০। জয়রামের বর্তমান নিবাস কোথায় ?

উত্তরঃ জয়রামের বর্তমান নিবাস চৌধুরি পাড়ায়।

প্রশ্ন ১১। আপনি জ্ঞানী লোক, মায়া পরিত্যাগ করুন।—উক্তিটিকার? কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি করা হয়েছে?

উত্তরঃউক্তিটি জয়রামের বন্ধুবর্গের।

উপার্জন এবং অর্থাভাবে জয়রামের সংসার চলিতেছিল না। তাঁর তিনটি পুত্র ছিল, প্রথম দুইটি ছিল মুর্খ —বংশ বৃদ্ধি আর কোনও কর্ম্ম করিবার যোগ্য নহে, কনিষ্ঠ পুত্রটি বিএ পরীক্ষা দিয়েছিল সেও ফেল করেএদিকে তাঁহার নাতিনীরা বিবাহযোগ্যা হইয়া উঠিয়াছে। বড় নাতিনীর বিবাহের সম্বন্ধ আসিতেছে। তাহার বিবাহের সমুদায় ব্যয় নির্বাহ হইবার মতো অর্থ জয়রামের হাতে না থাকায় জয়রাম অতিশয় চিন্তিত হইয়া পড়িয়াছিলেন এবং জয়রামের পালিত প্রিয় হাতিটিকে বিক্রি করে দেওয়ার প্রসঙ্গে তাঁহার বন্ধুগণ পরামর্শ এবং প্রবোধ দিতে গিয়া এই উক্তি করিয়াছেন।

প্রশ্ন ১২। আদরিণী কে? আদরিণীকে নিয়ে জয়রাম কীরূপ সমস্যায় পড়েছিলেন?

উত্তরঃআদরিণী ছিল জয়রামের পালিত হাতি।

এই হাতি জয়রামের পরিবারের অতি আদরের ছিলবৃদ্ধ বয়সে জয়রামের যখন অর্থ উপার্জন শূন্যে আসিয়া দাঁড়াইল, তখন হাতির মতো একটি জন্তু প্রতিপালন করা প্রায় অসম্ভব ছিলজয়রামের পক্ষে তাহা কষ্টসাধ্য বোধ হইতে লাগিল। তাঁহার সাংসারিক চিন্তা দ্বিগুণ বাড়িয়া গেল। তখন বন্ধুগণের পরামর্শে জয়রাম বুকে পাথর বাঁধিয়া আদরিণীকে বিক্রি করিয়া দিবেন বলিয়া মনস্থির করিলেন। ঠিক হইল চৈত্র মাসে বামুনহাটের মেলায় আদরিণীকে বিক্রির জন্য লইয়া যাওয়া হইবে। কিন্তু সেই মেলায় আদরিণীর জন্য কোন উপযুক্ত গ্রাহক পাওয়া গেল না। তাই রসুলগঞ্জের হাটে লইয়া গেল। কিন্তু যাত্রাপথে হাতিটি অসুস্থ হইয়া পড়ে এবং বেঘোরে প্রাণ হারায়। সেই মৃত হাতিকে সমাধিস্থ করিতে গিয়া জয়রামের প্রচুর অর্থব্যয় ঘটে। অর্থ সমাগমের জন্য যে আদরের হাতিকে বিক্রি করা হইবে স্থির হইয়াছিল সেই হাতির মৃত্যুতে প্রচুর টাকা ব্যয় হইয়া জয়রাম মর্মান্তিকভাবে বিপদগ্রস্ত হইয়া সমস্যায় পড়েছিলেন।

প্রশ্ন ১৩। কল্যাণী কে? কত তারিখে তার বিয়ে ঠিক হয়েছিল?

উত্তরঃ জয়রাম মোক্তার বড়ছেলের বড়মেয়ে হল কল্যাণী। ১০ই জৈষ্ঠ তারিখে তাঁহার বিবাহের দিন ঠিক হয়েছিল

 

দীর্ঘ উত্তর লেখোঃ

প্রশ্ন ১। জয়রামের চরিত্র বর্ণনা করো।

উত্তরঃ"আদরণি" গল্পের জয়রাম কেবল একক চরিত্র নয়, বরং তিনি তখনকার সমাজের এক প্রতিচ্ছবি। তার সরলতা, মানবিকতা, সংগ্রাম, কর্তব্যপরায়ণতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা—সব মিলিয়ে তিনি একজন অনুকরণীয় চরিত্র। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের এই চরিত্রচিত্রণের মাধ্যমে গল্পটি আরও প্রাণবন্ত ও অর্থবহ হয়ে উঠেছে।

জয়রাম মুখোপাধ্যায় একজন মোক্তার ছিলেন এরং তাঁহার আদিনিবাস ছিল যশোর জেলা।

এককালে জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের বদমেজাজি লোক ছিলেন, অতি সামান্য কারণে তিনি তীব্র অভিমান করতেন যদিও তিনি অতিসাধারণ, অতিথিপরায়ণ ও দয়ালু স্বভাবের মানুষতিনি গরিব-দুঃখীদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং অতিথিদের যথাযথভাবে আপ্যায়ন করতে ভালোবাসেন। তাঁর হৃদয় ছিল উদার, আর পরোপকার ছিল তাঁর জীবনের মূল লক্ষ্য।তিনি অতিসাধারণ জীবনযাপন করলেও তাঁর মন ছিল মহান।

জয়রাম একজন অত্যন্ত দয়ালু ও উদার মনের মানুষ। তিনি মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং বিপদে-আপদে অন্যদের সাহায্য করতে সবসময় এগিয়ে আসেন। গল্পে দেখা যায়, তিনি দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান এবং তাদের প্রতি যথাযথ সহমর্মিতা দেখান। তার এই মানবিক গুণ তাকে সমাজের অন্যান্য চরিত্র থেকে আলাদা করে তোলে।জয়রাম একজন দায়িত্ববান ব্যক্তি। তিনি নিজের পরিবার ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা অনুভব করেন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করেন। তার চরিত্রে কোনো রকমের আত্মকেন্দ্রিকতা দেখা যায় না, বরং তিনি সমাজের মঙ্গলকামনায় নিবেদিত প্রাণ।

তার চরিত্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল তার সরলতা। জয়রাম জটিল কূটকৌশল বোঝেন না এবং তিনি মিথ্যা বা প্রতারণার পথে পা বাড়ান না। তার সহজ-সরল মনোভাবের কারণে অনেক সময় তিনি প্রতারিত হন বা অন্যদের দ্বারা উপেক্ষিত হন, তবে তিনি কখনো সত্যের পথ ছাড়েন না।

জয়রাম তার জীবনে বহু প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন, কিন্তু তিনি কখনো হতাশ হন না। তিনি ধৈর্যশীল ও কর্মঠ মানুষ, যিনি কঠোর পরিশ্রম করে নিজের ও পরিবারের জীবনধারণের চেষ্টা করেন। গল্পের বিভিন্ন পর্বে তার এই সংগ্রামী চরিত্রটি স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।জয়রাম সমাজের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। তিনি সামাজিক মূল্যবোধকে সম্মান করেন এবং অন্যদের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে চলেন। তিনি কারও প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেন না এবং সমাজের উন্নতির জন্য সদা সচেষ্ট থাকেন।

জয়রাম স্নেহপ্রবণ, আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন অভিমানী লোক। কেহ তাঁহাকে কোন বিষয়ে হেয় জ্ঞান করিতে চাহিলে তিনি তৎক্ষণাৎ তাহার প্রতিবাদ করেন। তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণ ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি। কোন রকম সমস্যায় তাঁহাকে পেছোপা হইতে দেখা যায় নাই। জয়রামের সংসারনিষ্ঠা ও কর্তব্য পালন অত্যন্ত শ্রদ্ধাজনক। তিনি শেষ জীবনে অশেষ অর্থকষ্টে পড়িলেও জ্ঞান হারান নাই। মানুষের প্রতি তাঁহার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রহিয়াছে। এমন কী পালিত জীব হাতির প্রতি তাঁহার যে স্নেহ-প্রীতি প্রকাশ পাইয়াছে তাহা চিরস্মরণীয়। তিনি অত্যন্ত বিনয়ী না হইলেও তাঁহার চরিত্রে কঠোরতা এবং কোমলতার অপূর্ব মিশ্রণ দেখা যায়। দুঃখে তিনি বিলাপ করিলেও অধীর হইয়া পড়েন না। ব্যথিত অন্তরে সকল সমস্যা ও প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন। তাঁহার চরিত্রে দৃঢ় ব্যক্তিত্বের প্রকাশ আছে। এবং সেই ব্যক্তিত্ব পিতৃসুলভ ভালোবাসায় পূর্ণ। তিনি কখনো কাহাকেও আহত করেন নাই। কিন্তু অন্যায়-অবিচার দেখিলে প্রতিবাদও করিতে বিমুখ হন না। জীবনের নানা সমস্যার সম্মুখীন হইয়াও তিনি দিশেহারা হননি।

 

প্রশ্ন ২। জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের জীবন সম্পর্কে যা জান লেখো

উত্তরঃপ্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় রচিত "আদরণি" গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র হলেন জয়রাম মুখোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন একজন উচ্চবর্ণের মোক্তার, সামাজিকভাবে সম্মানিত এবং অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তি। জয়রাম মুখোপাধ্যায় ধর্মপরায়ণ ও রক্ষণশীল মানসিকতার ছিলেন, যা তাঁর জীবনচর্যা ও পারিবারিক আচরণে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়।

জয়রামের জীবন বড়ই সংঘাতপূর্ণ। জীবনের প্রথমদিকে তিনি যেমন কষ্টস্বীকার করিয়াছেন শেষকালেও তাঁহাকে প্রভূত দুঃখ এবং বেদনার সম্মুখীন হইতে হইয়াছে। প্রথম জীবনে তাঁহার সম্বল বলিতে কিছুই ছিল না। তাঁর আদিবাসযশোর জেলায় যেখানে তিনি প্রথম মোক্তারী করতে আসেন, তখন সেখানে কোনে রেলগাড়ি ছিল না তাই তিনি নৌকায় পদ্মা পার হয়ে,কিছু পথগোরুর গাড়িতে আর বাকিটুকু পায়ে হেঁটে সেই গ্রামে এসেছিলেনতার সাথে কেবলমাত্র একটি ক্যাম্বিসের ব্যাগ ও একটি পিতলের ঘটি ছিলসহায় সম্পত্তি বলতে তেমন কোনরকমের সা-সম্পত্তি ছিল না। মাসিক তেরো সিকিতে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে নিজের হাতে রেঁধে খেয়ে মোক্তারী ব্যবসা শুরু করেন।

জীবনের মধ্য সময়ে তাঁহার যথেষ্ট প্রতাপ ও সংগতি সঞ্চয় হইলেও তিনি কখনোই অভিমান ভোলেন নাই। তাই যে কেহই তাঁহার সহিত বিতর্কে লড়িতেন না। তিনি অত্যন্ত প্রখর যুক্তিবাদী সৎ চরিত্রের মানুষ ছিলেন। জীবনে প্রচুর রোজগার করিলেও তাঁহার সেই অর্থে পারিবারিক শান্তি আসেনি। কারণ তাঁহার ছেলেরা কেহই জীবনে সংগতি লাভ করিতে পারে নাই। ইহা তাঁহার ব্যক্তিগত জীবনের বড়ই অপ্রাপ্তি। তিনি কর্মপটু স্নেহপ্রবণ পিতা হিসাবে সকলের সম্ভ্রম আদায় করিতে সমর্ত হইয়াছিলেন।

যদিও জীবনের শেষ দিকে তাঁহার সাংসারিক উপার্জনহীনতা তাঁহাকে ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিয়াছিল এবংউপার্জন এবং অর্থাভাবে জয়রামের সংসার চলিতেছিল না। তাঁর তিনটি পুত্র ছিল, প্রথম দুইটি ছিল মুর্খ —বংশ বৃদ্ধি আর কোনও কর্ম্ম করিবার যোগ্য নহে, কনিষ্ঠ পুত্রটি বিএ পরীক্ষা দিয়েছিল সেও ফেল করেএদিকে তাঁহার নাতিনীরা বিবাহযোগ্যা হইয়া উঠিয়াছে। বড় নাতিনীর বিবাহের সম্বন্ধ আসিতেছে। তাহার বিবাহের সমুদায় ব্যয় নির্বাহ হইবার মতো অর্থ জয়রামের হাতে না থাকায় জয়রাম অতিশয় চিন্তিত হইয়া পড়েনতাঁর জীবনের মূল সংকট শুরু হয়, যখন তিনি আদরণি নামে এক হাতিকে কিনে এনেছিলেনএই হাতি জয়রামের পরিবারের অতি আদরের ছিলবৃদ্ধ বয়সে জয়রামের যখন অর্থ উপার্জন শূন্যে আসিয়া দাঁড়াইল, তখন হাতির মতো একটি জন্তু প্রতিপালন করা প্রায় অসম্ভব ছিলজয়রামের পক্ষে তাহা কষ্টসাধ্য বোধ হইতে লাগিল। তাঁহার সাংসারিক চিন্তা দ্বিগুণ বাড়িয়া গেল। তখন বন্ধুগণের পরামর্শে জয়রাম বুকে পাথর বাঁধিয়া আদরিণীকে বিক্রি করিয়া দিবেন বলিয়া মনস্থির করিলেন। ঠিক হইল চৈত্র মাসে বামুনহাটের মেলায় আদরিণীকে বিক্রির জন্য লইয়া যাওয়া হইবে। কিন্তু সেই মেলায় আদরিণীর জন্য কোন উপযুক্ত গ্রাহক পাওয়া গেল না। তাই রসুলগঞ্জের হাটে লইয়া গেল। কিন্তু যাত্রাপথে হাতিটি অসুস্থ হইয়া পড়ে এবং বেঘোরে প্রাণ হারায়। সেই মৃত হাতিকে সমাধিস্থ করিতে গিয়া জয়রামের প্রচুর অর্থব্যয় ঘটে। অর্থ সমাগমের জন্য যে আদরের হাতিকে বিক্রি করা হইবে স্থির হইয়াছিল সেই হাতির মৃত্যুতে প্রচুর টাকা ব্যয় হইয়া জয়রাম মর্মান্তিকভাবে বিপদগ্রস্ত হইয়া সমস্যায় পড়েছিলেন।তবুও স্বোপার্জিত অভিমান ও বাৎসল্যের প্রতি তাঁহার আপ্রাণ নিষ্ঠা আমাদের বিস্মিত করে।

গল্পে জয়রাম মুখোপাধ্যায় চরিত্রটি একদিকে ধর্ম ও সমাজের বিধিনিষেধের প্রতি অনুগত, অন্যদিকে মানবিকতাবোধ ও সহমর্মিতায় উজ্জ্বল। তাঁর ব্যক্তিত্বের এই দ্বন্দ্বই গল্পের মূল সুর নির্ধারণ করে। শেষ পর্যন্ত তিনি কীভাবে এই সংকটের সমাধান করেন এবং আদরণির প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে পরিবর্তিত হয়, সেটাই গল্পের চূড়ান্ত পরিণতি গড়ে তোলে।

 

প্রশ্ন ৩। “হাতি দিলে না। হাতি দিলে না!” —উক্তিটি কার? প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃউক্তিটি জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের।

জয়রাম মুখোপাধ্যায় ছিলেন সেকালের একজন নাম করা মোক্তার। জয়রাম ছিলেন জমিদার নরেশচন্দ্র মহাশয়ের বাঁধা মোক্তার। আদালতে ছিল তাঁর যথেষ্ট সুনাম ও পরিচিত।একদিন জয়রাম বাবুর বৈঠকখানায় বিকালে তাঁর দুই বন্ধু পাড়ার নগেন ডাক্টার এবং উকিল কুঞ্জবিহারীবাবু  হাতের ছড়ি দোলাতে দোলাতে উপস্থিত হন।কাছে যেতে জয়রাম বাবু জানতে পারেন যে পীরগঞ্জের জমিদার মেজবাবুর মেয়ের নিমন্ত্রণের বিষয়ে কথা বলতে এসেছেনেগেন ডক্টর ও কুঞ্জবিহারী জয়রাম বাবুকে নিমন্ত্রণের বিষয়ে প্রশ্নই করতে তিনি রেগে যান। কেননা তিনি সুদীর্ঘকাল জমিদারেরসেবা করিয়াছেন।তাঁকে নিমন্ত্রণ দেবে না এতোঅসম্ভব।কিন্তু নিমন্ত্রণ নিতে সমস্যা উপস্থিত হয়, পীরগঞ্জের রাস্তাটি মেঠো, সেখানে ঘোড়ার গাড়ি যাওয়া পথ নেই, গরুগাড়ি নিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই কিন্তু তাও যেতে দুদিন আসতে দুদিন লেগে যাবে সেজন্য খুব সহজে যাওয়ার জন্য বন্ধুরা জয়রাম বাবুকে একটি হাতির বন্দোবস্ত করতে বলেন।কারণ নরেশচন্দ্র রায়চৌধুরিছিলেন জয়রামেরসুদীর্ঘ কালের মক্কেলতাই তাঁহার স্বাভাবিকভাবেই মনে হইয়াছিল নরেশচন্দ্র মহাশয়ের মেয়ের বিবাহে উপস্থিত হইবার নিমিত্ত হাতি চাহিয়া পাঠাইলে অবশ্যই বিমুখ হইবেন না। তাই বন্ধুদের সঙ্গে কথার ছলে জমিদারবাবুকে লিখিয়া পাঠাইলেন। কিন্তু জমিদার তাঁহাকে বিমুখ করিলেনএবং হাতি পাঠাইতে রাজি হইলেন না। ইহাতে জয়রাম অতিশয় বিস্মিত এবং মর্মাহত হইয়াতাঁর হাত-পা ঠকঠক করে কাঁপতে থাকে। দুই চোখ দিয়ে রক্ত ​​ঝরতে দেখি। মুখের শিরা উপশিরাগুলো ফুলে উঠল, কম্পিত স্বরে ঘাড় বাঁকিয়ে বারবার বলতে লাগলেন “হাতি দিলে না! হাতি দিলে না!”ব্যাপারটা এই রকম নহে যে ইহাতে তাঁহার মাথায় আকাশ ভাঙিয়া পড়িয়াছে। শুধু এই কথা তাঁহার আঁতে লাগিয়াছিল যে যাহার তিনি নিত্য উপকার সাধন করিয়া আসিতেছেন, তিনি এইভাবে তাঁহাকে অপদস্থ করিতে পারেন, এইটি তাঁহার বুকেবাজিয়াছিল।

 

প্রশ্ন ৪। “—এ বিবাহে আমার যাওয়াই হবে না”—উক্তিটি কার? এখানে কার বিবাহের কথা বলা হয়েছে? বক্তা সেই বিবাহে যেতে চাননা কেন ?

উত্তরঃ উক্তিটি জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের। এখানে পীরগঞ্জের জমিদার মেজবাবুর মেয়ের বিয়ের কথা বলা হয়েছে

জয়রাম মুখোপাধ্যায় একজন নামকরণ মোক্তার। তিনি ছিলেন জমিদার নরেশচন্দ্র মহাশয়ের বাঁধা মোক্তার। জমিদার নরেশচন্দ্র রায়চৌধুরির মেয়ের বিবাহের নিমন্ত্রণ পাইয়া তিন বন্ধু যখন নিমন্ত্রণ রক্ষা করিতে যাইবার বন্দোবস্ত করিতেছিলেন তখন জয়রাম তাঁহার নিজের মক্কেল নরেশচন্দ্র রায়চৌধুরির কাছে বিবাহে উপস্থিত হইবার জন্য হাতি চাহিয়া পাঠাইয়াছিলেন কারণ পীরগঞ্জের যাওয়ার রাস্তা ভালো নয়। ঘোড়ার গাড়ির পথ নেই। গরুর গাড়ি করে যেতে যেতে চারদিন চার দিন লেগে যায়পালকি যোগাড় করে যাওয়া ও মুশকিল। সেজ্ন্য জয়রাম মোক্তার ভাবে রাজবাড়ি থেকে হাতি এনে তার পিঠে চেপে বন্ধুগণ সহিত নিমন্ত্রণ রক্ষা করিতে যাবে। এদিকে জয়রাম ছিলেন জমিদার নরেশচন্দ্র মহাশয়ের বাঁধা মোক্তার। আদালতে ছিল তাঁর যথেষ্ট সুনাম ও পরিচিত।তাই তাঁর গভীর আত্মবিশ্বাস ছিল যে জমিদার নিশ্চয় হাতি পাঠাইবেকিন্তু ভাগ্য সহায় ছিল না, জয়রাম বাবুর ভৃত্য চিঠি নিয়ে রাজবাড়িতে যায়। কিন্তু সন্ধ্যার আগে সে দুঃসংবাদ নিয়ে ফিরে আসে। ভৃত্য জানায় —মহারাজ হাতি দিতে রাজি হননি এবং গরুর গাড়ি করিয়া আসতে পরামর্শ দিয়াছেনইহাতে বন্ধুদের নিকট জয়রাম কিঞ্চিত হলেও লজ্জিত হইয়াছেনস্বাভাবিক শরীর রাগে উত্তেজনায় জ্বলে উঠেনিজেকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বন্ধুরা তাঁকে সান্ত্বনা গোরুর গাড়িতে যেতেই শ্রেয় মন্তব্য করেন। কিন্তু তিনি হাতি ছাড়া গরুর গাড়িতে বিবাহের নিমন্ত্রণ রক্ষা করিতে যাইবেন না বলিয়া মনস্থির করিলেন

 

প্রশ্ন ৫। মেবাবুর মেয়ে বিয়েতে যাওয়ার জন্য জয়রাম কী উপায় করলেন এবং কেন?

উত্তরঃ পীরগঞ্জের জমিদার মেজবাবুর মেয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণ জয়রাম বাবু, নগেন ডাক্তার এবং উকিল কুঞ্জবিহারী তিনজন পান। কিন্তু পিরগঞ্জের যাতায়াতের পথটি খুবই খারাপ, ঘোড়ার গাড়ি বা গোরুর গাড়িতে যাওয়া সম্ভব নয়, পালকিও পাওয়া যাবে না। সেজন্য জয়রাম প্রথমে মেজবাবুর নিকট হাতিচাহিয়া পাঠালেন যাতে তারাতিনজন অনায়াসেই হাতির পিঠে চড়ে বিয়ে বাড়িতে যাতে পারেতাঁহার অন্তরে এই আশা ছিল যে মেজবাবু তাঁহার দীর্ঘদিনের মক্কেল। সুতরাং এই অনুরোধ রক্ষা করিবেন। এবং তাই তিনি রাজবাড়ি থেকে হাতি দেওয়ার জন্য একটি পত্রবাহক ভৃর্ত্যের হাতে চিঠি দেন।

কিন্তু জয়রাম বাবুর আশা পূর্ণ হল না। মহারাজ নরেশচন্দ্র বিয়েবাড়িতে যাওয়ার জন্য হাতি দেননি বরং তাকে গরুর গাড়ি করিয়া আসিতে পরামর্শ দিয়াছেনমহারাজের এই আচরণে জয়রাম বাবু প্রচন্ড অপমানিত হন এবং বন্ধুগণের নিকট হেনস্থা হইলেনএবংঠিক করেন গেল যদি বিয়েবাড়িতে যেতে হয় তবে হাতির পিঠে চড়েই যাবে, নাহলে যাবে না। গরুরগাড়িতে চড়ে জয়রাম বাবু যাবেন না। তাই আত্মগত অভিমানে অতিষ্ঠ জয়রাম লোক নিয়োগ করিলেন, কোথায় হাতি পাওয়া যায় তাহার সন্ধান করিবার জন্য। শেষ পর্যন্ত বীরপুরের জমিদার উমাচরণ লাহিড়ির নিকট হইতে একটি হাতি ক্রয় করিলেন এবং মেজবাবুর মেয়ের বিবাহের নিমন্ত্রণ রক্ষা করিলেন। জয়রাম ছিলেন একজন আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি। কেহই তাঁহার সেই অভিমানে আঘাত করিলে তিনি তাহা সহজে গ্রহণ করিতে পারিতেন না। তাহার সমুচিত জবাব দিবার জন্য তিনি সচেষ্ট হইয়া উঠিতেন এবং একটা কিছু প্রতিবিধান করিয়া আত্মতুষ্টি লাভকরিতেন।

 

প্রশ্ন ৬। আদরিণী কে? তার আগমনে গ্রামের কী অবস্থা হয়েছিল বর্ণনা করো।

উত্তরঃ জয়রাম মোক্তার পোষা হাতিটিরনামছিল আদরিণী। তিনি আদরিণীকেবীরপুরের জমিদার উমাচরণ লাহিড়ী মহাশয়ের কাছ থেকে দুহাজার টাকায় কিনে এনেছিলেন।জয়রাম এই বাচ্চা হাতি ক্রয় করিয়া সন্তান স্নেহে দীর্ঘ দিন তাহাকে লালন করিয়াছেন। প্রথম যেদিন হাতিটি জয়রামের বাড়ি আসিল গ্রামে সোরগোল পড়িয়া গেল। তাঁহার পরিবারেও হাতিকে লইয়া একটা মহা ব্যস্ততা দেখা দিল।হাতি বাড়িতে আসিবামাত্রই পাড়ার ছোট বালকগণ আসিয়া বৈঠকখানায় উঠানে ভিড় করিয়া দাঁড়াইল। দুই একজন অশিষ্ট বালক সুর দিয়া বলিতে লাগিল-'হাতি তোর গোদা পায়ে নাতি।' বাড়ির বালকেরা ইহাতে অত্যন্ত রেগে গেল এবং অপমান করিয়া তাহাদিগকে বের করে করিয়া দিল।

অতঃপর হাতি আসিয়া অন্তঃপুরের দ্বারে দাঁড়াইল, তখন জয়রামের জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূ একটি ঘটিতে জল লইয়া হাতির চারি পায়ে সেই জল ঢালিয়া দিলেন। মাহুতের ইঙ্গিতে আদরিণী তখন জানু পাড়িয়া বসিল। বড়বধূ তেল-সিন্দুর দিয়া তাহার কপাল রাঙা করিয়া দিল। সঙ্গে সঙ্গে ঘন ঘন শঙ্খধ্বনি বাজিয়া উঠিল। হাতিটি যখন সোজা হইয়া দাঁড়াইল তখন একটি ধামায় করিয়া আলোচাল, কলা ও অন্যান্য মাঙ্গল্য দ্রব্য তাহার সম্মুখে রাখা হইল। হাতি শুঁড় দিয়া তাহার কতক অংশ খাইল কতক ছিটাইয়া ফেলিল। এইরূপে বরণ সম্পন্ন হইল

 

প্রশ্ন ৭। জয়রামের বাড়িতে আদরিণীকে কীরূপে আপ্যায়ন করা হয়েছিল?

উত্তরঃজয়রাম মোক্তার পোষা হাতিটির নামছিল আদরিণী। তিনি আদরিণীকেবীরপুরের জমিদার উমাচরণ লাহিড়ী মহাশয়ের কাছ থেকে দুহাজার টাকায় কিনে এনেছিলেন।জয়রাম এই বাচ্চা হাতি ক্রয় করিয়া সন্তান স্নেহে দীর্ঘ দিন তাহাকে লালন করিয়াছেন।

প্রথম যেদিন হাতিটি জয়রামের বাড়ি আসিল গ্রামে সোরগোল পড়িয়া গেল। তাঁহার পরিবারেও হাতিকে লইয়া একটা মহা ব্যস্ততা দেখা দিল।হাতি বাড়িতে আসিবামাত্রই পাড়ার ছোট বালকগণ আসিয়া বৈঠকখানায় উঠানে ভিড় করিয়া দাঁড়াইল। দুই একজন অশিষ্ট বালক সুর দিয়া বলিতে লাগিল-'হাতি তোর গোদা পায়ে নাতি।' বাড়ির বালকেরা ইহাতে অত্যন্ত রেগে গেল এবং অপমান করিয়া তাহাদিগকে বের করে করিয়া দিল।

অতঃপর হাতি আসিয়া অন্তঃপুরের দ্বারে দাঁড়াইল, তখন জয়রামের জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূ একটি ঘটিতে জল লইয়া হাতির চারি পায়ে সেই জল ঢালিয়া দিলেন। মাহুতের ইঙ্গিতে আদরিণী তখন জানু পাড়িয়া বসিল। বড়বধূ তেল-সিন্দুর দিয়া তাহার কপাল রাঙা করিয়া দিল। সঙ্গে সঙ্গে ঘন ঘন শঙ্খধ্বনি বাজিয়া উঠিল। হাতিটি যখন সোজা হইয়া দাঁড়াইল তখন একটি ধামায় করিয়া আলোচাল, কলা ও অন্যান্য মাঙ্গল্য দ্রব্য তাহার সম্মুখে রাখা হইল।আদরিণীর জন্য প্রচুর পরিমাণে চাল, কলা, আখ, ও অন্যান্য প্রিয় খাবার সংগ্রহ করা হয়েছিল। হাতি শুঁড় দিয়া তাহার কতক অংশ খাইল কতক ছিটাইয়া ফেলিল।হাতিটির জন্য আরামদায়ক থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যাতে সে নিশ্চিন্তে থাকতে পারে।

 এইরূপে বরণ সম্পন্ন হইলজয়রাম ও তার পরিবার আদরিণীকে শুধুমাত্র একটি হাতি হিসেবে দেখেনি; বরং পরিবারের এক সদস্যের মতো ভালোবাসা দিয়েছে।গল্পে দেখা যায়, আদরিণী শুধু জয়রামের পরিবার নয়, গোটা গ্রামবাসীর ভালোবাসা ও যত্ন পেয়েছিল, যা মানব-প্রাণীর সম্পর্কের এক মধুর চিত্র তুলে ধরে।

 

প্রশ্ন ৮। “...ওদের একে একে বিক্রী করে ফেল।”উক্তিটিকার? কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি করা হয়েছে? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃউক্তিটি জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের।

জয়রাম বাবু মহারাজ নরেশ চন্দ্রের কথায় অপমানিত হয়ে জেদ বশত উমাচরণ লাহিড়ের কাছ থেকে ২০০০ টাকায় আদরিণী নামে একটি হাতিকিনেএনেছিলেন। প্রথম অবস্থাতে তার কোনো অসুবিধে ছিল না, কিন্তু পাঁচ-ছয় বছরের মোক্তার মহাশয়ের অবস্থা অনেক পরিবর্তন।নতুন নিয়মে পাশ করা শিক্ষিত মোক্তারে জেলাকোর্টে ভরিয়া যায়

বৃদ্ধ বয়সে জয়রামের যখন অর্থ উপার্জন শূন্যে আসিয়া দাঁড়াইল, তখন হাতির মতো একটি জন্তু প্রতিপালন করা প্রায় অসম্ভব ছিলজয়রামের পক্ষে তাহা কষ্টসাধ্য বোধ হইতে লাগিল। তাঁহার সাংসারিক চিন্তা দ্বিগুণ বাড়িয়া গেল। তাঁহার তিন ছেলেই অকর্মার ধাড়ি। ফলে সংসারের ব্যয় নির্বাহ হইবার পক্ষে অর্থের অনটন দেখা দিল। এদিকে জয়রামের বড় নাতিনী কল্যাণীর বিবাহের আলাপচলিতেছে। অথচ কোনভাবেই অর্থের সংকুলান হয় না। তাই জয়রাম সাংসারিক চিন্তায় বিমর্ষ হইয়া পড়িলেন। এমতাবস্থায় জয়রামের বন্ধুবর্গ জয়রামকে প্রবোধ ও পরামর্শ দিতে গিয়া বলিলেন যে হাতি আদরিণীর বাবদ দৈনিক চল্লিশ টাকা ব্যয় হইতেছে। তাহাকে বিক্রি করিয়া দেওয়াই ভালো। ইহাতে জয়রাম মর্মাহত হইয়া এই উক্তি করিলেন যে তাহার চাইতে তোমরা এইটা বল যে ছেলেপিলে নাতি-নাতিনীদের খাওয়া-পরাইতে অনেক টাকা ব্যয় হইতেছে, তাহাদের একে একে বিক্রি করিয়া দাও

 

প্রশ্ন ৯। যেনো হারাধন ফিরিয়া পাওয়া গিয়াছেউক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃপীরগঞ্জের জমিদার মেজবাবুর মেয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণ জয়রাম বাবু, নগেন ডাক্তার এবং উকিল কুঞ্জবিহারী তিনজন পান। কিন্তু পিরগঞ্জের যাতায়াতের পথটি খুবই খারাপ, ঘোড়ার গাড়ি বা গোরুর গাড়িতে যাওয়া সম্ভব নয়, পালকিও পাওয়া যাবে না। সেজন্য জয়রাম প্রথমে মেজবাবুর নিকট হাতিচাহিয়া পাঠালেন যাতে তারাতিনজন অনায়াসেই হাতির পিঠে চড়ে বিয়ে বাড়িতে যাতে পারেতাঁহার অন্তরে এই আশা ছিল যে মেজবাবু তাঁহার দীর্ঘদিনের মক্কেল। সুতরাং এই অনুরোধ রক্ষা করিবেন। এবং তাই তিনি রাজবাড়ি থেকে হাতি দেওয়ার জন্য একটি পত্রবাহক ভৃর্ত্যের হাতে চিঠি দেন।

কিন্তু জয়রাম বাবুর আশা পূর্ণ হল না। মহারাজ নরেশচন্দ্র বিয়েবাড়িতে যাওয়ার জন্য হাতি দেননি বরং তাকে গরুর গাড়ি করিয়া আসিতে পরামর্শ দিয়াছেনমহারাজের এই আচরণে জয়রাম বাবু প্রচন্ড অপমানিত হন এবং বন্ধুগণের নিকট হেনস্থা হইলেন

        তখন জয়রাম বাবু মহারাজ নরেশ চন্দ্রের কথা অপমানিত হয়ে জেদ বশত উমাচরণ লাহিড়ের কাছ থেকে ২০০০ টাকায় আদরিণী নামে একটি হাতিকিনেএনেছিলেন। প্রথম অবস্থাতে তার কোনো অসুবিধে ছিল না, কিন্তু পাঁচ-ছয় বছরের মোক্তার মহাশয়ের অবস্থা অনেক পরিবর্তন।নতুন নিয়মে পাশ করা শিক্ষিত মোক্তারে জেলাকোর্টে ভরিয়া যায়

বৃদ্ধ বয়সে জয়রামের যখন অর্থ উপার্জন শূন্যে আসিয়া দাঁড়াইল, তখন হাতির মতো একটি জন্তু প্রতিপালন করা প্রায় অসম্ভব ছিলজয়রামের পক্ষে তাহা কষ্টসাধ্য বোধ হইতে লাগিল। তাঁহার সাংসারিক চিন্তা দ্বিগুণ বাড়িয়া গেল। তাঁহার তিন ছেলেই অকর্মার ধাড়ি। ফলে সংসারের ব্যয় নির্বাহ হইবার পক্ষে অর্থের অনটন দেখা দিল। এদিকে জয়রামের বড় নাতিনী কল্যাণীর বিবাহের আলাপচলিতেছে। অথচ কোনভাবেই অর্থের সংকুলান হয় না। তাই জয়রাম সাংসারিক চিন্তায় বিমর্ষ হইয়া পড়িলেন।

            সাংসারিক অর্থকষ্ট হইতে নিস্তার পাইবার জন্য যখন জয়রাম বন্ধুদের পরামর্শ অনুসারে আদরিণীকে বিক্রি করিয়া দিবার মনস্থ করিলেন তখন তাঁহার পরিবারে একটা বেদনা বিমর্ষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হইল। সকলে সকাতর চিত্তে আদরিণীকে বিদায় করিলেন। বাড়ির মেয়েরা, বালক-বালিকাগণ সজল নেত্রে বাগানে হাতির কাছে গিয়া দাঁড়াইয়া আছে। শেষবারের মতো আদরিণীকে এই বাড়ির আহার-পান করানো হইতেছে। তাহার পর তাহাকে বামুনহাটের চৈত্র মেলায় লইয়া যাওয়া হইবে। আদরিণীর বিদায় কালে জয়রাম তাহার গলার নিচে হাত বুলাইয়া ভগ্নকণ্ঠে কহিলেন-"যাও মা ঘুরে এসো।" মনের দুঃখে জয়রাম কাতর হইয়া পড়িলেন।কিন্তু মেলায় আদরিণী বিক্রি হয় নাই। তাহার উচিত মূল্য কেহ দেয় নাই। ফলে উপযুক্ত খড়িদ্দার না পাওয়ায় আদরিণীকে ঘরে ফিরাইয়া আনা হইল। ইহাতে সকলে অতিশয় আনন্দ লাভ করিল যেন বহুদিনের হারানো ধন ফিরিয়া পাওয়া গিয়াছে

 

প্রশ্ন ১০। ওঁ মুখ দিয়ে ব্রহ্মবাক্য বেরিয়েছে... —ব্রহ্মবাক্য বলতে কীবোঝায়?কার মুখ দিয়ে এই বাক্য নির্গত হয়েছে? এবংবাক্যটিকী ?

উত্তরঃব্রহ্মবাক্য হইল বেদবাক্য। ব্রহ্মার মুখনিঃসৃত বাক্য। যে বাক্য অকাট্য। জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের মুখ দিয়া ব্রহ্মবাক্য বাহির হইয়াছে এইরূপ তাঁহার বন্ধুগণ মনে করেন।

জয়রাম এবং তাঁহার পরিবারে অতি লালিত হাতি আদরিণী। সাংসারিক অর্থকষ্ট হইতে নিস্তার পাইবার জন্য যখন জয়রাম বন্ধুদের পরামর্শ অনুসারে আদরিণীকে বিক্রি করিয়া দিবার মনস্থ করিলেন তখন তাঁহার পরিবারে একটা বেদনা বিমর্ষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হইল। হাতিটিকে বামুনহাটের চৈত্রমেলায় লইয়া যাওয়া হইবে। বাড়ির সকলে আদরিণীকে শেষ অভ্যর্থনা জানাইয়া আহার পান করাইতেছে। অবশেষে জয়রাম সজল নেত্রে আদরিণীর গলদেশ জড়াইয়া ধরিয়া কহিলেন-" আদর,যাও মা, বামুনহাটের মেলা দেখে এসো" এই বাক্যটিকে বন্ধুগণ ব্রহ্মবাক্য বলিতেছে। কারণ এই যে জয়রাম বলিলেন 'দেখে এসো' তাই নাকি হাতিটি বিক্রি না হইয়া আবার তাঁহার বাড়িতে ফিরিয়া আসিয়াছে।

 

প্রশ্ন ১১। আজ আর বৃদ্ধ তাহার কাছে গিয়া বিদায় সম্ভাষণ করিতে পারিলেন না —বৃদ্ধটিকে? তিনি কাকে বিদায় সম্ভাষণ করতে পারলেন না এবং কেন?

উত্তরঃবৃদ্ধটি জয়রাম মুখোপাধ্যায়। তিনি তাঁহার পালিতা হাতি আদরিণীকে বিদায় সম্ভাষণ জানাইতে পারিলেন না।

            আদরিণী হইল জয়রাম ও তাঁহার পরিবারের সকলের আদরের ধন।জয়রাম বাবু মহারাজ নরেশ চন্দ্রের কথায় অপমানিত হয়ে জেদ বশত উমাচরণ লাহিড়ের কাছ থেকে ২০০০ টাকায় আদরিণী নামে এই হাতিকিনেএনেছিলেন। সকলে তাঁহাকে সবিশেষ যত্নে লালন করিয়াছে।

বৃদ্ধ বয়সে জয়রামের যখন অর্থ উপার্জন শূন্যে আসিয়া দাঁড়াইল, তখন হাতির মতো একটি জন্তু প্রতিপালন করা প্রায় অসম্ভব ছিল তাই আজ এই সংসারের অর্থকষ্ট ঘুচাইতে গিয়া যখন আদরিণীকে বিক্রি করিয়া দেওয়া একান্ত আবশ্যক হইয়া দাঁড়াইল তখন সকলে দুঃখে মর্মাহত হইল।প্রথমবার আদরিণীকে বিক্রি করিবার জন্য বামুনহাটের চৈত্র মেলায় লইয়া যাওয়াহইয়াছিল। সেখানে কোন উপযুক্ত খরিদ্দার পাওয়া যায় নাই বলিয়া আদরিণীকে বাড়িতে ফিরাইয়া আনা হইয়াছে। ইহাতে পরিবারের সকলে সাময়িক আনন্দ লাভ করিয়াছিল। যদিও দিনকতক পরে তাহাকে রসুলগঞ্জের মেলায় লইয়া যাইতে হইবে স্থির হইল। এইবার জয়রাম মনোদুঃখে এতই ভাঙিয়া পড়িয়াছিল যে শেষবারের মতো আর বিদায় সম্ভাষণ। জানাইবার মতো তাঁহার সামর্থ্য ছিল না। বিনা সম্ভাষণে আদরিণীকে মেলায় বিক্রির জন্য লইয়া যাওয়া হইল।

 

প্রশ্ন ১২। জয়রাম কীভাবে সাংসারিক অচলাবস্থায় পড়লেনও কীভাবে তা থেকে পরিত্রাণের উপায় করলেন বর্ণনা করো

উত্তরঃজয়রাম মুখোপাধ্যায়। তিনি তাঁহার পালিতা হাতি আদরিণীকে বিদায় সম্ভাষণ জানাইতে পারিলেন না।

            আদরিণী হইল জয়রাম ও তাঁহার পরিবারের সকলের আদরের ধন।জয়রাম বাবু মহারাজ নরেশ চন্দ্রের কথায় অপমানিত হয়ে জেদ বশত উমাচরণ লাহিড়ের কাছ থেকে ২০০০ টাকায় আদরিণী নামে এই হাতিকিনেএনেছিলেন। সকলে তাঁহাকে সবিশেষ যত্নে লালন করিয়াছে।

জয়রামের সাংসারিক অবস্থা এককালে সচ্ছল ছিল। তিনি আদালতে মোক্তারি করিয়া প্রচুর অর্থ রোজগার করিয়াছিলেন। কালক্রমে আদালতে তাঁহার পসার কমিয়া -গেল। নব্যযুগের আধুনিক ইংরাজি শিক্ষিত ডেপুটিগণ পুরোনো জয়রামকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন না। কারণ জয়রাম ইংরাজি শিক্ষিত উকিলদের সঙ্গে একটা দূরত্ব বজায় রাখিতেন। তিনি ইংরাজি জানিতেন না। এসব কারণে তিনি অবসর গ্রহণ করিলেন। কিন্তু সংসারে তাঁহার সদস্য অধিক ছিলতাহাদের ভরণ-পোষণের জন্য প্রচুর অর্থব্যয় হইত। পরিণতিতে অল্পকালের মধ্যে জয়রামের অর্থসংকট দেখা দেয়।

            জয়রাম সাংসারিক কর্মে অর্থাভাবে বড়ই লাচাড়ে পড়িয়া যান। তাঁহার অর্থাভাব তাঁহাকে চিন্তিত করিয়া তুলিয়াছে। কোনভাবেই তিনি কোন সুরাহা করিয়া উঠিতে পারিতেছিলেন না। তাঁহার হাতি আদরিণীকে তিনি ভাড়ার কাজে লাগাইলেন। তবুও কোন সুরাহা হইল না। বড় নাতিনীর বিবাহের দিন ধার্য হইয়াছে। তাহার জন্য তিন হাজার টাকা চাই। পৌত্র অসুখে পড়িয়া প্রচুর অর্থব্যয় হইতেছে। এদিকে দুই পুত্রবধূ সন্তানসম্ভবা। তাহাদের জন্য অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু ছেলেরা সকলেই নিষ্কর্ম এবং অপদার্থ। তাই জয়রাম কোন দিশা না পাইয়া সাংসারিক অচলাবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য বন্ধুদের পরামর্শে তাঁহার আদরের হাতিটি বিক্রি করিয়া দিবার জন্য মনস্থির করিলেন। হাতি বামুনহাটের চৈত্রমেলায় উপযুক্ত খরিদ্দারের অভাবে বিক্রি না হইলে তাহাকে রসুলগঞ্জে মেলার হাটে পাঠাইয়া দেওয়া হইল। সেই অবধি বাড়ির সকলের সঙ্গে বৃদ্ধ নিজেও মনোদুঃখে কাতর হইয়াছিলেন। এমন সময় খবর আসিল যে আদরিণী পথে অসুস্থ হইয়া আর চলিতে পারিতেছে না। তাহার চিকিৎসার জন্য মাহুত যথাবিদ্যা চেষ্টা করিয়া বিফল হইয়াছে। বোধকরি হাতির পেটে ব্যথার সঞ্চার হইয়াছে। সে গুঁড় তুলিয়া চিৎকার করিয়া উঠে। সম্ভবতঃ আর বাঁচিয়া উঠিবে না। যদি এই অবস্থায় পথমধ্যে মরিয়া যায় তাহা হইলে প্রোথিত করিবার জন্য নিকটের জমি বন্দোবস্ত করিতে হইবে, তাহার জন্য অর্থের প্রয়োজন। এই সংবাদ পাইয়া বৃদ্ধ জয়রামের মাথায় যেন আকাশ ভাঙিয়া পড়িল। মনে হইল যেন তাহার সমস্ত সংসার ছারখার হইয়া গেল।

 

প্রশ্ন ১৩। “যত দায় এই ষাট বৎসরের বুড়ারই ঘাড়ে।”—ষাট বছরের বুড়োটি কে? তিনি কী কীরূপ দায়ে পড়েছিলেন?

উত্তরঃষাট বৎসরের বুড়োটি হইলেন মোক্তার জয়রাম মুখোপাধ্যায়। তিনি আত্মসম্মানী, জেদি এবং পৌরুষগুণসম্পন্ন মানুষ ছিলেন

জয়রামের জীবন বড়ই সংঘাতপূর্ণ। জীবনের প্রথমদিকে তিনি যেমন কষ্টস্বীকার করিয়াছেন শেষকালেও তাঁহাকে প্রভূত দুঃখ এবং বেদনার সম্মুখীন হইতে হইয়াছে। প্রথম জীবনে তাঁহার সম্বল বলিতে কিছুই ছিল না। তাঁর আদিবাসযশোর জেলায় যেখানে তিনি প্রথম মোক্তারী করতে আসেন, তখন সেখানে কোনে রেলগাড়ি ছিল না তাই তিনি নৌকায় পদ্মা পার হয়ে,কিছু পথগোরুর গাড়িতে আর বাকিটুকু পায়ে হেঁটে সেই গ্রামে এসেছিলেনতার সাথে কেবলমাত্র একটি ক্যাম্বিসের ব্যাগ ও একটি পিতলের ঘটি ছিলসহায় সম্পত্তি বলতে তেমন কোনরকমের সা-সম্পত্তি ছিল না। মাসিক তেরো সিকিতে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে নিজের হাতে রেঁধে খেয়ে মোক্তারী ব্যবসা শুরু করেন।

জীবনের মধ্য সময়ে তাঁহার যথেষ্ট প্রতাপ ও সংগতি সঞ্চয় হইলেও তিনি কখনোই অভিমান ভোলেন নাই। তাই যে কেহই তাঁহার সহিত বিতর্কে লড়িতেন না। তিনি অত্যন্ত প্রখর যুক্তিবাদী সৎ চরিত্রের মানুষ ছিলেন। জীবনে প্রচুর রোজগার করিলেও তাঁহার সেই অর্থে পারিবারিক শান্তি আসেনি। কারণ তাঁহার ছেলেরা কেহই জীবনে সংগতি লাভ করিতে পারে নাই। ইহা তাঁহার ব্যক্তিগত জীবনের বড়ই অপ্রাপ্তি। তিনি কর্মপটু স্নেহপ্রবণ পিতা হিসাবে সকলের সম্ভ্রম আদায় করিতে সমর্ত হইয়াছিলেন।

যদিও জীবনের শেষ দিকে তাঁহার সাংসারিক উপার্জনহীনতা তাঁহাকে ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিয়াছিল এবং উপার্জন এবং অর্থাভাবে জয়রামের সংসার চলিতেছিল না। তাঁর তিনটি পুত্র ছিল, প্রথম দুইটি ছিল মুর্খ —বংশ বৃদ্ধি আর কোনও কর্ম্ম করিবার যোগ্য নহেনেশা-ভাঙ করিয়া, পাশা খেলিয়া ফুলুট বাজাইয়া ফিরে।সংসারে যে তাঁহার একটি যুবতি কন্যা রহিয়াছে সেদিকে তাঁহার মনোযোগ একেবারে নাই। কনিষ্ঠ পুত্রটি বিএ পরীক্ষা দিয়েছিল সেও ফেল করেজয়রামের দুই পুত্রবধূ। দুইজনেই অন্তঃসত্ত্বা। এদিকে তাঁহার নাতিনীরা বিবাহযোগ্যা হইয়া উঠিয়াছে। বড় নাতিনীর বিবাহের সম্বন্ধ আসিতেছে। তাহার বিবাহের সমুদায় ব্যয় নির্বাহ হইবার মতো অর্থ জয়রামের হাতে না থাকায় জয়রাম অতিশয় চিন্তিত হইয়া পড়েনহাতি ভাড়া দিয়া দু-চার টাকা যাহা রোজগার হয় তাহা দিয়া সংসার চলে না।তাঁর জীবনের মূল সংকট শুরু হয়, যখন তিনি আদরণি নামে এক হাতিকে কিনে এনেছিলেনএই হাতি জয়রামের পরিবারের অতি আদরের ছিলবৃদ্ধ বয়সে জয়রামের যখন অর্থ উপার্জন শূন্যে আসিয়া দাঁড়াইল, তখন হাতির মতো একটি জন্তু প্রতিপালন করা প্রায় অসম্ভব ছিলজয়রামের পক্ষে তাহা কষ্টসাধ্য বোধ হইতে লাগিল। তাঁহার সাংসারিক চিন্তা দ্বিগুণ বাড়িয়া গেল। এহেন অবস্থায় সংসারের দায়ভাগ গ্রহণ করে হেন দ্বিতীয় ব্যক্তি জয়রামের পরিবারে নাই। তাই জয়রাম বন্ধুদের কাছে খেদ প্রকাশ করিয়া বলিয়াছেন-যত দায় সব এই বুড়ারই ঘাড়ে।

 

প্রশ্ন ১৪। “দাদামশায় আদর যাবার সময় কাঁদছিল।”—উক্তিটি কার? এখানে আদর কে? সে কোথায় যাচ্ছিল ? আদর যাবার সময় কাঁদছিলকেন ?

উত্তরঃউক্তিটি জয়রামের বড় নাতিনী কল্যাণীর। 'আদর' হইল আদরিণী। জয়রামের পোষা হাতির নাম আদরিণী।সে পরিবারে সন্তান মোহ ন্যায় লালিত হইয়াছে। এক কথায় আদরিণী সকলের নয়নের মণি ছিল। বৃদ্ধ জয়রাম তাহারে নিজের কন্যার ন্যায় জ্ঞান করিতেন। এক অচ্ছেদ্য ভালোবাসার বন্ধনে আদরিণী সকলে সঙ্গে জড়াইয়া গিয়াছিল।

জীবনের মধ্য সময়ে তাঁহার যথেষ্ট প্রতাপ ও সংগতি সঞ্চয় হইলেও তিনি কখনোই অভিমান ভোলেন নাই। তাই যে কেহই তাঁহার সহিত বিতর্কে লড়িতেন না। তিনি অত্যন্ত প্রখর যুক্তিবাদী সৎ চরিত্রের মানুষ ছিলেন। জীবনে প্রচুর রোজগার করিলেও তাঁহার সেই অর্থে পারিবারিক শান্তি আসেনি। কারণ তাঁহার ছেলেরা কেহই জীবনে সংগতি লাভ করিতে পারে নাই। ইহা তাঁহার ব্যক্তিগত জীবনের বড়ই অপ্রাপ্তি। তিনি কর্মপটু স্নেহপ্রবণ পিতা হিসাবে সকলের সম্ভ্রম আদায় করিতে সমর্ত হইয়াছিলেন।

যদিও জীবনের শেষ দিকে তাঁহার সাংসারিক উপার্জনহীনতা তাঁহাকে ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিয়াছিল এবং উপার্জন এবং অর্থাভাবে জয়রামের সংসার চলিতেছিল না। তাঁর তিনটি পুত্র ছিল, প্রথম দুইটি ছিল মুর্খ —বংশ বৃদ্ধি আর কোনও কর্ম্ম করিবার যোগ্য নহেনেশা-ভাঙ করিয়া, পাশা খেলিয়া ফুলুট বাজাইয়া ফিরে।সংসারে যে তাঁহার একটি যুবতি কন্যা রহিয়াছে সেদিকে তাঁহার মনোযোগ একেবারে নাই। কনিষ্ঠ পুত্রটি বিএ পরীক্ষা দিয়েছিল সেও ফেল করেজয়রামের দুই পুত্রবধূ। দুইজনেই অন্তঃসত্ত্বা। এদিকে তাঁহার নাতিনীরা বিবাহযোগ্যা হইয়া উঠিয়াছে। বড় নাতিনীর বিবাহের সম্বন্ধ আসিতেছে। তাহার বিবাহের সমুদায় ব্যয় নির্বাহ হইবার মতো অর্থ জয়রামের হাতে না থাকায় জয়রাম অতিশয় চিন্তিত হইয়া পড়েনহাতি ভাড়া দিয়া দু-চার টাকা যাহা রোজগার হয় তাহা দিয়া সংসার চলে না।সুতরাং অর্থাভাব দূর করিবার জন্য আদরিণীকে যখন বিক্রি করিবার কথা স্থির হইল, তখন পরিবারের সকলের মন বিষাদে পরিপূর্ণ হইয়া গেল। বামুনহাটের মেলায় লইয়া যাইবার কালে আদরিণীকে বিদায় দিতে গিয়া সকলের করুণ দশা উপস্থিত হইল। চোখের জলে ভাসিয়া জয়রাম আদরিণীকে বিদায় দিলেন। কিন্তু সেই মেলায় আদরিণীর উপযুক্ত খরিদ্দার না জোটায় তাহাকে বাড়ি লইয়া আসা হয়। ইহাতে সকলে উৎফুল্ল হইয়া উঠিয়াছিল বটে। কিন্তু কিছুদিন পরে পুনরায় তাহাকে রসুলগঞ্জের মেলায় পাঠাইয়া দেওয়া হয় বিক্রির জন্য। এইবার যাইবার সময় আদরিণীকে জয়রাম আর বুক বাঁধিয়া বিদায় সম্ভাষণ জানাইতে পারিলেন না। তাঁহার অন্তঃকরণ বেদনায় পরিপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছিল। এমন সময় জয়রামের নাতিনী কল্যাণী আসিয়া জানাইল যে আদরিণী চলিয়া যাইবার কালে তাহার চোখ দিয়া জল পড়িতেছিল। এই কথা শুনিয়া বৃদ্ধ জয়রাম আর নিজেকে ধরিয়া রাখিতে পারিলেন না। মাটিতে পড়িয়া বিলাপ করিতে লাগিলেন।

লোকসমাজে কথিত আছে, এমনকী লোকে বিশ্বাসও করে হাতি অন্তর্যামী। অন্তরের সকল কথা হাতি টের পাইয়া থাকে। জয়রামও তাহা জানিতেন। বোধ করি সে কারণেই আদরিণী তাহার ভালোবাসার আশ্রয় ছাড়িয়া যাইতে চাহে নাই। ফলে তাহার চোখ দিয়া জল গড়াইয়া পড়িতেছিল

 

প্রশ্ন ১৫। “জানতে পেরেছে ওরা অন্তর্যামী কিনা—উক্তিটি কার? ওরা বলতে এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে ? এখানে জানার ব্যাপারটা কী ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ উক্তিটি জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের এখানেওরা বলিতেহাতির কথা বলা হয়েছে

জয়রামের পোষা হাতির নাম আদরিণী।সে পরিবারে সন্তান মোহ ন্যায় লালিত হইয়াছে। এক কথায় আদরিণী সকলের নয়নের মণি ছিল। বৃদ্ধ জয়রাম তাহারে নিজের কন্যার ন্যায় জ্ঞান করিতেন। এক অচ্ছেদ্য ভালোবাসার বন্ধনে আদরিণী সকলে সঙ্গে জড়াইয়া গিয়াছিল।

জীবনের মধ্য সময়ে তাঁহার যথেষ্ট প্রতাপ ও সংগতি সঞ্চয় হইলেও তিনি কখনোই অভিমান ভোলেন নাই। তাই যে কেহই তাঁহার সহিত বিতর্কে লড়িতেন না। তিনি অত্যন্ত প্রখর যুক্তিবাদী সৎ চরিত্রের মানুষ ছিলেন। জীবনে প্রচুর রোজগার করিলেও তাঁহার সেই অর্থে পারিবারিক শান্তি আসেনি। কারণ তাঁহার ছেলেরা কেহই জীবনে সংগতি লাভ করিতে পারে নাই। ইহা তাঁহার ব্যক্তিগত জীবনের বড়ই অপ্রাপ্তি। তিনি কর্মপটু স্নেহপ্রবণ পিতা হিসাবে সকলের সম্ভ্রম আদায় করিতে সমর্ত হইয়াছিলেন।

যদিও জীবনের শেষ দিকে তাঁহার সাংসারিক উপার্জনহীনতা তাঁহাকে ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিয়াছিল এবং উপার্জন এবং অর্থাভাবে জয়রামের সংসার চলিতেছিল না। তাঁর তিনটি পুত্র ছিল, প্রথম দুইটি ছিল মুর্খ —বংশ বৃদ্ধি আর কোনও কর্ম্ম করিবার যোগ্য নহেনেশা-ভাঙ করিয়া, পাশা খেলিয়া ফুলুট বাজাইয়া ফিরে।সংসারে যে তাঁহার একটি যুবতি কন্যা রহিয়াছে সেদিকে তাঁহার মনোযোগ একেবারে নাই। কনিষ্ঠ পুত্রটি বিএ পরীক্ষা দিয়েছিল সেও ফেল করেজয়রামের দুই পুত্রবধূ। দুইজনেই অন্তঃসত্ত্বা। এদিকে তাঁহার নাতিনীরা বিবাহযোগ্যা হইয়া উঠিয়াছে। বড় নাতিনীর বিবাহের সম্বন্ধ আসিতেছে। তাহার বিবাহের সমুদায় ব্যয় নির্বাহ হইবার মতো অর্থ জয়রামের হাতে না থাকায় জয়রাম অতিশয় চিন্তিত হইয়া পড়েনহাতি ভাড়া দিয়া দু-চার টাকা যাহা রোজগার হয় তাহা দিয়া সংসার চলে না।সুতরাং অর্থাভাব দূর করিবার জন্য আদরিণীকে যখন বিক্রি করিবার কথা স্থির হইল, তখন পরিবারের সকলের মন বিষাদে পরিপূর্ণ হইয়া গেল। বামুনহাটের মেলায় লইয়া যাইবার কালে আদরিণীকে বিদায় দিতে গিয়া সকলের করুণ দশা উপস্থিত হইল। চোখের জলে ভাসিয়া জয়রাম আদরিণীকে বিদায় দিলেন। কিন্তু সেই মেলায় আদরিণীর উপযুক্ত খরিদ্দার না জোটায় তাহাকে বাড়ি লইয়া আসা হয়। ইহাতে সকলে উৎফুল্ল হইয়া উঠিয়াছিল বটে। কিন্তু কিছুদিন পরে পুনরায় তাহাকে রসুলগঞ্জের মেলায় পাঠাইয়া দেওয়া হয় বিক্রির জন্য। এইবার যাইবার সময় আদরিণীকে জয়রাম আর বুক বাঁধিয়া বিদায় সম্ভাষণ জানাইতে পারিলেন না। তাঁহার অন্তঃকরণ বেদনায় পরিপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছিল। এমন সময় জয়রামের নাতিনী কল্যাণী আসিয়া জানাইল যে আদরিণী চলিয়া যাইবার কালে তাহার চোখ দিয়া জল পড়িতেছিল।এই কথা শুনিয়া বৃদ্ধ জয়রাম আর নিজেকে ধরিয়া রাখিতে পারিলেন না।

এবং শুয়ে থাকা জয়রাম উঠিয়া বসিলেন এবং বলিতে লাগিলেন কি বললি? কাঁদছিল?’ বৃদ্ধ আবার ভূমিতে পড়িয়া দীর্ঘনিঃশ্বাসের সহিত বলিতে লাগিলেন, জানতে পেরেছ ওরা অন্তর্যামী কিনাও যে বাড়িতে আর ফিরে আসিবে না তা জয়রাম বুঝে গেছে

 

প্রশ্ন ১৬। আদরিণীর বিদায় পর্বে জয়রাম কী বলে মনকে প্রবোধ দিয়েছিলেন?

উত্তরঃজয়রাম মোক্তার পোষা হাতিটির নামছিল আদরিণী। তিনি আদরিণীকেবীরপুরের জমিদার উমাচরণ লাহিড়ী মহাশয়ের কাছ থেকে দুহাজার টাকায় কিনে এনেছিলেন।আদরিণীকে জয়রাম অতিশয় ভালোবাসিতেন। কন্যা স্নেহে তিনি ওই হাতিটিকে লালন করিয়াছিলেন। তাই তাহার বিদায়কালে জয়রামের মন করণায় ভারাক্রান্ত হইয়া উঠিয়াছিল। তাই তিনি মনকে এই বলিয়া প্রবোধ দিয়াছিলেন যে যাইবার সময় তোর সহিত একবার দেখাও করিলাম না। সে তোকে অনাদর করিয়া নয়। তুই তো মা অন্তর্যামী। আমার অন্তরের কথা ভালোই জানিস। আমার মনের কষ্টটা কি বুঝাইতে পারি নাই। খুকির বিবাহ হইয়া যাক। তারপর তুই যাহাদের বাড়ি যাইবি, সেইখানে আমি গিয়া তোকে দেখিয়া আসিব। তোর জন্য সন্দেশ লইয়া যাইব। রসগোল্লাও নিব। যতদিন আমি বাঁচিয়া থাকিব, তোকে কখনোই ভুলিয়া যাইতে পারিব না। সেই কথা কি বুঝিতে পারিস নাই। তোকে কি আমি কোনদিন ভুলিতে পারি? মাঝে মাঝে গিয়া তোকে আমি দেখিয়া আসিব। তুই মনে কোন দুঃখ বা অভিমান করিস না। এই বলিয়া জয়রাম নিজেকে নিজে সান্ত্বনা দিলেন।

 

প্রশ্ন ১৭। “ব্রাহ্মণেরমাথায় যেন বজ্রাঘাত হইল।”—এখানে ব্রাহ্মণ কে? প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃএইখানে ব্রাহ্মণ হইলেন জয়রাম মুখোপাধ্যায়।

জয়রাম সাংসারিক কর্মে অর্থাভাবে বড়ই লাচাড়ে পড়িয়া যান। তাঁহার অর্থাভাব তাঁহাকে চিন্তিত করিয়া তুলিয়াছে। কোনভাবেই তিনি কোন সুরাহা করিয়া উঠিতে পারিতেছিলেন না। তাঁহার হাতি আদরিণীকে তিনি ভাড়ার কাজে লাগাইলেন। তবুও কোন সুরাহা হইল না। বড় নাতিনীর বিবাহের দিন ধার্য হইয়াছে। তাহার জন্য তিন হাজার টাকা চাই। পৌত্র অসুখে পড়িয়া প্রচুর অর্থব্যয় হইতেছে। এদিকে দুই পুত্রবধূ সন্তানসম্ভবা। তাহাদের জন্য অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু ছেলেরা সকলেই নিষ্কর্ম এবং অপদার্থ। তাই জয়রাম কোন দিশা না পাইয়া বন্ধুদের পরামর্শে তাঁহার আদরের হাতিটি বিক্রি করিয়া দিবার জন্য মনস্থির করিলেন। হাতি বামুনহাটের চৈত্রমেলায় উপযুক্ত খরিদ্দারের অভাবে বিক্রি না হইলে তাহাকে রসুলগঞ্জে মেলার হাটে পাঠাইয়া দেওয়া হইল। সেই অবধি বাড়ির সকলের সঙ্গে বৃদ্ধ নিজেও মনোদুঃখে কাতর হইয়াছিলেন। এমন সময় খবর আসিল যে আদরিণী পথে অসুস্থ হইয়া আর চলিতে পারিতেছে না। তাহার চিকিৎসার জন্য মাহুত যথাবিদ্যা চেষ্টা করিয়া বিফল হইয়াছে। বোধকরি হাতির পেটে ব্যথার সঞ্চার হইয়াছে। সে গুঁড় তুলিয়া চিৎকার করিয়া উঠে। সম্ভবতঃ আর বাঁচিয়া উঠিবে না। যদি এই অবস্থায় পথমধ্যে মরিয়া যায় তাহা হইলে প্রোথিত করিবার জন্য নিকটের জমি বন্দোবস্ত করিতে হইবে, তাহার জন্য অর্থের প্রয়োজন। এই সংবাদ পাইয়া বৃদ্ধ জয়রামের মাথায় যেন আকাশ ভাঙিয়া পড়িল। মনে হইল যেন তাহার সমস্ত সংসার ছারখার হইয়া গেল।

 

টিকা লেখোঃ

ক) খেমটাঃখেমটা এক ধরনের নাচ। খেমটা তালের সঙ্গে পরিবেশিত হয়। এর সঙ্গে গানও মিশিয়া থাকে। খেমটা নাচ-গানের প্রধান বিষয় রাধাকৃষ্ণের প্রেম। খেমটা নাচের কোনো নির্দিষ্ট উপলক্ষ নাই। যেকোনো সামাজিক বা লৌকিক অনুষ্ঠানে এর আয়োজন হইয়া থাকে। মেয়েরা এই নাচের শিল্পী। একদা বিয়ের আসরে এই নাচের বেশ প্রচলন ছিল। কোনো কোনো অঞ্চলে হিজড়ে শ্রেণির লোকেরাও এই নাচ দেখায়।

 

খ) কল্যাণীঃআদরিণী গল্পে জয়রাম মুখোপাধ্যায়ের জ্যেষ্ঠ নাতিনীর নাম ছিল কল্যাণী।জৈষ্ঠ্য মাসের ১০ তারিখে জয়রাম বাবু তাহার প্রিয় নাতিনী কল্যাণীর বিবাহের দিন ধার্য করিয়াছিলেন। জয়রাম বাবু স্নেহ প্রবণ পিতা। তিনি কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার ন্যায় তাহার নাতিনী কল্যাণীর বিবাহ দিতে গিয়া বড়ই লাছাড়ে পরিয়া তাহার অনেক দিনের পালিত হাতি আদরিণীকে বিক্রি করিতে গিয়া বড়ই মানসিক ও আর্থিক বেদনা পান।

 

গ) কলকাতাঃ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতা একসময় ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ছিল। একে "সিটি অফ জয়" বা আনন্দের নগরী বলা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যজিৎ রায়, বিবেকানন্দের মতো মনীষীরা এই শহরের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। কলকাতা তার সাহিত্য, নাটক, সিনেমা ও রাজনৈতিক চেতনার জন্য বিখ্যাত। শহরটি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, হাওড়া ব্রিজ, দক্ষিণেশ্বর মন্দির ও ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের মতো দর্শনীয় স্থানে সমৃদ্ধ। দুর্গাপূজা এই শহরের অন্যতম প্রধান উৎসব।

 

ঘ) বেনারসঃভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের এই প্রাচীন নগরী হিন্দু ধর্মের অন্যতম পবিত্র স্থান। এটি কাশী নামেও পরিচিত এবং গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। বিশ্বাস করা হয়, এখানে মৃত্যু মোক্ষ লাভের পথ খুলে দেয়। কাশী বিশ্বনাথ মন্দির, দশাশ্বমেধ ঘাট, সর্নাক্ষী মন্দির প্রভৃতি বেনারসের প্রধান আকর্ষণ। সংস্কৃত শিক্ষা, সঙ্গীত ও আধ্যাত্মিকতার কেন্দ্র হিসেবে বেনারসের খ্যাতি সুপ্রাচীন।

 

ব্যাকরণ অধ্যয়ন

সমাসঃ

পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত দুই বা দুইয়ের অধিক পদের এক পদে পরিণত হবার নাম সমাস। সমাস সাধারণত ছয় প্রকার দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ, কর্মধারয়, দ্বিগু,অব্যয়ীভাব ও বহুব্রীহি সমাস

ক) ব্যাসবাক্য সহ সমাসের নাম লেখো যেমন

সত্যমিথ্যা সত্য ও মিথ্যা দ্বন্দ্ব সমাস

জ্ঞানবৃক্ষ   জ্ঞান রূপ বৃক্ষ রূপক কর্মধারয়

            জরামৃত্যু, পাপপুণ্য, সদসৎ, জ্ঞানতরু, বিষতরু, জ্ঞানালো, জন্মান্ধ, শতাব্দী

উত্তরঃ  জরামত্যু — জরা ও মৃত্যু (দ্বন্দ্ব সমাস),

পাপপুণ্য — পাপ ও পুণ্য সম্প্রদায় (দ্বন্দ্ব সমাস),

সদসৎসৎ এবং অসৎ(দ্বন্দ্ব সমাস),

জ্ঞানরুত — যে তরু জ্ঞান প্রদান করে(কর্মধারয়সমাস),

বিষরুত — যে তরু বিষ ধারণ করে(কর্মধারয়সমাস),

জ্ঞানলোক — জ্ঞান থেকে উদ্ভূত আলো(তৎপুরুষসমাস),

জন্মান্ধ — যে জন্ম থেকে অন্ধ(বাহুব্রীহি সমাস),

পদ — শত বছরের একটি পর্ব(তৎপুরুষ সমাস)

 

খ) বিপরীতার্থক শব্দ লেখো

জরা, মৃত্যু, তুষ্ট, জ্ঞান, পুরোহিত, অলীক, নির্ভীকতা, অন্ধ, সুন্দর, অতীত।

উত্তরঃ  জরা — যৌবন,

মৃত্যু — জন্ম,

তুষ্ট — অসন্তুষ্ট,

জ্ঞান — অজ্ঞানতা,

পুরোহিতশূদ্র /অধার্মিক,

অলীক — বাস্তব,

নির্ভীকতা — ভীরুতা,

অন্ধ — দৃষ্টি সম্পন্ন,

সুন্দর — কুৎসিত,

অতীত — বর্তমান।

 

গ) অশুদ্ধি সংশোধন করো

উজ্জল, সৌন্দর্য, তোষন, অপরাহ্ন, সদ্যজাত

উত্তরঃ  উজ্জল — উজ্জ্বল,

সৌন্দর্য্যসৌন্দর্য,

তোষন — তোষণ,

অপরাহ্ন — এটি সঠিক,

সদ্যজাতএটি সঠিক

 

ঘ) নিচের শব্দগুলো প্রসারিত করে লেখো।

নুভূতপূর্ব,সদ্যোজাত, অধীত, জন্মান্ধ, অদূরদর্শিতা, কুলীন, হীনম্মন্যতা

উত্তরঃ

অনুভূতপূর্বযা আগে কখনো অনুভব করা হয়নি বা যার অভিজ্ঞতা আগে পাওয়া যায়নি। উদাহরণ: ওই দুর্ঘটনার ফলে মানুষ এক অননুভূতপূর্ব আতঙ্কের মধ্যে পড়ে যায়।

সদ্যোজাতযা বা যিনি সদ্য জন্মগ্রহণ করেছেন। সাধারণত নবজাতক শিশু বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ: সদ্যোজাত শিশুর যত্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অধীতযা অধ্যয়ন বা শেখা হয়েছে; যা ইতোমধ্যে পড়াশোনা বা অনুশীলন করা হয়েছে। উদাহরণ: শিক্ষক ছাত্রদের অধীত জ্ঞান পরীক্ষা করতে প্রশ্ন করলেন।

জন্মান্ধযে ব্যক্তি জন্মের পর থেকেই দৃষ্টিহীন। উদাহরণ: জন্মান্ধ ব্যক্তিরা স্পর্শ ও শ্রবণশক্তির মাধ্যমে পরিবেশ বুঝতে সক্ষম হন।

অদূরদর্শিতাদীর্ঘমেয়াদি ফলাফল বিবেচনা না করে কেবল সাময়িক লাভের ওপর মনোযোগ দেওয়া; দৃষ্টিভঙ্গির সংকীর্ণতা। উদাহরণ: সরকারের অদূরদর্শিতার জন্য অর্থনৈতিক সমস্যাগুলি আরও বেড়ে গেছে।

কুলীনসমাজে উচ্চ বংশ বা সম্ভ্রান্ত পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তি। উদাহরণ: তিনি কুলীন ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান হলেও অত্যন্ত বিনয়ী।

হীনম্মন্যতা — নিজেকে অন্যদের তুলনায় কম যোগ্য বা মূল্যহীন মনে করার প্রবণতা; আত্মবিশ্বাসের অভাব। উদাহরণ: হীনম্মন্যতা থেকে বেরিয়ে আসতে ইতিবাচক মনোভাব প্রয়োজন।

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !